কদর রাত্রি
রমজান মাসের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাত্রীকে কদর রাত্রী বলা হয়। যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এবং এই কদর রজনীতে কোরান নাজিল হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
কিন্তু প্রশ্ন উঠে, হেরা গুহায় কোরানের প্রথম যে আয়াত নাযিল হয়েছিল ——-” পড় তোমার প্রভুর নামে ” তা তো রমজান মাস ছিল না। তা কি কোরান নয়?
রমজান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার যে আয়াত টি নাযিল হয়েছে বদরের যুদ্ধের বছরে। সে বছর হতেই রোজা ফরজ করা হল। এবং ১৭ ই রমজান বদর যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। আর সেদিন রোজা ছেড়ে দেয়ার জন্য রাসুল নির্দেশ দেন যুদ্ধে অংশ গ্রহন কারীদের।
এর আগে মক্কা জীবনে ” হে চাঁদর আবৃত ব্যক্তি” আয়াত তো রমজান মাসে অবতীর্ন হয় নি। হয়েছে শাওয়াল মাসে।
কোরান রমজান মাসের কদর রজনীতে অবতীর্ন হয়েছে কিভাবে তাহলে? কোরান তো বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাসে খন্ড খন্ড ভাবে নাযিল হয়েছে বলে ইতিহাস বলে এবং কোরান নিজেও দাবী করে।
যেমন বিদায় হজের ভাষনের দিনটি ছিল জিলহজজ মাস। সেদিনে আরাফাতের ময়দানে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে যে আয়াতটি নাযিল হয়েছিল – “আজিকার দিনে ইসলামকে অন্যন্য দ্বীনের উপর বিজয় ঘোষনা করা হল ” এ আয়াতটি নাযিলের সময় রমজান মাসের কোন অস্তিত্তই ছিল না। অকাঠ্য ভাবে প্রমাণিত।
তাহলে কি কোরানের আয়াত যখন যে ভাবে যে সময়েই নাযিল হোক না কেন, পুর্ণ কোরান একত্রে রমজান মাসের কদর রজনীতে নাযিল করা হয়েছে পুনরায়?
এছাড়া সুরা কদরে ” তানাজজালু মালাইকাতুহু ওয়া রুহ — এর অনুবাদ দাড়ায় ” আমরা অবতীর্ণ করি ফেরেস্তাগনকে এবং রুহকে অর্থাৎ আল্লাহর বিভিন্ন আদেশকে ।
উক্ত সূরার ভিতরে কোরান বলে কোন শব্দই নেই। আছে মালাইকা এবং রুহ নাযিলের কথা। রুহ শব্দটির অনুবাদ কোরান লিখে দিয়ে বুঝানো হল রমজান মাসে কদর রজনীতে কোরান নাযিল হয়েছে।
প্রকৃত কদর রজনী এমন একটি বরকত ময় রজনী, যে রজনীকে আল্লাহ হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলেছেন। এই রজনীর বিষেশড্ব হল এই যে সে রজনীতে আল্লাহর ফেরেস্তাগন বিভিন্ন আদেশ সহ অবতীর্ণ হয়। এখানে কোরান নাযিলের কোন উল্লেখ নেই। এটি বিকৃত অনুবাদ করে বলা হয়ে থাকে। কোরান বলতে কোন শব্দই নেই উক্ত সুরার কোন আয়াতে। আর এটি রমজান মাসের বিজোড় শেষ কোন দিন এটিও বানোট ও অনুমান নির্ভর। হাদীস ভিত্তিক কথা। আরবী মাস বা হিজরী সন গণনার প্রচলন হয় হযরত উমর রাঃ এর শাসন আমল থেকে। অথচ সুরা কদর নাযিল হয় ৬০২ খৃঃ রাসুল সাঃ এর জীবদ্দশায়।লাইলাতুল কদর অবশ্যই বরকত ময় একটি রজনী এতে কোন সন্দেহ রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু এটা যে রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় দিনে এটি মিথ্যা। যদিও হাদীস তা সমর্থন করে। কোরানের রেফারেন্সে লাইলাতুল কদর রজনী বছরের যে কোন মাসে যে কোন দিনে হতে পারে। যা আল্লাহ জানিয়ে দেন নাই। তা এজন্য যে মানুষ যেন সারা বছর তা তালাশ করে। আর এ রজনীতে কোরান নাযিলের কোন কথাও আল্লাহ বলেন নাই। এটা মোল্লাদের বানানো কথা। হাদীস ভিত্তিক কথা। যে হাদীসের উক্তি কোরানের সাথে সাংঘর্ষিক তা কখনোই রাসুলের বাণী নয়। মানব রচিত অনুমান ভিত্তিক বাণী।
ভয়ভীতি আর জান্নাতের শর্টকাট রাস্তার লোভ দেখানো এ দুটোই ধর্মজীবি মোল্লাদের ব্যবসার পুঁজি।
আর সাধারন অজ্ঞ মানুষগুলি এবং দুর্নীতি পরায়ন মানুষগুলি এ দুটোতেই দুর্বল হয়ে পড়ে মুক্তির আশায়। তাই যুগে যুগে ধর্মজীবির অনুসারী বেশী।
মানব রচিত হাদীস নিয়ে আল্লাহ বলপনঃ “মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবার জন্য মিথ্যে হাদীস রচনা করিয়া নেয় এবং আল্লাহ্ প্রদর্শিত পথ লইয়া ঠাট্টা – বিদ্রপ করে। উহাদেরই জন্য রহিয়াছে অবমাননাকর শাস্তি। (31:6)
আল্লাহ্ অবতীর্ণ করিয়াছেন উত্তম হাদীস সম্বলিত কিতাব যাহা সুসমঞ্জস এবং যাহা পুনঃ পুনঃ আবৃত্তি করা হয়। (39:23)
ধর্মজিবীদের প্রসঙ্গে আল্লাহ সতর্ক করে বলেনঃ ” হে মু’মিনগণ! আলেম এবং দরবেশ গনের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন – সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করিয়া থাকে এবং লোককে আল্লাহ্র পথ হইতে নিবৃত্ত করে। (9:34)