ইসরাইল কেন এত মারমুখী। কেন কোন শক্তির কাছে পিছু হটে না। সূরা মায়েদার ২১ নং আয়াত থেকে জেনে নেই।
‘হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি নির্দিষ্ট করিয়াছেন তাহাতে তোমরা প্রবেশ কর এবং পশ্চাদপসরণ করিও না; করিলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হইয়া পড়িবে।’[ 5:21]
বনী ইসরাঈল” মানে: ইসরাঈলের সন্তানগণ। এখানে “ইসরাঈল” বলতে বোঝানো হচ্ছে নবী ইয়াকুব (আ.)-কে। তার ১২ জন ছেলে ছিল, যাদের বংশধররাই “বনী ইসরাঈল” নামে পরিচিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তি সালামুন মুসা আঃ এর সমপ্রদায়কে বনী ইসরাইল বলা হয়। এদেরা ধর্মের দিক থেকে ইয়াহুদী বলা হয়।
খৃষ্টান সম্প্রায় এদের প্রতি সবসময় বিদ্বেশ পোষন করে আসছে। কারন তাদের নবী ঈসা আঃকে এই ইয়াহুদী সম্প্ীদায়ই নাকি ক্রুস বিদ্ধ করেছিল বলে দাবী। তাদের বাসবাস ইসরাইল নামক ভু-খন্ডে । পৃথিবীর মোট ধর্মানুসারী জনসংখ্যার খুবই নগন্য একটি অংশ ইয়াহুদী। এদের জ্ঞান বিজ্ঞানে সবচেয়ে বেশী নেয়ামত দান করেছেন বলে কোরানে পাওয়া যায়। এরা অত্যন্ত অকৃতজ্ঞ এবং জেদী সম্প্রদায় বলেও কোরানে বর্ণিত হয়েছে।
এবং আমি কিতাবে প্রত্যাদেশ দ্বারা বনী ইস্রাঈলকে জানাইয়াছিলাম, ‘নিশ্চয়ই তোমরা পৃথিবীতে দুইবার বিপর্যয় সৃষ্টি করিবে এবং তোমরা অতিশয় অহংকারস্ফীত হইবে।’
وَقَضَيْنَاۤ اِلٰى بَنِىْۤ اِسْرَاۤءِيْلَ فِى الْكِتٰبِ لَـتُفْسِدُنَّ فِى الْاَرْضِ مَرَّتَيْنِ وَلَتَعْلُنَّ عُلُوًّا كَبِيْرًا
সূরা নম্বর: ১৭ আয়াত নম্বর: ৪
প্যালেস্টাইনের সাথে ইসরাইলের বিরোধ দীর্ঘ ১০০০ বছর পুর্ব হতে। অটোমান সম্রাজ্যের অবসানের পর খৃষ্টান রোমক রা এদের এই বিরোধে বরাবর ঘি ঢেলে এসেছে এমন কি এখনো।
ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও জীবন ব্যবস্থা পরিচালনা নীতিতে
মুসলমানের মত প্যারালাল।
১) তারা এক আল্লাহয় বিশ্বাসী।
২) তাদের কিতাব তাওরাত
৩) তাদের অনুসরনীয় নবী সালামুন মুসা
৪) তাদের কিবলা বায়তুল মোকাদ্দেস
৪) তাদের সালাতের জন্য আযান প্রথা রয়েছে,
৫) তারাও জামাত সালাত করে তবে তিন ওয়াক্ত।
৬) তারাও সিয়াম করে তবে রমজানের নির্দিস্ট ৩০ দিন নয় বছরে ৬ টি।
৭) তারাও হজ্জ ব্রত পালন করে তবে জীবনে নয় প্রতি বছরে তিন বার।
৮) তাদের আরাফাত বায়তুল মোকাদ্দেস প্রাঙ্গন।
৯) তাদের কোরবানী শুধু হজব্রতদের জন্য সীমাবদ্ধ।
১০) তারাও খতনা করে এবং সালাম বিনিময় করে।
১১) তারা কিতাবের ১০ টি বিধানকে জীবন ব্যবস্থা বলে চুরান্ত মনে করে। অর্থাৎ দশটি আজ্ঞা পালন করতে হয় যাকে ইংরেজীতে Ten Commandments বলা হয়। এগুলো হলঃ
১। তুমি প্রভূকে মানবে, কেবল তার সেবা করবে আর তার নামে স্মরণ করবে।
২। পিতা-মাতার বাধ্য হয়ে তাদের সম্মান হবে।
৩। রবিবার বিশ্রাম করবে এবং পবিত্রভাবে ইবাদত করবে,
৪। নরহত্যা করবে না।
৫। মনে,বাক্যে ও কর্মে সৎ, শুদ্ব ও দয়ালু হবে,
৬। ব্যভিচার করবে না।
৭। চুরি করবে না ।
৮। মিথ্যা বলবে না।
৯। পরস্ত্রী লোভ করবে না এবং দৃষ্টি নত রাখবে,
১০। পর দ্রব্যের প্রতি লোভ করবে না।
এই জাতিকে আল্লাহ অনেক নবী ও অহি দান করেছিলেন। কুরআনের বহু জায়গায় বনী ইসরাঈলের ইতিহাস ও শিক্ষা উল্লেখ আছে, যেমন:
• নবী মূসা (আ.) ও ফিরআউনের ঘটনা
• মান্না ও সালওয়া দিয়ে রিযিক দেওয়া
• গরুর কাহিনী (সূরা বাকারাহ)
• তাওরাত অবতরণ
• তাফরিফ (আল্লাহর বাণী বিকৃত করা)
২. সূরা বনী ইসরাঈল (সূরা আল-ইসরা) – ইতিহাস ও ভবিষ্যদ্বাণী
আয়াত ৪-৭:
“তোমরা দুইবার পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং মহা ঔদ্ধত্য দেখাবে… অতঃপর যখন দ্বিতীয় ওয়াদা এলো, আমি তোমাদের ওপর এমন শত্রু পাঠালাম, যারা তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দিল এবং প্রথমবার যেমন মসজিদে ঢুকে ধ্বংস করেছিল, এবারও তারা ধ্বংস করে দিল…”
প্রথম ফাসাদ:
• বনী ইসরাঈল আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ফিতনা সৃষ্টি করেছিল।
• ফলস্বরূপ, বাবিলীয় বাদশাহ বুখতনসর (Nebuchadnezzar) জেরুজালেম আক্রমণ করেন (৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব) এবং বাইতুল মাকদিস ধ্বংস করেন, বহু ইহুদিকে হত্যা ও বন্দি করেন।
দ্বিতীয় ফাসাদ:
• ইহুদিরা আবার অহংকারে ফিরে যায়।
• এইবার রোমান সাম্রাজ্য (৭০ খ্রিস্টাব্দে) জেরুজালেম ধ্বংস করে, বাইতুল মাকদিস আবারও ধ্বংস হয়।
• বহু ইহুদিকে বিতাড়িত করা হয় — শুরু হয় “ডায়াস্পোরা”।
শেষ কথা:
বনী ইসরাঈলের ইতিহাস কুরআনে এই জন্যই এসেছে, যেন মুসলমানরা শিক্ষা নেয়:
• যেন তারা অহংকার না করে
• যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়
• এবং যেন আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে দৃঢ় থাকে।