Categories
My text

মানুষ দুর্বল

মানুষ দুর্বল ভাবেই সৃষ্টি

لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِىْ كَبَدٍؕ 

অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা বালাদ)
لَقَدْ = নিশ্চয়ই
خَلَقْنَا = আমরা সৃষ্টি করেছি,
الْإِنْسَانَ = মানুষকে
فِي = মধ্যে
كَبَدٍ = শ্রম নির্ভর করে/কষ্টের
নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রম নির্ভর করে।

ব্যাখ্যা: মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়। জন্ম নেয়ার সময় সে মাতৃগর্ভ থেকে অতি কষ্টের মধ্য দিয়ে আসে পৃথিবীর বুকে। এসেই পড়ে যায় বিরুপ এক পরিবেশ জগতে। আগে যা সে অনুভব করেনি কখনো। ঠান্ডা গরম, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, আবাসন, ঘুম, আলো, মশা-মাছি, বিভিন্ন জীবানুর আক্রমন তাকে পেয়ে বসে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে খাবার পেত, পুষ্টিপেত, ক্ষুধা, নিদ্রা, আবসনের ছিল না কোন চিন্তা। এর আগে সে এসব কোন দু:খ, কস্ট, ক্লেশ অনুভবই করে নি।

এখন শুরু হল তার ক্ষুধার কস্ট, আরামের অভাব। চিৎকার দিয়ে তার অনুভুতি প্রকাশ করতে হয়। খাবার জন্য মাকে খুজতে হয়, একটু পর পর পেশাব করে কাপড় ভিঁজে গেলে অস্বস্তি লাগে, কান্না করে মাকে জানায়।

এভাবে হাজারো সংগ্রাম করে একটু একটু করে বড় হয়, একদিন বসতে শিখে,তারপর একদিন দাড়াতে, একটু একটু করে হাটা,এক সময় দাঁত উঠা, বড়দের মত খাদ্য গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করছে, কখনো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাচ্ছে। এভাবে হাজারো সংগ্রাম ও কস্টের মধ্য দিয়ে সে বড় হয়ে উঠে তার দেহের উপর সে নিয়ন্ত্রন পায়।

এসব সংগ্রাম শুধুমাত্র জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে ঘটে থাকে। আসল সংগ্রাম এখনো বাকি। শিশুকাল, বাল্যকাল, যৌবন কাল, বৃদ্ধ কালের সংগ্রাম পড়ে আছে সামনে।

একজন মানুষের জীবনে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম আর সংগ্রাম এবং কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। অথচ পৃথিবীতে সে আসে কত দুর্বল অসহায় অবস্থায়। আল্লাহ বলেন: ” আর মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। -নিসা ২৮”

কয়েক দিনের জন্য কিছু শক্তি সামর্থ পায়। তারপর নির্দিষ্ট একটি সময়ের পড়ে আবার ধীরে ধীরে তাকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন সে মাটিতে আবার মিশে যায়।ব্যাকটেরিয়া,কীটপতঙ্গের খাবারে পরিনত হয়, পুর্বের ন্যায় দুর্বল হয়ে পড়ে, তার করার কিছু থাকে না।…..

অথচ এই মানুষই কি না মধ্য বয়সে অহংকারী হয়ে উঠে। “সে কি মনে করে যে তার উপরে কারো ক্ষমতা নেই?(৯০:৫)বলে কি না,”অনেক টাকা উড়িয়ে দিলাম( ৯০:৬)

সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (৯০:৭)

মজার ব্যাপার কি……….
এই দূর্বল মানুষ, যার বেঁচে থাকার জন্য কোন শেষ নেই। সেই মানুষই একটু নিজের পায়ে দাড়াতে পারলে, মনে করা শুরু করে যে তার কাজের জন্য কাউকে কোন জবাব দিতে হবে না।

তখন সে নিজের লোভ লালসা মেটানোর জন্য অন্যায়-অবিচার,দূর্নীতিকরে। নোংরা বিনোদনে নিজের চরিত্রকে কুলশিত করে। যে কোন মুল্যে মন যা চায়, তাই তাকে পেতে হয়। তাকে ভাল কাজে যখন কোন কিছু দান করতে বলা হয়…… তখন বলে আরে ভাই কয়েকদিন আগেই ৯০ লক্ষ টাকা দিয়ে নতুন একটা ফ্লাট নিলাম। এখন আমাকে কিছু দিতে বলবেন না।
আচ্ছা সে কি চিন্তা করে দেখে কি সব কাজে সে টাকা উড়াচ্ছে? আর সবি আল্লাহ তা’য়ালা দেখছেন। “সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (৯০:৭)

এটাই হচ্ছে মানুষের পাপের মুল কারন।

মানুষ মনে করে যে সে যখন টেবিলের নীচ দিয়ে ঘুষ নিচ্ছে, কোম্পানির প্রজেক্ট থেকে কোটি কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে, গোপনে মিটিং করে গরীবের হক মেরে দিচ্ছে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে —- এগুলি কেউ
দেখছে না, তার মানে ঠিকই পুলিশের, দুদকের, আইন শৃিংখলা বাহীনির ভয় আছে। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার ভয় নেই। সে কি মনে করে যে তাকে কেউ দেখছে না?

এটাই হচ্ছে তাকওয়ার বরখেলাপ। তাকওয়া মানেই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে সবসময় দেখছেন এবং তাকে সব কাজের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার নিকট জবাবদিহী করতে হবে। এই তাকওয়া না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। তখন সে পশুর থেকেও অধম হয়ে যায়। এ কারনেই কোরআনে তাকওয়ার প্রতি এতো জোর দেওয়া হয়েছে।

একজন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রতিভা যতই থাকুক না কেন তাকওয়া না থাকলে সে অন্যের হক আত্মসাত করার জন্য খুব একটা সংকোচ করে না।

এবার আল্লাহ তা’য়ালা বলছেনঃ আমি কি তাকে দূটি চোখ বানিয়ে দেই নি? ৯০:৮

একটা জিভ, দূটো ঠোট ? ৯০:৯

উক্ত আয়াতের আলোকে দেখা যায়, আমরা আমাদের দেহে কোটি কোটি টাকার এমন সম্পদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এগুলি অর্জন করার জন্য আমাদের কোন পরিশ্রম করতে হয় নি। না চাইতেই আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে কিছুই করতে হয় নি।

আল্লাহ তা’য়ালার দেয়া এই সম্পদ গুলো ব্যবহার করে আমরা যাবতীয় সম্পদ অর্জন করি। এগুলো না থাকলে আমাদের জীবনে কোন অর্জনই থাকত না।

অথচ এ গুলো ব্যবহার করে সম্পদ অর্জন করার পর, সব সম্পদ আমাদের ভাবতে শুরু করি, আমাদের হয়ে যায়। তারপরে আল্লাহ তা’য়ালার পথে সেই সম্পদ আর খরচ (যাকাত) করতে চাই না। এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে ? “মানুষ অবশ্যই তার প্রতিপালকের প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ। সূরা আ-দিয়াত ৬

অতঃপর ১০ নং আয়াতে বলেছেনঃ

وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ

অনুবাদঃ বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি।

কৃতজ্ঞতা: ১) সৈয়দ কুতুব ২) তাদাব্বুরে কোরআন
৩) মারেফুল কোরআন, ৪) বায়ান আল কোরআন

en_USEnglish
Powered by TranslatePress
Verified by MonsterInsights