মহাপ্রলয়
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন: এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ কে কিয়ামতের সময় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন… তারপর নবী সাঃ আনসারদের এক কিশোরের দিকে ইশারা করে বললেন, “যদি এই ছেলেটি বেঁচে থাকে, তবে সে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই কিয়ামত সংঘটিত হবে।” (সহীহ মুসলিম ২৯৫২ এবং বুখারীর ৪৯৫২)
সেই ছেলেটি কি আজো বড় বৃদ্ধ হয় নি? নবী সাঃ কি মিথ্যে বলেছেন? না কি হাদীসটি জাল? জাল হলে সহীহ মুসলিম ও সহীহ বুখারীতে স্থান করে আজো আছে কি ভাবে? লিংকে বিস্তারিত বর্নিত হল।
না নবী সাঃ মিথ্যে বলেন নাই এবং হাদীসটি জালও নয়।
তবে কি ইশারা করা আনসার ছেলেটি বৃদ্ধ হয় নি আজো বা মৃত্যু বরন করে নাই? হ্যা সেই ছেলেটিও মৃত্যু বরন করেছে। প্রশ্ন আসে তাহলে কিয়ামত কি হয়ে গেছে?
আসলে হাদীসটি কোরানের সমর্থিত বক্তব্য। বুখারীর আরবী থেকে বাংলা অনুবাদ করলে হাদীসটি কোরানের সাথে মিলে যায়। বুখারীর অনুবাদটি হলঃ
একজন লোক নবী সাঃ-কে জিজ্ঞেস করলেন, “কিয়ামত কখন হবে?” নবী ﷺ বললেন, “প্রশ্নকারী এবং যার কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে — কেউই এ বিষয়ে অন্যের চেয়ে বেশি জানে না।” তারপর তিনি আনসারদের এক কিশোরের দিকে তাকালেন এবং বললেন,“যদি এই ছেলে বেঁচে থাকে, তাহলে সম্ভবত সে বৃদ্ধ হওয়ার আগেই তোমাদের কিয়ামত (অর্থাৎ তোমাদের যুগের কিয়ামত, মৃত্যুর কিয়ামত) ঘটবে।”
তার মানে নবী সাঃ বুঝাতে চেয়েছেন যার যার মৃত্যুই তার জন্য কিয়ামত।
নিচে কিছু কিয়ামত (মহা প্রলয়) সম্পর্কিত কুরআনের আয়াত দেওয়া হলো — যাতে মানুষের প্রতি সতর্কতা এবং পরকালের প্রতি বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়:
“সে (মানুষ) প্রশ্ন করে, ‘কবে কিয়ামতের দিন হবে?’” — সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ৬
“যখন চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। আর চাঁদ হবে জ্যোতিহীন।” সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ৭-৮
“আর সূর্য ও চাঁদকে একত্র করা হবে।” — সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ৯
“সেদিন মানুষ বলবে, ‘পালাবার স্থান কোথায়?’… না, কোন আশ্রয়স্থল নেই।” — সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ১০-১১
“সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে কী সে অগ্রে পাঠিয়েছে ও কী পশ্চাতে রেখে গেছে।” — সূরা আল-ক্বিয়ামাহ, আয়াত ১৩
“তোমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই ঘটবে।” — সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত ৭
“বাস্তবে তোমরা (যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে) তা তাহলে ঘটবেই।” — সূরা আল-মুরসালাত, আয়াত ৭
“তারা তোমাকে কিয়ামতের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে — বল, এ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহরই।” — সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত ১৮৭
আরও অনেক আয়াত আছে যেমন সূরা জিলজাল ইত্যাদিতে কিয়ামতের ভয়াবহতা বিশদভাবে বর্ণিত আছে
অর্থাত কোন ব্যক্তির মৃত্যু সময়ে এ আলামত গুলি সে অনুধাবন করবে। কিয়ামত বিষয়ে আমাদের যে ধারনা বদ্ধ করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট দিন ক্ষন সময়, তা মুলত অপব্যাখার ফসল।
কিয়ামত বিষয়ে এমন বিশ্বাস পোষন করলে ” আল্লাহু হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম ওয়া শাইয়েন কাদীর ” আয়াত অস্বীকার করা হয়। আল্লাহ প্রতিনিয়ত তার নতুন কাজে ব্যাস্ত এবং তা চিরস্থায়ী চিরঞ্জিবি।
আর আপনি যদি বিশ্বাস করেন মহাপ্রলয় একদিন হবে, সব সৃষ্টি ধংস হবে। তারপর হাশর হবে, মিজান – পুলসিরাত শেষে একদল জান্নাতে অপর পাপী দল জাহান্নামে যাবে এবং অনন্ত চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে। #তাহলে এমন দাড়ায় আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কাজ সমাপ্ত তিনি আরশে বসে বাকি অনন্ত কাল বিশ্রামে যাবেন।
না কখখোনই না। আল্লাহ চিরঞ্জীবি চিরস্থায়ী তার নিত্যনতুন ক্সজে মগ্ন থাকবেন বলে কোরানে জানিয়ে দিয়েছেন। এ সৃষ্টি ধংস হবে আবার নতুন সৃষ্টি হবে যেমন এ-র পর্বেও বহু জাতি বহু সত্তা ধংস করেছেন এবং নতুন জাতী সৃষ্টি করেছেন।
কুরআনে প্রতিদিন আল্লাহর নতুন সৃষ্টির ইঙ্গিত আছে:
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِى شَأْنٍ
“প্রতিদিনই তিনি কোন না কোন কাজে নিযুক্ত।” (৫৫:২৯) মৃত্যুর মুহূর্তে রূহের অবস্থা সে যেন কিয়ামত দর্শন করছে
কুরআনে বলা হয়েছে: قُلْ يَتَوَفَّىٰكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِى وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ “বল, তোমাদের মৃত্যু গ্রহণ করে সেই মৃত্যুদূত, যে তোমাদের উপর নিযুক্ত; তারপর তোমরা তোমাদের রবের দিকে ফেরত আনা হবে। [সূরা আস-সাজদাহ ৩২:১১]
2 replies on “মহা প্রলয়”
জ্ঞানী মানুষকে ভালোবাসুন। কুরআনের নিগূঢ় তথ্য সহজ করে উপস্থানের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আপনার প্রতি রবের শান্তি কামনা করছি।