কখনও কখনও মানুষ সত্য শুনতে চায় না কারণ তারা তাদের বিভ্রান্তিগুলি ধ্বংস করতে চায় না।”
ধর্মীয় বিষয়ে মানুষ জন্মগত ভাবে যে বিষয়টি সত্য জেনে আসছে তা অন্য কেউ মিথ্যা বললে সহজে মেনে নিতে পারে না।
মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে তার জানা গুলো ডাহা মিথ্যা হলেও তার জানা গুলোকেই একমাত্র সত্য মনে করে এবং বাকি সব মিথ্যা মনে করে।
একজন ব্যক্তি যখন হঠাৎ জানতে পারে তার ধর্মীয় বিষয়ে জানা গুলো অনেক কিছুই মিথ্যা তখন সে উত্তেজিত হয়। সে মেনে নিতে পারে না। যুগে যুগে এ সংঘর্ষ সকল নবী রাসুলদের সাথেও হয়ে আসছে।
যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা তোমরা অনুসরণ কর’, তাহারা বলে, ‘না, বরং আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহার অনুসরণ করিব।’ এমন কি, তাহাদের পিতৃ পুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝিত না এবং তাহারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না-তৎসত্ত্বেও। (২ঃ১৭০)
দীর্ঘ দিনের পালিত অভ্যাস, বাপদাদার যে ভাবে এবাদত করতে দেখে আসতেছে, অধিকাংশ লোকেকে যে ভাবে ধর্ম কার্যাদি সম্পাদন করতে দেখে আসতেছে তা থেকে সড়ে এসে যত সত্য কথায় উপস্থাপন করা হোক না কেন, মানুষ তা গ্রহন করতে রাজি না, যদিও কোরান থেকে দৃষ্টান্ত দেয়া হয়। আর এমন হবে তা আল্লাহ জানেন বলেই নবী ও তার পরবর্তি অনুসারীদের লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেনঃ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।(৬ঃ১১৬)
মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাহাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।(২২ঃ৮)
সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকাইয়া লোকদেরকে আল্লাহ্র পথ হইতে ভ্রষ্ট করিবার জন্য। তাহার জন্য লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাহাকে আস্বাদ করাইব দহন-যন্ত্রণা। (মুমিনুন ২৩,আয়াত ৯)
তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।(ইমরান ৩,আয়াত ১০৫)
তারপর লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেবে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে উৎফুল্ল থাকবে । (মুমিনিন ২৩,আয়াত ৫৩)
বরং মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞানতা বশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের(২২ঃ৩)
আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদ ভাবে বিবৃত করিতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করিতে এবং তোমাদের ক্ষমা করিতে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। – (সূরা নম্বরঃ ৪, আয়াত নম্বরঃ ২৬)
তাদের মধ্যে এমন আহম্মক লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কেতাব সম্বন্ধে কোনোই জ্ঞান নেই, তারা শুধু অবাস্তব ধারণায় বিশ্বাসী। – [২: বাকারা-৭৮]
অধিকাংশ ঈমান এনে এবাদত করছে ঠিকই কিন্তু উল্টো পথে এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবছে আমরা অনেক ভাল আমল করছি। প্রকৃত সব পন্ডুসার।
দীর্ঘদিন যদি কোন মিথ্যে শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে যায় এবং তার বিপরীত কোন সত্য হাজির না হয়, তবে সে মিথ্যেটাও একদিন সত্যে পরিনত হয় এবং তা মানব হৃদয়ে মজবুদ এক ভিত গেড়ে বসে। সে তখন সে ভিত থেকে আর সড়ে আসতে পারে না, যত সত্যই তার কাছে উপস্থাপন করা হোক না কেন। এবং এই বিশ্বাসের ঘরে কেউ আঘাত করলে তা মেনে নিতে পারে না। এমনকি নিজ সন্তানকেও সে ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বন্ধু-বান্ধব, পাড়া পড়শি, আত্মীয়- স্বজন তো দুরে থাক। তার মনে দীর্ঘ দিনের লালিত সে বিশ্বাসের বিপরীতে কোন সত্যকেও উপস্থাপন করা হলে সে আৎকে উঠে। প্রতিহত করতে চায়,বিরোধিতায় লিপ্ত হয় এমন কি জীবন দিতেও প্রস্তুত হয়ে যায়। আর সে বিশ্বাস যদি হয় ধর্মীয় – তবে তো আর কথাই নেই। ফলে অনেককে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পরও দেখা যায় সে তার গোড়ামীর প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। তার মুল কারন সত্যটা তার সামনে শুরুতে কোন দিন উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে পৃথিবী নামক গ্রহের বুকে জাতী একটি হলেও ধর্ম চার হাজার অধিক। কেউ কাউকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত থেকে এক বিন্দু টলাতে সক্ষম নয়। কারন জন্মগত ভাবে সে এ অনুভুতি গুলো দেখে আসতেছে। বহু পুর্ব হতে বাপ-দাদাদেরকেও এরুপই করতে দেখে এসেছে। সে যাকে,যাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে যাকে ইত্তেবা করে তার মুখেও এমনি শুনে এসেছে। তাই তার অন্য কোন কথা, মতামত কানে পৌছা মাত্র গা জ্বলে উঠে। শোনা বা তা একটু রিভিউ করে দেখা তো দূরে থাক। এমন মানুষদের নিয়ে আল্লাহ ঘোষনা দেনঃ
মানুষ নিজেই নিজের স্বর্গ বা নরকের সৃষ্টিকর্তা, আর তার নিজের ভুল ছাড়া অন্য কোন শয়তান নেই”।
অন্যদিকে যে বাণী গুলোকে আপনি নবীর বাণী বলে মনে করেন মুলত সে গুলি শয়তানের বাণী, নবীর নামে প্রচার করা হয়েছে। নবী কখনো অশ্লীল, অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব, অসামাঞ্জস্য কোন কথা কখোনই বলেন নাই বা বলতে পারেন না। কারন তিনি স্বয়ং রব দ্বারা সার্বক্ষন কন্ট্রোলিত ছিলেন। তার প্রমাণ নীচের আয়াতটি পড়লেই বুঝতে পারবেন।
“আমি যদি আপনাকে সতর্ক না করিতাম তবে আপনিতো প্রায় তাদের প্রতি ঝুকেই পড়েছিলেন।”এ উপ-মহাদেশের খৃষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত মাদ্রাসা গুলিতে হাদীসের সিলেবাসে সীমাবদ্ধ রেখে আলেম নামক ইসলামী স্কলারগন তৈরী হতে থাকে। কোরানের উপর গবেষনা বিমুখ এই আলেমগন নিজেদের প্রজ্ঞা বিবেক প্রয়োগ না করে সত্য মিথ্যে যাচাই এর কোন গবেষনা না করে দরসে হাদীসের অর্জিত জ্ঞানকে তৃপ্তির সাথে সোয়াব ও জান্নাত প্রাপ্তীর আমলে সীমাবদ্ধ করে আম-জনতার মগজে ঢুকিয়ে দিতে থাকে যুগের পর যুগ । যা পালন করে সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আলেমদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে,লক্ষ্য একটাই পরকালের নাজাতের বিষয়ে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয় আলেমগন ধর্মকে জীবন জীবিকার পথ হিসেবে বেছে নেয়।
শুরু হয় মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ মাদ্রাসার গড়ার প্রতিযোগিতা। কর্মস্থলের সুযোগ বৃদ্ধি ও পরিধি প্রসারের মহা উৎসবে তারা ব্যস্ত হয়ে ইসলামকে পাচটি মৌলিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ রেখে জনতাকে কোরান বিমুখ করে তুলে। এতেকরে মানুষ মুল ইসলাম থেকে ছিটকে পরে হুজুর ভিত্তিক দ্বীন ও ধর্ম পালনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। এর পেছনে কারন ও রয়েছে।মাত্র ৬৫০ বছর নবী প্রেরনে বিরতি হওয়ায় মানুষ জাহেলিয়াতের অতল গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। আগে এক দেরশো বছর ব্যবধানেই মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য নবী প্রেরণ করতেন।ঈশা নবীর তিরোধানের পর প্রায় ৬৫০ বছর পর্যন্ত কোন নবী বা রাসুল প্রেরন করেন নাই। এই দীর্ঘ ব্যবধানে মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে জাহেলিয়াতের অতল গর্ভে ডুবে যায়। এর আগে সব নবীই প্রায় ১০০ বছর ব্যবধানেই এসেছেন। দীর্ঘ বিরতির পর এই অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে পাঠালেন নবী মুহাম্মদ সা: কে। আল্লাহ তাই বলেনঃরাসূল প্রেরণে বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করিতেছে যাহাতে তোমরা বলিতে না পার, ‘কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আমাদের নিকট আসে নাই।’ (৫:১৯) মায়েদাহ
কিন্তু নবী মুহাম্মদ সা: কে শেষ নবী রুপে প্রেরনের পর আর কোন নবী প্রেরণ করবেন না বলে ঘোষণা করা হলো। কারন ছিল অন্য কোন নবীর উপর নাযিল করা কিতাব সংরক্ষন করা হয় নি। কিন্তু শেষ নবীর উওপ্র না্যিল কৃত কিতাব আল কোরআন সংরক্ষনের দায়িত্ত আল্লাহ নিজে নিলেন। তাই কিয়ামত অব্দী আর কোন নবী প্রেরণ করা হবে না। এই কোরানই নবীর দায়িত্ব পালন করবে সঠিক পথ নির্দেশ দিবে মানব সমাজকে।ঘঠনার বিপর্যয় ঘটল যখন মানুষকে শয়তান কোরান বিমুখ করতে সফল হল। কোরানকে তেলোয়াত আর সোয়াব অর্জনের জন্য ব্যবহার শুরু হল তখন মানুষ সঠিক পথ নির্দেশনা হতে আস্তে আস্তে দুরে সড়ে পড়েপুনরায় নব্য জাহেলিয়াতে ডুবে গেল। আর এ কাজটি করতে কোরানের পাশাপাশি মানব রচিত হাদীস নামক একাধিক কিতাব রচনা করা হলো। যা মানুষকে কোরানের নির্দেশনার চেয়ে অধিক গুরুত্ত দিতে শিক্ষা দিলমাদ্রাসাগুলিতে কোরানের পরিবর্তে হাদীসের পাঠ্যসুচী প্রধান্য দিয়ে পাঠ্যক্রম করা হলো।
ফলে অবস্থা এমন একটি পর্যায়ে দাড়িয় যে সত্যটা কেউ তুলে ধরলে এই আলেম সমাজই আম জনতাকে হায়েনার মত লেলিয়ে দিয়ে ইহুদী-খৃষ্টানের দালাল,কাদেয়ানী, কাফের ইত্যাদি ইত্যাদি ফতুয়া দিয়ে ফাঁসির দাবীতে মিছিল করে। সত্য পরাভুত হয়ে নীরব অশ্রু ঝড়ায়ে নিগৃহীত।
“হাদিস” শব্দটা কুরআনে বহুল ব্যবহৃত। এর অর্থ কথা, বাণী, কেচ্ছা, সংবাদ। “আল্লাহু নাযযালা আহসানাল হাদিসা–!” আল্লাহ না্যিল করেছেন উত্তম বাণী।(সুরা যুমার, আয়াত ২৩)। “হাল আতাকা হাদিসুল গাশিয়াহ?” –“তোমার কাছে কি কেয়ামতের সংবাদ এসেছে?”(সুরা গাশিয়াহ, আয়াত ১)।
খুব অল্প লোকেই এই সত্যটা জানে যে সহীহ সিত্তাহ বা সুন্নিদের যে ছয়টি হাদীস গ্রন্থ আছে , এদের সঙ্কলক কারো বাড়ি সৌদি আরব বা আরব দেশে না এবং এদের কারো মাতৃভাষা আরবি ও না। এরা সকলেই ফার্সি ভাষী ইরানি বংশোদ্ভূত। মজার ব্যাপার হল, এই বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বগুলি অন্যান্য শত শত ইরানী পণ্ডিতদের মধ্যে মাত্র ছয়জন , যারা সুন্নি ধর্মীয় ও বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য গঠনের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন।
কারো কি খটকা লাগে না আরব বা আরবি ভাষীরা কেনো হাদীসের সঙ্কলন করে নি? ইরানে কেনো হাদীসের এই সব বড় বড় আলেমদের আগমন? হাজার বছর আগে যখন উট ও ঘোড়াই ছিল যানবাহনের একমাত্র উপায় , তখন তারা শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে কিভাবে হাদীস জোগাড় করেছেন ও সত্যাসত্য পরীক্ষা করেছেন? আমার তো খটকা লাগে। চিন্তা করে কুল কিনারা পাই না।
হিকমাত অর্থাৎ গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জ্ঞান, আল্লাহ্ শুধু যে নবী রাসূলগন কে দিয়ে থাকেন তা নয় বরং তাঁর প্রিয় সাধারণ বান্দাদেরকেও দিয়ে থাকেন।
তিনি যাকে চান হিকমাত (প্রজ্ঞা) দান করেন। আর যাকে হিকমাত (প্রজ্ঞা) দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে। (২:২৬৯)
মানুষ সত্য উপলব্ধির জ্ঞান শুধু যে আল্লাহর কিতাবের মধ্যে পেয়ে থাকেন তা নয় বরং প্রাকৃতিক গত ভাবে আল্লাহ্ প্রতিটি মানুষকে সত্য মিথ্যা প্রার্থক্য সৃষ্টি করার জ্ঞান দিয়ে থাকেন। মানুষ যদি আল্লাহর সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে তবে এই সত্য উপলব্ধির জ্ঞান লাভ করতে পারবে। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃیُّؤْتِی الْحِكْمَةَ مَنْ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنْ یُّؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ اُوْتِیَ خَیْرًا كَثِیْرًا ؕ وَ مَا یَذَّكَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الْاَلْبَابِঅনুবাদ: তিনি যাকে চান, হিকমত দান করেন। আর যে ব্যক্তি হিকমত লাভ করে সে আসলে বিরাট সম্পদ লাভ করেছে। এই থেকে কেবলমাত্র তারাই শিক্ষা লাভ করে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী। (২ঃ২৬৯)
—————– ২য় অধ্যায় ————–
কোরআন বিমুখ মানুষকে সতর্ক করার জন্য আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয়ই এই কুরআন হিদায়াত করে সেই পথের দিকে যাহা সুদৃঢ় এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে মহাপুরস্কার। (১৭:৯)
তাহাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যাহাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কিতাব সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নাই, তাহারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে।(২ঃ৭৮)এরা বিচার দিবসে বলবেঃ আমরা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করিয়াছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাও ছিলাম বিভ্রান্ত।’ (৩৭:৩২)
ইসলামের জ্ঞান সবাই পাবে না, আল্লাহর ওয়াদাঃ আল্লাহ্ কাহাকেও সৎপথে পরিচালিত করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করিয়া দেন এবং কাহাকেও বিপথগামী করিতে চাহিলে তিনি তাহার বক্ষ অতিশয় সংকীর্ণ করিয়া দেন ; তাহার কাছে ইসলাম অনুসরণ আকাশে আরোহণের মতই দুঃসাধ্য হইয়া পড়ে। যাহারা বিশ্বাস করে না আল্লাহ্ তাহাদেরকে এইভাবে লাঞ্ছিত করেন।( আনআম ৬,আয়াত ১২৫)
আমি তাহাদের নিকট ফিরিশতা প্রেরণ করিলেও এবং মৃতেরা তাহাদের সঙ্গে কথা বলিলেও এবং সকল বস্তুকে তাহাদের সম্মুখে হাযির করিলেও যদি না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তবে তাহারা ঈমান আনিবে না; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশই অজ্ঞ।(৬ঃ১১১)
আমরা প্রতি দিনের প্রার্থনায় বলে থাকি –আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন কর,(১ঃ৬)পৃথিবীর সমস্ত বৃক্ষ যদি কলম হয় আর সমুদ্র হয় কালি এবং ইহার সঙ্গে আরও সাত সমুদ্র যুক্ত হয়, তবুও আল্লাহর বাণী নিঃশেষ হইবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।( ৩১ঃ২৭)প্রশ্ন আসে সরল পথ কি এবং কোনটি ?যাহারা অদৃশ্যে ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে ও তাহাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করিয়াছি তাহা হইতে ব্যয় করে,(২ঃ৩)এবং তোমার প্রতি যাহা নাযিল হইয়াছে ও তোমার পূর্বে যাহা নাযিল হইয়াছে তাহাতে যাহারা ঈমান আনে ও আখিরাতে যাহারা নিশ্চিত বিশ্বাসী,(২ঃ৪) তাহারাই তাহাদের প্রতিপালক-নির্দেশিত পথে রহিয়াছে এবং তাহারাই সফলকাম।(২ঃ৫)এবার বলা যাক সরল পথ কি ভাবে পাওয়া যায়?যাহারা মনোযোগ সহকারে (কোরানের) কথা শুনে এবং উহার মধ্যে যাহা উত্তম তাহা গ্রহণ করে। উহাদেরকে আল্লাহ্ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং উহারাই বোধশক্তি সম্পন্ন। (যুমার ৩৯,আয়াত ১৮)এবার আসি যাক ঈমান কিসের উপর আনতে হবে ?তোমরা বল, ‘আমরা আল্লাহ্তে ঈমান রাখি, এবং যাহা আমাদের প্রতি এবং ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও তাহার বংশধরগণের প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে; এবং যাহা তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে মূসা, ঈসা ও অন্যান্য নবীকে দেওয়া হইয়াছে (২ঃ১৩৬)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ কেহ আল্লাহ্, পরকাল, ফিরিশ্তাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণে ঈমান আনয়ন করিলে।(২ঃ১৭৭)অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ যারা ঈমান আনে এবং সৎকাজ কর তারাই সৃষ্টির সেরা,তারাই সফলকাম এবং তাদের জন্যই জান্নাত নির্ধারিত।যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাহারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ। (৯৮ঃ৭) আর যাহারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে তাহারাই জান্নাতবাসী, তাহারা সেখানে স্থায়ী হইবে।(২ঃ৮২) ” যাহারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, পরম আনন্দ এবং শুভ পরিণাম তাহাদেরই।’ ১৩ঃ২৯কোরান বলে সৎকর্ম কোন গুলি কি কি?পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফিরানোতে কোন পুণ্য নাই; কিন্তু পুণ্য আছে কেহ আল্লাহ্, পরকাল, ফিরিশ্তাগণ, সমস্ত কিতাব এবং নবীগণে ঈমান আনয়ন করিলে এবং আল্লাহ্ প্রেমে আত্নীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, পর্যটক, সাহায্য প্রার্থিগণকে এবং দাস-মুক্তির জন্য অর্থ দান করিলে, সালাত কায়েম করিলে ও যাকাত প্রদান করিলে এবং প্রতিশ্রুতি দিয়া তাহা পূর্ণ করিলে, অর্থ-সংকটে দুঃখ-ক্লেশে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণ করিলে। ইহারাই তাহারা যাহারা সত্যপরায়ণ এবং ইহারাই মুত্তাকী। ২ঃ১৭৭@ সালাত অবশ্যই সৎকর্মের অংশ। তাহলে সালাত কি এবং কি ভাবে কায়েম করতে হবে ?
নামাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট ফরমেটে বুঝে বা না বুঝে একটা নির্ধারিত সময়ে সালামের মাধ্যমে সমাপ্ত করার নাম। আর সালাত হলো- পঠিত কুরআনের বিধানকে নিজ, পরিবার এবং সমাজ জীবনে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে কুরআনে বর্ননা সুপ্রতিষ্ঠিত পথে (সিরাতুম মুস্তাকিম) অটল থাকার নাম।
সালাত হল কোরান তেলোয়াতের অনুষ্ঠান। সালাতে যা বলছি বাস্তব জীবনে সালাতের বাহিরেও তার বাস্তব প্রতিফলন ঘঠানোকেই সালাত কায়েম করা বুঝায়। সালাত পুঁজা মন্ডবে কিছু মন্ত্র পাঠ করার মত কোন অনুষ্ঠান নয়।
যাহারা তাহাদের সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত, ৭০ঃ২৩
যাহারা দাঁড়াইয়া, বসিয়া ও শুইয়া আল্লাহ্কে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্ত করে ও বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি ইহা নিরর্থক সৃষ্টি কর নাই, তুমি পবিত্র, তুমি আমাদেরকে দোজখের শাস্তি হইতে রক্ষা কর। ( ৩ঃ১৯১)
মুসলমানদের সবচেয়ে হাস্যকর আচরণ হলো, তারা দাবী করে যে কোর’আন-ই একমাত্র ধর্ম গ্রহন্থ যা বিশুদ্ধভাবে রক্ষিত আছে, এবং যা সরাসরি আল্লাহ’র পক্ষ থেকে সমগ্র মানবজাতির জন্য পথ নির্দেশনা রূপে এসেছে। কিন্তু মানে হাদীস নামক মানব রচিত গ্রহন্থকে।দ্বিতীয়ত কোর’আন দাবী করে এটি সমগ্র মানবজাতির জন্য পথ নির্দেশনা সম্বলিত গ্রন্থ। কিন্তু মুসলমানরা নিজেরা তো কোর’আন পড়েই না,এমনকি অন্যদের পড়তে দিতেও নারাজ।
দু’ব্যক্তিকে আল্লাহ অতিশয় ঘৃণা করেন। এদের একজন হল সে — ” যাকে মুর্খতা অজ্ঞতা ঘিরে আছে। সে অজ্ঞদের মাঝেই চলাফেরা করে। । সে কোরআন ও সুন্নাহকে পরিত্যাগ পুর্বক নিজের ইচ্ছামত বিধি নিষেধ জারি করে। এভাবে তার অনুরাগীর একটা পরিমন্ডল তৈরী করে নেয় এবং তাদের নিজেদের বানানো ধর্মীয় বিধান জনপ্রিয় করে তুলে। প্রকৃতসে দুষিত পানি দ্বারা তৃষ্ণা নিবারন করে এবং যা অর্জন করে তা অর্থহীন। সাধারন মানুষ তাকে পরহেজগার পন্ডিত মনে করে কিন্তু আসলে সে তা নয়। সত্য জানার মানার তাদের আর কোন আগ্রহ থাকে না। অন্যকেও এপথ অনুসরনের জন্য লোকদের আমন্ত্রন করে থাকে। ভ্রান্তি ও বিপথ সৃষ্টির হোতা এসব মানুষগুলো অন্যদের পাপের বোঁঝাও বহন করবে মর্মে আল্লাহ কোরআনে বলেনঃ ” নিশ্চয় তারা তাদের পাপের বোঁঝা বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্যের বোঝাও। (২৯ঃ১৩)
ইসলাম প্রচারের শুরুতে বিরোধিতায় সাধারন জনতা অংশ গ্রহন করে নাই। করেছিল মক্কার তদানিন্তন প্রসিদ্ধ আলেমগন। বর্তমানেও তাই হবে এবং ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যহত থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। এটাই রবের আকাংখা বাতিলের সাথে হকের লড়াই এর মাধ্যমে দ্বীনকে সমুন্নত রাখা।
আমরা মিল্লাদে ইব্রাহীম এবং ইব্রাহীমের সুন্নতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ রয়েছে কোরআনে। তার মানে এই নয় ইব্রাহীম আঃ যে জীবন ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন আমাকে অনুরুপ অনুসরন করতে হবে।
কারন, ইব্রাহীম আঃ মুর্তি ভেঙ্গে দেশান্তর হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ সাঃ দেশ ত্যাগ করে ক্ষমতা অর্জন করে এসে….. পরে মুর্তি ভেঙ্গেছিলেন।