Categories
Blog

মহাকাশ

_______ كُلٌّ فِیْ فَلَكٍ یَّسْبَحُوْنَ. _____ ১) كُلٌّ (কুল্লুন) = সবই, ২) فِي (ফী) = উপর ৩) فَلَكٍ (ফালাকি ) = কক্ষপথে ৪) يَسْبَحُونَ (ইয়াছবাহুন ) = সাঁতার কাটছে অর্থঃ প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে। ব্যাখ্যাঃ কুরআনের এ আয়াতটি মহাকাশ সংক্রান্ত অলৌকিক দৃষ্টিভঙ্গির একটি অনন্য নিদর্শন। সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী কক্ষপথে ঘুরছে, এবং তারা সাঁতরাচ্ছে মহাশূন্যে—একটি ভারসাম্যপূর্ণ গতিপথে। ১৪০০ বছর আগে বলা এই বাক্যটি আধুনিক বিজ্ঞান মিলে গেছে একেবারে শব্দে শব্দে। আজকের পৃথিবীতে একবার ঘুরে নিজের অক্ষকে কেন্দ্র করে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট সময় নেয় (এটিই আসলে “sidereal day”)। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, পৃথিবীর বয়স যখন প্রায় ৪.৫ বিলিয়ন বছর, তখন এর একটি দিনের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫-৬ ঘন্টা। সময় বাড়ছে কেন? Tidal friction (চন্দ্র ও সূর্যের মহাকর্ষের কারণে মহাসাগরে জোয়ার-ভাটার ঘর্ষণ) পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে প্রতি ১০০ বছরে দিন প্রায় ১.৭ মিলিসেকেন্ড করে দীর্ঘ হচ্ছে। অতীতে কী ছিল? ১ বিলিয়ন বছর আগে দিনের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ১৮ ঘন্টা। তারও বিলিয়ন বছর আগে ছিল ১২ ঘন্টা। “সৃষ্টির শুরুতে ৬ ঘন্টায় দিন-রাত হতো” ২. মধ্যাকর্ষণ শক্তির ভূমিকা: চাঁদ ও সূর্যের মধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর উপর প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে সমুদ্রের উপর। এই tidal forces পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিয়েছে। মহাকর্ষীয় বলের এই টান পৃথিবীর কৌণিক ভরবেগ (angular momentum) হ্রাস করছে – যার ফলে পৃথিবী ঘুরতে সময় নিচ্ছে বেশি। ৩. আসমানী কিতাবের ইঙ্গিত ও উপলব্ধি: কুরআনে বলা হয়েছে: إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ “যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে।” (৭:৫৪) ছয় দিনের এই ‘দিন’ আসলে কত সময়ের সমান ছিল, তা কুরআন নির্দিষ্ট করেনি। অনেক ব্যাখ্যাকারী বলেন, এটি মানুষের ২৪ ঘন্টার দিন নয়, বরং “দীর্ঘ সময়কাল”। আসলে এ ব্যাখ্যা বরং উল্টো। বিজ্ঞান বলে এ সময় ছিল ৬ ঘন্টা বা তার কাছাকাছি (বিজ্ঞানসম্মত অনুমান)। বরং বিজ্ঞানের এ সময় কোরানের ৬ দিনকে অধিক যৌক্তিক প্রমান করে। বর্তমানে আমাদের ২৪ ঘন্টায় একদিন । এই সময় দিনদিন পরিবর্তন হবে তার কারন চাঁদ-সূর্যের মধ্যাকর্ষণ প্রভাবে পৃথিবীর ঘূর্ণন ধীর হচ্ছে। ভবিষ্যতে কী হবে? ধীরে ধীরে দিন আরও দীর্ঘ হবে। ১. পৃথিবীর অতীত: একদিন ছিল মাত্র ৬ ঘণ্টা!। বিজ্ঞানীরা ভূগর্ভস্থ পাথর ও জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন: আজ থেকে প্রায় ১০০ কোটি বছর আগে, পৃথিবীর একদিন ছিল মাত্র ১৬ ঘন্টা। আরও আগের দিকে, ৪৫০ কোটি বছর আগে (যখন পৃথিবী সদ্য গঠিত হয়), তখন একদিনের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘন্টা। এটি ধরা পড়েছে মহাসাগরের প্রাচীন টাইডাল স্তর (tidal sediments) ও প্রবাল (corals)-এর বৃদ্ধির রিং বিশ্লেষণ করে। ২. ঘূর্ণন ধীর হচ্ছে কেন? এর পেছনে মূল কারণ: চাঁদের মধ্যাকর্ষণ শক্তি। চাঁদ পৃথিবীর দিকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রয়োগ করে। এর ফলে মহাসাগরে জোয়ার-ভাটা (tidal friction) তৈরি হয়। এই জোয়ার-ভাটার ঘর্ষণ শক্তি পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে দিনে সময় বাড়ছে প্রতি ১০০ বছরে প্রায় ১.৭ মিলিসেকেন্ড করে। ৩. ভবিষ্যতের পৃথিবী: দিন হবে ৮৪ ঘন্টা? হ্যাঁ, বিজ্ঞানের কিছু মডেল অনুযায়ী:। যদি এই ধীর গতি অব্যাহত থাকে, তবে কোটি কোটি বছর পরে, একদিন হতে পারে ৮৪ ঘন্টা বা তারও বেশি। পৃথিবী একসময় এত ধীরে ঘুরবে যে একপাশ অনেকক্ষণ দিন থাকবে, অন্য পাশে দীর্ঘ রাত। এটি tidal locking-এর মতো অবস্থা হতে পারে (যেমন চাঁদ সবসময় পৃথিবীর এক মুখ দেখায়)। ৪. এই পরিবর্তনের ফলাফল কী হতে পারে? ক) দীর্ঘদিন মানে সূর্যের উত্তাপে অঞ্চলভেদে উষ্ণতা বাড়বে। খ) দীর্ঘ রাত মানে অনেক সময় ঠান্ডা জমে থাকবে। ঘ) জলবায়ু ভারসাম্য ভেঙে যেতে পারে। ঙ) জীবজগতে এবং কৃষিতে প্রভাব পড়বে। ১) আজ থেকে ৪৫০ কোটি বছর আগে —- ৬–৮ ঘন্টা — পৃথিবীর জন্মলগ্ন। ২) আজ থেকে ১০০ কোটি বছর আগে—- ১৮ ঘন্টা — প্রবাল গবেষণায় প্রমাণ। ৩) বর্তমান —– ২৪ ঘন্টা —– ধীরে ধীরে বাড়ছে ৪) ভবিষ্যৎ (কোটি কোটি বছর পর) — ৪৮-৮৪ ঘন্টা — বিজ্ঞানভিত্তিক পূর্বাভাস। উপসংহার: দিন-রাতের সময় ধীরে ধীরে বাড়ছে, কারণ চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীর করছে। এটা প্রমাণ করে যে, এই মহাবিশ্বের প্রতিটি জিনিস একটি সুবিন্যস্ত নিয়মের অধীন — যেখানে সময়, গতি ও বল একে অপরকে প্রভাবিত করে। ٱلشَّمْسُ وَٱلْقَمَرُ بِحُسْبَانٍۢ “সূর্য ও চাঁদ চলমান নির্ধারিত নিয়মে (হিসাব অনুযায়ী)।”(সূরা আর-রহমান ৫৫:৫) “তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে রাত ও দিন, সূর্য ও চাঁদ…।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১:৩৭)

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *