“আদমকে সিজদার আদেশ হল, কিন্তু হাওয়া কে নয়” — এর মধ্যে যে আপাত বৈষম্য দেীখা যায়, তা আসলে সৃষ্টির উদ্দেশ্য, প্রতীকী প্রতিনিধিত্ব (رمزية) এবং কালানুক্রমিক ধারার বিষয়; লিঙ্গ ভিত্তিক মর্যাদার পার্থক্য নয়।
চলুন ধাপে ধাপে কুরআনের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করি —
justify;”>১️) সিজদার আদেশ কোথায় এসেছে?
“আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, ‘তোমরা আদমের প্রতি সিজদা কর।’ তখন তারা সিজদা করল, ইবলিস ব্যতীত — সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো।”(২:৩৪)
২️) তখন হাওয়ার সৃষ্টি হয়েছিল কি?
হাওয়ার (حواء / Hawwā’) সৃষ্টি আদমের পর হয়েছে।কুরআনে সরাসরি “হাওয়া” নামটি নেই, কিন্তু বর্ণনা আছে যে,আল্লাহ আদমের সত্তা থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেন।
“হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের পালন কর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক আত্মা থেকে,এবং তার থেকেই সৃষ্টি করেছেন তার সঙ্গিনীকে,এবং তাদের দু’জন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। (৪:১)
ব্যাখ্যায় যদি যাই —আদম প্রথম সত্তা (النَّفْسُ الواحِدَةُ) তার থেকেই সঙ্গিনী (زَوْجَهَا) অর্থাৎ হাওয়া সৃষ্টি।
অতএব, সিজদার আদেশের সময় হাওয়ার সৃষ্টি হয়নি; তাই হাওয়াকে সিজদার বিষয় করা হয়নি।
৩️) সিজদা আদমকে কেন?
এটি ছিল ইবাদতের সিজদা নয়, বরং সম্মান ও স্বীকৃতির প্রতীকী সিজদা। আদম ছিলেন মানবজাতির প্রতিনিধি ও ধারক —তার মধ্যে নিহিত ছিল পরবর্তী সব নারী-পুরুষের সম্ভাবনা।
“অতঃপর আমি যখন তাকে সুঠামভাবে গঠন করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব,তখন তোমরা তার জন্য সিজদায় পতিত হবে।” (১৫:২৯)
মূল পয়েন্ট: সিজদা ছিল “রূহ ফুঁকে দেয়ার” পর। সেই রূহ আল্লাহর বিশেষ সম্মান (تكريم).। আদম এখানে প্রতীক হয়ে দাঁড়ান সমগ্র মানবজাতির। অতএব, ফেরেশতারা আসলে আদম নামক মানবজাতির মর্যাদাকে সিজদা করেন, হাওয়াকে আলাদাভাবে বাদ দেয়া হয়নি — কারণ তিনি সেই “নাফস-এ-ওয়াহিদাহ্”-এর অংশ।
৪️) মর্যাদার প্রশ্নে নারী-পুরুষ কি সমান?
অবশ্যই সমান — কুরআন বারবার তা ঘোষণা করেছে।“নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি,যে সর্বাধিক পরহেজগার।” (৪৯:১৩)
এখানে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই। সম্মানের ভিত্তি তাকওয়া, লিঙ্গ নয়।
৫️) প্রতীকী ব্যাখ্য যদি দেখি তবে বিষয়টি দাড়ায়— “আদম” = মানবজাতির সূচনা, জ্ঞানের ধারক (علم الأسماء).
“হাওয়া” = মানবের আবেগ, সামাজিক সঙ্গ ও বংশবৃদ্ধির প্রতীক।
সিজদা আদমকে মানে: মানব জাতির মধ্যে জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্ব ও দায়িত্বের প্রতীকী ঘোষণা।
৬️) উপসংহারে বলবোঃ সিজদা আদমকে কেন, হাওয়াকে নয়? কারণ তখন হাওয়ার সৃষ্টি হয়নি; আদম মানবজাতির প্রতিনিধি ছিলেন।
এতে কি নারীকে বাদ দেয়া হয়েছে?
না। হাওয়া আদমের “নাফস” থেকেই, তাই তার মর্যাদা একই।
সিজদাটা কি ইবাদতের ছিল?
না, সম্মান ও স্বীকৃতির প্রতীক (تكريم).
নারী-পুরুষের মর্যাদা কি সমান?
হ্যাঁ, তাকওয়ার দিক থেকে উভয় সমান (৪৯:১৩)।
সারাংশ: সিজদা ছিল মানবজাতির মর্যাদার স্বীকৃতি, যেখানে “আদম” ছিলেন প্রতীকী প্রতিনিধি — তাই সেখানে হাওয়াকে আলাদা করে উল্লেখের প্রয়োজন হয়নি।
কুরআনের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ উভয়ই একই নফ্সের অংশ এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদায় সমান।