ঈদ আনন্দের ইতিকথাঃ
জাহেলিয়াত যুগেও জিলকত, জিলহজ্জ, রজব, মহররম এই চারটি মাসে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ থাকত। কোরানে বর্ণিত আয়াত দৃষ্টিতে অন্ধকার যুগের পুর্বে ঈসা বা পুর্ববর্তী নবীদের সময় হতেই এ চারটি মাসকে সবাই অনুসরন করত। যেমন সুরা তওবায় বর্নিত:
নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হইতেই আল্লাহ্র বিধানে আল্লাহ্র নিকট মাস গণনায় মাস বারটি; তন্মধ্যে চারটি নিষিদ্ধ মাস, ইহাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। (9:36)
আর এ সময়টাতেই তার আন্তর্জাতিক মেলার আয়োজন করত। আর তা হত মক্কায় ক্বাবা কেন্দ্রিক আয়োজন। তথায় কাব্য চর্চা থেকে শিল্প,বানিজ্য,আর্থিক চুক্তি, দাস কেনা বেঁচা,, নারী উপভোগ্য প্রদর্শনী থেকে শুরু করে বড় বড় বাজি ও মাস ব্যাপী জুয়ার আসর চলত। বাঁজি ও জুয়ার আসরে আর্থিক লেন- দেন এর পাশাপাশি শিশু, নারীদেরকেও পণ্য হিসাবে বাজি ধরত।
গীতিকাব্য ও কবিতা প্রতিযোগিতায় শ্রেষ্ট সাতটি কবিতা সোনালী হরফে বাঁধাই করে কাবা চত্বরের দেয়ালে স্থাপন করা হত।
এতদ্ববিষয়ে নবীকে ইংগিত করে একটি আয়াত নাযিল হয়েছিলঃ “আমি এ (নবী)-কে কবিতা শিখাইনি এবং কাব্য চর্চা তার জন্য শোভনীয়ও নয়। এ তো একটি উপদেশ এবং পরিষ্কার পঠনযোগ্য কিতাব, (ইয়াসীন ৬৯)
ওকাজ মেলার সবচেয়ে ট্রাজেটি ছিল মধ্যবিত্ত পরিবার গুলোর। কারন তাদের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না থাকায় পরিবারের নারী ও শিশুদের জুঁয়ার বাঁজিতে ধরা হত। হেরে গেলে দাস হিসাবে নিয়ে যুগের পর যুগ অমানবিক ভাবে তাদের ব্যবহার করা হত। এভাবে প্রতি বছর মেলায় তারা মালিকানার হাত বদল হয়ে জীবন যাপন করত। ফলে ওকাজ মেলার দিন ঘনিয়ে এলে মধ্যবিত্ত পরিবারের দুঃশ্চিন্তা ঘনিভুত হতে শুরু করত। যা আমাদের বর্তমান ঈদ আনন্দের ছটার মতই।
এই ওকাজ মেলা থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল ফিজার যুদ্ধ। যা দীর্ঘ ৪:বছর বিদ্যমান ছিল। রাসুল সাঃ নবুয়তের পুর্বে ১৬ বছর বয়সে এ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছি লেন কোরাইশ গোত্রের পক্ষ থেকে। সেবার তিনি চাচা আবুতালিবকে এযুদ্ধ পরিহার করে একটি সম্প্রতির প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
কোরাইশ গোত্র সাদরে সে প্রস্তাব গ্রহন করেছিল এবং ফিজার যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল। সে সময় হতেই যুবক মুহম্মদ কোরাইশ গোত্রের সকলে র দৃষ্টি কেড়েছিল।
সে যা হোক মদীনায় হিজরতের পর রাসুল সাঃ মদীনা বাসির ভিতর এ মেলার আয়োজন দেখে সবাইকে বললেন আমি কি তোমাদের দুইটি আনন্দ দিবসের কথা বলবো? যা ওকাজ মেলার চেয়ে উত্তম। সমবেত সকলে স্বমস্বরে বলে উঠলো ইয়া রাসুলুল্লাহ অবশ্যই। তখনও রমজানের ফরজ সিয়াম সংক্রান্ত আয়াত নাযিল হয় নি। রাসুল সাঃ বললেনঃ তোমরা যারা ঈমান এনছো তারা ইয়াহুদীদের বা পুর্ববর্তীদের আচার – অনুষ্ঠানের অনুসরন না করে নিজেদর মত করে আনন্দ উৎসব পালন কর। আর তা হলো নিরাপদ ও সন্মানিত মাস জিলহজ্জ ও রজবের মাসে।
মুসলমানরা এর পর হতে ওকাজ মেলায় অংশ গ্রহন না করে রজব ও জিলহজ্জ মাসে আনন্দ উৎসব পালন করতে শুরু করে। যা পরবর্তিতে কালের বিবির্তনে রোযার ঈদ ও কোরবানীর ঈদ হিসাবে জায়গা করে নেয়।
প্রকৃত কোরানের আলোকে সুনির্দিষ্ট দিনে কোম ঈদ পালনের ইংগীত নেই। মুসলিমগন তাদের বিজয় কিংবা যে কোন খুশির বিষয়ে পারিবারিক, সামাজিক বা ভৌগলিক অবস্থানে আনন্দ উৎসব পালনে কোন নিষেধা জ্ঞা নাই বরং উৎসাহিত করা হয়েছে।
আমার বক্ত’ব্য এদিকে নয়। আমার অনুভুতি ওকাজ মেলা বন্ধ হলেও তার ট্রাজেটির ছটা এখনো ঈদ উৎসবে মধ্য বিত্তের ঘাঁড়ে চেপে আছে। কেউ ৩৬ হাজার টাকায় এক জোড়া জুতো কিনছে, আবার কেউ তার পরিবারের জন্য নতুন একটি পোষাক তুলে দিতে ব্যার্থ হচ্ছে। ঈদ এলে যেন মধ্যবিত্ত পরিবার প্রধানদের ঘাঁড়ে ওকাজ মেলার ট্রাজেটি চেঁপে বসে। এর অবসান কামনা করি।