Categories
My text

যাকাত ও প্রচলিত রিতী

 

যাকাত বিষয়ে প্রচলিত ধারনাঃ 

সুদ,ঘুষ, প্রতারণা মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ে, অন্তরের ভয়,পাপ রাশি লুকাবার জন্য ভীরু মন তখন যাকাত খুজে।

যাকাতের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে পাপ মুক্ত ভাবে।

যাকাত কি কালো টাকা সাদা করার অফার?
যা দিয়ে হারাম সম্পদ হালাল করা যায় ?

বছরে একবার যাকাত দিয়ে ভাবে আমি গংগায় স্নান করে সুচি হলাম। এতে একমাত্র লাভবান হয়…………. এ প্রথার প্রচলনকারীরা, আপনি বিন্দু মাত্রও না। আল্লাহর সন্তুষ্টি তো দূরে থাক।

চামড়া,দান,সদকা, ভক্ষন কারীরা যাকাত কে ২.৫% এর উৎসে কর আদায়ের তহবিল করে চাপিয়ে দিয়েছ। আল্লাহ কি কোথাও যাকাতকে এ ভাবে ২.৫% আদায়ের বর্ননা করেছেন?

হে মু’মিনগণ! পণ্ডিত এবং সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই লোকের ধন-সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করিয়া থাকে এবং লোককে আল্লাহ্‌র পথ হইতে নিবৃত্ত করে। আর যাহারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে এবং আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করে না উহাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তির সংবাদ দাও। (৯ঃ৩৪)

কোরানে যাকাতের এই ২.৫% এর বর্ননা কোথাও নেই। হ্যা আছে, হাদীসে। তখন প্রশ্ন আসতে পারে আপনি কি হাদীস অস্বীকার করেন? না, আমি অস্বীকার করি না, তবে হদীসের সত্যতা যাচাই করে গ্রহন করি।

ইসলামে যাকাত একটি গুরুত্তপুর্ন বিষয় যা সালাতের সাথে আষ্ঠে-পিষ্ঠে জড়িত। যেখানেই সালাতের উল্লেখ করেছেন আল্লাহ সেখানেই যাকাত । কিন্তু পরিমানটা সম্পদের ২.৫% যদি যাকাতের নেসাব হতো অবশ্যই আল্লাহ তা কোরানে উল্লেখ করতেন।

যেমন: উল্লেখ করেছেন মৃত ব্যক্তির সম্পদের উত্তরাধিকারী আইন। কে কত অংশ পাবে? মৃত ব্যক্তির সম্পদের অংশ উল্লেখ করতে পারলে, জীবিত ব্যক্তির সম্পদের কত অংশ যাকাত দিতে হবে অবশ্যই উল্লেখ করতেন মহান রব।

তার মানে কোরানে বর্নিত দান, সাদাকা,ফিতরা,উশরকে যাকাত এর সাথে মিশিয়ে একাকার করে তালগুল পাকিয়ে ফেলা হয়েছে ইচ্ছে করে।

যদিও পারসিয়ানরা তাদের ভাষায় সালাতের অনুবাদ নামাজ সিয়ামের অনুবাদ রোজা করে দিয়েছে, কিন্তু যে কারনেই হোক যাকাতের কোন অনুবাদ করে দেয়নি । ফলে যাকাত, যাকাতই রয়ে গেছে, আর হজ্জ, হজ্জই।

এ প্রশ্ন গুলি ভাবতে পারলেই দান,সদাকা,ফিতরা থেকে যাকাত কে তার নিজ অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে অনুধাবন করা সম্ভব।

আমাদের মগজে যাকাতের ধারনা এমন ভাবে দখল করে আছে যে যাকাত বলতে ধনীর সম্পদের একটি অংশ গরীবের মাঝে বিতরন করাকেই বুঝায়।

যেমন যাকাত বলতে আমরা বুঝে থাকি—–

প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক মুসলমান নর-নারীকে প্রতি বছর স্বীয় আয় ও সম্পত্তির একটি নির্দিষ্ট অংশ, যদি তা ইসলামী শরিয়ত নির্ধারিত সীমা (নিসাব পরিমাণ) অতিক্রম করে তবে, গরীব-দুঃস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে যাকাত বলা হয়।
যাকাত ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের ধনী গরিবের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভুত করা হয়।

আরবী الزكاة ‘যাকাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ বৃদ্ধি ও উন্নতি। যাকাত শব্দের আভিধানিক আরেকটি অর্থ হয় التطهير (তাতহির), যার বাংলা অনুবাদ পবিত্র করা। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

﴿قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩﴾ [الشمس: 9]

“সে নিশ্চিত সফল হয়েছে যে তাকে (নফসকে) পবিত্র করেছে”। [সূরা আশ-শামস, আয়াত: ৯]
কাকে জাকাত দেওয়া যায় এবং কাকে দেওয়া যায় না, এ ব্যাপারে ইসলামে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে। কোরআনে বলা হয়েছে যে ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায় কর্মী, নও মুসলিম ও অনুরাগী, দাস-দাসী, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, মুজাহিদ ও বিপদগ্রস্ত মুসাফিরকে জাকাত দিতে হবে।
সুরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াত অনুযায়ী যারা জাকাত পাওয়ার উপযোগী, তারা হলেন:

১. ফকির: যার বেঁচে থাকার মতো সম্বল নেই বা খুব সামান্য। ২. মিসকিন: এমন অভাবী, যার রোজগার তার নিজের এবং তার ওপরে নির্ভরশীলদের অপরিহার্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। ৩. জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণকাজে নিয়োজিত কর্মচারী, যাদের আমিলিন বলে। ৪. নব্য মুসলিম যার ইমান পরিণত হওয়ার পথে আছে অথবা ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক কোনো অমুসলিম। ৫. মুক্তিপণ ধার্যকৃত দাস বা রিকাব। ৬. ঋণী ব্যক্তি যিনি জাকাতের অর্থে ঋণ পরিশোধ করতে চান। ৭. আল্লাহর পথে ইসলামের প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজে সক্রিয়ভাবে নিয়োজিত ব্যক্তি (মুজাহিদ)। ৮. বিপদগ্রস্ত মুসাফির।

যাদের জাকাত দেওয়া যায় না

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, যে ব্যক্তি অন্যূন ৮৫ গ্রাম সোনা বা ৫৯৫ গ্রাম রুপার সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা সমমূল্যের দ্রব্যসামগ্রী বা বাণিজ্য পণ্যের মালিক, তাকে জাকাত দেওয়া যায় না। এমন ব্যক্তির জাকাত গ্রহণ নিষেধ। নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারীকে জাকাত দিলে আদায় হবে না।

নির্দিষ্ট আত্মীয়: কেউ তার আপন মা, বাবা, মাতামহ, মাতামহী, পিতামহ ও পিতামহী এবং তাদের পিতা-মাতাকে জাকাত দিতে পারবে না। একইভাবে নিজের ছেলে, মেয়ে, নাতি ও নাতনি এবং তাদের সন্তানদে জাকাত দেওয়া যায় না। আবার স্বামী স্ত্রীকে জাকাত দিতে পারবেন না। স্ত্রী স্বামীকে জাকাত দিতে পারবেন না।

সেবার প্রতিদান: পারিশ্রমিক হিসেবে কাউকে জাকাত দেওয়া যায় না ।

কর্মচারীর মজুরি: গৃহভৃত্য বা অন্য কোনো কর্মচারীকে মজুরি হিসেবে জাকাত দেওয়া যায় না। অবশ্য মজুরি ছাড়া উপহার হিসেবে তাদের জাকাত দেওয়া যায়।

সূরা তওবার ৬০ নম্বর আয়াতে যাকাত ব্যয় করার ৮টি খাত নির্ধারিত করে বিধান নাযিল করা হয়। এখানে লক্ষণীয় এতে যাকাতকে সাদাকাত বলা হয়েছে। আল্লাহ ইরশাদ করেন : সাদাকা (যাকাত) তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর বিধান, আল্লাহ সব জানেন, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবা : আয়াত ৬০)।

আর আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে যাহা তাহাদের দিয়াছেন তাহাতে যাহারা কৃপণতা করে তাহাদের জন্য উহা মঙ্গল, ইহা যেন তাহারা কিছুতেই মনে না করে। না, ইহা তাহাদের জন্য অমঙ্গল। যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিবে কিয়ামতের দিন উহাই তাহাদের গলায় বেড়ি হইবে। আস্মান ও যমীনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহ্‌রই। তোমরা যাহা কর আল্লাহ্ তাহা বিশেষ ভাবে অবহিত। সূরা নম্বরঃ ৩, আয়াতঃ ১৮০

যাকাত আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আয়কর নয় কিংবা গরিবের প্রতি দয়ার দানও নয়। এটা ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার যা আল্লাহ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন।

ফিতরা:
ফিতরাও এক ধরনের যাকাত, একে সাদাকাতুল ফিতরও বলা হয়। রমাদানুল মুবারকের শেষে ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায় শরী’আত দ্বারা। নির্দিষ্ট করে দেওয়া নির্দিষ্ট পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারীর ওপর অর্থাৎ সাহিবে নিসাবের ওপর।

যাকাতের নিসাব ও ফিতরার নিসাব সমান হলেও ধন-সম্পদের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হলে সেই সাহিবে নিসাবের ওপরে যাকাত বাধ্যতামূলক হয়ে যায় শতকরা আড়াইভাগ হিসাব করে যাকাত দেওয়া, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন হয় না বরং ঈদুল ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হলেই তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়।

নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে সাড়ে সাত তোলা সোনা অর্থাৎ ৮৭.৪৫ গ্রাম সোনা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য অর্থাৎ ৫১২.১৫ রৌপ্য অথবা ওই পরিমাণ সোনা বা রৌপ্যের দামের অর্থ অথবা সম্পদ। বর্তমানে যা প্রায় ৭৮ হাজার টাকার সমপরিমাণ সম্পদ। ফিতরার জন্য নির্ধারিত নিসাবের অধিকারীকে ফিতরার জন্য নির্ধারিত মাথাপিছু হিসেবে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।

সাহিবে নিসাব নিজের পরিবারের নাবালিগ সন্তানাদি, গৃহভৃত্য সবার ফিতরা তিনি আদায় করবেন। এমনকি ঈদুল ফিতরের দিন সকাল বেলার পূর্বে যদি কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ করে তারও ফিতরা আদায় করবেন। ঈদের দিন সকালে ঈদের সালাত আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে ফিতরা দেওয়া উত্তম।

ফিতরার মাধ্যমে রমাদানের সিয়ামের মধ্যে যদি কোনো অনিচ্ছাকৃত ছোটখাটো ত্রুটিবিচ্যুতি হয়ে থাকে তার প্রায়শ্চিত্ত সঞ্চিত হয়।

সাদকাতুল ফিতর শুধু মাত্র রমজান মাসে রোজাদরদের ভুল-ত্রুটি ইত্যাদির কাফ্ফারা হিসেবে দিতে হয়। আর যাকাত অর্জিত সম্পদের বাৎসরিক হিসাবের ওপর নির্ধারিত হয়

পর্যালোচনার বিষয়ঃ

১) কোন আয়াতে নেসাব নির্ধারন করা হয়েছে ২.৫% তা উল্লেখ নেই।

২) সূরা তওবা আয়াত ৬০ কে যাকাতের খাত সমুহের বর্ননা করা হয়। অথচ উক্ত আয়াতে যাকাত শব্দটিই নাই। আছে সাদাকা।

৩) কোরানে যেখানেই সালাত শব্দ এসেছে সেখানেই যাকাত শব্দটিও এসেছে। সালাত ধনী গরিব, সুস্থ-অসুস্থ সর্ব অবস্থায় সকলের উপর যেমন ফরজ। যাকাতও তেমনি ফরজ হওয়ার কথা।

৪) ইসলাম আমির ফকির,সবল-দূর্বল সবার জন্য সমান অধিকার সংরক্ষন করে। কোন শ্রেনী বৈষম্য করে না, ইবাদত বন্দেগীর ক্ষেত্রে আরো নিখুত। প্রকৃত যাকাতকে তার স্বকীয়তায় না রাখার জন্য গরীবের স্তম্ভ তিনটি, ধনীর স্তম্ভ ৫টি বৈষম্য সৃষ্টি করে। যা কোন খুড়া যুক্তি দিয়ে খন্ডন করতে চাইলেও যৌক্তিক হবে না।

৫) যাকাত প্রথা ইব্রাহীম ইসমাইল নবী থেকে, মুসা,ঈসা,নুহু, সকল নবীর উপর ফরজ ছিল, যেমন ফরজ করা হয়েছে নবী মুহাম্মদ সাঃ এর উপর।

৬) যাকাত মালকে পবিত্র করে, বাক্যটির অপব্যাখ্যা।

৭) সূরা ৯ঃ১০ কে যাকাতের বিধানের আয়াত হিসাবে গ্রহন করা হয়, অথচ উক্ত আয়াতে যাকাত শব্দটাই নাই।

৮) প্রশ্ন জাগে না পুর্ববর্তি নবীগন কিভাবে যাকাত আদায় করতেন? প্রচলিত এই নেসাব হিসাব করে এবং তার ২.৫% হারে কি?

সকল পর্যালোচনা উত্তর সহ বিস্তারিত ওয়েব সাইডে দেয়া আছে আগ্রহীদের জন্য।

(আমি আলোচনা করছি আমার চিন্তা গবেষনা থেকে,সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রেফারেন্স দেখে আপনার বিবেক দিয়ে।

কারন দীর্ঘদিনের প্রচলিত বিশ্বাসের ভিত ভাঙা আমার কাজ নয়। আমি আমার অভিমতের স্বপক্ষে সর্বোচ্চ কিতাব থেকে রেফারেন্স তুলে ধরবো, কিন্ত মানার জন্য কাউকে আহ্বান করবো না)

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by ExactMetrics