Categories
My text

জীবন চক্র রহস্যঃ

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে না!’( ৩৭:৫৯) ইহা তো মহাসাফল্য। (৩৭:৬০) এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৬১)

মানুষ জন্মগত ভাবে কেন অন্ধ, আতুর, পুঙ্গু হয়?  কেন অপরিণত বয়সে মৃত্যু হচ্ছে, ভালো মেয়েটির শ্লীলতাহানী হচ্ছে, কেন নিরপরাধ মানুষ জেল খাটছে,?

আল্লাহ বলেনঃ পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে ;।( 57:22)

এর প্রত্যেকটির পিছনে একটি কারণ এবং জন্মচক্রের রহস্য লুকায়িত রয়েছে । তা না হলে বলতে হয় আল্লাহ পক্ষপাতিত্ব করছেন । কাউকে অন্ধ, খোঁড়া বানাচ্ছেন, আবার কাউকে ভালো বানাচ্ছেন, কিন্তু আল্লাহ তো নির্দোষ- নিরপেক্ষ । আল্লাহ পাক ঘোষণা করেছেনঃ
” যা কিছু মঙ্গল তা (আল্লাহ ) হতে আর যা কিছু মন্দ তা তোমা হতে ( সুরা নেসা ;-৭৯) ।
অথচ আমরা বলে থাকি সবই তো আল্লাহর হুকুমে হয়েছে । আল্লাহর উপর দোষ চাপিয়ে দেই । আমার যা কিছু মন্দ তা যদি আমার কৃতকর্মের ফলই হয়ে থাকে তাহলে আমার কর্মফলে আমিই গ্রেফতার, আল্লাহ নিরপেক্ষ ।

এর যথাযোগ্য সদ্ব্যবহার জান্নাতের দিকে উত্তরন বা প্রমোশন,আর এর অপব্যবহার জাহান্নামের দিকে পশ্চাৎপসরন বা ডিমোশন । তাই তো রব বলেনঃ তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ৮৪:১৯

তবে যারা মুত্তাকী তারা একবারই মৃত্যু বরন করবেন এবং রবের দিদার প্রাপ্ত হয়ে চিরকাল জান্নাতে অবস্থান করবেন। এটি আল্লাহর ঘোষণা। সুরা দোখান, আয়াত ৫৬
” প্রথম মৃত্যুর পর তাহারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করিবে না। আর তাহাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হইতে রক্ষা করিবেন(৪৪:৫৬)

আর যারা অস্বীকার কারী অবাধ্য তার দুইবার কিংবা বারবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করবে যতক্ষন না জান্নাতে যাওয়ার মত পরিশুদ্ধ না হবে। এ বিষয়ে সূরা ইনশিকাকে আল্লাহ বলেনঃ নিশ্চয় তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করিবে।(৮৪:১৯)

অন্যত্র আরো পরিস্কার ভাবে আল্লাহ বলেনঃ
আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৬১)

এ আয়াতেই জন্ম চক্রের রহস্য লুকায়িত।

কারন হলো ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের বেলায় আল্লাহ নিরপেক্ষ ।

সুরা মোমিনের ৩৩ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেছেনঃ ” যে সময়ে তোমরা ফিরিয়া যাইবে পিছনে, আল্লাহর তরফ হইতে থাকিবে না তোমাদের জন্য কোনো সংরক্ষক এবং আল্লাহ যাহাকে ভ্রান্তিতে ফেলেন তাহার জন্য কোনো হাদী নাই ।”
আল্লাহ কাহাকেও ভ্রান্তির মধ্যে ফেলতে চান না । কারণ আল্লাহ সূরা হুদে বলে দিয়েছেনঃ “যে ব্যক্তি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করেনা আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেনা । (১১ঃ৫৩)

তাঁরই সৃজিত প্রাকৃতিক নিয়ম যে মানুষ মহামানবের হেদায়েতের বিরোধীতা করলে মৃত্যুর পরে পেছনের দিকে অর্থাৎ পশুকুলে জন্ম নেয় । তখন তাদের জন্য কোনো হাদী থাকে না । একেই আল্লাহর বিভ্রান্তি বলা হয়েছে । মোহাম্মদ গোষ্ঠীর সাথে মিলিত না হওয়া পর্যন্ত (মুসলমান মুত্তাকী অবস্থায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ) মানুষের মুক্তি হবে না এবং জন্মচক্রের ফেরে রুপান্তরিত হয়ে বারবার এই দুনিয়া নামক জাহান্নামে আসতে হবে ।

এই দুনিয়াটাই যে জাহান্নাম এটা মোমিন অর্থাৎ সত্যদ্রষ্টা ব্যতীত কারো পক্ষে উপলব্ধি করা অসম্ভব । আল্লাহপাক কোরানে ঘোষণা করেছেন- ” তোমাদের যদি দিব্যচক্ষু থাকত তাহলে জান্নাত এবং জাহান্নাম দেখতে পেতে ” (সুরা তাকাচ্ছুর ) ।

কোরানের ঘোষণা অনুযায়ী মানুষকে জাহান্নামে দেওয়া হবে বলা হয়নি । মানুষ জাহান্নামে আছে বলা হয়েছে । একটু লক্ষ্য করে দেখুন তো জীবজগৎ ও প্রানিজগতে কয়টা জীব বা প্রানী অন্ধ, আতুর, খোঁড়া ও অঙ্গহীন হয়ে জন্মাচ্ছে ? সুরা বাকারার ২৮ নং আয়াতের দিকে, আমরা একটু লক্ষ্য করিলে কিছু চিন্তায় ফেলিয়া দিবে,আল্লাহ বলেনঃ তোমরা কিরূপে আল্লাহ্কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করেছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন, পরিণামে তাঁর দিকেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে। ( ২ঃ ২৮)

যদি আমরা কোরান মাজিদের বিভিন্ন ধরনের আয়াত দ্বারা আল্লাহপাক মানুষকে বুঝাতে চেয়েছেন যে ” জন্ম মৃত্যুর চক্রে আবব্ধ হইয়া থাকিলে জান্নাতের সন্ধান পাইবে না।

আল্লাহ বলেনঃ  আমি তোমাদের জন্য মৃত্যু নির্ধারিত করেছি এবং আমি অক্ষম নই— তোমাদের স্থলে তোমাদের সদৃশ আনয়ন করতে এবং তোমাদেরকে এমন এক আকৃতিতে সৃষ্টি করতে যা তোমরা জান না আর অবশ্যই তোমরা অবগত হয়েছ (প্রথম সৃষ্টি) সম্পর্কে।  তবে তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করা না কেন? (৫৬ঃ৬০-৬২)

প্রথম মৃত্যুর পর এবং আমাদেরকে শাস্তি দেওয়া হইবে না! ইহা তো মহাসাফল্য। আর এইরূপ সাফল্যের জন্য সাধকদের উচিত সাধনা করা,( ৩৭:৫৯-৬১)

আরেক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আল্লাহ বলেনঃ “হে মানুষ! তুমি তোমার প্রতিপালকের নিকট পৌঁছা পর্যন্ত কঠোর সাধনা করিতে থাক,পরে তুমি তাঁহার সাক্ষাৎ লাভ করিবে। ( ৮৪ঃ ৬)

পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি উহা সংঘটিত করিবার পূর্বেই উহা লিপিবদ্ধ থাকে ; আল্লাহ্‌র পক্ষে ইহা খুবই সহজ।(৫৭ঃ২২)

তোমরা কিরূপে আল্লাহ্‌কে অস্বীকার কর ? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন, তিনি তোমাদেরকে জীবন্ত করিয়াছেন, আবার তোমাদের মৃত্যু ঘটাইবেন ও পুনরায় জীবন্ত করিবেন, পরিণামে তাঁহার দিকেই তোমাদেরকে ফিরাইয়া আনা হইবে। (2:28)

উহারা বলিবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে প্রাণহীন অবস্থায় দুইবার রাখিয়াছ এবং দুইবার আমাদেরকে প্রাণ দিয়াছ। আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকার করিতেছি; এখন নিষ্ক্রমণের কোন পথ মিলিবে কি?’ (৪০:১১)

সরাসরি একবার মৃত্যুতে যেন আল্লাহর দিদার পাওয়া যায় সে জন্য আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেনঃ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হইয়া কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিও না। (৩ঃ১০২)

আমার এ বিশ্লেষনে আপনি একমত থাকুন সে দাবী আমি করবো না, এবং আমি চুড়ান্ত বুঝেছি সে কথাও দাবী করব না। কিন্তু দ্বীমত হলে আপনি রেফারেন্স সহ তা তুলে ধরুন। আমাকে সত্য উম্মোচনে সহায়তা করুন। নচেৎ সত্যকে অস্বীকার বা মিথ্যেকে মেনে নেয়ার অপরাধে দায়ী থাকবেন আপনিও।
*******************************

এতদ্ববিষয়ে কোরানে বর্নিত নিন্মোক্ত আয়াতগুলি পড়ে নিতে পারেন।

নিশ্চয় তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করিবে। (৮৪:১৯)
لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍؕ
লাতারকাবুন্না  তাবাক্কান  আন  তাবাক।
অনুবাদঃ নিশ্চয় তোমরা ধাপে ধাপে আরোহণ করবে।

তারকীকঃ    لَتَرْكَبُنَّ =   তোমরা  অবশ্যই আরোহণ করবে,     طَبَقًا =  স্তর,   عَنْ =  থেকে,     طَبَقٍ =  স্তরে,

বালাগাত (শব্দ বিন্যাস)ঃ তোমাদের অবশ্যি স্তরে স্তরে এক অবস্থা থেকে আর এক অবস্থার দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

বর্তমানের অধিকাংশ মানুষ প্রায়শই দাবি করেন যে শুধুমাত্র মুসলমানরাই জান্নাতে যাবে, আর অন্যরা জাহান্নামে। কিন্তু এই দাবির প্রেক্ষিতে আমার কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে:

1. একটি শিশু যদি অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে—যেমন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্য কোনো ধর্মের পরিবারে—তাহলে সেই শিশুটির অপরাধ কী? আল্লাহ কেন তাকে একটি অমুসলিম পরিবারে পাঠালেন?

2. যদি একটি শিশু পৃথিবীতে জন্ম থেকেই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তাহলে সেই শিশুটির অপরাধ কী? যেখানে কোরআন বলে, “কেউ কারো বোঝা বহন করবে না।”

3. একটি শিশু যদি সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মায়, অন্যদিকে আরেকটি শিশু যদি অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে সেই দরিদ্র শিশুটির অপরাধ কী? আল্লাহ কেন তাকে দরিদ্র পরিবারে পাঠালেন? কোরআন তো বলে, মানুষ তার প্রচেষ্টার ফল পায়। তাহলে এটি কি পূর্বজন্মের কর্মফল?

4. প্রচলিত অনুবাদ অনুসারে কোরআন পুরুষ ও নারীর ব্যাপারে কথা বলে, কিন্তু হিজড়াদের সম্পর্কে কোরআন নীরব কেন? তাহলে কি কোরআন মূলত আত্মার সাথে কথা বলে?

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কোরআন তাদের জন্য, যারা গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা করতে সক্ষম।

জান্নাত জাহান্নাম ততদিন বিদ্যমান যতদিন আসমান এবং জমিন বিদ্যমান সূরা হুদ আয়াত 107 এবং 108
সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন ; নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাহাই করেন যাহা তিনি ইচ্ছা করেন।

خٰلِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ‌  ؕ اِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ

সূরা নম্বর: ১১ আয়াত নম্বর: ১০৭

পক্ষান্তরে, যাহারা ভাগ্যবান তাহারা থাকিবে জান্নাতে, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে, যত দিন আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী বিদ্যমান থাকিবে, যদি না তোমার প্রতিপালক অন্যরূপ ইচ্ছা করেন; ইহা এক নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার।

وَاَمَّا الَّذِيْنَ سُعِدُوْا فَفِى الْجَـنَّةِ خٰلِدِيْنَ فِيْهَا مَا دَامَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْاَرْضُ اِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ‌  ؕ عَطَآءً غَيْرَ مَجْذُوْذٍ

সূরা নম্বর: ১১ আয়াত নম্বর: ১০৮

Verified by MonsterInsights