Categories
My text

আদমের জাহান্নাম

আদম আঃ এর কি হাশর হবে ? 

পাপের শাস্তি ভোগার পর আল্লাহর হেদায়েত মেনে তওবা করার পর যখন তওবা কবুল হল, তখন আর পুনরায় শাস্তি কি হতে পারে? তাহলে তার হাশরের ময়দানে বিচারের জন্য উপস্থিত কেন হতে হবে।  আল্লাহ কি তাকে আবার বিচার দিবসে ডাকবেন এমন কোন আয়াত কোরানে পাওয়া যায় নি।
আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) কে জান্নাত (বেহেশত) থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনার উল্লেখ কুরআনের বেশ কয়েকটি স্থানে এসেছে।

আদম আঃ এর সাথে যদি শয়তানকেও পৃথিবীতে না পাঠানো হত তবে আদম সন্তানদের আর  বিচারের সম্মুখীন হতে হত না। মৃত্যুই হত সরাসরি জান্নাত। যা ৩:১৬৯ অনুযায়ী সরাসরি জান্নাতে যায় এবং রবের রিজিক প্রাপ্ত হয়।

যখন শয়তান তাদেরকে সেই অবস্থা থেকে পা ফসকে ফেললো এবং যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে তারা ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল। আমি বললামঃ তোমরা নিচে নেমে যাও—তোমরা একে অপরের শত্রু হবে এবং পৃথিবীতে তোমাদের জন্য রয়েছে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসবাস ও ভোগ। (2:36)

তিনি বললেনঃ তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অপরের শত্রু হবে এবং পৃথিবীতে থাকবে তোমাদের এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসবাস ও জীবনোপকরণ। (৭:২৪)

এই আয়াতগুলোতে বোঝানো হয়েছে যে শয়তানের প্ররোচনায় আদম ও হাওয়া (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন করায় তাঁদের জান্নাত থেকে নামিয়ে পৃথিবীতে পাঠানো হয়।

আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) কে বেহেশত (জান্নাত) থেকে পৃথিবীতে প্রেরণের সময় আল্লাহ তাআলা কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছিলেন। কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। নিচে তা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর পথ অনুসরণ করার নির্দেশ

আল্লাহ তাআলা বলেন: “আমি বললাম, তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। তারপর যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন পথনির্দেশ যায়, তবে যারা আমার পথ নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”(২:৩৮)

এখানে আল্লাহ আদম (আঃ) ও তার বংশধরদের উদ্দেশে বলছেন, পৃথিবীতে তাঁর পক্ষ থেকে হিদায়াত (পথনির্দেশ) আসবে এবং সেটি অনুসরণ করলে তারা নিরাপদে থাকবে।

২. শয়তানের প্ররোচনা থেকে সতর্ক থাকার উপদেশ

আল্লাহ তাআলা বলেন: “হে আদম! নিশ্চয়ই সে (ইবলিস) তোমার এবং তোমার স্ত্রীর শত্রু। সে যেন তোমাদের জান্নাত থেকে বের করে না দেয়, তখন তোমরা দুঃখিত হবে।”
— (সুরা ত্বাহা, আয়াত: ১১৭)
এখানে আল্লাহ শয়তানের চক্রান্ত সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

৩. তওবা ও ক্ষমার গুরুত্ব
আদম (আঃ) যখন ভুল করেছিলেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন, আর আল্লাহ তা কবুল করেছিলেন।

“যখন আদম তার পালনকর্তার কাছ থেকে কিছু কালেমা (বাক্য) গ্রহণ করলেন, তারপর তিনি তার তওবা কবুল করলেন। নিঃসন্দেহে তিনি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।” (২:৩৭)

আদম আঃ জান্নাতে থাকা অবস্থায় আদেশ অমান্য করে যে পাপা করেছিলেন তার শাস্তি ভোগ করার জন্য তাকে জাহান্নামে (পৃথিবীতে)  প্রেরন করা হল। সেই সাথে উপদেশ দিলেন আমার পক্ষ থেকে যদি কোন নির্দেশনা যায় তা অনুসরন করলে এবং অতীতের পাপের জন্য তওবা করলে তোমরা আবার জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।
আদম তার ভুলের জন্য তওবা করতে থাকে।  এক সময় রবের পথ নির্দেশ আসে আদম তা যথাযথ মেনে চলে।
ফলে আদমের তওবা কবুল হয় এবং আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হয়।

আল্লাহর ওয়াদা অনুযায়ী তাঁকে পুনরায় পুর্বের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার পরবর্তি সন্তানেরা এই জাহান্নাম নামক শাস্তির জায়গায় পড়ে থাকে।

তাদের প্রতিও একই নির্দেশ জারী থাকে ” যদি আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন পথনির্দেশ যায়, তবে যারা আমার পথ নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”(২:৩৮)

এই পৃথিবীতে রেখে যাওয়া আদমের সন্তানগন যদি সে নির্দেশনা মেনে চলে এবং তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে তবে তারাও বাবা আদমের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পারবে।
আর যদি চিরশত্রু শয়তানের পদাংক অনুসরন করে তবে আবার এ পৃথিবীতেই শাস্তি ভোগের জন্য পড়ে থাকতে হবে।

আদম আঃ এর জান্নাত থেকে জাহান্নামে/পৃথিবীতে প্রেরনঃ

আল্লাহ বলেনঃ পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগত ভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই  লিপিবদ্ধ করে থাকে ( 57:22)

তার পর এ থেকে উত্তীরনের জন্য বলেন
তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৮৪:১৯

তবে যারা মুত্তাকী তারা একবারই মৃত্যু বরন করবেন এবং রবের দিদার প্রাপ্ত হয়ে চিরকাল জান্নাতে অবস্থান করবেন। এটি আল্লাহর ঘোষণা। সুরা দোখান, আয়াত ৫৬

প্রথম মৃত্যুর পর তাহারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করিবে না। আর তাহাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হইতে রক্ষা করিবেন” (৪৪:৫৬)

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে না!’( ৩৭:৫৯) ইহা তো মহাসাফল্য। (৩৭:৬০) এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৬১)

প্রথম মৃত্যুর পর তাহারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করিবে না। আর তাহাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হইতে রক্ষা করিবেন” (৪৪:৫৬)

আর যারা অস্বীকার কারী অবাধ্য তার দুইবার কিংবা বারবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে যতক্ষন না জান্নাতে যাওয়ার মত পরিশুদ্ধ না হবে। এ বিষয়ে সূরা ইনশিকাকে আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয় তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করিবে। (৮৪:১৯)

অন্যত্র আরো পরিস্কার ভাবে আল্লাহ বলেনঃ
আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৬১)

মানুষকে আল্লাহ স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। তাই ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের বেলায় আল্লাহ নিরপেক্ষ ।

সুরা মোমিনের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ ” যে সময়ে তোমরা ফিরে যাইবে পিছনে, আল্লাহর তরফ হইতে থাকিবে না তোমাদের জন্য কোনো সংরক্ষক এবং আল্লাহ যাহাকে ভ্রান্তিতে ফেলেন তাহার জন্য কোনো হাদী নাই ।”

আল্লাহ কাহাকেও ভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে চান না ।

কারণ আল্লাহ সূরা হুদে বলে দিয়েছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করেনা আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেনা । (১১ঃ৫৩)

এই দুনিয়াটাই যে জাহান্নাম এটা মোমিন অর্থাৎ সত্যদ্রষ্টা ব্যতীত কারো পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব । আল্লাহ পাক কোরানে ঘোষণা করেছেন-” তোমাদের যদি দিব্যচক্ষু থাকত তাহলে জান্নাত এবং জাহান্নাম দেখতে পেতে ” (সুরা তাকাচ্ছুর ) ।

কোরানের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষকে জাহান্নামে দেওয়া হবে বলা হয়নি । মানুষ জাহান্নামে আছে বলা হয়েছে ।

তোমরা কিরূপে আল্লাহ্কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। (আল বাকারা – ২৮)

জান্নাত জাহান্নাম ততদিন বিদ্যমান যতদিন আসমান এবং জমিন বিদ্যমান সূরা হুদ আয়াত 107 এবং 108

সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন ; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাহাই করেন যাহা তিনি ইচ্ছা করেন। (১১:১০৭)

পক্ষান্তরে, যাহারা ভাগ্যবান তাহারা থাকিবে জান্নাতে, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; ইহা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার। (১১:১০৮)

প্রশ্ন আসবে মনে তাহলে জাহান্মাম কোথায়?
জাহান্নাম আছে সত্য।  কিন্তু সেটা কোথায়?  এ প্রশ্নের জবাবে আপনি নিজেই উত্তর খুজে বের করতে পারবেন জাহান্নাম আসলে কোথায় অবস্থিত। প্রথমে নিজেই প্রস্ন করুন ——–

আদম আঃ এবং হাওয়া আঃ কোথায় ছিলেন? উত্তর জান্নাতে। হ্যা,এটাই সত্য কথা।

প্রশ্নঃ সেখানে উনারা কি করেছিলেন? উত্তরঃ পাপ করেছিলেন। তারপর কি হল?
উত্তরঃ তারপর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি স্বরূপ পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিলেন।

প্রশ্নঃ তাহলে,শাস্তি কোথায় হয়? উত্তরঃ কারাগারে/ জাহান্নামে।

প্রশ্নঃ উনারা কোথায় এসেছিলেন শাস্তি পাওয়ার জন্য?উত্তরঃ জাহান্নামে।

তার অর্থ দাড়ায়,পৃথিবীটাই জাহান্নাম। আর এই পৃথিবী নামক জাহান্নামেই আদম ও হাওয়া আঃ এসেছিলেন।

এখন আসল কথায় আসি,শুধু মাত্র আদম ও হাওয়া আঃ নয়,আমরা প্রতিটা মানুষই অন্যায়কারী/পাপী ছিলাম। তাই আমাদেরকেও কর্মফল ভোগ করার জন্য এই পৃথিবী নামক জাহান্নামে পাঠানো হয়েছে। কারণ,জাহান্নাম ছাড়া,শাস্তি ভোগ করার আর কোন যায়গা নাই বা সুযোগ নাই।

এই পৃথিবী নামক জাহান্নামে এসে,আমরা যে যার,কর্মফল অনুযায়ী কম/বেশি সবাই শাস্তি ভোগ করছি।তাই বলা যায়,আমাদের ভাগ্য নির্ধারিত। এ জীবনে ভাগ্যের কখনোই পরিবর্তন হবে না।

তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৮৪:১৯

জান্নাত জাহান্নাম ততদিন বিদ্যমান যতদিন আসমান এবং জমিন বিদ্যমান সূরা হুদ আয়াত 107 এবং 108

তারপরও আমাদের একমাত্র করনীয়,আল্লাহর ইবাদত করে যাওয়া। অর্থাৎ যে যে অবস্থানে আছি,সেই অবস্থান থেকেই আল্লাহ প্রতি ঈমান এনে আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সৎ কর্ম করে যাওয়া এবং সকল অন্যায় থেকে দুরে থাকা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।

আমরা কেউই জানি না, জান্নাত কি!আমরা যেটা জানি,সেটাই কি জান্নাত? যেখানে একজন পুরুষ ৭০ টা হুর পাবে! মদ,মধু,দুধের নহর/নদী পাবে ইত্যাদি।না! সেটা জান্নাত নয়। ওটা কাল্পনিক জান্নাত। মানুষের বানানো জান্নাত।

আসলে জান্নাত হল,আল্লাহ সাক্ষাৎ পাওয়া!আল্লাহর সাক্ষাৎ পাওয়াই জান্নাত।
আমাদেরকে যেখান থেকে পাঠানো হয়েছে সেখানে চলে যাওয়া অর্থাৎ আল্লাহ সাথে মিশে যাওয়া বা আল্লাহতে বিলিন হয়ে যাওয়া।
আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৬১)

তবে,পরিশুদ্ধ অন্তর/নফস ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না বা আল্লাহর সাক্ষাৎ পাবে না বা আল্লাহতে মিশে যেতে/বিলিন হতে পারবেন না।

তাই,দয়াময় আল্লাহ,জাহান্নাম নামক এই পৃথিবীতে মানুষকে বার বার জন্ম দেয়/দিচ্ছে। কারণ,মানুষ যেন,পরিশুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়।

তারপরও যারা,বার বার সুযোগ পেয়েও পরিশুদ্ধ হতে পারবে না ,তারাই হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তার মানে দাড়ায়,মহাবিশ্ব একেবারে ধ্বংস/কিয়ামত হবে না।

জান্নাত জাহান্নাম ততদিন বিদ্যমান যতদিন আসমান এবং জমিন বিদ্যমান সূরা হুদ আয়াত 107 এবং 108

এ আমার গবেষনার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। একে মেনে নিতে আহবান করছি না। যুক্তি ও রেফারেন্সের প্রতি দ্বীমত পোষন করলে রেফারেন্স সহ মন্তব্য পেশ করার অনুরোধ রইল।

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Verified by ExactMetrics