আদমকে ধোকা দিল ইবলিশ আর ইবলিশকে ধোকা দিল কে? তার মানে ইবলিশ উপাধী প্রদানের আগেও শয়তান ছিল।
মুহতারাম। আপনি আলীগর মাদ্রাসার কোরান বিভাগের প্রধান। আমি একরামুল হক বাংলাদেশ থেকে প্রশ্নকারী। আমি আপনার সাথে শয়তানের সৃষ্টির সুচনা নিয়ে আলোচনা করতে চাই। আমি প্রশ্নকারী আপনি উত্তরদাতা হিসাবে ধারাবাহিক ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। পর্ব ১, ২,৩,৪,৫,৬,৭ হিসাবে। উত্তর কোরানের আলোকে এবং মানব জ্ঞানের যুক্তি অথবা বিজ্ঞান ভিত্তিক হতে হবে। উত্তর গুলি প্রশ্নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সংক্ষিপ্ত ও এক কথায় হতে হবে প্রয়োজনে উদাহরন স্বরুপ কোরানের আয়াতে রেফারেন্স দিতে পারেন। আলোচনাটি দীর্ঘ ৩ দিন ব্যাপী পর্ব ১, ২ আকারে চলতে পারে। এবার শুরু করা যাক প্রথম পর্বে ৫ টি প্রশ্নের মাধ্যমে আলোচনা শুরু। প্রশ্ন গুলির যেমন ক্রমিক নাম্বার থাকবে উত্তর গুলিরও তেমন ক্রমিক থাকবে। দ্রষ্টব্যঃ উত্তর অবশ্যই প্রশ্ন অনুযায়ী হা না বা একমত দ্বীমত অনুরুপ সংক্ষিপ্ত কাম্য। পাশ কাটিয়ে উতর পরিহার যোগ্য। প্রথম পর্ব শুরু করছি।
প্রশ্ন ১ _ শয়তানকেই কি ইবলিশ বলে? প্রশ্ন ২_ শয়তানের সৃষ্টি সুচনা আদমের পুর্বে না পড়ে? প্রশ্ন ৩ _ আদম সৃষ্টির সময় সে অনুষ্ঠানে শুধু ফেরেস্তাগন ছিল নাকি জ্বীনে রাও ছিল? প্রশ্ন ৪ _ আদমকে জান্নাতে না আরশে সৃষ্টি করা হয়েছিল? প্রশ্ন ৫ _ ফেরেস্তা, জ্বীন, মানুষ ও শয়তান এ চারটি সৃষ্টি সত্তার প্রথম কোনটি এবং তার পর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোনটি?
✅ পর্ব ১ জী একরামুল হক সাহেব, আলহামদুলিল্লাহ। চলুন প্রথম পর্ব শুরু যাক। আমি আপনার প্রশ্নগুলির সংক্ষিপ্ত, সুনির্দিষ্ট ও কুরআন–বিজ্ঞানসম্মত উত্তর দিব ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ১: শয়তানকেই কি ইবলিশ বলে? উত্তর ১: হ্যাঁ, প্রথম শয়তানের নাম ইবলিস (সূরা বাকারা ২:৩৪)।
প্রশ্ন ২: শয়তানের সৃষ্টি সুচনা আদমের পুর্বে না পরে? উত্তর ২: আগে, কারণ সে ছিল জ্বীনজাত (সূরা কাহফ ১৮:৫০)।
প্রশ্ন ৩: আদম সৃষ্টির সময় সে অনুষ্ঠানে শুধু ফেরেস্তাগণ ছিল নাকি জ্বীনেরাও ছিল? উত্তর ৩: ফেরেশতারা ছিল, ইবলিস একমাত্র জ্বীন হিসেবে সেখানে উপস্থিত (সূরা কাহফ ১৮:৫০)।
প্রশ্ন ৪: আদমকে জান্নাতে না আরশে সৃষ্টি করা হয়েছিল? উত্তর ৪: জান্নাতে (সূরা বাকারা ২:৩৫)।
প্রশ্ন ৫: ফেরেস্তা, জ্বীন, মানুষ ও শয়তান এ চারটি সৃষ্টি সত্তার প্রথম কোনটি এবং তার পর ২য়, ৩য় ও ৪র্থ কোনটি? উত্তর ৫: ১ম – ফেরেশতা (নূর থেকে), ২য় – জ্বীন (আগুন থেকে), ৩য় – মানুষ (মাটি থেকে), ৪র্থ – শয়তান (বিদ্রোহী জ্বীন ইবলিস)।
এবার পর্ব _ ২ শুরু করুন প্রশ্ন ৬ ইবলিশ উপাধী পাওয়ার আগে সে জীনের নাম কি ছিল? জানা আঋে কি? প্রশ্ন ৭ জ্বীন কি নিজের প্রচেষ্টায় ইবাদত করে ফেরেস্তাতে উত্তীর্ণ হতে পারে? প্রন ৮ যদি ইবাদত করে কোন সত্তা ফেরেস্তাতে উন্নীত না হতে পারে সে জীন কি ভাবে ফেরেস্তার মর্যদা পায়? প্রশ্ন ৯ ফেরাস্তার ভিতর কি নাফস দেয়া আছে? প্রশ্ন ১০ জীন ও মানুষের ভিতর ভাল-মন্দ করার ইচছা শক্তি বা যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে তাকে কি বলে?
জী মুহতারাম একরামুল হক সাহেব। এখন পর্ব–২ শুরু করতে পারেন , প্রশ্ন অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত ও সুনির্দিষ্ট উত্তর দিব আশা করি।
প্রশ্ন ৬: ইবলিস উপাধী পাওয়ার আগে সে জ্বীনের নাম কি ছিল? জানা আছে কি? উত্তর ৬: কোরআনে উল্লেখ নেই; হাদীস বা ইতিহাসে “আজাজীল” বলা হয়।
প্রশ্ন ৭: জ্বীন কি নিজের প্রচেষ্টায় ইবাদত করে ফেরেস্তাতে উত্তীর্ণ হতে পারে? উত্তর ৭: না (কোরআন অনুযায়ী প্রত্যেক সৃষ্টি নিজ প্রকারেই সীমাবদ্ধ)।
প্রশ্ন ৮: যদি ইবাদত করে কোন সত্তা ফেরেস্তাতে উন্নীত না হতে পারে, সে জ্বীন কিভাবে ফেরেস্তার মর্যাদা পায়? উত্তর ৮: ফেরেস্তার মর্যাদা নয়, কেবল তাদের সান্নিধ্যে থাকতে পারে (যেমন ইবলিস)।
প্রশ্ন ৯: ফেরেস্তার ভিতর কি নাফস দেয়া আছে? উত্তর ৯: না, তাদের শুধু আনুগত্য আছে (সূরা তাহরীম ৬)।
প্রশ্ন ১০: জ্বীন ও মানুষের ভিতর ভাল–মন্দ করার ইচ্ছাশক্তি বা ক্ষমতা যাকে দেয়া হয়েছে তাকে কি বলে? উত্তর ১০: “ইখতিয়ার” বা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি (কোরআনে “ইরাদা/খিয়ার”)।
এবার শুরু করা যাক পর্ব _ ৩ জী মুহতারাম একরামুল হক সাহেব। পর্ব ৩ শুরু করুন — প্রশ্ন অনুযায়ী সংক্ষিপ্ত ও কুরআনভিত্তিক উত্তর দিচ্ছি।
প্রশ্ন ১১: নাফস ও ইরাদা/খিয়ারের মধ্যে কি পার্থক্য আছে মনে করেন? উত্তর ১১: নাফস হলো প্রবৃত্তি বা ভেতরের ঝোঁক; ইরাদা/খিয়ার হলো সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীন ক্ষমতা।
প্রশ্ন ১২: সেই কথিত আজাজিল জীনই পরবর্তিতে তার মনের কুমন্ত্রনায় আল্লাহর আদেশ অমান্য করে আদমকে সিজদা না দেয়ায় লানত প্রাপ্ত হয়ে ইবলিস হয়। অর্থাৎ শয়তানের সুচনা। উত্তর ১২: হ্যাঁ, একমত (সূরা বাকারা ২:৩৪; কাহফ ১৮:৫০)।
প্রশ্ন ১৩: শয়তানকে জান্নাত থেকে কোথায় নামিয়ে দেয়া হয়েছিল? উত্তর ১৩: পৃথিবীতে (সূরা আ’রাফ ৭:১৩, সূরা বাকারা ২:৩৬)।
প্রশ্ন ১৪: জান্নাতে শুধু আদম থাকলো তাই না? উত্তর ১৪: না, পরে তার জুটি হাওয়াও ছিলেন (সূরা বাকারা ২:৩৫)।
প্রশ্ন ১৫: হাওয়া বা তার জুটির সৃষ্টি কখন, কীভাবে হল? উত্তর ১৫: আদমের পর, তার থেকে (সূরা নিসা ৪:১ – “ওয়া খালাকা মিনহা জাওজাহা”)।
✅ পর্ব–৪ (দু’জনের সংলাপ)
প্রশ্ন: ১৬ শয়তান তো জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও সে কিভাবে আবার আদম ও হাওয়ার কাছে গিয়ে কুমন্ত্রণা দিল? প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে ঢুকল নাকি? উত্তর:১৬ খুব সূক্ষ্ম প্রশ্ন। কুরআনে কোথাও বলা হয়নি যে শয়তান প্রহরীদের ফাঁকি দিয়ে ঢুকেছিল। আল্লাহ কেবল বলেছেন — সে “ওয়াসওয়াসাহ” দিল, অর্থাৎ অন্তরে কুমন্ত্রণা ঢুকিয়ে দিল (সূরা আ‘রাফ 7:20, সূরা ত্বাহা 20:120)। অতএব, সে শারীরিকভাবে প্রবেশ করেছিল কি না — তা অজানা। আল্লাহর ইচ্ছাতেই আদম-হাওয়া তার কুমন্ত্রণা শুনতে পেয়েছিল।
প্রশ্ন:১৭ তাহলে জান্নাতে কি কোনো নিষিদ্ধ জিনিস ছিল? উত্তরঃ ১৭ হ্যাঁ। কুরআনে স্পষ্ট এসেছে — “তোমরা জান্নাতে যা খুশি খেতে পারো, তবে এই গাছটির কাছে যেয়ো না।” (সূরা বাকারা 2:35)। মানে, পরীক্ষা স্বরূপ সেখানে একটি নিষিদ্ধ বৃক্ষ ছিল। তবে আখিরাতের চিরস্থায়ী জান্নাতে কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ জিনিস থাকবে না।
প্রশ্ন:১৮ আচ্ছা, শয়তান কি আসলেই শারীরিক দেহবিশিষ্ট কোনো সত্তা? নাকি কেবল কল্পনা? উত্তর:১৮ শয়তান কল্পনা নয়। সে জিন জাতির অন্তর্ভুক্ত (সূরা কাহফ 18:50)। আর জিন সৃষ্টি হয়েছে “ধোঁয়াহীন আগুন” থেকে (সূরা রহমান 55:15)। মানে, তার অস্তিত্ব বাস্তব, তবে মানুষের চোখে অদৃশ্য।
প্রশ্ন:১৯ তাহলে যখন কুরআনে বলা হয় “প্রকাশ্য শয়তান”, সেটা কি মানে তার দৃশ্যমান আকৃতি আছে? উত্তর:১৯ না। “প্রকাশ্য” মানে হলো — তার প্রতারণা ও শত্রুতা একেবারে স্পষ্ট। কুরআনে বলা হয়েছে — “শয়তান ও তার দল তোমাদের দেখে, কিন্তু তোমরা তাদের দেখতে পাও না।” (সূরা আ‘রাফ 7:27)। তাই প্রকাশ্য মানে আকৃতি নয়, বরং তাদের কার্যকলাপ সবার কাছে প্রকাশ্য।
প্রশ্ন:২০ শেষ প্রশ্ন — শয়তানের কি স্ত্রী-পুরুষ আছে? তারা কি মানুষের মতো বংশ বিস্তার করে? উত্তর:২০ কুরআন বলছে — “তোমরা কি ইবলিসকে ও তার সন্তানদেরকে অভিভাবক বানিয়ে নিলে?” (সূরা কাহফ 18:50)। এখানে “সন্তান” কথাটাই প্রমাণ করে যে তাদের বংশ বিস্তার আছে। তাদের মধ্যেও স্ত্রী-পুরুষ আছে, তবে সেটা মানুষের মতো নয়। তাদের জগৎ অদৃশ্য, তাই প্রক্রিয়াটাও আমাদের কাছে অজানা।
✅ পর্ব_৫ জ্বী একরামুল হক সাহেব, এবার পর্ব–৫ শুরু করা যাক। এখানে আমি আলীগড় মাদ্রাসার কোরআন বিভাগের মুহতারাম হিসেবে আপনার প্রশ্নগুলির উত্তর দিব ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন ২১ (একরামুল হক): শয়তান শুধু জীন থেকে সৃষ্টি নয়, মানুষ থেকেও হয়। আপনার ১৮ নং প্রশ্নের উত্তরে আমি দ্বিমত পোষণ করি। উত্তর : ২১ (মুহতারাম): আপনার আপত্তি যথার্থ। কোরআনে দুই ধরনের শয়তানের উল্লেখ আছে: ১. জিন শয়তান — এরা আসলেই জিন জাতি থেকে, যেমন ইবলিশ। ২. মানব শয়তান — মানুষও শয়তানি চরিত্র গ্রহণ করলে তাকে শয়তান বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন: ﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ﴾ “এভাবে আমি প্রত্যেক নবীর শত্রু করেছি মানব শয়তান ও জিন শয়তান।” (সূরা আন‘আম ৬:১১২) অতএব, শয়তান শুধু জীন নয়, মানুষ থেকেও হয়।
প্রশ্ন ২২ (একরামুল হক): আজাজীল জীন যে অধিকার পেয়েছিল আদম সৃষ্টির আসরে উপস্থিত থাকার, তখন পর্যন্ত বা তার পূর্বেও কি শয়তানের অস্তিত্ব ছিল? উত্তরঃ২২ (মুহতারাম): জ্বী, শয়তানের অস্তিত্ব ইবলিশের পূর্বেও ছিল। কোরআনে শয়তানকে একক ব্যক্তি নয়, বরং এক শ্রেণি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। আজাজীল জীন (যাকে পরবর্তীতে ইবলিশ বলা হয়) সে সময়কার প্রধান, সে আদমকে সিজদা না করার মাধ্যমে লানতপ্রাপ্ত হলো। কিন্তু তার আগেও মন্দপ্রবণ জীন ছিল — যাদের মধ্যে বিদ্রোহী চরিত্রই “শয়তান” নামে পরিচিত। তাই ইবলিশ ছিল প্রথম শয়তান নয়, বরং সর্বাধিক প্রকাশ্য শয়তান।
প্রশ্ন ২৩ (একরামুল হক): ইবলিশ লানত পাওয়ার আগে কোন সে ইবলিশ শয়তান আজাজীল জীনকে ধোকা দিল? উত্তরঃ২৩ (মুহতারাম): কোরআনে স্পষ্টভাবে এমন কোনো পৃথক শয়তানের উল্লেখ নেই যে ইবলিশকে ধোঁকা দিয়েছে। তবে যুক্তিগতভাবে বলা যায় — আজাজীলের নাফস ও কিবর (অহংকার) তাকে ধোঁকা দিয়েছে। সে নিজেই নিজের শয়তান হলো। আল্লাহ বলেন: ﴿فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ﴾ (সূরা কাহফ ১৮:৫০) “সে তার রবের আদেশ অমান্য করে ফাসেক হয়ে গেল।” অতএব, কোনো বাহ্যিক শয়তান নয়, বরং তার নিজের নাফসই তাকে পথভ্রষ্ট করেছিল।
প্রশ্ন ২৪ (একরামুল হক): নাফস বলতে কি বুঝেন? উত্তরঃ ২৪ (মুহতারাম): “নাফস” শব্দের অর্থ আত্মা, অন্তঃকরণ বা নিজের সত্তা। কোরআনে নাফসের বিভিন্ন স্তর উল্লেখ আছে: ১. نفس أمارة بالسوء — মন্দের প্রতি প্ররোচনাকারী নাফস (সূরা ইউসুফ ১২:৫৩) ২. نفس لوامة — নিজের দোষে অনুতপ্ত নাফস (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:২) ৩. نفس مطمئنة — পরিতৃপ্ত ও শান্ত নাফস (সূরা ফজর ৮৯:২৭) অতএব, নাফস হলো মানুষের ভেতরের প্রবৃত্তি, যা কখনো মন্দের দিকে, কখনো কল্যাণের দিকে ঝুঁকে যায়।
প্রশ্ন ২৫ (একরামুল হক): জান্নাত–জাহান্নাম আগে সৃষ্টি না জীন আগে সৃষ্টি? উত্তরঃ ২৫ (মুহতারাম): কোরআনের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী: প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে আরশ ও কুরসি। তারপর আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেন। জাহান্নামকে বলা হয়েছে “وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ” — অর্থাৎ ইতিমধ্যে প্রস্তুত (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩১)। জান্নাত সম্পর্কেও বলা হয়েছে: “أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ” (৩:১৩৩)।
অতএব, জান্নাত–জাহান্নাম সৃষ্টিই হয়েছিল মানুষের ও জীনের পরীক্ষা শুরুর পূর্বেই। আর জীন সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াহীন আগুন থেকে (সূরা রহমান ৫৫:১৫)।
✅ পর্ব – ৬ প্রশ্ন ২৬ (একরামুল হক): আপনি আমার ২২ নং প্রশ্নে স্বীকার করেছেন শয়তান ইবলিস উপাধি পাওয়ার পূর্বেও ছিল? আমি তাই দাবী করি আজাজীলকেও অনুরূপ কোন এক শয়তান ধোকা দিয়েছিল সিজদাহ থেকে বিরত থাকতে। আর সেটি কে? উত্তরঃ ২৬ (মুহতারাম): কোরআনে কোনো আলাদা বাহ্যিক শয়তানের উল্লেখ নেই যে আজাজীলকে ধোঁকা দিয়েছিল। বরং আল্লাহ তাঁর নিজের প্রবৃত্তির (نَفْس) দোষকে ইঙ্গিত করেছেন। আয়াত: ﴿فَفَسَقَ عَنْ أَمْرِ رَبِّهِ﴾ (সূরা কাহফ ১৮:৫০) “সে তার রবের আদেশ অমান্য করে ফাসেক হয়ে গেল।” অতএব, কোনো বাইরের শয়তান নয়—আজাজীলের নিজের ভেতরের প্রবৃত্তিই তাকে ধোঁকা দিয়েছিল।
প্রশ্ন ২৭ (একরামুল হক): আপনি হয়তো বলবেন ২৬ নং প্রশ্নের উত্তরে গতানুগতিক উত্তর অহংকার—আজাজীল আগুনের তৈরী বলে। বরং আমি দাবী করি, অহংকার নহে; তার নাফসে আম্মারাই তাকে বিরত রেখেছিল। তাই নাফসে আম্মারাই প্রথম সৃষ্টি শয়তান, যা আজাজীলকেও কুমন্ত্রণা দিয়েছিল। আপনি কি একমত? একমত না হলে আপনার স্বপক্ষে রেফারেন্স দিন। উত্তরঃ ২৭ (মুহতারাম): আপনার যুক্তি গভীর। তবে কোরআনের ভাষায় ইবলিশের প্রধান অপরাধকে বলা হয়েছে কিবর (অহংকার) ও ইস্তিকবার (আত্মম্ভরিতা)। আয়াত: ﴿أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ﴾ (সূরা বাকারা ২:৩৪) “সে অস্বীকার করল, অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।”
অতএব, নাফসে আম্মারা তার অন্তরের মন্দ প্রবৃত্তি হলেও কোরআনের বর্ণনা অনুসারে মূল কারণ ছিল অহংকার। তাই আমি বলব, “নাফসে আম্মারা” মন্দ প্রবৃত্তির ভূমিকা রাখলেও কোরআনের স্পষ্ট রেফারেন্স অহংকারকেই দায়ী করে।
প্রশ্ন ২৮ (একরামুল হক): নাফস আল্লাহর সৃষ্টি একটি সত্তা যা অশরীরী। এর তিনটি অবস্থান: আম্মারা, লাওয়ামাহ ও মুতমাইন্নাহ। আপনি কি আমার এ দাবীর সাথে পূর্ণ একমত না আংশিক? উত্তরঃ২৮ (মুহতারাম): জ্বী, আমি একমত। কোরআনে নাফসের তিন স্তরের কথা এসেছে: ১. نَفْسٌ أَمَّارَةٌ بِالسُّوء — মন্দের প্রতি প্ররোচনাকারী নাফস (ইউসুফ ১২:৫৩) ২. نَفْسٌ لَوَّامَةٌ — নিজের দোষে অনুতপ্ত নাফস (কিয়ামাহ ৭৫:২) ৩. نَفْسٌ مُطْمَئِنَّةٌ — শান্ত, পরিতৃপ্ত নাফস (ফজর ৮৯:২৭) অতএব, আপনার দাবীর সাথে আমি পুরোপুরি একমত।
প্রশ্ন ২৯ (একরামুল হক): জীন ও ইনসানের নাফসে আম্মারাই হল ইবলিশ বা শয়তান। আপনি কি একমত না দ্বীমত? দ্বীমত হলে আপনার রেফারেন্সসহ মন্তব্য দিন। উত্তরঃ ২৯ (মুহতারাম): আমি আংশিক দ্বিমত পোষণ করি। কারণ: ইবলিশ একটি নির্দিষ্ট সত্তা (একজন জীন), যার নাম কোরআনে এসেছে (সূরা কাহফ ১৮:৫০)। নাফসে আম্মারা হলো প্রতিটি জীন ও ইনসানের অন্তর্গত প্রবৃত্তি। আয়াত: ﴿إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا﴾ (সূরা ফাতির ৩৫:৬) “নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্রু, তাই তোমরা তাকে শত্রু মনে কর।” এখানে “শয়তান” মানে আলাদা সত্তা—ইবলিশ ও তার অনুসারী। অতএব, বলা যায়: নাফসে আম্মারা শয়তানি প্রবৃত্তি তৈরি করে, কিন্তু এটি ইবলিশের সমার্থক নয়।
প্রশ্ন ৩০ (একরামুল হক): শয়তান কি জীন ও মানুষের মত মৃত্যু বরণ করে? উত্তরঃ ৩০ (মুহতারাম): জ্বী, কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে প্রত্যেক সৃষ্টিই মৃত্যুবরণ করবে। আয়াত: ﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ﴾ (সূরা রহমান ৫৫:২৬) “পৃথিবীর উপরে যা আছে সবই ধ্বংস হবে।” এমনকি ইবলিশও বলেছিল: ﴿رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾ (সূরা হিজর ১৫:৩৬) “হে আমার রব! আমাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত অবকাশ দাও।” আল্লাহ উত্তর দিয়েছিলেন: ﴿إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ إِلَىٰ يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ﴾ (১৫:৩৭-৩৮) “তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত, নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।” অর্থাৎ ইবলিশও মৃত্যুবরণ করবে, তবে কিয়ামতের নির্দিষ্ট মুহূর্ত পর্যন্ত তার সময়সীমা স্থগিত রাখা হয়েছে।
✅ শেষ পর্ব _৭ জ্বী একরামুল হক সাহেব, আলীগড় মাদ্রাসার কোরআন বিভাগের মুহতারাম হিসেবে পর্ব–৭ (শেষ পর্ব) আপনি শুরু করতে পারেন।
প্রশ্ন ৩১:আপনি ৩০ নং প্রশ্নে স্বীকার করেছেন—মানুষ ও জীনের মতো শয়তানেরও মৃত্যু হবে; কিন্তু কোরআনে তো আছে, কিয়ামত পর্যন্ত ইবলিস অবকাশ পেয়েছে—এটা কি সাংঘর্ষিক? উত্তর:৩১ সংঘর্ষ নয়; কোরআনের বর্ণনায় দু’টি স্তর আছে সর্বসাধারণ নীতি: সব সৃষ্টি নশ্বর— ১) ﴿كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ﴾ “পৃথিবীর ওপর যা আছে সবই বিলুপ্ত হবে।” (রহমান ৫৫:২৬) ২) ﴿كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَهُ﴾ (কাসাস ২৮:৮৮) ইবলিসের অবকাশ: ইবলিস আবেদন করেছিল—
৩) ﴿رَبِّ فَأَنْظِرْنِي إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ﴾ “হে প্রভু, আমাকে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন।” (হিজর ১৫:৩৬; সদ ৩৮:৭৯) আল্লাহ উত্তর দিলেন— ৪) ﴿فَإِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ * إِلَى يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ﴾ “তুমি অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত—এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত।” (হিজর ১৫:৩৭–৩৮; সদ ৩৮:৮০–৮১)
এখানে “يَوْمِ الْوَقْتِ الْمَعْلُومِ” (জানা নির্দিষ্ট সময়) বলা হয়েছে, “পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত” বলা হয়নি। কোরআনের আরেক স্থানে বর্ণনা আছে—শঙ্খ (সুর) ফুঁকলে আসমান-জমীনের সবাই মূর্ছিত/ধ্বংস হবে, যাকে আল্লাহ ব্যতিক্রম রাখবেন তিনি ছাড়া (যুমার ৩৯:৬৮)। সুতরাং ইবলিস এক নির্দিষ্ট মুহূর্ত পর্যন্ত স্থগিত—তারপর মৃত্যু/সমাপ্তি—এতে কোনো বিরোধ নেই।
প্রশ্ন ৩২:আমি মনে করি—শয়তান আলাদা সৃষ্টি নয়; জীন ও আদমের ভাল-মন্দ করার প্রদত্ত ক্ষমতা—নাফসে আম্মারা-ই শয়তান। উত্তর: ৩২ আপনার বক্তব্যের অভ্যন্তরীণ দিকটি (মন্দ প্রবৃত্তি) কোরআনে স্বীকৃত; তবে শয়তান শব্দের ব্যবহার কোরআনে দ্বিমাত্রিক: (ক) বাহ্যিক সত্তা: ইবলিস নামক নির্দিষ্ট জীন— ১) ﴿إِلَّا إِبْلِيسَ كَانَ مِنَ الْجِنِّ﴾ “ইবলিস তো জীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।” (কাহফ ১৮:৫০) এবং মানব ও জীন—উভয় প্রজাতির শয়তান: ২) ﴿شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ﴾ (আন‘আম ৬:১১২)
(খ) অভ্যন্তরীণ প্ররোচনা ১) ﴿إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ﴾ “নাফস তো অবশ্যই মন্দের দিকে প্ররোচিত করে।” (ইউসুফ ১২:৫৩) ২) ﴿مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ … مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ﴾ “ওয়াসওয়াস (কুমন্ত্রণা) দানকারী—জীন ও মানব উভয় থেকে।” (নাস ১১৪:৪–৬)
শব্দমূল (صرف/لغة): ১) شَيْطَان (ش-ط-ن): দূরে সরে যাওয়া/রহমত থেকে বিচ্যুতি। ২) نَفْس (ن-ف-س): প্রাণ/সত্তা/অন্তর। ৩) وَسْوَسَ (و-س-س): কানে-কানে প্ররোচনা।
তাই সিদ্ধান্ত: “নাফসে আম্মারা” শয়তানি প্রবৃত্তি জন্ম দেয়—কিন্তু কোরআনের ভাষায় ইবলিস/শয়তান অনেক সময় বাহ্যিক সত্তা/দলও বটে। একে একটিতে সীমিত করা কোরআনের সামগ্রিক ব্যবহারের সাথে মেলে না (৬:১১২; ১৮:৫০; ১১৪:৪–৬; ১২:৫৩)।
প্রশ্ন ৩৩: আল্লাহ কি প্রকৃতই একক/একা? তাঁর কোনো প্রতিপক্ষ আছে? উত্তর:৩৩ কোরআনের স্পষ্ট ঘোষণাঃ ১) ﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ﴾ “বলুন, তিনি আল্লাহ—একমাত্র।” (ইখলাস ১১২:১–৪) ২) ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ﴾ “তাঁর সমতুল্য কিছুই নেই।” (শূরা ৪২:১১) ৩)﴿لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ﴾ “আসমান-জমীনের সার্বভৌমত্ব তাঁরই।” (হাদীদ ৫৭:২) ৪) ﴿لَا شَرِيكَ لَهُ﴾ “তাঁর কোনো শরিক নেই।” (আন‘আম ৬:১৬৩; ৬:১০২) অতএব আল্লাহর কোনো ‘প্রতিপক্ষ’ (co-equal rival) নেই—সব সৃষ্টি তাঁর অধীন।
প্রশ্ন ৩৪:সমস্ত সৃষ্টিই তাঁর—কিন্তু তিনি নাকি নিজেই ‘প্রতিপক্ষ’ বানালেন শয়তানকে, আর পক্ষ করলেন জীন-মানুষসহ সবারে? উত্তর:৩৪ কোরআনের বয়ানে বিষয়টি পরীক্ষা/ইমতিহান (ابتلاء), প্রতিদ্বন্দ্বিতা (rivalry) নয়। সৃষ্টির উদ্দেশ্য—পরীক্ষা: ১) ﴿الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ﴾ “তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন—তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য।” (মূলক ৬৭:২) শয়তানের ক্ষমতার সীমা: ২) ﴿إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا﴾ “শয়তানের কৌশল তো দুর্বল।” (নিসা ৪:৭৬) ৩) ﴿إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا﴾ “মুমিনদের ওপর তার কোনো কর্তৃত্ব নেই।” (নাহল ১৬:৯৯–১০০) ৪) ﴿وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي﴾ — কিয়ামতের দিনে শয়তান বলবে: “আমি তো তোমাদের ওপর কোনো কর্তৃত্ব রাখতাম না—ডেকেছিলাম, তোমরা সাড়া দিয়েছিলে।” (ইব্রাহিম ১৪:২২)
ইবলিস স্বীকার করে—সবাইকে নয়, শুধু ভ্রষ্টদেরই টানে: ৫) ﴿قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ * إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ﴾ (সাদ ৩৮:৮২–৮৩) ৬) ﴿إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ﴾ (হিজর ১৫:৪২)
অতএব, আল্লাহ শত্রুপক্ষ নির্মাণ করেননি; বরং নৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন, এবং শয়তানের প্রলোভনকে পরীক্ষার অংশ করেছেন—যার ক্ষমতা সীমিত ও শর্তাধীন।
প্রশ্ন ৩৫: “জীবের রূহে আল্লাহ স্বয়ং নিজে বিরাজ করেন”—আর প্রতিপক্ষ নাফসে আম্মারাও তাঁরই সৃষ্টি—এভাবে হুলুল/ঐক্য (ঈশ্বর সৃষ্টিতে মিশে থাকা) কি সত্য?
উত্তর: কোরআনের বয়ানে স্রষ্টা ও সৃষ্টি চিরভিন্ন—আল্লাহ সৃষ্টিতে “বসবাস” করেন না।
তাঁর অনন্যতা ও অদ্বিতীয়তা: ১) > ﴿قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ … وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ﴾ (ইখলাস ১১২) ২) ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ﴾ (শূরা ৪২:১১)
‘রূহ’-সংক্রান্ত সীমা: ১) > ﴿وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الرُّوحِ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي﴾ “রূহ আমার রবের ‘আদেশ/কমান্ড’-সংক্রান্ত।” (ইসরা ১৭:৮৫) ২) “مِنْ رُوحِي” (আমার রূহ থেকে) — আদম সম্পর্কে: ৩) > ﴿وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي﴾ (হিজর ১৫:২৯; সাদ ৩৮:৭২) এখানে إضافة التشريف—সম্মানসূচক সম্বন্ধ; অর্থ আল্লাহর কোনো অংশ সৃষ্টি-দেহে প্রবেশ করেছে—এমন নয়। স্রেফ সৃজন-সম্মানের ভাষা।
আল্লাহর “সাথে থাকা” মানে জ্ঞান/তত্ত্বাবধান, বস্তুগত অবস্থান নয়: ১) > ﴿وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنْتُمْ﴾ (হাদীদ ৫৭:৪) — প্রসঙ্গে কোরআন বারবার বোঝায়, তাঁর শোনা-দেখা-জানা সর্বত্র (মুজাদালাহ ৫৮:৭; ত্বাহা ২০:৪৬)—সত্তাগত মিশে থাকা নয়।
নাফসে আম্মারা: ১) > ﴿فَأَلْهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقْوَاهَا﴾ “নাফসকে তার পাপপ্রবণতা ও তাকওয়া—উভয় পথই অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।” (শামস ৯১:৮–১০) অর্থাৎ নৈতিক সম্ভাবনা আল্লাহ দিয়েছেন; প্রতিপক্ষ রূপে ‘ঈশ্বরীয় সত্তা’ নয়, বরং সৃষ্ট নৈতিক চ্যালেঞ্জ—যার জবাবদিহি আমাদেরই (১২:৫৩; ৯১:৭–১০)। সারসংক্ষেপ: “আল্লাহ রূহে বাস করেন”—এটি কোরআনিক নয়; কোরআনের ভাষা হলো—রূহ তাঁর ‘আদেশভুক্ত’ সৃষ্টি, এবং “من روحي” সম্মানসূচক। স্রষ্টা–সৃষ্টি ভেদের রক্ষা কোরআনের কেন্দ্রীয় বক্তব্য।
খোলা-চিন্তার সংক্ষিপ্ত সিদ্ধান্তঃ ইবলিসের ‘অবকাশ’ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত; তারপর সর্বসাধারণ নশ্বরতার বিধান কার্যকর—কোনও বিরোধ নেই। (১৫:৩৬–৩৮; ৩৮:৭৯–৮১; ৩৯:৬৮; ৫৫:২৬)
শয়তান—কখনো বাহ্যিক সত্তা/দল (৬:১১২; ১৮:৫০), কখনো অন্তরের প্ররোচনা (১২:৫৩; ১১৪:৪–৬); একটিতে সীমাবদ্ধ নয়।
আল্লাহ একক, নিরুপম; তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। (১১২; ৪২:১১; ৬:১০২, ১৬৩)
শয়তানের ভূমিকা পরীক্ষামূলক ও সীমিত; কর্তৃত্ব কেবল যারা স্বেচ্ছায় সাড়া দেয় তাদের ওপর। (১৬:৯৯–১০০; ১৪:২২; ১৫:৪২; ৩৮:৮২–৮৩)
“রূহে আল্লাহ বাস করেন”—এ দাবি কোরআনিক নয়; “রূহ” আল্লাহর আদেশভুক্ত সৃষ্টি, “من روحي” সম্মানসূচক ইদাফা। (১৭:৮৫; ১৫:২৯; ৩৮:৭২)

2 replies on “শয়তানের প্রথম সৃষ্টি”
আলোচনায় আরশ ও ইবাদতের সংজ্ঞা আসেনি।
আল্লাহর আনুগত্যকে ইবাদত বলে বিপরীত হচ্ছে শয়তান শয়তান কোন ব্যক্তিগত বা বস্তুগত অস্তিত্ব নয়। আনুগত্য হীন তাকে শয়তান বলে। এর প্রতীক হল একজন জিন যে আনুগত্যহীনতার পরিচয় দেয়ার পর ইবলিশ নামে ভূষিত হলো। সৃষ্টির শুরু থেকেই আনুগত্য হীনতার শুরু। এটা আলোচনায় আসেনি।
আরশ হলো আল্লাহ প্রদত্ত সার্বিক নিয়ম কানুনের সমষ্টি। যা সৃষ্টি মেনে চলেছে বা অধীন হয়ে আছে। এই নিয়ম নীতির উপরে তিনি সমাসীন। আর এই নিয়ম নীতি মেনে চলাকেই ইবাদত বলে না মেনে চলা কে শয়তান বলে।
শয়তানের কোন ব্যক্তি বা বস্তুগত অস্তিত্ব নাই এটাই একটি আনুগত্যহীনতার প্রতীক মাত্র।
আর সব ঠিক আছে।
আলোচনায় শয়তান আনুগত্য হীনতার প্রতীক এটা প্রকাশ হয়েছে। আরোশ ও ইবাদাত কি ও কেন প্রকাশ পায়নি। সেটা আমি যা বুঝেছি তা প্রকাশ করলাম। ❤️❤️❤️
Thank you for attention