বাক্কা না মক্কা?
প্রাচীন ব্যাবিলন ছিল মেসোপটেমিয়ার একটি বিখ্যাত সভ্যতার কেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ নগরী।
এই প্রাচীন ব্যাবিলন (Babylon) শহরের বর্তমান নাম আল-হিল্লা (Al-Hillah), যা বর্তমান ইরাক দেশের ভিতরে অবস্থিত।
কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের বর্ননা থেকে প্রতিয়মান হয় ইব্রাহীম আঃ তৎসময় এই ব্যাবিলন শহরেই জন্ম গ্রহন করেছিলেন এবং পুত্র ইসমাঈল আঃ কে মক্কার পর্বত উপতাক্যায় নির্বাসিত করেছিলেন। যদিও সাধারন ভাবে আমরা জেনে এসেছি এবং আমাদের বদ্ধমুল ধারনা যে ইব্রাহীম আঃ মক্কায় জন্ম গ্রহন করেছিলেন। যেহেতু কাবার মুর্তি ভেঙ্গেছেন।
ইব্রাহীম (আঃ) এর জন্মস্থান সম্পর্কে ইসলামিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুযায়ী সবচেয়ে প্রসিদ্ধ মত হলো যে, তিনি ইরাকের উর নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। এই নগরীটি প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার অন্তর্গত ছিল এবং বর্তমান ইরাকের দক্ষিণে ইউফ্রেটিস Euphrates নদীর পাশে অবস্থিত। যাহা বাগদাদ থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে।
তবে কিছু ঐতিহাসিক সূত্রে উল্লেখ করা হয় যে তিনি হারান (Haran) নামক স্থানেও কিছু সময় বসবাস করেছেন, যা বর্তমান তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত।
কোরানের ইংগীতেও তিনি ব্যাবিলনে জন্ম গ্রহন করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন আসে তাহলে কাবার মুর্তি ভাঙ্গলেন কি করে এবং কেন? যেহেতু আমরা মিল্লাতে ইব্রাহীম এবং আল্লাহ পাক নবী মুহাম্মদ সাঃ কেও ইব্রাহীমের আদর্শকে অনুসরন করার উপদেশ দিয়েছেন। তাই ইব্রাহীম আঃ এর বিষয়ে আমাদের স্বচ্ছ ধারনা জানা আবশ্যক।
সূরা আলে ইমরান (৩:৯৬):
إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ
“নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম ঘর, যা মানবজাতির জন্য স্থাপিত হয়েছে, তা তো বাক্কায়। যা বরকতময় ও বিশ্বজগতের জন্য পথনির্দেশ।” (৩:৯৬)
ধারনা করা হয় বর্তমামান মক্কা নগরীর পুরাতন নাম বাক্কা। বেশ তাহলে কোরানের বিভিন্ন আয়াত থেকে কিছু ধারনা নিয়ে বিশ্লেষন করে দেখিঃ
যখন ইব্রাহিম আঃ ও ইসমাঈল আঃ কা’বার ভিত্তি স্থাপন করছিলেন, এটা বাক্কায় মক্কায় নয়। মক্কার পৌত্তলিক মূর্তির গুদাম কে ইব্রাহিমের কাবা বানিয়ে ব্যবসা করার জন্য বাক্কা কে মক্কা বানানো হয়েছে। আল্লাহ কি কোথাও বলেছেন বাক্কাই মক্কা ?
কুরআনে “বাক্কা” এবং “মক্কা” — উভয় শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে “বাক্কা” – একবার সূরা আল ইমরানে (৩:৯৬)
নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা তো বাক্কায় বরকত ময় ও বিশ্বজগতের জন্য পথ নির্দেশ স্বরূপ।
(إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ)
“মক্কা” – একবার। সূরা আল-ফাতহ (৪৮:২৪)
আর তিনিই তো তাদের হাত তোমাদের উপর থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের উপর থেকে রক্ষা করেছেন মক্কার উপত্যকার মাঝে…
(وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُم بِبَطْنِ مَكَّةَ)
আল্লাহ বাক্কা বলেছেন (৩:৯৬), এবং মক্কা বলেছেন (৪৮:২৪) — কিন্তু কখনো বলেননি:
“বাক্কাই হল মক্কার আরেক নাম”। তাহলে কারা বলেছে ?
যেখানে আল্লাহ কখনো বলেননি “বাক্কা মানেই মক্কা , সেখানে এই ধারণা কোথা থেকে এলো ? কারা বলেছে ?
এটি বুঝতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে তাফসির ঐতিহ্য ও ইসলামী ইতিহাসের ব্যাখ্যা কারীদের উৎস-এ।
কে বা কারা প্রথম বলেছে – বাক্কা মানেই মক্কা ?
এটি এসেছে মূলত তাফসিরবিদ (মুফাসসির) ও ইতিহাসবিদদের ব্যাখ্যা থেকে, যেমন: ইবনে আব্বাস (রাঃ) – সাহাবীর সূত্র ধরে পরবর্তী তাফসিরকারগণ বর্ণনা করেন:
“বাক্কা হচ্ছে কা‘বার অংশবিশেষ; মক্কা হচ্ছে পুরো শহর।”
(তাফসির তাবারী, তাফসির ইবনে কাসির – ৩:৯৬)
কিন্তু এই বর্ণনা আল্লাহর সরাসরি উক্তি নয়, বরং সাহাবিদের ব্যাখ্যা ।
আবার ইমাম তাবারী (জন্ম 839 খ্রিস্টাব্দ) — পারসিয়ান ইতিহাসবিদ ও তাফসিরকার
তিনি তাঁর তাফসিরে তাবারী-তে বলেন:
“বাক্কা ও মক্কা একই স্থান। বিভিন্ন যুগে ভিন্ন নামে পরিচিত হয়েছে।”
ইবনে কাসির (জন্ম 1301 খ্রি) – সিরিয়ান স্কলার। তিনি বলেন:
“মক্কার একটি প্রাচীন নাম ছিল বাক্কা।”
“বাক্কা = মক্কা” — এই সমীকরণটি এসেছে তাফসিরকার, মুফাসসির ও ঐতিহাসিকদের ব্যাখ্যা থেকে, আল্লাহর সরাসরি বাণী থেকে নয়।
মূল যুক্তি হলঃ আল্লাহ বলেননি “বাক্কাই মক্কা”, তাহলে আমাদের কী ভিত্তিতে ধরতে হবে যে বাক্কা ও মক্কা এক ?
কুরআনে কি বলা হয়েছে ইব্রাহিম “মক্কা” গিয়েছিলেন ? না কোথাও বলে নি।
বাক্কাই মক্কা এ কথা বলা হয়েছে কি ? নাহ! বরং এটি তাফসিরকারদের অভিমত মাত্র।
আজকের কাবা যা মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত ছিল মূর্তির গুদাম।