Categories
My text

দাড়ি

ইসলামি শরিয়তে দাড়ি রাখা কি বাধ্যতা মূলক??

দাড়ি রাখা, না রাখা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক মতো পার্থক্য আছে। কেউ বলছেন দাড়ি রাখা সুন্নাত, কেউ বলছেন ওয়াজিব আবার কেউ বলছেন দাড়ি রাখা একটা ঐচ্ছিক বিষয়। তবে প্রায় ১০০% মাদ্রাসা পড়ুয়া লোকজন মনে করে দাড়ি রাখা ইসলামি শরিয়তের একটি অবশ্য পালনিয় বিধান। একথা কি আসলে সত্য। চলুন দেখি দাড়ি রাখা সম্পর্কে কোরান কি বলছে—

সুরা ত্বহা, আয়াত ৯৪-
“হারূন বলল, ‘হে আমার সহোদর! আপনি আমার দাড়ি ও মাথা (চুল) ধরবেন না। আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি বলবেন, তুমি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথার গুরুত্ব দাওনি”।

সারা কোরানুল কারিমে এই একটা মাত্র আয়াতে দাড়ির কথা উঠে এসেছে। এখানে কিন্তু দাড়ি রাখার বা কাটার কোন নির্দেশনা নাই। উপরন্তু মুসা আঃ রাগান্বিত হয়ে ভাইয়ের (যিনি একজন নবীও বটে) দাড়ি ধরেছেন, চুল ধরেছেন। দাড়ি, চুল যদি সম্মানের জিনিস হতো তাহলে মুসা আঃ নিশ্চয় দাড়ি চুল ধরে টানাটানি করতেন না। তা আবার রাগান্বিত হয়ে। মুসা আঃ কান ধরে বা হাত ধরে টানতে পারতেন। সুতরাং যারা বলছেন দাড়ি রাখা সম্মানের বিষয়, তাদের যুক্তি ধোপে টেকে না।

অনেকে বলতে চাইছেন দাড়ি রাখা মুসলমানের প্রতীক এ কথাটা হাস্যকর কারণ হাত যদি মুসলমানের প্রতীক না হয়, পা যদি মুসলমানের প্রতীক না হয়, চুল যদি মুসলমানের প্রতীক নাহয়, শরীরের অন্য কোনো অংগপ্রতংগ যদি মুসলমানের প্রতীক না হয় তাহলে দাড়ি কিভাবে মুসলমানের প্রতীক হয়??

অনান্য অংগপ্রতংগের ন্যায় দাড়িও একটা খোদা প্রদত্ত জিনিস যা মহান আল্লাহ পাক জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল পুরুষ মানুষকে দিয়েছেন।

অনেকে বলতে চাইছেন আমাদের নবী দাড়ি রেখেছেন তাই দাড়ি রাখা সুন্নাত বা ওয়াজিব। ভাই নবীজী যেমন দাড়ি রেখেছেন তেমনি ভয়ংকর পাপী আবু জেহেল, আবু লাহাব, ফেরাউন, কারুন, হামান, নেলিন, মাউসেতুং তারাও দাড়ি রেখেছেন। তাহলে একই জিনিস একাধারে মুসলমানের প্রতীক এবং ইহুদি, খ্রিষ্টান, কমনি্স্ট, মূর্তি পুজারির প্রতীক হয় কি করে??

আর দাড়ি যদি মুসলমানের রেজিস্ট্রারড লোগো হতো তাহলে কঠোর হিন্দুত্ব বাদী ভারতের বর্তমান প্রধান মন্ত্রী মোদিজী আর যাই রাখুক অন্তত দাড়ি রাখতো না। ভারতের শিকদের দেখেছেন তারা দাড়ি রাখে, টুপি পরে, পাগড়ি পরে এগুলি যদি মুসলমানের প্রতীক হয় তাহলে শিকরা তো মুসলমানদের চেয়েও বড় মুসলমান।

আসল কথা হলো যারা কোরআনের নৈতিক বিধান গুলো ধারণ করতে কষ্ট বা স্বার্থের ব্যত্যয় হবে বলে মনে করে তাদের বেশীর ভাগই দাড়ি রেখে বা লেবাসধরে মুসলমান সাজার উপরে গুরুত্ব দেয়।

মুসলমানের চরিত্র হবে- জীবনে মিথ্যা বলবে না, মিথ্যা সাক্ষী দিবে না, অন্যের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভোগ করবে না, কাজে ফাঁকি দিবে না, ওজনে কম দিবে না, অংগিকার ভংগ করবে না, হিসাবে গড়বিড় করবে না, দ্বায়িত্বে অবহেলা করবে না, মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করবে না, গিবত করবে না ইত্যাদি।

উপরের সুরা ত্বহার ৯৪ আয়াত টি লক্ষ্য করুন, বনি ইসরায়েলদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হতে পারে শুধু এই ভয়ে হারুন আঃ শক্ত কোন কথা বলেন নাই। কিন্তু ইসলাম ধর্মে যারা দাড়ির সমাজদার তারা অহরহো ধর্মে বিভক্তি সৃষ্টি করছেন। উনারা হারুন আঃ এর মুখে দাড়ি ছিলো সেই যুক্তিতে দাড়ি রাখা সুন্নাত, ওয়াজিব বানাচ্ছেন কিন্তু হারুন আঃ ধর্মে বিভক্তি সৃষ্টি না করার ব্যাপারে কতখানি সচেতন ছিলেন তা বেমালুম ভুলে গেছেন। বিভক্তি সৃষ্টি না করার ব্যাপারে আল্ কোরানে একাধিক কঠোর নির্দেশনা থাকলেও দাড়িওয়ালা শায়খগন তা আমলেই নেন না, অথচ শুধু দাড়ি রেখে বড় মুসলমান হতে চাইছেন।

যারা কোরানুল করীমের যে আয়াতের (ত্বহা ৯৪)রেফারেন্স দিয়ে দাড়ি কাটা নিষেধ বলতে চাইছেন তাদের জন্য ঐ একই আয়াতের বিধান বলে চুল কাটাও নিষেধ হওয়া লাগে। কেউ কেউ আবার বলছেন দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্টি হতে হবে, তাহলে তো ঐ একই আয়াতের বিধান বলে চুলও কমপক্ষে এক মুষ্টি হতে হয়। যারা দাড়ি রেখেছেন তারা কি ঐ একই নিয়মে চুলও রাখছেন? তা নিশ্চয় রাখেন না। তাহলে বিষয়টা এমন দাড়ালো যে আমরা কিতাবের কিছু অংশ মানলাম আর কিছু অংশ অমান্য করলাম। কিন্তু কোরানের বিধান মতে, কোরানের কিছু আয়াত মান্য করা এবং কিছু আয়াত অমান্য করার সুযোগ নাই।

ভাই, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, দাড়ি রাখা ইসলামের কোনো বাধ্যতা মুলক বিধান নয়। বরং ঐচ্ছিক বিষয়। আপনার ভালো লাগলে রাখবেন ভালো না লাগলে রাখবেন না। রাখলে বাড়তি কোন সওয়াব পাওয়া যাবে না আবার না রাখলে বাড়তি কোন গোনাহ্ হবে না। তবে কোরানে যে সমস্ত বিধি বিধান পরিপালনের বা বর্জনের নির্দেশ আছে সেগুলি না মানলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই।

আল্লাহ বলছেন সুরা বাকারা আয়াত ৭৯ ” ফা অয়লুল্লিল লাজিনা ইয়াকতুবুনাল কিতাবা বিআইদিহিম, ছুম্মা ইয়াকুলুনা হাজা মিন ইন্দিল্লাহে লি ইয়াসতারু বিহী ছামানান কালিলান, ফা অয়লুল্লাহুম মিম্মা কাতাবাত আয়দিহীম ওয়া অয়লুল্লাহুম মিম্মা ইয়াকছিবুন”।

অর্থ – অতঃপর দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে এবং বলে তা আল্লাহর তরফ থেকে এসেছে থেকে যাতে সে গুলি সামান্য মূল্যে বিক্রি করে কিছু উপার্জন করতে পারে ; সুতরাং তাদের জন্য শাস্তি যারা হাত দিয়ে এরূপ কিতাব লিখে এবং তা দিয়ে যা উপার্জন করে।

সুতরাং যারা নিজ হাতে কিতাব লিখে দাড়ি রাখা কে ইসলামের সুন্নত বা ওয়াজিব বিধান হিসেবে চালাতে চাইছেন তাদের জন্য উপরের এই আয়াতটি এক মহা সতর্ক বানী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights