Categories
My text

কোরআনের সালাত ও প্রচলিত নামাজঃ

প্রচলিত নামাজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি, যদিও নামাজ শব্দটা ফার্সি, তার পরেও আমরা এই ফার্সি নামাজ শব্দ কুরআনের আরবি সালাত অর্থেই ব্যবহার করে থাকি, এছাড়াও আমরা সকলেই জানি নামাজের নিয়ম পদ্ধতি এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে, এখন কথা হচ্ছে যদি প্রচলিত এই নামাজ কুরআনের সালাত নাই হয় তাহলে অজুর কথা বলা হয়েছে কেন?

যেমন- কোরআনে সালাতের পূর্বে শর্ত হচ্ছে অজু করা রেফারেন্স- ৪ নিসার ৪৩নং আয়াত এবং ৫ মাইদার ৬নং আয়াত, এখন প্রশ্ন হচ্ছে সালাত যদি প্রচলিত নামাজ নাই হয় তাহলে অজুর কথা বলা হল কেন? তাছাড়া সালাত যদি শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ হয় তাহলে আল্লাহর প্রত্যেকটা বিধি-বিধান পালন করতে নিশ্চয়ই অজু করতে হবে!

কোরআনে অজুর কথা (৫ঃ৬) এ বলা হয়েছে- ওহে বিশ্বাসীগণ যখন তোমরা সালাতের জন্য দাঁড়াও তখন তোমরা ওযু করে নাও, এই আয়াতে অজু করার নিয়ম পদ্ধতির বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে (৪ঃ৪৩) এ বলা হয়েছে ওহে যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছ তোমরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হয়ো না এবং অপবিত্র অবস্থায়ও না, তার মানে বোঝা গেল দুটি অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হওয়া যাবেনা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে তারা আরবি সালাত শব্দের সাথে আদায় শব্দটাকে যুক্ত করে প্রচলিত নামাজকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু যদি তারা সালাত শব্দের সাথে পালন করা শব্দটা ব্যবহার করত তবে নামাজ শব্দের সাথে আদায় করা অথবা পালন করা শব্দগুলো গোজামিল হত, এবং আয়াতের আগের ও পরের আয়াত অনুযায়ী সালাত শব্দের সুন্দর একটি অর্থ বেরিয়ে আসতো।

এছাড়াও তারা আরবি সালাত শব্দের সাথে বাংলা পড় শব্দটা কোথাও ব্যবহার করেনি, কিন্তু ফার্সি শব্দ নামাজের সাথে পড় শব্দটা ব্যবহার করেছেন, অথচ এই পড় শব্দটা কুরআনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সালাতের ক্ষেত্রে নয়।

যেমন- ৯৬ নং সূরা আলাক ১ নং আয়াতে বলা হয়েছে- পড় তোমার প্রভুর নামে, কিন্তু সালাতের ক্ষেত্রে কায়েম শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে পড়া নয়, কেননা পড়া এবং কায়েম দুটো কখনো এক অর্থ হয় না। এজন্যই ৭০ নং সূরা মারিজে ২১ এবং ২২ নং আয়াতে সালাত শব্দের অর্থ যোগাযোগ স্থাপন করা ফলো করা কিংবা দায়িত্ব পালন ব্যবহার করলে এই আয়াতের আগের এবং পরের আয়াতের সাথে মিলে যাবে, এবং কোন গোজামিল থাকে না, কেননা এই আয়াতে সালাতের অর্থ যদি নামাজ ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রচলিত নামাজে কখনোই মানুষ সার্বক্ষণিক প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে না, কারণ নামাজের নির্দিষ্ট টাইম আছে যা দৈনিক সর্বোচ্চ 2 থেকে আড়াই ঘন্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু মানুষের জীবন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া যে বিধি-বিধান সালাত অর্থাৎ সংযোগ স্থাপন করা রয়েছে তা ঘুম ব্যতীত সার্বক্ষণিক, যা প্রচলিত নামাজের ক্ষেত্রে কখনোই প্রযোজ্য নয় বরং গোজামিল।

তাছাড়া ৬২ঃ১০ নং আয়াতে সালাতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে,

কেননা সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করা এবং তার বিধি বিধান আইন ফলো করা যা আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ডিউটি দায়িত্ব, যেহেতু আমরা তার দাস তাই তার দাসত্ব করাই আমাদের সালাত অর্থাৎ ডিউটি বা দায়িত্ব, এবং এই দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই ওহী সংবাদ পাঠ করতে হয় যাতে অন্যরা শুনে বুঝে মেনে নিয়ে সালাত অর্থাৎ বিধি-বিধানের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে, যেমন-(২৯ঃ৪৫) নং আয়াত এবং সূরা ফাতিরের ২৯ নং আয়াতে আগে ওহী সংবাদ থেকে পাঠ করতে বলা হয়েছে তারপরে সালাত কায়েম অর্থাৎ সংযোগ স্থাপন করতে বলা হয়েছে।

এরপর যদি কারো কনফিউশন থাকে যে প্রচলিত এই নামাজই হচ্ছে কোরআনের সালাত তাহলে – ১১ নং সূরা হূদের ৮৭ নং আয়াতের সাথে গোজামিল হয়ে যাবে এবং ১৮ সূরা কাফহ এর ১ নং আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে যেখানে আল্লাহ বলেছেন-

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি তাঁর বান্দার উপর কিতাব নাযিল করেছেন এবং তাতে রাখেননি কোন বক্রতা ।

এছাড়াও ৪ নং সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী না হওয়ার জন্য,

এই আয়াতে আরবী শুকরা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার অর্থ মাতাল, যেমন- কোন বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না রাখা, এক কথায় আমাদের মন মানসিকতা স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকাটাও মাতালের অন্তর্ভুক্ত‌ এবং যেই কারণে আমাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও আমরা মুখে যা বলি তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হই, যেমন – ২২ নং সূরা হজ্বের ২ নং আয়াত যেখানে বলা হয়েছে –

যেদিন তোমরা তা দেখবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্য দানকারিনী আপন দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভধারিণী তার গর্ভপাত করে ফেলবে, তুমি দেখবে মানুষকে (سُكَٰرَىٰ সুকারা ) মাতাল সদৃশ, অথচ তারা (سُكَٰرَىٰ সুকারা ) মাতাল নয়। তবে আল্লাহর আযাবই কঠিন।

অথচ আমরা ধর্মীয় মনোভাব দিয়ে সুকারা শব্দের অর্থ শুধুমাত্র মাদক-শ্রবণ করা অবস্থাকেই বুঝেছি এজন্যই আমরা খুব সহজেই কোরআনের সালাতকে নামাজ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।

অথচ আমরা যদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সালাতের নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টা সঠিক অর্থে বুঝে তা উপলব্ধি করতে পারতাম, তাহলে সমাজে আজ ইসলামের নামে এত মানব রচিত হাদিস, দলমত, মতানৈক্য এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের নামে মিথ্যাচারের গ্রহণযোগ্যতা থাকতো না, কেননা আমরা মানুষের মৌখিক কথার উপরেই বিশ্বস্ত ছিলাম যার কোন যুক্তিগতা এবং বাস্তবতা ছিল না এবং যার সঠিক জ্ঞান আমাদের ছিল না, অথচ আল্লাহ কুরআনে বলেছেন- ১৭ সূরা বনী-ইসরাঈল ৩৬ নং আয়াত

আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।
এছাড়াও ৫ নং সূরা মায়িদাহ ৭৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে –

বল, ‘হে কিতাবীরা, সত্য ছাড়া তোমরা তোমাদের জীবন ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করো না এবং এমন কওমের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, যারা পূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে, আর অনেককে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সোজা পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে।

মানুষ যেন মানুষের কথায় পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত না হয় এবং কেউ কাউকে অন্ধ অনুসরণ না করে, সেজন্যই আল্লাহ সঠিক পথ নির্দেশনার জন্য নবী রাসূল পাঠিয়েছেন যারা মানুষকে মুক্তি ও সফলতার পথ দেখাতেন।

এজন্যই কোরআনে আল্লাহ ১৯ নং সূরা মারিয়াম ৫৯ নং আয়াতে অভিযোগ করেছেন-

তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা সালাত বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং শীঘ্রই তারা জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।

2 replies on “কোরআনের সালাত ও প্রচলিত নামাজঃ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by MonsterInsights