১) ইমাম মাহেদীর আগমনঃ
ঈসা আঃ কেই ইমাম মাহেদী বলে দাবী করা হয়।কুরআনের আলোকেঃ কুরআনে সরাসরি “ঈসা আ. আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন” এমনটি স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে কিছু আয়াত আছে যেগুলো ইঙ্গিত দেয় যে ঈসা আ. পুনরায় আগমন করবেন। বিশেষ করে: সূরা النساء (৪:১৫৭-১৫৯) তে বলা হয়েছে: “তারা (ইহুদীরা) বলেছিল, আমরা ঈসা ইবনে মারইয়ামকে হত্যা করেছি… অথচ তারা তাঁকে হত্যা করেনি, না ক্রুশবিদ্ধ করেছিল… বরং আল্লাহ তাঁকে তাঁর দিকে তুলে নিয়েছিলেন… আর কিতাবীরা ঈসার মৃত্যু সম্পর্কে অবশ্যই ঈমান আনবে, তার মৃত্যুর আগে।”
এখানে লক্ষ্যনীয় আর কিতাবীরা ঈসার মৃত্যু সম্পর্কে অবশ্যই ঈমান আনবে, তার মৃত্যুর আগে।” তার মানে ঈসা আঃ এর অবশ্যই মৃত্যু হবে এবং এ জন্যই পৃথিবীতে আবার তাঁকে আসার প্রশ্ন এসে যায় ।
২) দাজ্জালের আগমনঃ
“দাজ্জাল” (الدجّال) সম্পর্কে কুরআনে সরাসরি খুব বিস্তারিত আলোচনা নেই, তবে হাদীসের মাধ্যমে তার আগমন, ফিতনা ও পরিণতি সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। কুরআনে দাজ্জালের নাম উল্লেখ না থাকলেও কিছু আয়াতে ফিতনা বা মহামন্দার ইঙ্গিত করা হয়েছে, যা দাজ্জালের ফিতনার সাথে মিল পাওয়া যায়। চলুন বিষয়টা সংক্ষেপে দেখি:
কুরআনে ইঙ্গিত: সূরা আল-আন’আম (6:158) “সেদিন আসবে, যখন কিছু নির্ধারিত নিদর্শন (آيات) দেখা যাবে, তখন যারা পূর্বে ঈমান আনে নি, অথবা তাদের ঈমানের মধ্যে কোনো ভালো কাজ ছিল না, তখন তাদের ঈমান কোনো কাজে আসবে না।”
সূরা আল-কাহফে (18:9-26) “অশাবুল কাহফ” বা গুহাবাসী যুবকদের কাহিনী, এবং পরে (18:83-98) “যুলকারনাইন” ও “ইয়াজুজ-মাজুজ” প্রসঙ্গ এসেছে।
৩) দাব্বাতুল আরদের প্রকাশঃ
দাব্বাতুল আরদ (دابة الأرض) সম্পর্কে কুরআনে মূল উল্লেখ এসেছে সূরা নামল (২৭:৮২) আয়াতে। আল্লাহ্ বলেন:”আর যখন তাদের প্রতি বাক্য কার্যকর হবে, তখন আমি তাদের জন্য ভূমি থেকে এক জীব বের করবো, যা তাদের সাথে কথা বলবে। কারণ মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে নিশ্চিত বিশ্বাস করে না।” (সূরা নামল, আয়াত ৮২)
এখানে “দাব্বাতুল আরদ” মানে হচ্ছে — “ভূমি থেকে এক জীব”। এটি কিয়ামতের বড় আলামতগুলোর একটি।
এই জীব মানুষদের সাথে কথা বলবে এবং তাদের ঈমান ও অবিশ্বাসের অবস্থা প্রকাশ করবে।
এবার হাদীসের দাবীঃ ১) ইমাম মাহেদীঃ
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহর কসম, ঈসা ইবনে মারইয়াম অবশ্যই নাযিল হবেন, ন্যায়ের সাথে বিচার করবেন, ক্রুশ ভেঙে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন এবং জিজিয়া কর উঠিয়ে দেবেন.(সহীহ বোখারী, ২২২২)
হযরত ছওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের ধনভাণ্ডারের (রাজত্বের জন্য) নিকট তিনজন বাদশাহ এর সন্তান যুদ্ধ করতে থাকবে। কিন্তু ধনভাণ্ডার (রাজত্ব) তাদের একজনেরও হস্তগত হবে না। তারপর পূর্ব দিক (খোরাসান) থেকে কতগুলো কালো পতাকাবাকী দল আত্মপ্রকাশ করবে। তারা তোমাদের সাথে এমন ঘোরতর লড়াই লড়বে, যেমনটি কোন সম্প্রদায় তাদের সঙ্গে লড়েনি”। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর নবীজি (সাঃ) আরও একটি বিষয় উল্লেখ করে বললেন, “তারপর আল্লাহর খলীফা মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। তোমরা যখনই তাঁকে দেখবে, তাঁর হাতে বাইয়াত নেবে। যদি এজন্য তোমাদেরকে বরফের উপর দিয়ে হামাগুড়ি খেয়ে যেতে হয়, তবুও যাবে। সে হবে আল্লাহর খলীফা মাহদি”। (সুনানে ইবনে মাজা; খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৬৭; মুসতাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫১০)
২) দাজ্জালঃ
হাদীসে দাজ্জালের বিস্তারিত বিবরণ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “দাজ্জাল আসবে এবং সে মানুষকে জান্নাত ও জাহান্নামের দিক থেকে বিভ্রান্ত করবে। তার জান্নাত আসলে হবে জাহান্নাম।” (সহীহ মুসলিম) তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য: সে হবে একচোখা। তার কপালে “কাফির” (كافر) লেখা থাকবে — মুমিনরা তা পড়তে পারবে, অশ্রদ্ধাশীলরা নয়।
সে অসাধারণ শক্তি ও মিরাকলের মতো কাজ দেখাবে, যেমন বৃষ্টি নামাবে, মৃতকে জীবিত করার মতো ভেলকি দেখাবে।
তার বড় ফিতনা হবে ঈমানহীনদেরকে বিভ্রান্ত করা। রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি দাজ্জালের খবর পাবে, সে যেন তার থেকে দূরে চলে যায়।” (মুসলিম)
দাজ্জাল সম্পর্কে হাদীসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
তার ফিতনা ৪০ দিন চলবে (প্রথম দিন এক বছর সমান, দ্বিতীয় দিন এক মাস সমান, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহ সমান, বাকি দিনগুলো স্বাভাবিক)।
৩) দাব্বাতুল আরদঃ
হাদিসের আলোকে, দাব্বাতুল আরদ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে প্রকাশিত হবে, এবং এর প্রকাশের পর আর তওবা গ্রহণ করা হবে না। ইবন কাসীর (রহ.) বলেন, এটি মানুষের সাথে কথা বলবে বাস্তব অর্থেই, আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিস্ময়কর নিদর্শন হিসেবে। কেউ কেউ বলেন, এটি মক্কা শরীফের জমজম কূপের আশেপাশে বের হবে।
কেউ বলেন এটি একটি নির্দিষ্ট ধরণের প্রাণী হবে, আবার কেউ বলেন এটি মানুষের মতো হবে কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে।