ধর্মীয় বিষয়ে মানুষ জন্মগত ভাবে যে বিষয়টি সত্য জেনে আসছে তা অন্য কেউ মিথ্যা বললে সহজে মেনে নিতে পারে না। মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে তার জানা গুলো ডাহা মিথ্যা হলেও সেগুলোকেই একমাত্র সত্য মনে করে এবং বাকি সব মিথ্যা মনে করে। একজন ব্যক্তি যখন হঠাৎ জানতে পারে তার ধর্মীয় বিষয়ে জানা গুলো অনেক কিছুই মিথ্যা তখন সে উত্তেজিত হয়। সে মেনে নিতে পারে না। যুগে যুগে এ সংঘর্ষ সকল নবী রাসুলদের সাথেও হয়ে আসছে। সেই সতর্ককারী বলিত, ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষ দেরকে যে পথে পাইয়াছ, আমি যদি তোমাদের জন্য তদপেক্ষা উৎকৃষ্ট পথনির্দেশ আনয়ন করি তবুও কি তোমরা তাহাদের পদাংক অনুসরণ করিবে? তাহারা বলিত, ‘তোমরা যাহা সহ প্রেরিত হইয়াছ আমরা তাহা প্রত্যাখ্যান করি।'(৪৩:২৪)
কোরানের অনুসরনে কথা বললে মানুষ বলে আমরা সব লোককে দেখতেছি একভাবে চলতে আর তুমি নতুন করে কি সব বলতে শুরু করেছে। আল্লাহ তখন বলেনঃ যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।(৬:১১৬)
তখন বলে তাহলে আমাদের পুর্বপুরুষ যারা মরে গেছে তারা কি সবাই ভুল এবাদত করে মরেছে? এ ধরনের প্রশ্নের সন্মুখীন স্বয়ং নবীও হয়েছিলেন। তাই আল্লাহ জানিয়ে দিলেনঃ যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা তোমরা অনুসরণ কর’, তাহারা বলে, ‘না, বরং আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহার অনুসরণ করিব।’ এমন কি, তাহাদের পিতৃ পুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝিত না এবং তাহারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না-তৎসত্ত্বেও। (২:১৭০)
বরং উহারা বলে,’আমরা তো আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে পাইয়াছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাহাদেরই পদাংক অনুসরণ করিতেছি। (৪৩:২২) এইভাবে তোমার পূর্বে কোন জনপদে যখনই আমি কোন সতর্ককারী প্রেরণ করিয়াছি তখন উহার সমৃদ্ধিশালী ব্যক্তিরা বলিত, ‘আমরা তো আমাদের পূর্ব পুরুষদেরকে পাইয়াছি এক মতাদর্শের অনুসারী এবং আমরা তাহাদেরই পদাংক অনুসরণ করিতেছি।(৪৩:২৩)
কোরআনের অন্যত্র আবার আল্লাহ বলেনঃ যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তাহারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ যদিও তাহাদের পূর্বপুরুষগণ কিছুই জানিত না এবং সৎপথপ্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি ? (৫:১০৪)
অনুরুপ সূরা লোকমানে বলেনঃ “ উহাদেরকে যখন বলা হয়, “ আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা অনুসরণ কর।’ উহারা বলে, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহারই অনুসরণ করিব।’ শয়তান যদি উহাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তির দিকে আহবান করে, তবুও কি? (৩১ঃ২১) এর পর তারা যুক্তি তুলে অধিকাংশ মানুষের অনুসরনের কথা বলে, তখন আল্লাহ জানন –
*যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।(৬ঃ১১৬)
তার মানে দীর্ঘ দিনের পালিত অভ্যাস, বাপদাদার যে ভাবে এবাদত করতে দেখে আসতেছে, অধিকাংশ লোকে যে ভাবে ধর্ম কার্যাদি সম্পাদন করতে দেখে আসতেছে তা থেকে সড়ে এসে যত সত্য কথায় উপস্থাপন করা হোক না কেন, মানুষ তা গ্রহন করতে রাজি না, যদিও কোরান থেকে দৃষ্টান্ত দেয়া হয়। আর এমন হবে তা আল্লাহ জানেন বলেই আল্লাহ বলেনঃ যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।(৬:১১৬)
* তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।(৩:১০৫)। আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদ ভাবে বিবৃত করিতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করিতে এবং তোমাদের ক্ষমা করিতে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (৪:২৬)
সমাজের অধিকাংশ মুসলমান হুজুর নিকট শুনে তাদের এবাদত পরিপালন করে থাকে। অথচ সকল এবাদতের নির্দেশ কোরানে থাকলেও তা কখনো যাচাই করে দেখেন না। সে বিষয়েও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেনঃ আল্লাহ ঈমানদারগণকে সতর্ক করে বলেনঃ “অবশ্যই আলিম ও দরবেশদের অনেকেই ভূয়া কর্মকান্ডের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ গ্রাস করে থাকে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে।” (৯:৩৪অংশ)
* তাহাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে যাহাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কিতাব সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নাই,তাহারা শুধু অমূলক ধারণা পোষণ করে।(২:৭৮)
* হে ঈমানদারগণ! অধিকাংশ পীর,দরবেশের অবস্থা এই যে, তারা জনগণের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে এবং তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে! তাদের জন্য পীড়াদায়ক আজাবের সুসংবাদ দাও যারা স্বর্ণ রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না! (সূরা তওবা: আয়াত ৩৪)
আল্লাহ তাদের লক্ষ্য করে বলেনঃ তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও, আর নিজদেরকে বিস্মৃত হও ? অথচ তোমরা কিতাব অধ্যয়ন কর। তবে কি তোমরা বুঝ না ?
*আর আপনি তাদের অনেককে দেখবেন যে, দৌড়ে দৌড়ে পাপে, সীমালঙ্ঘনে এবং হারাম ভক্ষনে পতিত হয়। তারা অত্যন্ত মন্দ কাজ করছে। (৫:৬২)
*দরবেশ ও আলেমরা কেন তাদেরকে পাপ কথা বলতে এবং হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করে না? তারা খুবই মন্দ কাজ করছে।(৫:৬৩)
অতঃপর বিচার দিবসে এ সকল আলেমের অনুসরন করে যারা জাহান্নামী হবে তাদেকে সেদিন সত্য কথা প্রকাশ করে দিবেঃ আমরা তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করিয়াছিলাম, কারণ আমরা নিজেরাও ছিলাম বিভ্রান্ত।'(৩৭:৩২)
ফলে কিয়ামত দিবসে উহারা বহন করিবে উহাদের পাপভার পূর্ণ মাত্রায় এবং পাপভার তাহাদেরও যাহাদেরকে উহারা অজ্ঞতাহেতু বিভ্রান্ত করিয়াছে। দেখ, উহারা যাহা বহন করিবে তাহা কত নিকৃষ্ট!(১৬:২৫)
মুসলমানদের সবচেয়ে হাস্যকর আচরণ হলো, তারা দাবী করে যে কোর’আন-ই একমাত্র ধর্ম গ্রহন্থ যা বিশুদ্ধভাবে রক্ষিত আছে, এবং যা সরাসরি আল্লাহ’র পক্ষ থেকে সমগ্র মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশনা রূপে এসেছে। কিন্তু মানে হাদীস নামক মানব রচিত গ্রহন্থকে।
* মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবার জন্য অসার হাদীস গ্রহন করিয়া নেয় এবং আল্লাহ্-প্রদর্শিত পথ লইয়া ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। উহাদেরই জন্য রহিয়াছে অবমাননাকর শাস্তি।(৩১:৬)
দ্বিতীয়ত কোর’আন দাবী করে এটি সমগ্র মানব জাতির জন্য পথ নির্দেশনা সম্বলিত গ্রন্থ। কিন্তু মুসলমানরা নিজেরা তো কোর’আন পড়েই না,এমনকি অন্যদের পড়তে দিতেও নারাজ। এমন কি আলেম সমাজও তা থেকে মানুষকে দূরে রাখতে চায় কারন তার পেশায় ভাটা পড়বে মনে করে।
তাই আল্লাহ বলেনঃ সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকাইয়া লোকদেরকে আল্লাহ্র পথ হইতে ভ্রষ্ট করিবার জন্য। তাহার জন্য লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাহাকে আস্বাদ করাইব দহন-যন্ত্রণা। (২৩:৯)
* তাদের মধ্যে এমন আহম্মক লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কেতাব সম্বন্ধে কোনোই জ্ঞান নেই, তারা শুধু অবাস্তব ধারণায় বিশ্বাসী। [২: ৭৮]
মানুষ আল্লাহর একমাত্র কিতাবকে রেখে আনুসাঙ্গিক মানব রচিত কিতাব,হাদীস থেকে শরীয়তে বিধান পালন করতে আগ্রহী। যা আল্লাহ বলেন নাই।
অথচ আল্লাহ কঠোর ভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেনঃ তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমাদের নিকট যাহা অবতীর্ণ করা হইয়াছে তোমরা তাহার অনুসরণ কর এবং তাঁহাকে ছাড়া অন্য কোন ওলী-আউলিয়ার অনুসরণ করিও না। তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (৭:৩)
মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞানতা বশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের।(২২:৩)
আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আল্লাহ বলেনঃ মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাহাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথনির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।(২২:৮)
অধিকাংশ ঈমান এনে এবাদত করছে ঠিকই কিন্তু উল্টো পথে চলে এবং এবাদত বন্দেগী করে ভাবছে আমরা অনেক ভাল আমল করছি। প্রকৃত সব পন্ডুসার। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ বল, ‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব কর্মে বিশেষ ক্ষতি গ্রস্তদের ?’ উহারাই তাহারা, ‘পার্থিব জীবনে যাহাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তাহারা মনে করে যে, তাহারা সৎকর্মই করিতেছে,(১৮: ১০৩-১০৪)
কারন কি সে কথাও আল্লাহ জানিয়ে দিলেনঃ তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে, কিন্তু তারা শির্ককারী। (১২:১০৬) কেহ শিয়া, কেহ সুন্নী,কেহ জামাত,কেহ পীরের এভাবে আল্লাহর একমাত্র দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করে নিয়েছে একমাত্র কোরান নিজ ভাষায় না পড়ার জন্য।
এ জন্য আল্লাহ বলেনঃ তারপর লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে উৎফুল্ল। (২৩:৫৩)
*যাহারা নিজেদের দীনে মতভেদ সৃষ্টি করিয়াছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ লইয়া উৎফুল্ল।(৩০:৩২)
তাই আল্লাহ নবীকে জানিয়ে দিলেনঃ বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে ? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান।(৯:১০)
এ হলো প্রতিটি মানুষের বর্তমান ধর্ম পরিপালনের চিত্র। কোরানে উল্লেখিত বর্ণনা অনুযায়ী নিজেকেও একবার যাচাই করে দেখে নিন ,আপনি কেমন ধর্ম পপিালন করে চলছেন ? আল্লার মনোনিত ধর্ম না মোল্লার আবিস্কৃত ধর্ম ?