এ পৃথিবীতে ধর্মের নামে অধর্মের জন্য শুধু মোল্লা, পুরোহিতরা দায়ী নয় বরং ধার্মিকরা আরো বেশি দায়ী। ধার্মিকেরাই ধর্ম ব্যাবসাকে টিকিয়ে রেখেছে। সাফল্য পেতে হলে পরিশ্রম করা লাগে কিন্তু ধার্মিকেরা ইহকালে ও পরকালে পরিশ্রম ছাড়াই সাফল্য পেতে চায়, ধর্মগুরুদের উপর নির্ভর করে বা তাদের ভাড়ায় খাটিয়ে নিজেদের দ্বায়িত্ব শেষ করে ফেলে।
নামাজ পড়লেই যদি বেহেশতে যাওয়া যায়, ৬ টি সুন্নত রোজা রাখলেই যদি সারা বছরের গোনাহ মাফ হয়ে যায়, কাল পাথরে চুমু খেলে পূর্বের সকল গোনাহ মুক্ত হয়ে নিষ্পাপ হওয়া যায়, তাহলে আর পাপ করতে দ্বীধা করবে কেন ?
সকল ধর্মেই পরকালে মুক্তির শর্টকাট রাস্তা বানিয়েছে স্ব স্ব ধর্মীয় নেতারা। এই রাস্তাগুলি কোন ধর্মের মুল গ্রন্থে নেই। যেমনঃ খৃষ্টান ধর্মে যীশুকে বিশ্বাস করলেই মুক্তি, কারন যীশু সকলের পাপ মুক্তির জন্য শূলে চড়েছেন। হিন্দুরা গঙ্গা স্নান করে পাপ মুক্ত হয়, এছাড়াও চটকদার আরো পথ আছে পাপ মুক্ত হওয়ার। মুসলমানদের আছে জান্নাতে যাওয়ার দোয়া, সারা জিবনে গুনাহ মাপের দোয়া ইত্যাদি।
সকল ধর্মেই পাপ মুক্তির শর্ট কাট রাস্তা গুলি মানুষের তথা শয়তানের তৈরি। এগুলো তৈরি হয়েছে মানুষকে ধর্ম থেকে দুরে সরানোর জন্য, মিথ্যাবাদী/অসৎ থাকার জন্য, মানুষের ভিতরে লুকায়িত পশুকে উষ্কে দেয়ার জন্য। ধর্মের পার্থক্য মানুষেরই সৃষ্টি। সব ধর্মের মূল বাণী এক ও অভিন্ন। সব ধর্মের সৎ কর্মের তালিকাও অভিন্ন।
আল্লাহ বলেন: তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না। আপনি মূশরেকদেরকে যে বিষয়ের প্রতি আমন্ত্রণ জানান, তা তাদের কাছে দুঃসাধ্য বলে মনে হয়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে পথ প্রদর্শন কর। (সুরা ৪২,আয়াত১৩)
বিভিন্ন ধর্মে রাসুলকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনে। কারো কাছে তিনি মহাপুরুষ, কারো কাছে দেবতা, কারো কাছে গুরু, কারো কাছে প্রফেট অর্থাৎ ভবিষ্যত দ্রষ্টা ইত্যাদি। যে নামেই জানুক না কেন, সকলের কাছে একই আদেশ এসেছে “আমি ছাড়া কোন উপাস্য (ইলাহ) নেই, সুতরাং আমারই এবাদত কর।”
এবাদতের নিয়মকানুন সৃষ্টি করতে যেয়েই স্ব স্ব ধর্মগুরুরা বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত হয়ে গেছে এবং নুতন নুতন বিধান দিয়ে নিজেদেরকে উপাস্য বানিয়েছে। উপাস্য বা ইলাহ মানে বিধান দাতা। আল্লাহ/ভগবান/God/ইয়াহয়ে/এপোলো– যে নামেই ডাকুন না কেন উনিই একমাত্র উপাস্য বা বিধান দাতা। আল্লাহই সত্য এবং সত্যই তাঁর দ্বীন।
এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন: তাদের কাছে জ্ঞান আসার পরই তারা পারস্পরিক বিভেদের কারণে মতভেদ করেছে। যদি আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশের পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকত,তবে তাদের ফয়সালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছে, তারা অস্বস্তিকর সন্দেহে পতিত রয়েছে। (৪২:১৪)
এভাবে পৃথিবীর সব দেশেই ধর্মের নামে চলছে অধর্ম। যে কারনে আমরা দেখতে পাই ধার্মিকের সংখ্যা যে দেশে যত বেশি, সে দেশ শিক্ষা দীক্ষা ও উন্নতিতে তত পিছিয়ে। ধর্মের বিধি বিধান যে দেশে যত কড়াকড়ি ভাবে, সরকারি ভাবে বা সামাজিক ভাবে পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়, সে দেশ বর্বরতায় ততই সবাইকে টেক্কা দেয়। এর কারন হল, সব ধর্মের অনুসারীরাই স্রষ্টার দেয়া সহজাত ভাল ও মন্দের অনুসরন না করে ধর্মীয় পুরোহিতদের প্রচারনা অনুযায়ী উপাসনা করে।
ধর্মকে আমরা বাহ্যিক পোষাক-আষাক ও আনুষ্ঠানিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। বাইরের পোষাক দেখেই আমরা বলতে পারি কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে খৃষ্টান, কে শিখ আর কে ইহুদী। যার দাড়ি যত লম্বা সে তত বেশি ধার্মিক। নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলানোকে আমরা ধার্মিকতার চিহ্ন হিসাবে দেখি। যেখানে সব ধর্ম অনুসারে সত্যবাদিতা, সততা, পরোপকার, বিশ্বস্ততা ইত্যাদি হওয়া উচিৎ ছিল ধার্মিকের পরিচয়।
সত্যবাদিতা, সততা, পরোপকার, বিশ্বস্ততা ইত্যাদিই হল ধর্ম। তাই কোন ধর্মের ঐশীগ্রন্থে উপাসনা যেমন পুজা করা, নামাজ পড়া, তীর্থ যাত্রার নিয়মাবলী পাবেন না। এগুলো মোল্লা পুরোহিতদের বানানো, রচিত। যারা সত্যবাদিতা, সততা, পরোপকার, বিশ্বস্ততা ও সকল সহজাত ভাল গুনকে জীবণের মূলমন্ত্র হিসাবে ধারন করেছে, তারাই এক স্রষ্টা তথা আল্লাহর অনুসারী।
