Categories
My text

জাহান্নাম- পৃৃথিবী

পৃথিবীতে  আমাদের  জীবন ই প্রথম জীবন নয়।

الْجَـنَّةِ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْضُ
( সূরা হুদ আয়াত ১০৮)

১) আল জান্নাতি (الْجَـنَّةِ) = জান্নাতের
২) খালেদিনা (خٰلِدِيْنَ) = বসবাসকারীরা
৩)  ফীহা মা (فِيْهَا مَا) =  তার মধ্যে যতক্ষন
৪) দামাতি (دَامَتِ) = বিদ্যমান থাকবে
৫) সামাওয়াত (السَّمٰوٰتُ) = আকাশ
৬) ওয় আলআরদ (وَالْاَرْضُ) = এবং পৃথিবী

উক্ত আয়াতে ” দাখেলুন ” বলেন নাই। প্রবেশ করানো হবে। ভবিষ্যত কাল নয়।  বরং বলেছেন খালেদিনা (خٰلِدِيْنَ) = বসবাসকারীরা।  যদিও আরবী গ্রামারে বর্তমান ও ভবিষ্যত কালকে একত্রে ( فعل مضار) ফায়েলুন মুদারী বলা হয়।

পক্ষান্তরে, যাহারা ভাগ্যবান তাহারা থাকিবে জান্নাতে, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; ইহা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।(১১:১০৮)

প্রশ্নআসবে তবে কি কিয়ামত সংঘটিত হবে না?

ঊত্তরঃ অবশ্যই হবে। তার রেফারেন্স  আয়াতঃ

১) আকাশ যখন বিদীর্ণ হইবে, (৮২:১)
২) যখন প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হইবে পৃথিবী, (৫৬:৪)
৩) ফলে উহা পর্যবসিত হইবে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায়;(৫৬:৬)
৪) ও পৃথিবী তাহার অভ্যন্তরে যাহা আছে তাহা বাহিরে নিক্ষেপ করিবে ও শূন্যগর্ভ হইবে। (৮৪:৪)
৫) এবং পৃথিবী যখন তাহার ভার বাহির করিয়া দিবে,(৯৯:২)

এ থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান মহা প্রলয় হবে। কিন্তু প্রশ্ন ওখানে নয়। আমাদের ধারনা এই প্রলয়ের পর পৃথিবী ধংস হয়ে যাবে, হাশরের মাঠে বিচার হবে, পাপীরা জাহান্নামে প্রেরিত হবে হবে এবং নেককার গন জান্নাতে দাখিল হবে।
এই জান্নাত এবং জাহান্নাম আলাদা কোন গ্রহে?  না কি অন্য কোন  গ্যালাক্সিতে ? কোথায় সে কথা আল্লাহ সরাসরি কোন আয়াতে বলেন নাই।।

তবে কোরান গভীর ভাবে অনুধাবন করলে দেখা যায় আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে ইংগীত দিয়ে বুঝিয়েছেন জান্নাত জাহান্নাম এই পৃথিবীতেই হবে।

তিনি সৃষ্টির শুরুতেও এই পৃথিবীকে প্রথম সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবীকে যখন ধ্বংস করিবেন তখন জান্নাত জাহান্নামও ধ্বংস হবে। ধ্বংসের পর আবার পৃথিবীকে সৃষ্টি করবেন এবং সাথে জান্নাত জাহান্নাম। তাই সুরা হুদের ১০৮ নং আয়াতে বলেছেনঃ

” পক্ষান্তরে, যাহারা ভাগ্যবান তাহারা থাকিবে জান্নাতে, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; ইহা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।”(১১ঃ ১০৮)

এ ভাবেই তাঁর সৃষ্টির আবর্তন ঘুর্নয়মান ভাবে চলতে থাকবে। আর এ জন্যই বলেছেনঃ

তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৮৪:১৯

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে না!ইহা তো মহাসাফল্য। আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৫৯-৬১)

হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করিতে থাক, পরে তুমি তাঁহার সাক্ষাৎ লাভ করিবে। ( ৮৪ঃ ৬)

আল্লাহ বলেনঃ  আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই— তোমাদের স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করতে যা তোমরা জান না আর অবশ্যই তোমরা অবগত হয়েছ (প্রথম সৃষ্টি) সম্পর্কে??, তবে তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করা না কেন?(৫৬ঃ৬০-৬২)

একমাত্র মুত্তাকীদের(সচেতনদের) , “প্রথম মৃত্যুর পর তাহারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করিবে না। আর তাহাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হইতে রক্ষা করিবেন” -(৪৪:৫৬)

তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৮৪:১৯

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে না!ইহা তো মহাসাফল্য। আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৫৯-৬১)

এবার সুরা হুদের ১০৮ নং আয়াতের মর্ম বুঝতে পিছনে ভাবুন একটু আদম আঃ কে তার ভুলের শাস্তি স্বরুপ কোথায় পাঠিয়েছিলেন?  পৃথিবীতে নয় কি। শাস্তি জন্য কোথায় পাঠায়?  নিশ্চয় জাহান্নামে।

অতপর  ভবিষ্যত সংশোধনের জন্য বলে দিলেন, যাও সেখানে অবস্থান করা অবস্থায় যদি আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত যায়, আর যদি তা অনুসরন কর তবে তোমার কোন ভাবনা নেই। মানে আবার জান্নাতে দাখিল হবে।

“অতঃপর তোমাদের কাছে যদি আমার পক্ষ থেকে কোন পথনির্দেশ আসে, তবে যারা আমার পথনির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।” (২:৩৮)

পৃথিবীতে  আমাদের  জীবন ই প্রথম জীবন নয়। (দলিল)

১) তোমরা কিরূপে আল্লাহ্‌কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করিয়াছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন ও পুনরায় জীবন্ত করিবেন, পরিণামে তাঁহার দিকেই তোমাদেরকে ফিরাইয়া আনা হইবে। সূরা ২ আয়াত নম্বর: ২৮

২) স্মরণ কর, তোমার প্রতিপালক আদমসন্তানের পৃষ্ঠদেশ হইতে তাহার বংশধরকে বাহির করেন এবং তাহাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই ?’ তাহারা বলে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই আমরা সাক্ষী রহিলাম।’ ইহা এইজন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বল, ‘আমরা তো এ বিষয়ে গাফিল ছিলাম।’ সূরা ৭ আয়াত নম্বর: ১৭২

৩) উহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে প্রাণহীন অবস্থায় দুইবার রাখিয়াছ এবং দুইবার আমাদেরকে প্রাণ দিয়াছ। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করিতেছি; এখন নিষ্ক্রমণের কোন পথ মিলিবে কি?’সূরা নম্বর: ৪০ আয়াত নম্বর: ১১

৪) আকাশমণ্ডলীর ও পৃথিবীর সৃষ্টিকালে আমি উহাদেরকে ডাকি নাই এবং উহাদের সৃজনকালেও নয়, আমি বিভ্রান্তকারীদেরকে সাহায্যকারীরূপে গ্রহণ করিবার নই।
সূরা নম্বর: ১৮ আয়াত নম্বর: ৫১

৫) আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি কষ্ট – ক্লেশের মধ্যে।সূরা নম্বর: ৯০ আয়াত নম্বর: ৪

৬) নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মানুষের প্রতি কোন জুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজেদের প্রতি জুলুম করিয়া থাকে। সূরা নম্বর: ১০ আয়াত নম্বর: ৪৪

৭) যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদেরকে পরীক্ষা করিবার জন্য – কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল,সূরা ৬৭ আয়াত ২)

৮) আমি বলিলাম, ‘তোমরা সকলেই এই স্থান হইতে নামিয়া যাও। পরে যখন আমার পক্ষ হইতে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসিবে তখন যাহারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করিবে তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না।’ ( ২:৩৮)

৯) আমি তো আসমান, ও যমীন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করিয়াছিলাম, উহারা ইহা বহন করিতে অস্বীকার করিল এবং উহাতে শংকিত হইল, কিন্তু মানুষ উহা বহন করিল; সে তো অতিশয় জালিম, অতিশয় অজ্ঞ।(৩৩:৭২)

১০) পরিণামে আল্লাহ্ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারীকে শাস্তি দিবেন এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীকে ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সূরা ৩৩ আয়াত ৭৩

১১) আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারিত করিয়াছি এবং আমি অক্ষম নই –
তোমাদের স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করিতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করিতে যাহা তোমরা জান না।
তোমরা তো অবগত হইয়াছ প্রথম সৃষ্টি সম্বন্ধে, তবে তোমরা অনুধাবন কর না কেন?
সূরা নম্বর: ৫৬ আয়াত নম্বর:  ৬০ হতে ৬২

১২) তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদেরকে অপসৃত করিতে পারেন এবং এক নূতন সৃষ্টি আনয়ন করিতে পারেন। সূরা ৩৫ আয়াত নম্বর: ১৬

১৩) আল্লাহ্‌ মানুষকে তাহাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব –  জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নিদির্ষ্ট কাল পর্যন্ত তাহাদেরকে অবকাশ দিয়া থাকেন। অতঃপর তাহাদের নির্দিষ্ট কাল আসিয়া গেলে আল্লাহ্‌ তো আছেন তাঁহার বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা। সূরা নম্বর: ৩৫ আয়াত নম্বর: ৪৫

১৪) কিন্তু যাহারা কুফরী করে তাহাদের জন্য আছে জাহান্নামের আগুন। উহাদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হইবে না যে, উহারা মরিবে এবং উহাদের হইতে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হইবে না। এইভাবে আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিয়া থাকি।(৩৫: ৩৬)

১৫) উহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে প্রাণহীন অবস্থায় দুইবার রাখিয়াছ এবং দুইবার আমাদেরকে প্রাণ দিয়াছ। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করিতেছি; এখন নিষ্ক্রমণের কোন পথ মিলিবে কি?’ (৪০:১১)

১৬) যে ব্যক্তি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করেনা আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেনা । (১১ঃ৫৩)

১৭) পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে ; আল্লাহ্‌র পক্ষে ইহা খুবই সহজ।(৫৭ঃ২২)

কোরান কে বুঝতে হলে কোরান দিয়েই বুঝতে হবে।  ইবনে কাসীর, ইবনে কুরতবী, আপনার আমার মত মানুষের ব্যাখ্যা অভিমত দিয়ে কোরানের ভাষা বুঝার চেষ্টা করা যাবে না। এ জন্য আল্লাহ বলেছেনঃ

কোন ব্যক্তিকে তাহার প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী স্মরণ করাইয়া দেওয়ার পর সে যদি উহা হইতে মুখ ফিরাইয়া নেয় এবং তাহার কৃতকর্মসমূহ ভুলিয়া যায় তবে তাহার অপেক্ষা অধিক জালিম আর কে? আমি নিশ্চয়ই উহাদের অন্তরের উপর আবরণ দিয়াছি যেন উহারা কুরআন বুঝিতে না পারে এবং উহাদের কানে বধিরতা আঁটিয়া দিয়াছি। তুমি উহাদেরকে সৎপথে আহ্বান করিলেও উহারা কখনও সৎপথে আসিবে না।(১৮:৫৭)

বিঃদ্রঃ আমি কাউকে আমার মত মেনে নেয়ার আহ্বান করছি না। আমি শুধু আমার উপলব্ধি প্রকাশ করেছি কোরানের আয়াতের রেফারেন্সে। কারো দ্বীমত থাকলে রেফারেস সহ মতামত প্রদান করতে পারেন।  আমার ভুল কনসেপ্ট থাকলে শোধরে নিতে পারব।

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by ExactMetrics