Categories
My text

বনি ইসরাইল

১. বনী ইসরাঈল কে ছিলেন?

“বনী ইসরাঈল” মানে: ইসরাঈলের সন্তানগণ। এখানে “ইসরাঈল” বলতে বোঝানো হচ্ছে নবী ইয়াকুব (আ.)-কে। তার ১২ জন ছেলে ছিল, যাদের বংশধররাই “বনী ইসরাঈল” নামে পরিচিত হয়।

এই জাতিকে আল্লাহ অনেক নবী ও অহি দান করেছিলেন। কুরআনের বহু জায়গায় বনী ইসরাঈলের ইতিহাস ও শিক্ষা উল্লেখ আছে, যেমন:
• নবী মূসা (আ.) ও ফিরআউনের ঘটনা
• মান্না ও সালওয়া দিয়ে রিযিক দেওয়া
• গরুর কাহিনী (সূরা বাকারাহ)
• তাওরাত অবতরণ
• তাফরিফ (আল্লাহর বাণী বিকৃত করা)

২. সূরা বনী ইসরাঈল (সূরা আল-ইসরা) – ইতিহাস ও ভবিষ্যদ্বাণী

আয়াত ৪-৭:
“তোমরা দুইবার পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে এবং মহা ঔদ্ধত্য দেখাবে… অতঃপর যখন দ্বিতীয় ওয়াদা এলো, আমি তোমাদের ওপর এমন শত্রু পাঠালাম, যারা তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দিল এবং প্রথমবার যেমন মসজিদে ঢুকে ধ্বংস করেছিল, এবারও তারা ধ্বংস করে দিল…”

প্রথম ফাসাদ:
• বনী ইসরাঈল আল্লাহর আদেশ অমান্য করে ফিতনা সৃষ্টি করেছিল।
• ফলস্বরূপ, বাবিলীয় বাদশাহ বুখতনসর (Nebuchadnezzar) জেরুজালেম আক্রমণ করেন (৫৮৬ খ্রিস্টপূর্ব) এবং বাইতুল মাকদিস ধ্বংস করেন, বহু ইহুদিকে হত্যা ও বন্দি করেন।

দ্বিতীয় ফাসাদ:
• ইহুদিরা আবার অহংকারে ফিরে যায়।
• এইবার রোমান সাম্রাজ্য (৭০ খ্রিস্টাব্দে) জেরুজালেম ধ্বংস করে, বাইতুল মাকদিস আবারও ধ্বংস হয়।
• বহু ইহুদিকে বিতাড়িত করা হয় — শুরু হয় “ডায়াস্পোরা”।

ইসলামী ব্যাখ্যা:
অনেকে বলেন, এই দুই ফাসাদ ইতিহাসে ঘটে গেছে। আবার অনেকে মনে করেন দ্বিতীয় ফাসাদ এখন আবারও ঘটছে — বর্তমান ইসরায়েলের অত্যাচারের রূপে। ভবিষ্যতে তার ফলাফলও প্রথমদুটির মতো ধ্বংস ও পতন হতে পারে।

৩. কুরআনে বনী ইসরাঈলের পাপ ও অবাধ্যতা
কুরআনে বনী ইসরাঈলের একাধিক অপরাধ তুলে ধরা হয়েছে:
• নবীদের হত্যা (সূরা বাকারাহ: ৯১)
• অহংকার ও আল্লাহর আদেশ অমান্য (সূরা আল-মায়েদাহ)
• নিজেদের মনমতো ধর্ম পাল্টে নেওয়া (সূরা বাকারা: ৭৯)

“তবে কি তোমরা প্রত্যেকবার যখন তোমাদের কাছে কোনো রাসূল এমন কিছু নিয়ে আসে, যা তোমাদের খাপছাড়া লাগে, তখন তাকে মিথ্যা বলো কিংবা হত্যা করো?”(সূরা বাকারা: ৮৭)

৪. আল্লাহর নীতিঃ সম্মান দিলে সম্মান, অন্যায় করলে ধ্বংস

“যদি তোমরা ভালো করো, নিজেদেরই উপকার করবে; আর যদি খারাপ করো, তাহলে নিজেরই ক্ষতি করবে।”
(সূরা আল-ইসরা: ৭)

এই আয়াত ইসলামের নীতিকে স্পষ্ট করে: কোনো জাতি জাতি হিসেবে চিরশ্রেষ্ঠ নয় — আল্লাহর আনুগত্যই একমাত্র মর্যাদার মানদণ্ড। ইহুদি, মুসলিম, যে কোন জাতি অন্যায় করলে তার পরিণাম ভোগ করবে।

৫. বর্তমান ইসরায়েল ও ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা

অনেকে মনে করেন:
• বর্তমান ইসরায়েল রাষ্ট্র হচ্ছে সেই অহংকারী দ্বিতীয় ফাসাদেরই পুনরাবৃত্তি।
• ফিলিস্তিনে নিরীহ জনগণের ওপর দমন-পীড়ন আল্লাহর গজব ডেকে আনতে পারে

শেষ কথা:
বনী ইসরাঈলের ইতিহাস কুরআনে এই জন্যই এসেছে, যেন মুসলমানরা শিক্ষা নেয়:
• যেন তারা অহংকার না করে
• যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়
• এবং যেন আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে দৃঢ় থাকে

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by ExactMetrics