Categories
My text

পবিত্রতা

পবিত্রতা কি?

পবিত্রতা (আরবি: طهارة, তাহারাত) হল ইসলামের একটি অত্যাবশ্যক অংশ। এটি নাজাসাতের বিপরীত, যা হল ধর্মীয়ভাবে অপবিত্র হওয়ার অবস্থা।

আরবী মুল শব্দ তাহারাত যার অর্থ পবিত্রতা।
তাহরু মুল শব্দটি।

* সাধারন ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে আমরা পবিত্রতা বুঝে থাকি।

* ইসলামের ভাষায় পবিত্রতা বলতে ওযু করা বুঝে থাকি। ওযু করা বলতে হাত কুনুই পর্যন্ত ধোয়া পা গিট পর্যন্ত ধোয়া,, মুখ মন্ডল ধোয়া এবং মাথা মাসেহ করাই হল ওযু।সুরা মায়েদা আয়াত ৬ এ বর্নিত:

হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথা মসেহ্ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাক, (৫:৬) 

কুলি করা, গরগরা করা,নাকে পানি দেওয়া এ অতিরিক্ত কাজ গুলি হাদীসের বর্ণনা থেকে এসেছে। কোরানে এর কোন নির্দেশনা নেই।

* এবার আসা যাক পবিত্রতা বলতে আল্লাহ কি বুঝিয়েছেন? এ বিষয়ে বুঝতে আমরা ৫৬ নং সুরা ওয়াকিয়ার ৭ নং আয়াত নিয়ে বিশ্লেষন করে দেখা যেতে  পারে। উক্ত আয়াতে বর্ণিত হয়েছেঃ “পবিত্রতা ব্যাতীত কেহ কোরান স্পর্স করতে পারবে না।”

আমরা সরল এ অনুবাদে বুঝে থাকি বা আলেম সমাজ বলে থাকেন– ” অযু বিহীন কোরান পড়া বা স্পর্শ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। “ তাই আমরা কোরান তেলোয়াত করতে বা স্পর্স করার আগে অযু করে নেই।

কিন্তু  আল্লাহ তাঁর এ আয়াতে  যে ভাবে বুঝাতে চেয়েছেন আমরা সেভাবে বুঝতে পারিনি।

আল্লাহ এখানে يَمَسُّهٗۤ লা ইয়ামাছছুহু বলতে বুঝাতে চেয়েছেন ধারন করা, মেনে নেওয়া, নিবীর ভাবে আনুসরন করা।

আর পবিত্রতা বলতে বুঝায়েছেন খান্নাস মুক্ত নাফস বা অন্তকরনকে।

অর্থাৎ যার অন্তকরন খান্নাস মুক্ত নয় সে অপবিত্র। আর এই অপবিত্র অন্তর নিয়ে কোন মানুষ কখনোই কোরান উপলব্ধি করতে পারবে না বা হৃদয়ে ধারন বা বুঝতে সক্ষম হবে না।

নবীর হাতে বায়াত নিয়ে ইসলাম গ্রহনের পরে একটিই কাজ ছিল কোন আয়াত নাযিল হলে সাথে সাথে সকলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনা এবং সে নির্দশনা মোতাবেক বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। রবের সাঘে সংযোগ স্থাপন করে নিজের ইচ্ছেকে বিলীন করে দেওয়া। আর এটাই ছিল সালাত কায়েম।

নবী মুহম্মদের উপর কোন আয়াত নাযিল হওয়ার সাথে সাথে তাঁর দায়িত্ত ছিল তা আয়ত্ত করা এবং সকলের নিকট প্রচার করা। তিনি এ দায়িত্ত পালন করতে কোন নির্দিষ্ট স্থানে সকাল সন্ধ্যায় সকলকে মিলিত হতে আহ্বান করতেন। যেহেতু নও মুসলিম সমাজচ্যুত এবং  অভাব অনটনে রুটি রুজির জন্য মাঠে বাগানে অন্যের কৃষি খামারে কাজ করত, নবীর আহ্বানে সব কাজ কর্ম ছেড়ে ছুটে আসতেন ব্যাকুল হয়ে অধীর আগ্রহ ভরে নতুন কি নির্দেশ এল। অধিকাংশ সময় তাদের জামা কাপড় শরীর উসকু খুসকো ও ধুলি ময়লা মাখা থাকতো যেহেতু কাজ ফেলে সরাসরি আসতো। তাই তাদের পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে রবের সংযোগ ( সালাতে দন্ডায়মান) অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে নির্দেশ এল সুরা মায়েদার ৬ নং আয়াতে

يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اِذَا قُمْتُمْ اِلَى الصَّلٰوةِ فَاغْسِلُوْا وُجُوْهَكُمْ وَاَيْدِيَكُمْ اِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوْا بِرُءُوْسِكُمْ وَاَرْجُلَكُمْ اِلَى الْـكَعْبَيْنِ‌ ؕ وَاِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوْا‌ ؕ

যখন দাঁড়াবে – اِذَا قُمْتُمْ ইযা কুমতুম।

সালাতের জন্য – اِلَى الصَّلٰوةِ ইলাস সালাতি

তোমরা ধুবে فَاغْسِلُوْا ফাগছিলুউ

তোমাদের মুখ মন্ডল গুলো وُجُوْهَكُمْ জুহাকুম

এবং তোমাদের হাতদ্বয় وُجُوْهَكُمْ ওয়া আইদিয়াকুম

কুনুই পর্যন্ত اِلَى الْمَرَافِقِ ইলাল মারফিকি

এবং মাসেহ করবে وَامْسَحُوْا ওয়ামছাহু

তোমাদের মাথা بِرُءُوْسِكُمْ বিরু উছিকুম

ও তোমাদের পাগুলো وَاَرْجُلَكُمْ ওয়া আরজুলাকুম

দুই গিট পর্যন্ত اِلَى الْـكَعْبَيْنِ‌ ইলাল কাবাইন

এবং যদি তোমরা হও وَاِنْ كُنْتُمْ ওয়া ইনকুনতুম

নাপাক جُنُبًا জুনুবান

তবে তোমরা পবিত্র হবে فَاطَّهَّرُوْا‌ ফাততাহারু।

অনুবাদঃ ওহে যারা ঈমান এনেছো ! যখন তোমরা সালাতের জন্য প্রস্তুত হইবে তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করিবে এবং তোমাদের মাথা মসেহ্ করিবে এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করিবে; যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হইবে।

এ আয়াতকে যদিও অধিকাংশ ইসলামিক আলেম গন অযু করাকে বুঝান এবং ওযু করার মাধ্যমে পবিত্র হওয়া বুঝিয়ে থাকেন। আমি ভিন্ন মত পোষন করি আয়াতের বর্ননা মোতাবেক। এখানে প্রকাশমান অঙ্গ পরিস্কার করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া جُنُبًا জুনুবান ( নাপাক) শব্দটি অবশ্যই অনুধাবনীয় বটে।

পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন। (৮:১৩৮) এই পবিত্রতা কি ওযু করে পবিত্র হওয়াকে বুঝায়? 

১) বিশ্বাসের পবিত্রতা : হে মুমিনরা! নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক। সুতরাং তারা যেন এই বছরের পর আর মসজিদুল হারামের নিকটবর্তী না হয়। তওবা:২৮

২) কাজের পবিত্রতা: ‘হে মুমিনরা! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন করো। যাতে তোমরা সফল হও।
’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)

৩) খাবারের পবিত্রতা : হে রাসুলগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু থেকে আহার করো এবং সৎকাজ করো। তোমরা যা করো সে সম্বন্ধে আমি সবিশেষ অবগত।’ (সুরা : মুমিনুন: ৫১)

৪. পোশাকের পবিত্রতা :‘হে বস্ত্রাচ্ছাদিত! দাঁড়ান, (আপনজনদের) সতর্ক করুন, আপনার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করুন এবং আপনার পোশাক পবিত্র রাখুন। ( মুদাসসির ১-৪)

৫) ইবাদতে পবিত্রতা : ‘হে মুমিনরা! যখন তোমরা নামাজের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবে এবং তোমাদের মাথায় মাসেহ করবে; পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত করবে। যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে বিশেষভাবে পবিত্র হবে।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৬)

৬. ব্যক্তিগত জীবনে পবিত্রতা :‘লোকে তোমাকে রজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রজঃস্রাবকালে স্ত্রী সংগম বর্জন করবে এবং পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী সংগম করবে না।’ (সুরা : বাকারা: ২২২)

পবিত্রতা বলতে অযুকে বুঝে থাকি।  আসলে পবিত্রতা হল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন।  আর ঈমানের দিক থেকে পবিত্রতা হল খান্নাস মুক্ত নফস।

Verified by MonsterInsights