যেনা কি শুধুই দৈহিক মিলন ?
আর যিনার নিকটবর্তী হইও না। ইহা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ। (১৭:৩২)
মু’মিনদেরকে বল, তাহারা যেন তাহাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাহাদের লজ্জা স্থানের হিফাযত করে। (২৪:৩০)
যেনা বলতে আমরা সাধারনত বুঝি নারী – পুরুষের যৌন সম্পর্ক । কিন্তু কোরানের ভাষায় যেনা বলতে শুধু নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক বুঝায় না।
যেনা হচ্ছে কোন কিছু জোর- যবরদস্তি করে দখল করা, আত্মসাত করা,হরন করা, কুমন্ত্রনা দিয়ে দখল করা, ষড় যন্ত্র করে দখল করা ইত্যাদিকে যেনা হিসাবে গন্য করা হয়েছে।
মানুষের যৌনতা শরীরে নয়। যৌনতার উৎপত্তি মন থেকে।
তাই আল্লাহ যেনা বিষয়ে বলতে গিয়ে শুরুতেই বলেন,তোমরা তোমাদের দৃষ্টি সংযত কর এবং লজ্জা স্থানের হেফাজত কর।
এই দৃষ্টিটা কিন্তু চর্ম চক্ষু নয়। দৃষ্টিটা হচ্ছে অন্তর। অন্তর যেখানে নেই সেখানে আমাদের দৃষ্টি থাকে না। আমরা দেখে থাকি আমাদের অন্তর দিয়ে। আল্লাহ এ জন্যই বলেছেনঃ কান দিয়েছি শোনার জন্য, চোখ দিয়েছি দেখার জন্য এবং অন্তর দিয়েছি অনুধাবন করার জন্য।
বস্তুত চোখ তো দেখে না, দেখে অন্তর। অন্তরের হেফাজত করা হচ্ছে আসল হেফাজত।
এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, যাদের অন্তরে ব্যধি আছে তারা এর দ্বারা প্রলুব্ধ হবে। তাই অন্তরের ব্যধিকে দূর করতে হবে।
আমাদের ব্যধি যুক্ত অন্তর গুলির মস্তিষ্কে সারাক্ষন যৌনতা ঘুরপাক খায়। ফলে যেনা সম্পর্কে কথা বললেই চলে আসে নারীপুরুষের যৌনতা।
আপনার শরীরে যে অনুভুতি আছে, যে জাগরন আছে সেই জাগরনটা ঘটায় কে?
জাগরনটা ঘটায় অন্তর। সেই অন্তরেকে হেফাজত করুন।
এবার ভাবুন কোন কিছু হরন করা,ছিনিয়ে নেয়া, জোর জবরদস্তি করা অন্তরের মধ্যে যদি কুমন্ত্রনা থাকে, কুবাসনা থাকে তাহলে আপনি একভাবে চিন্তা করেন আর এগুলি যদি না থাকে তাহলে আপনি আরেক ভাবে চিন্তা করেন। প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে পরকীয়া বা অন্য নারীর সাথে দৈহিক মিলনকে কি যেনা বলবো না? আপনি অন্যের বউ এর সাথে কৌসল করে হরন করেন বা ছিনিয়ে নেন তাহলে যার বউ তাকে কি আপনি বঞ্চিত করছেন না? তাকে আপনি ঠকাচ্ছেন না? কিংবা সে যদি কোন সন্তানের মা হয় আর তার সাথে কৌশল করে, প্রেম দেখিয়ে যদি নিয়ে আসেন তবে সন্তান তার মায়ের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না?
এটাও তো হরন, কুমন্ত্রনা দিয়ে আয়াত্তে আনা হল না? এই কৌসলটা এখানে মুখ্য। এই কুমন্ত্রনাটাই যেনা। আপনি আপনার অন্তরে কি ভাবছেন? জোর করে, কৌশলে, ষড়যন্ত্র করে অন্যের অধিকার করছেন? এই অন্তরের কুমন্ত্রনাটাই আপনার দৃষ্টি। যাকে নিয়ন্ত্রন করতে বলেছে লজ্জাস্থানের মত। এটাই দৃষ্টির যেনা। লজ্জা স্থানের পুর্ব শর্ত। এখানে শুধু নারী- পুরুষ বিষয় না। একজন মানুষ তার দৃষ্টি সংযত রাখবে, তার মানে হচ্ছে মন নিয়ন্ত্রিত রাখবে। মন নিয়ন্ত্রিত না রাখলে কোন কিছুই নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব নয়।
অথচ মোল্লারা হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে এ আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা করে ওয়াজ করে যে, নারীকে দেখলে সমস্যা হয়, এজন্য নারীকে ঢেকে রেখো ।
কেন আল্লাহ যে বলেছেন তোমার দৃষ্টি সংযত রাখ। এ আয়াতের মর্ম অনুযায়ী বিবাহিত স্ত্রীর সাথেও যেনা হতে পারে। যদি সেখানে পারস্পারিক সমর্থন না থাকে। অর্থাৎ যেনার মুল বিষয় হচ্ছে অন্তর, আপনার দৃষ্টি। আপনি অন্তরকে কুমন্ত্রনা হতে নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে আপনার দৃষ্টি সংযত রাখতে পারলেন না। আর দৃষ্টি সংযত না রাখা যেনার অন্তর্গত।
এ জন্যই কাবা চত্বর নারী – পুরুষ একত্রে তোয়াফ করে যেখানে দৃষ্টি সংযত না রাখলে যেনার কেন্দ্র হত।
স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষামান এই যে মেয়েটি, তার পোষাক, দেহ কাঠামো আপনার দৃষ্টি গোচর হওয়ার সাথে সাথে মনে কামনা বাসনার উদ্রেক হতেই পারে। আপনি যদি মনের ঐ কুমন্ত্রনাকে দমন করতে পারেন আল্লাহর উপদেশ স্মরন করে অর্থাৎ আপনার দৃষ্টি সংযত রাখতে সমর্থ হন তবে আপনি যেনা থেকে মুক্ত রইলেন। প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ঘুষ খায় না এটি কোন ক্রডিট নয়, কারন ওখানে ঘুষ খাওয়া সুযোগই নাই। তদ্রুপ নারীটি পর্দা করে নাই তবু আপনি আপনার দৃষ্টি সংযত রেখেছেন এটিই আপনার ক্রেডিট রবের নিকট। যৌন মিলনেই শুধু যেনা সীমাবদ্ধ নয়।