উষ্টির যুদ্ধ (جمل, Battle of the Camel) ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বড় মুসলিম গৃহযুদ্ধ, যা খলিফা উসমান রাঃ এর শাহাদাতের পর মুসলিম সমাজে গভীর মতভেদ সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দে (৩৬ হিজরিতে) বসরা নগরের উপকণ্ঠে।
খলিফা উসমান (রাঃ)-এর হত্যা ইসলামী বিশ্বে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করে। বহু সাহাবী মনে করেন, তাঁর হত্যাকারীদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আলী (রাঃ) খলিফা হওয়ার পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণ ও মুসলিম ঐক্য বজায় রাখার কারণে তিনি সময় চেয়ে নেন।
আয়শা (রাঃ), তালহা (রাঃ), ও যুবায়ের (রাঃ) এই তিনজন প্রখ্যাত সাহাবী মনে করেন বিচার বিলম্ব করা উচিত নয়।
আলী (রাঃ): প্রথমে রাষ্ট্রকে স্থিতিশীল করা, তারপর বিচার করার সিদ্ধান্ত নেন।
আয়শা (রাঃ), তালহা, যুবায়ের (রাঃ): আগে হত্যাকারীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে, নয়তো ন্যায়বিচার হবে না মর্মে আশংকা করে প্রতিবাদ করেন।
এই যুদ্ধ সাহাবীদের মধ্যকার রাজনৈতিক মতপার্থক্য থেকে সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের উদ্দেশ্য ছিল ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা; কিন্তু সময়, পদ্ধতি ও প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন।
এ সুযোগে রাজনৈতিক উসকানি ও ভুল বোঝাবুঝির বীজ বপন করে স্বার্থন্বেসীরা।
মুসলিম সমাজে বড় রকমের বিভক্তি শুরু হয় পরবর্তীতে সিফফিন যুদ্ধ ও খারিজি সমস্যা জন্ম নেয়।
আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হতে চলছিল, কিন্তু রাতের আঁধারে এক গোষ্ঠী (যারা উসমান রাঃ-এর খুনিরা ছিল এবং নিজেদের রক্ষা করছিল) উভয় পক্ষে আক্রমণ চালিয়ে দেয়, যেন যুদ্ধ বাধে এবং বিচার না হয়।
শুরু হয় যুদ্ধের আয়োজন।
আলী (রাঃ) পক্ষে —-
১) আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) নিজে – খলিফা ও সেনাপতি প্রধান।
২) মালিক আল-আশতার – বীর ও বিশ্বস্ত সেনানায়ক।
৩) মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর – আয়শা (রাঃ)-এর দুধ ভাই।
৪) হাশিম ইবনে উতবা অন্যান্য বহু ইরাকি ও কুফার সাহাবী ও তাবিঈন।
অপর দিকে আয়শা (রাঃ) পক্ষে ছিলেন—
আয়শা বিনতে আবি বকর (রাঃ) – নবীজির স্ত্রী, দলের অনুপ্রেরণা।
১) তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ (রাঃ) – বদরের বীর সাহাবী।
২) জুবায়র ইবনে আওয়াম (রাঃ) – নবীর সাহচর্যে থাকা সাহাবী।
৩) মারওয়ান ইবনে হাকাম – রাজনীতিক, উসমান রাঃ এর ঘনিষ্ঠ।
৪) আবদুল্লাহ ইবনে আজ-যুবায়র – যুবায়ের রাঃ এর পুত্র।
তালহা ও যুবায়ের (রাঃ) উসমান (রাঃ)-এর হত্যার বিচার দাবি করছিলেন। তবে তারা যুদ্ধ করতে চাননি। যুদ্ধ শুরু হবার পর তারা যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ান।
তালহা রাঃ: মারওয়ানের ছোড়া তীরের আঘাতে শহীদ হন।
জুবায়ের রাঃ: যুদ্ধ ছাড়ার পর এক ব্যক্তি তাকে পিছন থেকে হত্যা করে।
উষ্টির যুদ্ধে আলী (রাঃ) পক্ষ: প্রায় ২০,০০০ সৈন্য অংশ নেয় এবং আয়শা (রাঃ) পক্ষ: আনুমানিক ১৫,০০০ সৈন্য অংশ নেয়।
আয়শা (রাঃ)-এর ভূমিকাঃ
তিনি নেতৃত্ব দেন না, বরং মুসলিমদের জাগাতে এবং বিচার দাবিতে বক্তব্য দেন।যুদ্ধ চলাকালে তিনি উটের পিঠে ছিলেন, এবং সেই উটকেই প্রতীক বানানো হয়।
আলী (রাঃ)-এর অবস্থানঃ তিনি যুদ্ধ এড়াতে চাইছিলেন।
* এই যুদ্ধে বহু বদরে সাহাবী নিহত হন।
* মুসলিম উম্মাহতে বিভাজন জন্ম নেয়।
* শিয়া-সুন্নি মতভেদের রাজনৈতিক বীজ পড়ে এখানে।
* সিফফিন যুদ্ধ ও খারিজিদের উত্থান ঘটে পরে।
যুদ্ধে আয়শা (রাঃ) একটি উষ্ট্রীর পিঠে বসে বাহিনীকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। এই উষ্ট্রীর আশেপাশেই যুদ্ধ চূড়ান্তভাবে সংঘটিত হয়। সেই কারণে একে “জামাল যুদ্ধ” বা “উষ্টির যুদ্ধ” বলা হয়।
যুদ্ধের শেষে আলী (রাঃ) বিজয়ী হন।
তালহা ও যুবায়ের (রাঃ) উভয়েই নিহত হন (একজন অজানা তীরবিদ্ধ হন, আরেকজন যুদ্ধ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর নিহত হন)।
যুদ্ধ শেষে আয়শা (রাঃ)-কে সম্মান দিয়ে মদিনায় ফেরত পাঠান এবং বলেন: “তুমি আমার মা, যেমনটা রাসূল (সঃ) বলেছেন।”
প্রশ্ন আপনি সে সময়ে জীবত থাকলে কার পক্ষে যুদ্ধ করতেন বলে মনে করেন ?