Categories
My text

সুদ কি

সুদ কি? কেউ বলেন আসলের অতিরিক্ত কোন মুনাফা বা অর্থ গ্রহন করাই সুদ। আবার অনেকে মনে করেন বিনিয়োগ কৃত মুলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহন করাই সুদ।

এভাবে নয় ছয় করে সুদের সঙা দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত শব্দের আরবী হল “জিয়াদ”। তাই সুদের অর্থ যদি অতিরিক্ত গ্রহন করা হয় সেটা নির্ঘাত ভুল হবে। কারন আয়াতে “জিয়াদ” শব্দ ব্যবহার করা হয় নাই, ব্যবহার করা হয়েছে “রিবা”।

সুদ বলতে আমাদের প্রচলিত ধারনা তার সাথে আল্লাহর বর্নিত রিবার কোন মিল নেই। রিবার সঠিক বাংলা অনুবাদ না হওয়ায় আমাদের ধারনাটা অন্য দিকে টার্ন নিয়ে বসে আছে। কারন রিবার বাংলা যদি সুদ হয়,আর সুদ শব্দ থেকে আমরা বাঙালীরা যা বুঝি, তা থেকে আমরা কেউ তো সুদ থেকে মুক্ত নই। যেহেতু রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাকাটা ঘুরে সুদের উপর। সেক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য খুজা মানে শুকরের পেটে খাসির কলিজা তালাশ করা।

এমন কি মাদ্রাসা মসজিদ গুলোর শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতাও সুদ মুক্ত নয়। যেহেতু তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদত্ত। আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ব্যাংক বীমা এনজিও এর সুদের একটি অংশ জমা দিতে হয় এমন কি পতিতালয়ের ট্যাক্স ও রাজস্ব খাতে জমা করা হয়। আর সুদ গ্রহন কারী, দাতা, হিসাবকারী সবাই সমান অপরাধী। সুদে নিমজ্জিত থাকা কোন ব্যক্তির এবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহন যোগ্য নয়।

প্রশ্ন আসে, আচ্ছা ! আল্লাহ কি আমাদের জীবন ব্যবস্থা এত কঠিন করে দিয়েছেন? যেখানে সুদের মত হারাম ব্যবস্থার সাথে প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ভাবে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় জড়িত। না কখনোই আল্লাহ জুলুম করেন নাই।

বরং আল্লাহ বলেন,” আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছি।”

সুদকে ইংরেজীতে Interest বলা হয়। যার অর্থ আনন্দ, আগ্রহ । আবার এই Interest এর আরবী কিন্ত ইহতামিম (স্বার্থ)। রিবার বাংলা সুদ নয়। সুদ পারসিয়ান শব্দ। তাই রিবার সঠিক বাংলা নিরুপন করতে সক্ষম হলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। এবার রিবার বাংলা নির্নয় করার চেষ্টা করুন কোরান থেকেই।

সুরা বাকারা “আহাল্লাল্লাহ বাঈয়া ওয়া হাররামা রিবা।”

অর্থ: আল্লাহ হালাল করেছেন ব্যবসা এবং হারাম করেছেন রিবা।

এখানে হালালের বিপরীত হারাম এবং বাঈয়ার বিপরীত রিবা। হালাল মানে বৈধ, হারাম মানে অবৈধ। বাঈয়া মানে ব্যবসা, তাহলে রিবা মানে কি?

আরবী শব্দ রিবার অনুবাদ সুদ ব্যবহার করে সঠিক মর্ম উপলব্ধিতে বাধা গ্রস্থ করা হচ্ছে। কারন সুদ শব্দটি ভিন দেশীয় ভাষা থেকে ধার করে নেয়া।

রিবা দ্বারা আল্লাহ আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা কোরান থেকে নির্নয় করতে কোরানের ভাষার একটি মুল নীতি অনুসরন করা যেতে পারে। আর তা হল কোরানে প্রত্যেকটি শব্দের একটি বিপরীত শব্দ কোন না কোন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন:

লাইল(রাত্রী) ——– বিপরীত শব্ধ — নাহার (দিবস)
শিতাঈ (শীত) ——- বিপরীত —– সাইফ (গ্রীষ্ম)
সামাউ (আকাশ) — বিপরীত —– আরদ (জমিন)
নার (আগুন) ——– বিপরীত —— আলমা (পানি)
সদ্দকা (সত্যবলা) — বিপরীত — কজ্জাব (মিথ্যা বলা)

বিপরীত শব্দ গুলির একটির বাংলা অর্থ জানা থাকলে অন্য শব্দটির বাংলা না জানা থাকলেও সহজে নির্নয় করা যায়। তখন ভিন দেশের ভাষার উপর আর নির্ভর করতে হয় না।

সূরা বাকারার উক্ত আয়াতে হালালের বিপরীতে হারাম এবং বাঈয়ার বিপরীত শব্দ রিবা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবসার বিপরীত শব্দ নিরুপন করতে পারলেই রিবার সঠিক বাংলা নিরুপন করা যাবে।

এজন্য আরেকটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করা যেতে পারে।

” তোমরা যখন লেন দেন কর তখন লিখিত ভাবে কর এবং সাক্ষী রাখ, আর তা এজন্য যে, একে অপরের প্রতি যেন জুলুম, নৈরাজ্য সংঘঠিত না হয়।”

এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় ব্যবসার বিপরীত শব্দ জুলুম, নৈরাজ্য বা জোর জবরদস্তি। সুতরাং রিবার বা সুদের বাংলা নৈরাজ্য বা জুলুম বা জবরদস্তি হবে। ব্যবসার বিপরীত কাজ হল নৈরাজ্যতা, অনৈতিকতা অরাজগতা।

তার মানে সুদ শব্দের পরিবর্তে বিবার বাংলা নৈরাজ্যকতা বসালে উক্ত আয়াতের অনুবাদ দাড়ায় “আহাল্লাল বাঈয়া ওয়া হাররামা রিবা।”

আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং নৈরাজ্যকতাকে অবৈধ করেছেন।

এ নৈরাজ্যকতা ব্যক্তি পর্যায়ে হতে পারে,সমাজ পর্যায়ে হতে পারে, রাষ্ট্র পর্যায়ে হতে পারে। সেটা ব্যবসায়েও হতে পারে,কৃষিকাজেও হতে পারে,শ্রমের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
কোন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লক্ষ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোন পণ্য চড়া দামে বিক্রী করলে সে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করল। এটাই রেবা। কোন কর্মকর্তা তার দায়িত্ত পালনে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে তার কাজ কর্ম যথাযথ সম্পাদন না করে জনগনকে ভোগান্তিতে ফেললে সে কর্মে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করল। এটাই রেবা বা সুদ। রাষ্ট্র প্রধান তার অর্পিত দায়িত্ত যথাযথ পালন না করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করলে সেটাকেও রেবা বলা হয়। অথচ রেবার অর্থ সুদ বলে তাকে আমরা ব্যাংকের লেন-দেন, মহাজনী লেন দেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে বসে আছি। বড় জোর আসলের অতিরিক্ত কোন অর্থ গ্রহন করাকে বুঝে থাকি।

একটু চিন্তা করেও দেখতে চাই না আসলে আল্লাহ রিবা দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন, আর আমরা কি বুঝে বসে আছি। কোরআনকে নিজের মাতৃভাষায় আয়ত্ত না করায় আজ এ দৈন্যতা। আরেকটু পিছন ফিরে যদি দেখি ——-

যখন রেবার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি ব্যাংকিং প্রথা ছিল ? অনেকে বলতে পারেন ব্যাকিং প্রথা না থাকলেও মহাজনী প্রথা ছিল। না, কোরানের আয়াত নাজিল কালে ব্যাকিং বা মহাজনী প্রথা ছিল না।

দ্বিতীয়ত প্রশ্ন আসতে পারে এ আয়াত নাযিলের পর আব্বাস রাঃ কে রিবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসুল সাঃ হাদীসে বর্নিত আছে। মেনে নিলাম হাদীস বিশুদ্ধ ও সহী। অসুবিধা কোথায়, আব্বাস রাঃ ইসলাম গ্রহন পুর্বে সামাজিক যে প্রভাব ও নৈরাজ্য চলমান ছিল, সেটাকে বন্ধ করার জন্য রাসুল সাঃ তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার মহাজনী কোন লেনদেন বন্ধ করার জন্য না। সে সময়ে আসল টাকা বিনোয়গ করে বর্তমান সময়ের মত মুনাফা অর্জনের হাদীস তো দুরের কথা ইতিহাসও পাওয়া যাবে না।

” যাহার নিকট তাহার প্রতিপালকের উপদেশ আসিয়াছে এবং সে বিরত হইয়াছে, তবে অতীতে যাহা হইয়াছে তাহা তাহারই; এবং তাহার ব্যাপার আল্লাহ্‌র ইখ্তিয়ারে। আর যাহারা পুনরায় আরম্ভ করিবে তাহারাই দোজখবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে। (২ঃ২৭৫)

” আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।(২ঃ২৭৬)

বড় জোর তিনি মদ মজুদ রাখতেন এবং সংকটে নৈরাজ্য কতার মাধ্যমে স্বাভাবিকের অতিরিক্ত মুল্য নিতেন। এ মর্মে হাদীসে ইংগীত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন:

” হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং সুদের বকেয়া যাহা আছে তাহা ছাড়িয়া দাও যদি তোমরা মু’মিন হও। (২ঃ২৭৮)

যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। ইহাতে তোমরা অত্যাচার করিবে না এবং অত্যাচারিতও হইবে না। (২ঃ২৭৯)

#তার মানে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ বা রাষ্টৃ পর্যায়ে যে কোন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই রিবা বা সুদ। আর এটাকেই আল্লাহ মানব কল্যানে নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন।***

তাই অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ

” হে মুমিন গন! তোমরা সুদ খাইওনা ক্রমবর্ধমান হারে এবং আল্লাহকে ভয় কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।”

এ আয়াতে রিবার বাংলা নৈরাজ্যতা বসিয়ে দেখেন মর্ম কি দাড়ায়। আর সুদ বসালে মর্ম কি দাড়ায়? সুদ বসালে ভাবার্থ দাড়ায় সুদ খাওয়া যাবে, তবে চক্রবৃদ্ধি হারে না। ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ড যাকে মুদারাফা নাম দিয়ে শুকরের পেটে খাসির কলিজা বানিয়েছে।

রিবার বাংলা নৈরাজ্য বসালে আয়াতের বঙানুবাদ হয়ঃ
” হে মুমিনগন! তোমরা নৈরাজকতা করিও না ক্রমবর্ধমান ভাবে এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।

ব্যাংক,বীমা,মহাজনী নৈরাজ্যকতা সুদ এর বহির্ভুত এটা অস্বীকার করছি না। তবে সুদ বলতে অর্থ লগ্নী প্রথা এ ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আল্লাহ রিবা বলতে যাকে বুঝিয়েছেন তা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

সবশেষে এ আয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করে দেখুন ব্যাংক, বীমা, এনজিও সমুহের প্রতি আল্লাহর কি ইংগীত:

হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের কারবার কর তখন উহা লিখিয়া রাখিও; তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্য ভাবে লিখিয়া দেয়; লেখক লিখিতে অস্বীকার করিবে না। যেমন আল্লাহ্ তাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন, সুতরাং সে যেন লিখে এবং ঋণ গ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয় এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহ্‌কে ভয় করে, আর উহার কিছু যেন না কমায়; কিন্তু ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দিতে না পারে তবে যেন তাহার অভিভাবক ন্যায্য ভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের উপর তোমরা রাযী তাহাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ সাক্ষী রাখিবে, যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক ; স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে। সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে। ইহা ছোট হউক অথবা বড় হউক, মেয়াদসহ লিখিতে তোমরা কোনরূপ বিরক্ত হইও না। আল্লাহ্‌র নিকট ইহা ন্যায্যতর ও প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর তাহা তোমরা না লিখিলে কোন দোষ নাই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রাখিও, লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত কর তবে ইহা তোমাদের জন্য পাপ। তোমরা আল্লাহ্‌কে ভয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে অবহিত।(২ঃ২৮২)

en_USEnglish
Verified by MonsterInsights