রূহ (ٱلرُّوحُ) আল্লাহ প্রতিদিন নতুন করে সৃষ্টি করেন কি না, নাকি একবারেই সব রূহ সৃষ্টি হয়ে গেছে?
১. রূহের সৃষ্টির মূলনীতি (একবারে সৃষ্টি)
কুরআনে আল্লাহ বলেন:
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنۢ بَنِيٓ ءَادَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ ۖ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا۟ بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا
“তখন তোমার রব আদমসন্তানদের পিঠ থেকে তাদের বংশধরদের বের করেছিলেন এবং তাদের নিজেদের উপর সাক্ষী করিয়েছিলেন —‘আমি কি তোমাদের রব নই?’ তারা বলেছিল: অবশ্যই, আমরা সাক্ষী দিচ্ছি।” [সূরা আল-আরাফ ৭:১৭২]
এই আয়াতের ভিত্তিতে অনেক আলেম বলেছেন — সব রূহ একসাথে আদম আঃ এর যুগেই সৃষ্টি করা হয়েছিল। পরে আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন, তখন নির্দিষ্ট সময়ে তা দেহে প্রেরণ করেন।
২. প্রতিদিন রূহ সৃষ্টির দিক (ক্রমশ সৃষ্টি)
অন্যদিকে কুরআনে প্রতিদিন আল্লাহর নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত আছে:
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِى شَأْنٍ
“প্রতিদিনই তিনি কোন না কোন কাজে নিযুক্ত।”[সূরা আর-রহমান ৫৫:২৯]
এখানে অনেক মুফাসসির ব্যাখ্যা করেছেন — এর মধ্যে রয়েছে: কারো রূহ সৃষ্টি, কারো মৃত্যু, কারো দেহে রূহ প্রবেশ করানো ইত্যাদি।
আর হাদীসে আছে — ভ্রূণের সৃষ্টির ১২০ দিনের পর ফেরেশতা রূহ প্রবেশ করান:
“নিশ্চয়ই তোমাদের কারো সৃষ্টির অবস্থা মায়ের গর্ভে ৪০ দিন থাকে নুতফাহ আকারে, তারপর এতদিন থাকে ‘আলাকা’ আকারে, তারপর এতদিন থাকে ‘মুদগাহ’ আকারে। তারপর ফেরেশতা পাঠানো হয়, সে তার রূহ প্রবেশ করায়…” [সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম]
এটি ইঙ্গিত করছে — রূহ ধাপে ধাপে, প্রতিদিন আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী নির্দিষ্ট দেহে প্রেরিত হয়।
৩. মিলিয়ে দেখা
একবারে সৃষ্টি তত্ত্ব: সব রূহ আদম আঃ এর সময়ে সৃষ্টি হয়ে আছে (সূরা আরাফ ৭:১৭২)।
প্রতিদিন সৃষ্টির দিক: আল্লাহ প্রতিদিন নতুন ভাবে নির্দিষ্ট দেহে রূহ প্রবেশ করান (৫৫:২৯) ।
অর্থাৎ, মূল সৃষ্টি একবারেই, কিন্তু আল্লাহর হিকমতে প্রতিদিন মানুষের জন্মের সময় সেই রূহ নির্দিষ্ট শরীরে প্রবেশ করানো হয়।
সংক্ষিপ্ত উত্তরঃ
রূহ সবগুলো একসাথে সৃষ্টি করা হয়েছিল (সূরা আল-আরাফ ৭:১৭২)। তবে আল্লাহ প্রতিদিন তাঁর কাজে ব্যস্ত (সূরা আর-রহমান ৫৫:২৯), এবং সেই কাজের অংশ হিসেবে মানুষের জন্মকালে রূহকে দেহে প্রবেশ করান।