Categories
My text

হরফ-এ-মুক্বাত্ত্বায়াত

পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিঃ

আল-কোর’আনের বেশ কিছু সূরার প্রারম্ভ হয়েছে, কোন শব্দ বা বাক্যের পরিবর্তে হরফ দিয়ে যেমন: ক্বফ, ছোয়াদ; অথবা আরবী কিছু সুনির্দিষ্ট অক্ষরের বিন্যাস দিয়ে, যেমন: আলিফ লাম মীম, হা মীম, ত্বোয়া সীন মীম, ইয়া সীন ইত্যাদি।

এ সকল অক্ষর বা অক্ষর সমূহের বিন্যাসকে সাধারণ ভাবে হরফ-এ-মুক্বাত্ত্বায়াত বলা হয়।

প্রচলিত মত হলো, এসব অক্ষর ও বিন্যাসিত অক্ষরসমূহের অর্থ আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

মানবজাতির জন্য প্রেরিত কিতাবের অংশ হিসাবে সংযোজিত, তবুও আল্লাহ ছাড়া অপরকোন সত্তার পক্ষে এসব অক্ষরের প্রকৃত অর্থ না জানা হলো আল-কোর’আনের একটি বিশেষ অলৌকিকত্ব।

ফকির, দরবেশ এবং ওলী-আউলিয়াগণ প্রচলিত এই মতের সাথে দ্বিমত করেন।

তাদের দাবী হলো: যেহেতু কোর’আন দাবী করে এটি আরবী ভাষায় অবতীর্ণ, এবং আরবী একটি মানবীয় ভাষা, তাই মানুষের ভাষায় অবতীর্ণ একটি কিতাবের কোন অংশে আল্লাহ এমন কোন কিছু সংযোজন করতে পারেন না, যা মানবীয় বোধে বোধগম্য নয়।

যদি এমন দাবী করা হয় যে, এসব অক্ষরের জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া অপর কোন সত্তার পক্ষে অনুধাবনীয় নয়, তবে এর অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ মানুষের কাছে এমন বার্তা প্রেরণ করেছেন, যা মানুষের বোধগম্যতার অতীত।

দ্বিতীয়ত, এমন দাবীতে পরোক্ষভাবে আল্লাহর উপর অর্থহীন অভিযোগ আনা হয়।

তৃতীয়ত, ভাষাকে ভাষা হতে হলে, অবশ্যই তা একে অপরের নিকট কোন বার্তা বহনের উপযুক্ত হতে হবে, নয় তো তা ভাষা বলে গণ্য হতে পারে না।

যে অক্ষর বা অক্ষর সমূহের অর্থ শুধু একক একটি সত্তা-ই অনুধাবন করতে পারেন, অন্য অপর কোন সত্তা পারে না, তা কোন ভাষা নয়, কারণ তা ভাষা হওয়ার প্রাথমিক শর্ত পূরণ করে না।

বিপক্ষে যুক্তিঃ
১. বার্তাবাহক হলেন জিবরাইল আঃ। আর মুহাম্মদ সাঃ হলেন বার্তা গ্রাহক।

২. হরফে মুতাওয়াত্তির সম্পর্কে কোরআনে আল্লাহ তা-য়ালা বলেছেনঃ “তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াত সমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্য বিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াত গুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম,সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে। (আল-ইমরান,আয়াত নং ৭)
তাই আমার ব্যক্তিগত মতে হরফে মুতায়াত্তির আয়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা করার ইন্টেশন থেকে সতর্ক হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ এব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ সতর্ক করছেন।

অন্যভাবে চিন্তা গবেষনায় দেখা যায়:-

জীবন যেন এমন একটা বইয়ের মাঝ খানের কয়েকটা পৃষ্ঠা, যে বইয়ের প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠাগুলো হারিয়ে গেছে, আর মানুষ আত্মচেতনায় উন্নীত হওয়ার পর হতে সেই পৃষ্ঠাগুলোই যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে।

জীবন নামক বইয়ের হারিয়ে যাওয়া প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠা গুলোর অনুসন্ধানই যেন ধর্মের লক্ষ্য।

বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। সুরা জুমার আয়াত ৯,১০

লাওহে মাহফুজ [ হার্ড ডিস্ক]
পৃথিবীতে এবং ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর কোন বিপদ আসে না; কিন্তু তা জগত সৃষ্টির পূর্বেই কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ।( ৫৭ঃ২২)

ভারচুয়াল জগতের আলোচনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেনঃ

যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের কে পরীক্ষা করিবার জন্য-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।    (৬৭ঃ২)

উহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে প্রাণহীন অবস্থায় দুইবার রাখিয়াছ এবং দুইবার আমাদেরকে প্রাণ দিয়াছ। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করিতেছি; এখন নিষ্ক্র মণের কোন পথ মিলিবে কি ?’ সূরা নম্বরঃ ৪০, আয়াত নম্বরঃ ১১

এখানেই ভাগ্য লিপিবদ্ধের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। প্রোগ্রামিং কত নিখুত।

হতে পারে অথবা নাও হতে পারে হরফ-এ-মুক্বাত্ত্বায়াত শব্দ সমুহ লৌহে মাহফুজ বা হার্ড ডিস্কে লিপি বদ্ধ প্রোগ্রামিং এর ফোল্ডার সমুহের সাংকেতিক চিহ্ন।

তোমাদের পূর্বে বহু বিধান-ব্যবস্থা গত হইয়াছে, সুতরাং তোমরা পৃথিবী ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যাশ্রয়ীদের কী পরিণাম !

قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِكُمْ سُنَنٌ ۙ فَسِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِيْنَ  (১৩৭)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights