Categories
My text

দ্বীন প্রচারে কৌশল

আহলে কোরানদের দ্বীন প্রচার

মুহম্মদ সা: নাজ্জাশীকে পত্র লিখে  ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। আপনি যদি সে নীতি অনুসরন করে দাওয়াতি কাজ করতে চান, তবে চরম ভুল করবেন।  কারন………

দীর্ঘ তিন বছর আবু শোয়েবের বয়কট অস্বীকার করবেন কি করে। এটা কিন্তু কোরানে নেই। যদিও নিপীরিত একদল গুহা বাসিদের কথা কোরানে বর্ণিত  আছে। যা আজো অনুপ্রেরনা যোগায়।

খুব গভীর ভাবে হিসাব মিলাতে হবে ———- “মুহম্মদ সাঃ দীর্ঘ ৪০ বছর নিজ প্রচেষ্টায় মক্কার প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছিলেন, কিন্তু বিন্দু মাত্র কাজ হয়নি।

সে যখন পূর্ণ শক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং চল্লিশ বৎসরে উপনীত হয় তখন বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক ! তুমি আমাকে সামর্থ্য দাও, যাহাতে আমি তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিতে পারি, সূরা : ৪৬ আয়াত নম্বর: ১৫

যখন তাঁর উপর ওহী নাযিল হতে শুরু করলো তখন হকুম হলো — ” উঠো হে চাঁদর আবৃত, প্রচার কর এই কিতাবের দ্বারা।

এইবার শুরু হলো রিভোলেশন, পরিবর্তনের পালা। কারন এবারের নির্দেশনা  ছিল স্বয়ং রবের। দাওয়াত কার্যকারী হতে শুরু করল।
আল্লাহর নির্দেশ পাওয়ার পুর্বে নবী মুহম্মদ সাঃ এর ব্যক্তিগত সকল  প্রচেষ্টা যদি ব্যার্থ হয়, সেক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় কি করে সফল হওয়ার আশা রাখেন।

মুহম্মদে সাঃ এর মৃত্যুতে সাহাবীগন যখন বিভিন্ন চিন্তায় মশগুল, লাশ দাফনে তিনদিন বিলম্ব হচ্ছিল, ঠিক তখন পালক মাতা বারাকা রা: পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে  হত-বিহ্বল কন্ঠে একটি কথাই শুধু বলেছিলেন, ” হায় !  আজ থেকে আর জিব্রাঈল আসবে না পৃথিবীর বুকে।”

সুতরাং ওহীর সাহায্যের আশাও করা যাচ্ছে না।দীর্ঘ ৬৩ বছর জীবনে যে দ্বীনকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, তা তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই  রঙ বদলাতে শুরু হয়ে যায়। খেলাফত আমলেই তার পরিবর্তন হতে শুরু করে এবং মুয়াবিয়া ও তার পুত্র এজিদের আমলে ইসলাম তার স্বকীয়তা হারায়।

পত্তন হয় ধর্মকে জীবিকা হিসাবে গ্রহন করার প্রথা। এ প্রথাকে ভাঙার চেষ্টা করে খলিফা উসমান রাঃ এর সময়ও অনেকে মুগীরা গংদের ষড়যন্ত্রে কতল হয়েছেন।

এজিদের শাসন কালে হাসান, হোসাইন সহ, বদরে সাহাবী সহ এমন প্রায়  বিশ হাজার সাহাবী,   রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় লালিত ধর্মজীবি আলেমদের উস্কানীতে হত্যা হয়েছিল।
তদানিন্তন ধর্ম জীবি এই আলেম গন হোসাইন কে কতল করা ফরজ ফতুয়া দিয়েছিল।

এজিদ এই পেশাজীবি আলেমদের  ফতুয়ার উপর নির্ভর করেই শাসন ব্যবস্থা চলতেন।

তার একটি উৎকৃষ্ট প্রমান,  আমীর মুয়াবিয়া যখন বৃদ্ধ, তখন ফর্সা এক সুন্দরী দাসী ক্রয় করে তার সন্মুখে পেশ করা হয়। তিনি তার হাতে থাকা কাঠি দ্বারা খুচিয়ে খুঁচিয়ে দাসীর সকল অঙ্গ প্রতঙ্গ পর্যবেক্ষন করে দাসীকে বলেছিলেন তোমাকে সম্ভোগ করতে আমি অক্ষম। অতপর ফতুয়া বিভাগের আলেমকে ডেকে বললেন আমি এই সুন্দরী দাসীটিকে ভোগ করতে আমি অক্ষম, এটা বরং আমার পুত্র এজিদে নিকট পাঠিয়ে দাও। ফতুয়া বিভাগের আলেম কোরানের আয়াত উদ্বৃতি দিয়ে জানালেন, হে আমিরুল পিতার ব্যবহৃত নারী পুত্রগন ব্যবহার করতে পারে না। তাৎক্ষনিক আমীর মুয়াবিয়া তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেন এবং দাসীটিকে অন্যত্র প্রদান করা হয়। (আল বিদায়া ওয়াল নেহায়া)
এ ঘটনা থেকে বুঝা যায় সে সময়ের দুশ্চরিত্র শাসকগনও এই ধর্ম র্জীবি আলেমদের পরামর্শে কোরানের পরিপন্থি, আদর্শ বর্জিত  কাজ সমুহ করতেন। তার কারন তাদের পেশার পদোন্নতির জন্য এই আলেমগন কিয়াস, ইজমা, ইজতেহাদ  দাড় করাতেন সুস্পষ্ট দলিল থাকলেও।  এদেরকেই ধর্মজীবি বলা হয়, যারা ধর্ম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। সুতরাং ধর্ম জীবির পত্তন আজ নতুন নয়, অনেক আগেই।
বুখারী কিতাবের রচয়িতা ইসমাঈল হোসেন বুখারীও এই পেশাজীবি আলেমদের দ্বারা নিগৃহীত হয়ে  দেশ থেকে বিতারিত হয়ে রবের নিকট প্রার্থনা করেন———

” হে আমার রব !   আমার জন্য পৃথিবী সংকোচিত হয়ে আসছে, তাই আপনী অতি শীঘ্র আমাকে আপনার শানে তুলে নিন। আমি আর পারছি না। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ভুমিকায়)

ইমাম গাজ্জালী রহঃ ও একই ভাবে মৃত্যুবরন করেছেন।  তাকে সে সময়ের এই শ্রেনীর আলেমগন মুতাঝিলা উপাধী দিয়ে দেশান্তর করেছিলেন। তিনি মৃত্যুর পুর্বে ছেলেদেরকে উপদেশ দিয়ে গিয়েছিলেন আলেমদের পাশে কখনো বাড়ী করো না। ( মিনহাজুল আবেদীন)

ইসলাম প্রচারের শুরুতে বিরোধিতায় সাধারন জনতা অংশ গ্রহন করে নাই। করেছিল মক্কার তদানিন্তন প্রসিদ্ধ আলেমগন।  বর্তমানেও তাই হবে এবং ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যহত থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। এটাই রবের আকাংখা বাতেলের সাথে হকের লড়াই এর মাধ্যমে দ্বীনকে  সমুন্নত রাখা।

আপনি মুহাম্মদ সাঃ এর নীতি অনুসরন না করে, করতে গেলেন  ইব্রাহীম আঃ এর নীতি। এখানেও  চরম ভুল। আমরা মিল্লাদে ইব্রাহীম এবং ইব্রাহীমের সুন্নতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার নির্দেশ রয়েছে কোরআনে। তার মানে এই নয় ইব্রাহীম আঃ যে জীবন ব্যবস্থায় প্রতিষ্ঠিত ছিলেন আমাকে অনুরুপ অনুসরন করতে হবে।

কারন, ইব্রাহীম আঃ মুর্তি ভেঙ্গে দেশান্তর হয়েছিলেন। পক্ষান্তরে মুহাম্মদ সাঃ দেশ ত্যাগ করে ক্ষমতা অর্জন করে এসে….. পরে মুর্তি ভাঙ্গেছিলেন।

আরো লক্ষ্যনিয় গুহাবাসী কতিপয় যুবক সংঘঠিত হয়ে রবের নিকট সাহায্য চেয়েছিলেন, একক ভাবে নয়।

আবুসিনিয়ায় প্রথম যে দলটিকে রাসুল সাঃ হিজরতে পাঠিয়েছিলে সেখানে বিচক্ষন ও বাগপটু জাফর রাঃ কে সাথে দিয়েছিলেন। যিনি কোরান থেকে সূরা মারিয়মের
আয়াত বাদশাহকে শুনিয়েছিলেন। বাদশাহ বিধর্মী হলেও হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন, এবং মক্কা হতে প্রেরিত প্রতিনিধিদের উপঢৌকন ফেরত দিয়ে ইসলাম গ্রহন কারী দলকে তার রাজ্যে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিলেন এমন কি
নিজে ইসলামের ছায়াতলে এসেছিলেন। এসব বর্ননা কিন্তু কোরানে নেই, আছে বুখারীর হাদীসে। তাই ইতিহাস আমাদের হাদীস থেকেই নিতে হয়, একেবারে ঢালাও ভাবে অস্বীকার করব কি করে?

হে আহলে কোরআন! আপনি আপনার মতাদর্শকে পুশিং করে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা না করে যার যার চিন্তা চেতনার মাধ্যমে গ্রহন করার জন্য ছেড়ে দিন।

নচেত এই ধর্মজীবিদের লেলিয়ে দেয়া অজ্ঞদের হাতেই প্রান হারাতে হবে।

আহলে কোরান ইতিপুর্বেও অনেক বিলুপ্ত হয়েছে। তার মানে আমি নিরুৎসাহিত করছি না, করছি কৌশলটা পালটিয়ে নিতে। সূরা আবাসার কথা গুলো পড়ুন, সেখানে সমাজের মর্যদাশালী ব্যক্তিদের চেয়ে সাধারন জনতার প্রতি ইংগীত করে। বরং সামাজিক মর্যদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি ঝুঁকে পড়ার জন্য তিরস্কার করে উক্ত সূরা নাযিল।

সর্বপোরি রাষ্ট্র যখন ধর্মজীবিদের কথায় চলে, আর তার কারন গনতন্ত্র। সংখ্যা গরিষ্ঠের দিকে রাষ্ট্র পক্ষ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এজন্য ইসলাম গনতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয় না।

আমাকে তদানিন্তন  রোম সম্রাটের নীতির মত বিবেচনা করতে পারেন। আপনার দাওয়াত প্রক্রিয়া আর আমার কৌশল এক নয়। সূরা রুম।

Verified by ExactMetrics