“মনুষ্য ও সংসার” সৃষ্টি হল
আল্লাহ প্রথম মানুষ আদম সৃষ্টি করেন; তার জন্য তাকে জুটি (স্ত্রী/সঙ্গী) সৃষ্টি করা হয়।
আদম ও তাঁর সঙ্গীকে জান্নাতে রাখা হয়েছিল; এক বিধি ভঙ্গের ফলে তারা জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরিত হন — পৃথিবীতে সংসার, পরিশ্রম ও পরীক্ষা শুরু হয়।
আল্লাহ সহজ ভাবে শাস্তি ও পরামর্শ উল্লিখিত করেছেন — যারা আল্লাহর বার্তাবাহক অনুসরণ করবে ফের জান্নাতে ফিরতে পারবে; না পারলে জাহান্নাম হবে।
সনাতন/হিন্দু ধর্ম মতে একই বিষয়ে বলা হয়ঃ
ব্রাহ্মা (সৃষ্টিকর্তা) শতরূপাকে সৃষ্টি করে তিনি তাঁর নিজ রূপে মুগ্ধ হয়ে প্রেম/যৌনাচারে লিপ্ত হন এবং তদনুযায়ী জগত-সংসার শুরু হয়।
এই কাহিনীতে বিশ্বের উৎপত্তি সৃষ্টিকর্তার আত্ম-প্রসারণ বা ‘লীলা’/স্বরূপ-প্রকাশ হিসেবে বর্ণিত হয়।
পার্থক্য (খুব গুরুত্বপূর্ণ):
ইসলাম: কাহিনীটি নৈতিক পরীক্ষা, বিধি-উল্লঙ্ঘন ও দায়বদ্ধতার উপরে জোর দেয়। মানুষকে আল্লাহর ইচ্ছা মানতে বলা হয়; পরিত্রাণের পথ (তাওবা/প্রত্যাবর্তন) ও প্রতিফলন আছে।
হিন্দু বর্ণনা: অনেক রূপক/কথ্যাবলীর মধ্যে এটি ব্রাহ্মার ‘আত্ম-প্রকাশ’ বা দিওনিক লীলা হিসেবে উঠে আসে — এতে যৌন/সৃষ্টিগত উৎস বেশি গুরুত্ব পায়; নৈতিক পরীক্ষার কাঠামো ইসলামিক কাহিনীর মত সরাসরি নয়।
২) পতন/প্রবেশ: নিষেধ ও অবাধ্য হলে ফলাফল
ইসলাম: নিষেধিত ফল খাওয়া → লজ্জা প্রকাশ → জান্নাত থেকে পৃথিবীতে প্রেরণ (শাস্তি ও শিক্ষা)। ফিরতি পথ: আনুশাসন ও নবীর অনুসরণ করলে পুনরায় ফিরা সম্ভব। ইসলাম পরিস্থিতিকে পরীক্ষা ও শিক্ষা হিসেবে দেখায়; আদমের বংশপরম্পরা ‘মকসুদ পূর্ণ’ — জীবন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র।
হিন্দু: ব্রাহ্মার কাহিনীতে “কর্ম/আচরণ” বা “তাঁর নিজস্ব চাহিদা” থেকে সৃষ্টি — এখানে ‘পতন’ বা নিষেধ ভঙ্গের ন্যারেটিভ সাধারণত একই ভাবে বলা হয় না; বরং সৃষ্টির কারণকে আত্ম-প্রকাশ/লীলা বলা হয়।
৩) প্রথম দম্পতি / জুটি — তাদের স্বভাব ও ভূমিকাঃ
ইসলাম: আদম ও হাওয়া — মানবজাতির সূচনাকারী, পরীক্ষার মুখোমুখি। তাঁদের ত্রুটি ব্যক্তিগত; সন্তানের উপর অনুপ্রবেশিত পাপের ধারণা (original sin) ইসলাম স্বীকার করে না — প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের কাজের জন্য দায়ী।
হিন্দু (শতরূপা/ব্রাহ্মা-কাহিনী): প্রথম সৃজন সাধারণত ব্রাহ্মার নিজের প্রকাশ বা তাঁর রূপ-অনুগত। এখানে ‘জুটি’ বা ‘দম্পতি’ ভাব ভিন্ন রূপে আসে (বিভিন্ন কাহিনীতে ভিন্ন নাম ও কাহিনি)
৪)দ্যোতনা/দূত-মূলক চরিত্র (ইসলামে ফেরেস্তা vs হিন্দুতে দেবতা/অবতার)
ইসলাম: ফেরেস্তা (ফেরেশতা) আছে — ঈশ্বরের আদেশ পালনকারী; কিছুমাত্র প্রভাওনি/কথ্য প্রেক্ষিতে ফেরেশতারা আদেশ নিষ্পাদন করে। মানুষকে ঈশ্বরের আজ্ঞা মেনে চলতে বলা হয়; নবী আসে পথ দেখাতে।
হিন্দু: বহুদেবতাবাদ/অবতারের ধারণা — একই সত্তা (ব্রহ্মা/বিষ্ণু/শিবা) বিভিন্ন রূপে প্রকাশ পেতে পারে (উদাহরণ: বিষ্ণু — কৃষ্ণ/অবতার)। সৃষ্টি, সংহতি, ধ্বংসের আলাদা ভৌত ভূমিকা বণ্টিত।
মিল: দুটোরে সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বর-ধর্মীয় কারক আছে। পার্থক্য: ইসলাম একেশ্বরবাদ (তাওহীদ) — দেবতাদের ভাগ নেই; হিন্দুতে একাধিক নাম/রূপে দিওনিক বহুবিধ প্রকাশ প্রচলিত।
৬) সারাংশ — প্রধান মিল ও মৌলিক ভিন্নতা (সংক্ষিপ্ত)
প্রধান মিল:
একটা ‘প্রাথমিক ঘটনাবলি’ আছে যেখান থেকে পৃথিবীতে মানবজীবন ও সংসার সূচনা পায়।
সৃষ্টির কারণ হিসেবে ‘উপরে থাকা কিছুর’ (divine source) উপস্থিতি।