আমাদের প্রত্যেকের কোন না কোন জিনিস ভাল লাগা তৈরী হয়, কোন মানুষ হোক বা কোন বস্তু হোক। আর সেটা যখন কোন কারনে আমাদের ছাড়তে হয়, তখন কস্ট হয়। এটার পেছনে যে কারন তা হলো আসক্তি। এই আসক্তির কারনেই আমাদের কস্ট হয় যখন প্রিয় বা ভাললাগা জিনিসটিকে ছাড়তে হয়।
এই আসক্তি শব্দটির ইংরেজী এটাচমেন্ট বা আটকে যাওয়া থেকে এসেছে। প্রায় প্রত্যেকের জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে কোন না কোন ব্যক্তি বা জিনিসের প্রতি এই আসক্তি হয়ে যায়। এই আসক্তির পেছেনে কাজ করে আমিত্ব আটকে যাওয়া।
আসক্তিকে একটি উদাহরন দিয়ে বুঝানো যেতে পারে। যেমনঃ একটি ছেলের একটি বাইক আছে। কোন এক কারনে বাইকটা নস্ট হয়ে গেল বা চুরি হয়ে গেল।তখন দেখা যায় তার মধ্যে ভিষন শোক চলে আসে। সে খুব দুঃখে মোচরে পড়ে, আমার প্রিয় বাইকটা চলে গেল! তা হলে দেখুন তাকে কিন্তু কেউ চুরি করে নিয়ে যায় নি,নিয়ে গেছে বাইকটা, কিন্তু কস্ট তার। এইখানে তার যে আমি সত্তাটা , সে মনে মনে যেটাকে আমি ভাবে, সে ঐ বাইকটাকে তা ভাবতে শুরু করেছে। মানে তার সত্তা আর বাইকটা আইডেন্টিফাইড হয়ে গেছে, এক হয়ে গেছে, স্ট্রিকট হয়ে গেছে। তাই বাইকটা নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তার শোক সৃষ্টি হয়েছে।
আরেকটি উদাহরন দেয়া যায়। যেমনঃ আমরা যখন কোন মুভি দেখি, সেখানে হয়ত কোন একটা দুঃখের সিন দেখা যাচ্ছে, অজান্তেই দেখতে পাই আমরা খুব শোকোগ্রস্থ হয়ে পড়েছি, দুঃখিত হয়ে পড়েছি এবং আমাদের চোখ দিয়ে হয়তো জল পড়ছে, অনেকেরি পড়ে। আমরা কিন্তু ভাল করে জানি ওটা একটি কল্পিত ক্যারেক্টার এবং সেটাকে বানানো হয়েছে এবং সেখানে ওরিজিনালি কেউই শোকোগ্রস্থ হচ্ছে না,দুঃখ পাচ্ছে না, কিন্তু আমরা এত কিছু জানার পরেও শোকোগ্রস্থ হয়ে পড়ি বা কাঁদতে শুরু করি। কেন ? আমার তো দূঃখ অরিজিনালি হয়নি, তাহলে আমি কেন কাঁদছি? তার কারন হচ্ছে সেই অবস্থাতে ঐ অবস্থাগুলির সাথে বা ঐ চরিত্র গুলির সাথে এক হয়ে গেছি, মুভির ঐ সিচুয়েশনের সাথে আমি আইডেন্ডিফাইড হয়ে গেছি, স্ট্রিক্ট হয়ে গেছি। যার জন্য ওখানকার পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার মধ্যে তার প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। ওখানে পরিস্থিতি ভাল হলে সূযখময় হলে আমি হাসছি,আনন্দ পাচ্ছি। ওখানে পরিস্থিতি যখন নেগেটিভ হচ্ছে তখন আমার মধ্য দিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। এটাই আইডেন্ডিফিকেশন। আমি অন্যত্র বিলিন হওয়া।
এই আমিত্বর আরেকটা কমন উদাহরন।
যেমনঃ একটি বাচ্চা আছে তার মায়ের কাছে। বাচ্চার কোন কারনে কস্ট হচ্ছে, যে কোন কারনেই, সেটা শাররীক হোক বা মানসিক হোক। এই কস্টের কারনে দেখা যায়, মা কস্ট পাচ্ছে বা বাবা কস্ট পাচ্ছে বা তার তার যে আত্মীয় পরিজন তারা কস্ট পাচ্ছে। তাহলে দেখুন কস্টটা কিন্তু হচ্ছে সন্তানের, সন্তান একটা সেপারেট এক্সিসটেনস, যে মা বা বাবা তার কিন্তু ফিজিক্যালি কোন কস্ট হচ্ছে না,তার কিন্তু দেহে কোন যন্ত্রনা নেই, কোথাও কোন যন্ত্রনা নেই। কিন্তু যেহেতু সামনে সন্তান কস্ট পাচ্ছে — সেইটা দেখে তার প্রতিক্রিয়াটা বাবা-মার মধ্যে হচ্ছে। কিন্তু কেন ?? তার কারন ছেলের সাথে মা এবং বাবা ভিষনভাবে আইডেন্ডিফাইড, এক হয়ে গেছে তার সত্তাটা। আমিটা সেখানে বিলিন হয়ে গেছে। মনে মনে সে নিজেকে ঐ দেহটার মধ্যেও তার অবস্থান সে ভাবতে শুরু করেছে। এই আইডেন্ডি ফিকেশনের জন্য আমাদের ভিষন ধরনের আসক্তি কাজ করে এবং যে জিনিসটার প্রতি আসক্তি সেটা যখন সরে যায় বা পরিবর্তন হয়ে যায় তার পরিবর্তনে আমরা ভিষনভাবে কস্টে পড়ি, খুব শোকগ্রস্থ হয়ে পড়ি, বিভিন্ন রকম ভুলভাল ডিশিসন নিয়ে নেই।
এই আসক্তি ! আসক্তিটা থেকে ধীরে ধীরে আমাদের মনকে বুঝানোর জায়গাটা,যেটা, সেটা হচ্ছে বিচার!! বিচার করার মানে হচ্ছে — আমাকে বুঝতে হবে যেই জিনিসটা আমার ভাল লাগছে আজকে সেই জিনিসটা তো পরিবর্তনশীল। যে জিনসটা ভাল লাগছে,ভাল লাগা শুরু হয়েছে সেটা তো এক সময় পরিবর্তন হবে। এটা জেনে যদি আমি সেই যায়গায় এগোই তাহলে বরং শোক অনেকটা কম হবে কিন্তু আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অজ্ঞাত সারে সেখানে জাম্প করে ফেলি এবং আইডেন্ডিফাইড হয়ে যাই। সামনের জিনিষটার পরিস্থিতি পালটে যায়, আমরা ভিষনভাবে শোকে নিমজ্জিত হয়ে যাই, কারন আমরা জানি না, বা বুঝার চেস্টা করি না যে, যে জিনিসটার প্রতি আমি আসক্ত হচ্ছি সেটা কিন্তু পরিবর্তনশীল। সেটা যে কোন দিন, যে কোন সময় পরিবর্তন হবে এবং একসময় ওটা থাকবে না, ওটার যে এপিয়ারেন্স ডেটটা একটা সময় ডিসেপিয়ারেন্স হবে, তাই না ? সেটা যখন ডিসএপিয়ারেন্স হবে, যেটাকে আমরা ধংস বলি, তখন তো আমি ফাঁকা হয়ে যাব, আমার আমি কে আমি আর খুঁজেই পাব না। তখনি আমাদের মধ্যে হতাশা আসে আর এই হতাশার জন্য আমরা ভুলভাল সিদ্ধান্ত নেই।
তাই যখনি যেকোন জিনিসে আমার ভাল লাগা সৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে আমার নিজেকে এটা বুঝাতে হবে আমি যে জিনিষটার প্রতি এগোচ্ছি সেটা কিন্তু পরিবর্তনশীল। এই ব্যাগ্রাউন্ড সাপোর্টটা মনে মনে রাখলে সামলাতে অনেক সুবিধে হয়।
আর সে জন্য বিভিন্ন আধ্যাতিক বই পড়া, সৎচর্চা করা, এগুলির মধ্যে থাকলে আমরা বিভিন্ন নেগেটিভ পরিস্থিতি থেকে নিজেদেরকে বের করে আনার সাহস পাব।
আমি সত্তাকে কোন ব্যক্তি বা জিনিষের মধ্যে ডিজলভ করে দিলেই আমরা তাকে হারানোর ভয়ে, না পাওয়ার ব্যাথায় শোকাগ্রস্থ হয়ে পড়ি। কিন্তু ভুলে যাই যার ভিতর আমি অনুভব করছি সেটা একদিন না একদিন পরিবর্তন শীল, বিলিন হয়ে যাবে, হারিয়ে যাবে, অদৃশ্য হয়ে যাবে আমার কাছ থেকে, সে আমার সম্পদ হোক আর সন্তান হোক আর আমার দেহ হোক। এই আসক্তি থেকে বেঁচে থাকার জন্যই পরকাল বিশ্বাসের গুরুত্ব।