ফাদক ভূমি বিতর্ক (قضية فدك)
“যা কিছু আল্লাহ তাঁর রাসূলকে ফিরিয়ে দিয়েছেন…।” (৫৯:৬)
ফাদক ছিল একটি উপযোগী জমি — খাইবার যুদ্ধের পরে মুসলিমদের হাতে আসে, তবে যুদ্ধ ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে।
এটি “ফাই'” সম্পত্তি ছিল, যা সরাসরি রাসূল ﷺ এর অধীনে আসে (সূরা হাশর 59:6)
রাসূল ﷺ এটি নিজের ও আত্মীয়দের ব্যয়ে ব্যবহার করতেন।
বিতর্কের সূচনাঃ
রাসূল ﷺ এর ওফাতের পরে, ফাতিমা (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-এর কাছে এই জমির মালিকানা দাবি করেন।একে তিনি উত্তরাধিকার বলে দাবি করেন।
অথবা রাসূল ﷺ জীবিত অবস্থায় এটি তাকে “দান” করেছেন বলে দাবি করেন।
আবু বকর (রাঃ)-এর জবাবে বলেন: “রাসূল ﷺ বলেছেন: ‘আমরা নবীরা উত্তরাধিকার রাখি না; আমরা যা রেখে যাই, তা সদকা হয়ে যায়’” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)।
তিনি দাবি অস্বীকার করেন এবং সেই ভূমি মুসলিম রাষ্ট্রীয় খাজাঞ্চিখানায় রাখেন।
আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ” নবীগণ উত্তরাধিকার রেখে যান না। তাঁহারা যা রেখে যান তা সদকা (দান) হয়।”
অতএব, তিনি বলেন: ফদক ভূমি রাষ্ট্রীয় মাল, কোনো ব্যক্তি/পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। (সহীহ বুখারী – ৩০৯৩)
তিনি আবু বকর (রা.)-এর এই সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট হন।“তিনি জীবদ্দশায় আর আবু বকর রা. এর সঙ্গে কথা বলেন নি।”
“ফাতিমা আবু বকর (রা.) কে ত্যাগ করলেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কথা বলেননি।”
আবু বকর রাঃ বলতেন “আমি কখনো এমন কিছু করিনি যা রাসূল ﷺ না করতেন।”
এবং মৃত্যুর সময় বলেছিলেন:“আমি যদি ফাতিমার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমি অনুতপ্ত।”
এ ঘটনা উভয়ের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে ব্যাখ্যা করা উচিৎ, কারণ উভয়েই জান্নাতবাসী এবং রাসূল ﷺ-এর অতি প্রিয় ছিল।
ফাতিমার প্রতিক্রিয়াঃ এরপর তিনি আবু বকর (রাঃ)-এর সাথে কথা বন্ধ করেন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আর দেখা করেননি — এটা সাহিহ বুখারিতে বর্ণিত আছে।
তবে তাঁর ইন্তিকালের পর, আলী (রাঃ) আবু বকর (রাঃ)-এর সঙ্গে বায়আত করেন এবং সম্পর্ক মিটে যায় (বুখারি: كتاب المغازي)।
ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) — ইসলামের প্রিয়তমা নারী, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কনিষ্ঠ কন্যা।
জন্মসন: ৫ হিজরী-পূর্বে (খ্রিঃ ৬০৫) অর্থাৎ নবুওয়াতের পাঁচ বছর আগে মক্কায় তাঁর জন্ম।
মৃত্যু সন: রাসূল ﷺ এর ইন্তিকালের ৬ মাস পর, অর্থাৎ: ১১ হিজরি → খ্রিঃ ৬৩২।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স তখন প্রায় ২৫/২৭ বছর।
কবরস্থান: কবরের নির্দিষ্ট স্থান অজানা। কারণ, আলী (রাঃ) তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী রাতের আঁধারে গোপনে দাফন করেন।
ফাতিমা (রাঃ)-এর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক সমূহঃ
তিনি নবুয়তের ৫ বছর আগে ৬০৫ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব জীবনকালঃ মক্কায় তিনি কুরাইশদের নির্যাতন, রাসূল ﷺ এর কষ্ট, মা খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যু ইত্যাদি সহ্য করেন।
শিশু বয়সেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মাতা খাদিজা (রাঃ) এর পর ঘরে দ্বিতীয় মুসলিম নারী হিসেবে বিবেচিত হন।
বিয়ে ও পরিবারঃ রাসূল ﷺ এর আদেশে ফাতিমা (রাঃ)-এর বিয়ে হয় আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ)-এর সঙ্গে, ২ হিজরিতে।
তাদের ঘরে চারটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে:
১) হাসান (রাঃ)
২) হুসাইন (রাঃ)
৩) যয়নাব (রাঃ)
৪) উম্মু কুলসুম (রাঃ)
রাসূল ﷺ বলেতেন: “ফাতিমা আমার শরীরের এক অংশ।” (সহিহ বুখারি)
তার গুণাবলি ও আমলঃ অত্যন্ত দানশীলা, গরিবদের প্রতি সদয়, নিজে অভুক্ত থেকেও অপরকে খাওয়াতেন।
তিনি ও আলী (রাঃ) মিলে অনেক রাত্রি না খেয়ে থেকেছেন, নামাজে সিজদায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন।
রাসূল ﷺ এর মৃত্যুর সময় তিনিই প্রথম তার মৃত্যু সংবাদ বুঝে ফেলেন এবং শান্ত থাকেন।
আঘাত প্রাপ্ত ও শহীদ হন।
ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা)‑কে কুরআনে সরাসরি নাম নিয়ে উল্লেখ করা হয়নি, তবে কিছু আয়াতে তাঁকে ঘিরে সম্ভাব্য ইঙ্গিত বা ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে — বিশেষত তাঁর পরিবার গত মর্যাদা ও পবিত্রতা প্রসঙ্গে। নিচে এই আয়াতসমূহ ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলো:
১. আহলুল বাইত সংক্রান্ত আয়াতঃ
“আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে, হে আহলুল বাইত, এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”
(সূরা আহযাব ৩৩:৩৩)
প্রেক্ষাপটঃ আহলুল বাইত (নবী ﷺ এর ঘরের সদস্য) বলতে এখানে কারা বোঝানো হয়েছে এ নিয়ে সুন্নি ও শিয়া উভয়ের ব্যাখ্যা আছে।
রাসূল ﷺ ফাতিমা, আলী, হাসান ও হুসাইন (রাঃ)–কে একটি চাদরে আবৃত করে বলেন:
“হে আল্লাহ! এরা আমার আহলুল বাইত। তুমি তাদের অপবিত্রতা দূর কর।”
তাই এই আয়াতে ফাতিমা (রাঃ)-কে অন্যতম “আহলুল বাইত” হিসেবে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
২. মুবাহালা আয়াত – ফাতিমা (রাঃ)-এর অঙ্গিভুক্তি
সূরা আলে ইমরান ৩:৬১
فَقُلْ تَعَالَوْا۟ نَدْعُ أَبْنَآءَنَا وَأَبْنَآءَكُمْ وَنِسَآءَنَا وَنِسَآءَكُمْ…
“…চল, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রগণকে এবং তোমাদের পুত্রগণকে, আমাদের নারীদের ও তোমাদের নারীদের…”
( সূরা আলে ইমরান ৩:৬১)
প্রেক্ষাপটঃ খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সত্য-মিথ্যার জন্য আল্লাহর শাস্তি আহ্বানের প্রস্তাবে এই আয়াত নাজিল হয়।
৩. তাকওয়ার ভিত্তিতে মর্যাদা — সূরা তাহরিম ৬৬:৫
“…তাঁর প্রতিপালক যদি নবী তোমাদের ত্যাগ করেন, তবে তিনি তাঁকে দিবেন এমন স্ত্রী যারা হবেন মুসলিমা, মু’মিনা…” ( সূরা ৬৬:৫)