মানুষ দুর্বল ভাবেই সৃষ্টি
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِىْ كَبَدٍؕ *
অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা বালাদ)
لَقَدْ = নিশ্চয়ই
خَلَقْنَا = আমরা সৃষ্টি করেছি,
الْإِنْسَانَ = মানুষকে
فِي = মধ্যে
كَبَدٍ = শ্রম নির্ভর করে/কষ্টের
Month: June 2023
১৯:৪১
ওয়াযকুর = আর যিকির/ আলোচনা করো। ফিল কিতাবি = এই কিতাবে যা বলা হয়েছে। ইবরাহীমা = ইবরাহীম সম্পর্কে। ইন্নাহু = নিশ্চয় সে। কানা = ছিলো। সিদ্দীক্বান নাবীয়্যান = সিদ্দিক/ সত্যবাদী ও নবী।
আর যিকির/ আলোচনা করো এই কিতাবে যা বলা হয়েছে ইবরাহীম সম্পর্কে। নিশ্চয় সে ছিলো সিদ্দিক/ সত্যবাদী ও নবী।
১৯:৪২
ইয = যখন। ক্বলা = সে বলেছে। লিআবীহি = তার পিতাকে। ইয়া আবাতি = হে আমার আব্বা। লিমা = কেন। তা’বুদু = আপনি উহার ইবাদাত/ দাসত্ব করেন। মা = যা। লা ইয়াছমাউ = শুনে না। ওয়া = আর। লা ইউবসিরু = দেখে না। ওয়া = আর। লা ইউগনী = কাজে আসে না। আনকা = আপনার ব্যাপারে। শাইয়ান = কিছুমাত্রও।
যখন সে বলেছে তার পিতাকে, ‘হে আমার আব্বা, কেন আপনি উহার ইবাদাত/ দাসত্ব করেন যা শুনে না আর দেখে না, আর কাজে আসে না আপনার ব্যাপারে কিছুমাত্রও?
১৯:৪৩
ইয়া আবাতী = হে আমার আব্বা। ইন্নী ক্বাদ জাআনী = নিশ্চয় আমার কাছে এসেছে। মিনাল ইলমি = এমন কিছু ইলম/ জ্ঞান। মা লাম ইয়া’তিকা = যা আপনার কাছে আসেনি। ফাত্তাবি’নী = সুতরাং আপনি আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করুন। আহদিকা = আমি আপনাকে হিদায়াত/ পথনির্দেশ করবো। সিরাতান সাভিয়্যান = সরল সঠিক পথ।
হে আমার আব্বা, নিশ্চয় আমার কাছে এসেছে এমন কিছু ইলম/ জ্ঞান, যা আপনার কাছে আসেনি। সুতরাং আপনি আমার ইত্তেবা/ অনুসরণ করুন। আমি আপনাকে হিদায়াত/ পথনির্দেশ করবো সরল সঠিক পথ।
১৯:৪৪
ইয়া আবাতী = হে আমার আব্বা। লা তা’বুদিশ শায়তানা = শয়তানের ইবাদাত/ দাসত্ব করবেন না। ইন্নাশ শায়তানা = নিশ্চয় শয়তান। কানা = হলো। লিররহমানি = রহমানের/ দয়াময়ের প্রতি। আসিয়্যান = অবাধ্য।
হে আমার আব্বা, শয়তানের ইবাদাত/ দাসত্ব করবেন না। নিশ্চয় শয়তান হলো রহমানের/ দয়াময়ের প্রতি অবাধ্য।
১৯:৪৫
ইয়া আবাতী = হে আমার আব্বা। ইন্নী = নিশ্চয় আমি। আখাফু = ভয় করি। আইঁ ইয়ামাছছাকা = যে, আপনাকে স্পর্শ করবে। আযাবুম মিনার রহমানি = রহমানের/ দয়াময়ের আযাব/ শাস্তি। ফাতাকূনা = ফলত: আপনি হয়ে থাকবেন। লিশ শয়তানি = শয়তানের জন্য। ওয়ালিয়্যান = ওলি/ বন্ধু।
হে আমার আব্বা, ‘নিশ্চয় আমি ভয় করি যে, আপনাকে স্পর্শ করবে রহমানের/ দয়াময়ের আযাব/ শাস্তি। ফলত: আপনি হয়ে থাকবেন শয়তানের জন্য ওলি/ বন্ধু’।
১৯:৪৬
ক্বলা = সে ( ইবরাহীমের পিতা) বলেছে। আরাগিবুন আনতা = তুমি কি বিমুখ হয়ে আছো। আন আলিহাতী = আমার ইলাহগুলো থেকে। ইয়া ইবরাহীমু = হে ইবরাহীম। লাইল্লাম তানতাহি = যদি তুমি বিরত না হও। লাআরজুমান্নাকা = তাহলে, অবশ্যই আমি তোমাকে রজম/ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবো। ওয়া = আর। হুজুরনী = (তা থেকে বাঁচতে হলে) তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও। মালিয়্যান = চিরতরে।
সে (ইবরাহীমের পিতা) বলেছে, ‘তুমি কি বিমুখ হয়ে আছো আমার ইলাহগুলো থেকে? হে ইবরাহীম। যদি তুমি বিরত না হও, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে রজম/ পাথর নিক্ষেপে হত্যা করবো। আর (তা থেকে বাঁচতে হলে) তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও চিরতরে’।
১৯:৪৭
ক্বলা = সে (ইবরাহীম) বলেছে। সালামুন আলাইকা = ‘সালামুন আলাইকা’/ আপনার উপর শান্তি। ছাআছতাগফিরুলাকা = শীঘ্রই আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো। রব্বী = আমার রবের কাছে। ইন্নাহু = নিশ্চয় তিনি। কানা = হলেন। বী = আমার প্রতি। হাফিয়্যান = অনুগ্রহশীল।
সে ( ইবরাহীম) বলেছে, ‘সালামুন আলাইকা’/ আপনার উপর শান্তি। শীঘ্রই আমি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো আমার রবের কাছে। নিশ্চয় তিনি হলেন আমার প্রতি অনুগ্রহশীল।
একজন ইসলামিক স্কলার তার এক পোস্টে লিখেছেন, “কোরান সম্পুর্ন সহজ ও বিস্তারিত” (ক্বামার,আয়াত: ১৭)
পোস্টটি পড়ে মর্মাহত হলাম। কারন এভাবে বিকৃত হতে থাকলে কোরাআনকে মাতৃভাষায় বাইবেলের মত করে বসবে একসময়। পাবলিক গিলছেও তা চোখ বুজে। বিষেশ করে কোরআন অনুশীলন কারীগন। অথচ —
আরবী আয়াতটি হল ,وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ
ওয়া লাকাদ ইয়াছছারনাল কোরআনা লিযযিকরি ফাহাল মিম মুদ্দাকির।
শব্দ বিশ্লেষন নিন্মরুপঃ
এবং নিশ্চয় = وَلَقَدْ
আমরা সহজ করে দিয়েছি = يَسَّرْنَا
الْقُرْآنَ = কুরআনকে
لِلذِّكْرِ = উপদেশ গ্রহণের জন্য
فَهَلْ = তবেকি (আছে)
مِنْ = কোনো
مُدَّكِرٍ = উপদেশ গ্রহণকারী
অনুবাদঃ আমি এ কুরআনকে উপদেশ গ্রহনের জন্য সহজ করে দিয়েছি। তবে কি উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে ?
পোস্ট কারী অনুবাদ লিখলেন, “কোরান সম্পুর্ন সহজ ও বিস্তারিত”।
কোথা থেকে, কিভাবে অনুবাদ করলেন? অনুবাদে বিভ্রান্তিই শুধু নয়, আয়াতের মর্মের পরিবর্তন ঘটিয়ে দিয়েছে।
এ হলো কপি পেস্ট ইসলামিক স্কলারদের অবস্থা।।
এমন স্কলারকে যদি বলা হয়, কোরান থাক, আপনি আরব্য একটা প্রবাদের যার, বাংলা অনুবাদও করে দেয়া হলো,– ব্যাখ্যা করে বলুন তো কি বুঝাতে চেয়েছে প্রবাদটি দ্বারা? প্রবাদটি সাস্কৃতিতেও রয়েছে। মনে হয় না পেট থেকে কিছু বের হবে? কারন একটাই কপি পেস্টের জ্ঞান তার।
আরব্য প্রবাদটিঃ
الناس العاقرون اليوم عاقرون ، لكنهم ليسوا عاقرا في آذانهم السيئة.
অনুবাদ: বাঁজে সখি আজো বাঁজে তবে বাজে কানে বাঁজে না।
এ প্রবাদটি দ্বারা কি বুঝান হয়েছে – ব্যাখ্যা করুন তো?
তাই অনুরোধ করব, কোরআনের বাংলা অনুবাদ পড়েই কোরআন বুঝে ফেলার মনোভাব পরিহার করুন।
অনুবাদেও রয়েছে অনেক বিভ্রাট!!! নিজে শব্দ বিশ্লেষন দেখে অনুবাদ মিলিয়ে নিন, তারপর আরো কয়েকজন অনুবাদকের অনুবাদের সাথে যাচাই করে তারপর প্রচার করুন।
১৮২৯ সনে বেঙ্গল সতীদাহ প্রবিধান (রেগুলেশন XVII) ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে সতীদাহ প্রথাকে রহিত করে দিয়েছোন।
এ প্রথা অনুযায়ী স্ত্রীর আগে স্বামী মারা গেলে মৃত স্বামীর চিতার সাথে জ্যান্ত স্ত্রীকেও দহন করা হত। অথচ স্ত্রী আগে মারা গেলে তার চিতার সাথে স্বামীকে দহন করা হতো না।
কি অদ্ভুত নারীর প্রতি ধর্মীয় বৈষম্য !!
এমনি একটি বৈষম্য হাদীস ভিত্তিক ইসলামী আইনে দেখা যায়। যদিও কোরআন তা অনুমোদন করে না।
কোরআন বর্ণিত যেনাকারী যদি বিবাহীত হয় তবে তার শাস্তি নারী এবং পুরুষ উভয়কেই ১০০ বেত্রাঘাত করা, (২৪:২)। আর যেনাকারী যদি অবিবাহীত হয় তবে উভয়কেই তার অর্ধেক। অর্থাৎ ৫০ টি করে বেত্রাঘাত নির্ধারণ করা হয়েছে, (৪:২৫)। কত সুক্ষ আল্লাহর শাস্তি। নারী এবং পুরুষের সম শাস্তির বিধান করেছেন। সাথে যৌন অপরাধ নির্ণয়ে ইসলাম নির্ধারিত বিভাজন রেখা (বিবাহিত-অবিবাহিত) সর্বোৎকৃষ্ট।
কিন্তু হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘অবিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ-নারীর ক্ষেত্রে একশ’ বেত্রাঘাত ও রজম অর্থাৎ পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড,(সহিহ মুসলিম)। অথচ আল্লাহ কোরআনে এমন শাস্তির কথা উল্লেখ করেন নাই।
সুতরাং পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার হাদিস মনে হয় রাসুল সাঃ নিজেও জানেন না। এটা পরবর্তীদের বানানো ভয়ংকর বানোয়াট কুখ্যাত কালো আইন—- যা সনাতন ধর্মের সতীদাহ প্রথাকে হার মানায়।
ইসলামিক চিন্তাবিদদের বিষয়টি ভেবে দেখার দাবী রাখে।
ইবরাহীম, মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ সাঃ কোন মাসে সিয়াম সাধনা করতেন?
কুরআনে বর্ণনা করে, ‘এখন আমি তোমার প্রতি ওহী করলাম, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর … (১৬:১২৩)।
তাহলে ইবরাহীম আঃ এর রমযান মাস পেলেই আমার জন্য যথেষ্ট।
এবার কুরআনে দেখুন, ‘তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন নূহকে, আর যা আমি ওহী করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা ও ‘ঈসাকে, এই বলে যে, তোমরা দীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং মতভেদ করো না ……. (৪২:১৩)।
‘তোমাদের এই যে উম্মত (জাতি) এ তো একই উম্মত (জাতি) এবং আমিই তোমাদের রব; অতএব আমাকে ভয় কর (২৩:৫২)।
নুহু আঃ এর কথা বাদই দিলাম।
ইবরাহীম আঃ এর অনেক পরে মূসা আঃ, এবং মূসা আঃ এর অনেক অনেক পরে ঈসা আঃ।
ঈসায়ী সাল গণনা অনুসারে মুহাম্মাদ সাঃ এর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে।
রাসূল মুহাম্মাদ হিজরত করেন ৬২২ খ্রিস্টাব্দে।
রাসূল মুহাম্মাদ ইনতেকাল করেন ৬৩২ খৃঃ।
মুহাম্মাদ সাঃ এর মৃত্যুর ৭ বছর পর খলিফা ওমর মুহাম্মাদ সাঃ এর হিজরতকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য হিজরি সন চালু করেন। হঠাৎ সৌর মাসটা চন্দ্র মাস হলো কিভাবে?
কুরআনে বলে, — ‘নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন হতেই আল্লাহর বিধানে আল্লাহর নিকট মাস গণনায় মাস বারটি, (৯:৩৬)
উপরোক্ত আয়াত অনুসারে নূহু আঃ এর সময়ের রমযান মাস কোনটি? ইবরাহীম আঃ এর সময়ের রমযান মাস কোনটি? মূসা আঃ এর সময়ের রমযান মাস কোনটি? ঈসা আঃ সময়ের রমযান মাস কোনটি? মুহাম্মাদ সাঃ সময়ের রমযান মাস কোনটি?
কুরআন বলছে, “হে মু‘মিনগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে দেওয়া হয়ে ছিল … … … … … … … রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাসের সাক্ষ্য দিবে তারা যেন এতে সিয়াম সাধনা করে … … (২:১৮৩, ১৮৫)।
কোরআন অন্যত্র বলে — ‘এই যে মাসকে পিছিয়ে দেওয়া কেবল কুফরি বৃদ্ধি করা—– (৯:৩৭)।
প্রতি বছর হিজরীতে ১১ দিন পিছানো হয় কেন?
মুহাম্মাদ সাঃ এর সময় ও তাঁর মৃত্যুর পরে (৬:২২ খ্রি:-৬৩৯খ্রি:) মুসলিমরা কোন মাসকে রমযান মাস ধরে সিয়াম সাধনা করত?
ধর্মীয় উপাসনালয়কে চাকচিক্য করে, নীতি নৈতিকতা ভুলে গিয়ে এই কোন ধর্মে পতিত হচ্ছে পৃথিবীর সব হিন্দু, মুসলিম, ইহুদী, খৃষ্টান?
ইসলাম প্রচারের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত মসজিদ গুলি মানবতার কল্যাণে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অনেক জনপদের পুরো চিত্রই পাল্টে দিয়েছিল। মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা, বালাখানা প্রতিষ্ঠা করে, সাধারন মানুষের শিক্ষা গ্রহন থেকে, অসহায় মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ এমনকি মুসাফিরদের অন্তত ঘুমিয়ে একটা রাত পার করার সুযোগ ইসলাম ধর্মকে বিশেষত্ব দান করেছিল।
বিশেষ করে সুফি সাধকদের খানকাহ সংলগ্ন মসজিদে সে সময়ে একটি লঙ্গরখানা সব সময় থাকতো। সেখানে হিন্দু মুসলিম তথা জাতি-ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রবেশাধিকার এবং খাবার খাওয়ার সুযোগ ছিল।
সময়ের আবর্তে সেই মসজিদের চাকচিক্য বেড়েছে বহুগুণে। তবুও প্রতিদিন চলে নানা ভাবে চাঁদা আদায়।
আর এইভাবে একটা পর্যায়ে গণমানুষের সঙ্গে তৈরি হয়ে গেছে মসজিদের দূরত্ব। নামাজের সময় ছাড়া বাকি পুরোটা সময় মসজিদ গুলো তালা মারা থাকে।
কিন্ত আমার আপনার অর্থায়নে নির্মিত মসজিদের গেইটে যদি তালা ঝুলতে থাকে সব সময় তবে লাভ কি হলো?
ওয়াক্ত শেষ হতে না হতেই দেখি বেশির ভাগ মসজিদের গেইটে তালা ঝুলে!!
যখন হতে জীবকা হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে তখন থেকেই ধর্ম তার স্বকীয়তা হারিয়ে বিশেষ স্তম্ভের আচার-অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
মানুষ দুর্বল
মানুষ দুর্বল ভাবেই সৃষ্টি
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِىْ كَبَدٍؕ
অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি। (সূরা বালাদ)
لَقَدْ = নিশ্চয়ই
خَلَقْنَا = আমরা সৃষ্টি করেছি,
الْإِنْسَانَ = মানুষকে
فِي = মধ্যে
كَبَدٍ = শ্রম নির্ভর করে/কষ্টের
নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রম নির্ভর করে।
ব্যাখ্যা: মানুষ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ পার হয়। জন্ম নেয়ার সময় সে মাতৃগর্ভ থেকে অতি কষ্টের মধ্য দিয়ে আসে পৃথিবীর বুকে। এসেই পড়ে যায় বিরুপ এক পরিবেশ জগতে। আগে যা সে অনুভব করেনি কখনো। ঠান্ডা গরম, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, আবাসন, ঘুম, আলো, মশা-মাছি, বিভিন্ন জীবানুর আক্রমন তাকে পেয়ে বসে। স্বয়ংক্রিয় ভাবে খাবার পেত, পুষ্টিপেত, ক্ষুধা, নিদ্রা, আবসনের ছিল না কোন চিন্তা। এর আগে সে এসব কোন দু:খ, কস্ট, ক্লেশ অনুভবই করে নি।
এখন শুরু হল তার ক্ষুধার কস্ট, আরামের অভাব। চিৎকার দিয়ে তার অনুভুতি প্রকাশ করতে হয়। খাবার জন্য মাকে খুজতে হয়, একটু পর পর পেশাব করে কাপড় ভিঁজে গেলে অস্বস্তি লাগে, কান্না করে মাকে জানায়।
এভাবে হাজারো সংগ্রাম করে একটু একটু করে বড় হয়, একদিন বসতে শিখে,তারপর একদিন দাড়াতে, একটু একটু করে হাটা,এক সময় দাঁত উঠা, বড়দের মত খাদ্য গ্রহনের যোগ্যতা অর্জন করছে, কখনো পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাচ্ছে। এভাবে হাজারো সংগ্রাম ও কস্টের মধ্য দিয়ে সে বড় হয়ে উঠে তার দেহের উপর সে নিয়ন্ত্রন পায়।
এসব সংগ্রাম শুধুমাত্র জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে ঘটে থাকে। আসল সংগ্রাম এখনো বাকি। শিশুকাল, বাল্যকাল, যৌবন কাল, বৃদ্ধ কালের সংগ্রাম পড়ে আছে সামনে।
একজন মানুষের জীবনে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম আর সংগ্রাম এবং কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। অথচ পৃথিবীতে সে আসে কত দুর্বল অসহায় অবস্থায়। আল্লাহ বলেন: ” আর মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে। -নিসা ২৮”
কয়েক দিনের জন্য কিছু শক্তি সামর্থ পায়। তারপর নির্দিষ্ট একটি সময়ের পড়ে আবার ধীরে ধীরে তাকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন সে মাটিতে আবার মিশে যায়।ব্যাকটেরিয়া,কীটপতঙ্গের খাবারে পরিনত হয়, পুর্বের ন্যায় দুর্বল হয়ে পড়ে, তার করার কিছু থাকে না।…..
অথচ এই মানুষই কি না মধ্য বয়সে অহংকারী হয়ে উঠে। “সে কি মনে করে যে তার উপরে কারো ক্ষমতা নেই?(৯০:৫)বলে কি না,”অনেক টাকা উড়িয়ে দিলাম( ৯০:৬)
সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (৯০:৭)
মজার ব্যাপার কি……….
এই দূর্বল মানুষ, যার বেঁচে থাকার জন্য কোন শেষ নেই। সেই মানুষই একটু নিজের পায়ে দাড়াতে পারলে, মনে করা শুরু করে যে তার কাজের জন্য কাউকে কোন জবাব দিতে হবে না।
তখন সে নিজের লোভ লালসা মেটানোর জন্য অন্যায়-অবিচার,দূর্নীতিকরে। নোংরা বিনোদনে নিজের চরিত্রকে কুলশিত করে। যে কোন মুল্যে মন যা চায়, তাই তাকে পেতে হয়। তাকে ভাল কাজে যখন কোন কিছু দান করতে বলা হয়…… তখন বলে আরে ভাই কয়েকদিন আগেই ৯০ লক্ষ টাকা দিয়ে নতুন একটা ফ্লাট নিলাম। এখন আমাকে কিছু দিতে বলবেন না।
আচ্ছা সে কি চিন্তা করে দেখে কি সব কাজে সে টাকা উড়াচ্ছে? আর সবি আল্লাহ তা’য়ালা দেখছেন। “সে কি মনে করে যে, তাকে কেউ দেখছে না? (৯০:৭)
এটাই হচ্ছে মানুষের পাপের মুল কারন।
মানুষ মনে করে যে সে যখন টেবিলের নীচ দিয়ে ঘুষ নিচ্ছে, কোম্পানির প্রজেক্ট থেকে কোটি কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে, গোপনে মিটিং করে গরীবের হক মেরে দিচ্ছে, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে —- এগুলি কেউ
দেখছে না, তার মানে ঠিকই পুলিশের, দুদকের, আইন শৃিংখলা বাহীনির ভয় আছে। কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালার ভয় নেই। সে কি মনে করে যে তাকে কেউ দেখছে না?
এটাই হচ্ছে তাকওয়ার বরখেলাপ। তাকওয়া মানেই হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে সবসময় দেখছেন এবং তাকে সব কাজের জন্য আল্লাহ তা’য়ালার নিকট জবাবদিহী করতে হবে। এই তাকওয়া না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। তখন সে পশুর থেকেও অধম হয়ে যায়। এ কারনেই কোরআনে তাকওয়ার প্রতি এতো জোর দেওয়া হয়েছে।
একজন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, প্রতিভা যতই থাকুক না কেন তাকওয়া না থাকলে সে অন্যের হক আত্মসাত করার জন্য খুব একটা সংকোচ করে না।
এবার আল্লাহ তা’য়ালা বলছেনঃ আমি কি তাকে দূটি চোখ বানিয়ে দেই নি? ৯০:৮
একটা জিভ, দূটো ঠোট ? ৯০:৯
উক্ত আয়াতের আলোকে দেখা যায়, আমরা আমাদের দেহে কোটি কোটি টাকার এমন সম্পদ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। এগুলি অর্জন করার জন্য আমাদের কোন পরিশ্রম করতে হয় নি। না চাইতেই আল্লাহ দিয়ে দিয়েছেন। আমাদেরকে কিছুই করতে হয় নি।
আল্লাহ তা’য়ালার দেয়া এই সম্পদ গুলো ব্যবহার করে আমরা যাবতীয় সম্পদ অর্জন করি। এগুলো না থাকলে আমাদের জীবনে কোন অর্জনই থাকত না।
অথচ এ গুলো ব্যবহার করে সম্পদ অর্জন করার পর, সব সম্পদ আমাদের ভাবতে শুরু করি, আমাদের হয়ে যায়। তারপরে আল্লাহ তা’য়ালার পথে সেই সম্পদ আর খরচ (যাকাত) করতে চাই না। এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কি হতে পারে ? “মানুষ অবশ্যই তার প্রতিপালকের প্রতি বড় অকৃতজ্ঞ। সূরা আ-দিয়াত ৬
অতঃপর ১০ নং আয়াতে বলেছেনঃ
وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَيْنِ
অনুবাদঃ বস্তুতঃ আমি তাকে দু’টি পথ প্রদর্শন করেছি।
কৃতজ্ঞতা: ১) সৈয়দ কুতুব ২) তাদাব্বুরে কোরআন
৩) মারেফুল কোরআন, ৪) বায়ান আল কোরআন
মানুষ শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি
মানুষ শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি
لَاۤ اُقْسِمُ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ
১) আমি শপথ করিতেছি এই নগরের
وَاَنْتَ حِلٌّ ۢ بِهٰذَا الْبَلَدِۙ
২) আর তুমি এই নগরের অধিবাসী,
وَوَالِدٍ وَّمَا وَلَدَ ۙ
৩) শপথ জন্মদাতার ও যাহা সে জন্ম দিয়াছে।
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِىْ كَبَدٍؕ
৪) আমি তো মানুষ সৃষ্টি করিয়াছি কষ্ট-ক্লেশের মধ্যে।
অনুবাদঃ নিশ্চয় আমি মানুষকে শ্রমনির্ভর রূপে সৃষ্টি করেছি।
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّنْ يَّقْدِرَ عَلَيْهِ اَحَدٌ ۘ
৫) সে কি মনে করে যে, কখনও তাহার উপর কেহ ক্ষমতাবান হইবে না ?
يَقُوْلُ اَهْلَكْتُ مَالًا لُّبَدًا ؕ
৬) সে বলে, ‘আমি প্রচুর অর্থ নিঃশেষ করিয়াছি।’
اَيَحْسَبُ اَنْ لَّمْ يَرَهٗۤ اَحَدٌ ؕ
৭) সে কি মনে করে যে, তাহাকে কেহ দেখে নাই ?
اَلَمْ نَجْعَلْ لَّهٗ عَيْنَيْنِۙ
৮) আমি কি তাহার জন্য সৃষ্টি করি নাই দুই চক্ষু ?
وَلِسَانًا وَّشَفَتَيْنِۙ
৯) আর জিহবা ও দুই ওষ্ঠ ?
وَهَدَيْنٰهُ النَّجْدَيْنِۚ
১০) আর আমি তাহাকে দুইটি পথ প্রদর্শন করেছি।
না আমি শপথ করছি এই নগরের, এমন এক নগর যার নাগরিক স্বয়ং তুমি! শপথ করছি জন্মদাতার এবং যা সে জন্ম দেয়। নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কঠিন পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য।সে কি মনে করে যে তার উপরে কারো ক্ষমতা নেই,বলে কি না অনেক টাকা উড়িয়ে দিলাম, সে কি মনে করে যে তাকে কেউ দেখছে না? আমি কি তাকে দুটি চোখ বানিয়ে দেই নি, একটা জিহব,দুটি ঠোট ?
আর আমি তাকে দুইটি পথ প্রদর্শন করেছি।।। (সূরা বালাদ)
১-১০ নং আয়াতের তাফসীর সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ এখানে জনবসতিপূর্ণ শান্তির সময়ের মক্কা নগরীর শপথ করছেন। তিনি শপথ করে বলেছেনঃ হে নবী (সঃ) এখানে একবার তোমার জন্যে যুদ্ধ বৈধ হবে, তাতে কোন পাপ বা অন্যায় হবে না। আর ঐ যুদ্ধে যা কিছু পাওয়া যাবে সেগুলো তোমার জন্যে শুধু ঐ সময়ের জন্যে বৈধ হবে। নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “এখানে (মক্কায়) যুদ্ধ-বিগ্রহের বৈধতা সম্বন্ধে কেউ আমার যুদ্ধকে যুক্তি হিসেবে পেশ করলে তাকে বলে দিতে হবেঃ আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর রাসূল (সঃ)-এর জন্য অনুমতি দিয়েছেন, তোমাদের জন্যে দেননি।”
এরপর আল্লাহ্ তাআ’লা পিতা এবং সন্তানের শপথ করেছেন। পিতা দ্বারা হযরত আদম (আঃ) কে এবং সন্তান দ্বারা সমগ্র মানব জাতিকে বুঝানো হয়েছে। এখানে সাধারণভাবে সকল পিতা এবং সকল সন্তানের কথা বলা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ আমি মানুষকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর, সুষম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী করে সৃষ্টি করেছি। মায়ের পেটেই তাকে এই পবিত্র গঠন-বিন্যাস এবং উন্নত আকৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ (আরবি)“হে মানুষ! কিসে তোমাকে ভোমার মহান প্রতিপালক সম্বন্ধে বিভ্রান্ত করলো যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাকে সুঠাম করেছেন এবং সুসমঞ্জস করেছেন। যেই আকৃতিতে চেয়েছেন তিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” (৮২ ৬-৮) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)অথাৎ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে।” (৯৫:৪) মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ প্রথমে ছিল বীর্য বা শুক্র, তারপরে হয়েছে রক্তপিন্ড এবং এরপরে হয়েছে গোশতটুকরা। মোটকথা, মানুষের জন্ম খুবই বিস্ময়কর এবং কষ্টকরও বটে, যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)অর্থাৎ “তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে বহন করেছে এবং কষ্ট করে প্রসব করেছে।” (৪৬:১৫) মা সন্তানকে দুধ পান করানোতে এবং লালন-পালন করাতেও কঠিন কষ্ট স্বীকার করেছে।
মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কেউ ক্ষমতাবান হবে না? অর্থাৎ তারা ধারণা করে যে, তাদের ধন-মাল নিতে কেউ সক্ষম নয়? তারা কি মনে করে যে, তাদের উপর কারো কর্তৃত্ব নেই? তারা কি জিজ্ঞাসিত হবে না যে, তারা কোথা থেকে ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে? নিঃসন্দেহে তাদের উপর আল্লাহর কর্তৃত্ব রয়েছে এবং আল্লাহ তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।
তারা বলে বেড়ায়ঃ আমরা বহু ধনমাল খরচ করে ফেলেছি। তারা কি মনে করে যে, তাদেরকে কেউ দেখছে না? অর্থাৎ তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহর দৃষ্টি থেকে অদৃশ্য মনে করে?
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি কি মানুষকে দেখার জন্যে দুটি চক্ষু প্রদান করিনি? মনের কথা প্রকাশ করার জন্যে কি আমি তাদেরকে জিহ্বা দিইনি? কথা বলার জন্যে, পানাহারের জন্যে, চেহারা ও মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যে কি আমি তাদেরকে দুটি ওষ্ঠ প্রদান করিনি? সুতরাং আমার সন্তুষ্টিমূলক কথা মুখ থেকে বের কর এবং অসন্তুষ্টিমূলক কথা থেকে জিহ্বাকে বিরত রাখো।
এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলেনঃ আমি তাদেরকে ভালো মন্দ দুটি পথই দেখিয়েছি। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি তো মানুষকে সৃষ্টি করেছি মিলিত শুক্র বিন্দু হতে, তাকে পরীক্ষা করবার জন্যে, এ জন্যে আমি তাকে করেছি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন। আমি তাকে পথের নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে।” (৭৬:২-৩)
তারপর আরেকটু এগিয়ে জানিয়ে দিলেন …
এবং এই পথই আমার সরল পথ। সুতরাং তোমরা ইহারই অনুসরণ করিবে এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করিবে না, করিলে উহা তোমাদেরকে তাঁহার পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিবে। এইভাবে আল্লাহ্ তোমাদেরকে নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা সাবধান হও। (৬:১৫৩)
সুদ কি? কেউ বলেন আসলের অতিরিক্ত কোন মুনাফা বা অর্থ গ্রহন করাই সুদ। আবার অনেকে মনে করেন বিনিয়োগ কৃত মুলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহন করাই সুদ।
এভাবে নয় ছয় করে সুদের সঙা দিয়ে থাকেন। অতিরিক্ত শব্দের আরবী হল “জিয়াদ”। তাই সুদের অর্থ যদি অতিরিক্ত গ্রহন করা হয় সেটা নির্ঘাত ভুল হবে। কারন আয়াতে “জিয়াদ” শব্দ ব্যবহার করা হয় নাই, ব্যবহার করা হয়েছে “রিবা”।
সুদ বলতে আমাদের প্রচলিত ধারনা তার সাথে আল্লাহর বর্নিত রিবার কোন মিল নেই। রিবার সঠিক বাংলা অনুবাদ না হওয়ায় আমাদের ধারনাটা অন্য দিকে টার্ন নিয়ে বসে আছে। কারন রিবার বাংলা যদি সুদ হয়,আর সুদ শব্দ থেকে আমরা বাঙালীরা যা বুঝি, তা থেকে আমরা কেউ তো সুদ থেকে মুক্ত নই। যেহেতু রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাকাটা ঘুরে সুদের উপর। সেক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য খুজা মানে শুকরের পেটে খাসির কলিজা তালাশ করা।
এমন কি মাদ্রাসা মসজিদ গুলোর শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ভাতাও সুদ মুক্ত নয়। যেহেতু তা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে প্রদত্ত। আর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ব্যাংক বীমা এনজিও এর সুদের একটি অংশ জমা দিতে হয় এমন কি পতিতালয়ের ট্যাক্স ও রাজস্ব খাতে জমা করা হয়। আর সুদ গ্রহন কারী, দাতা, হিসাবকারী সবাই সমান অপরাধী। সুদে নিমজ্জিত থাকা কোন ব্যক্তির এবাদত আল্লাহর নিকট গ্রহন যোগ্য নয়।
প্রশ্ন আসে, আচ্ছা ! আল্লাহ কি আমাদের জীবন ব্যবস্থা এত কঠিন করে দিয়েছেন? যেখানে সুদের মত হারাম ব্যবস্থার সাথে প্রতিটি মানুষ কোন না কোন ভাবে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় জড়িত। না কখনোই আল্লাহ জুলুম করেন নাই।
বরং আল্লাহ বলেন,” আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে সহজ করে দিয়েছি।”
সুদকে ইংরেজীতে Interest বলা হয়। যার অর্থ আনন্দ, আগ্রহ । আবার এই Interest এর আরবী কিন্ত ইহতামিম (স্বার্থ)। রিবার বাংলা সুদ নয়। সুদ পারসিয়ান শব্দ। তাই রিবার সঠিক বাংলা নিরুপন করতে সক্ষম হলেই বিষয়টি ক্লিয়ার হবে। এবার রিবার বাংলা নির্নয় করার চেষ্টা করুন কোরান থেকেই।
সুরা বাকারা “আহাল্লাল্লাহ বাঈয়া ওয়া হাররামা রিবা।”
অর্থ: আল্লাহ হালাল করেছেন ব্যবসা এবং হারাম করেছেন রিবা।
এখানে হালালের বিপরীত হারাম এবং বাঈয়ার বিপরীত রিবা। হালাল মানে বৈধ, হারাম মানে অবৈধ। বাঈয়া মানে ব্যবসা, তাহলে রিবা মানে কি?
আরবী শব্দ রিবার অনুবাদ সুদ ব্যবহার করে সঠিক মর্ম উপলব্ধিতে বাধা গ্রস্থ করা হচ্ছে। কারন সুদ শব্দটি ভিন দেশীয় ভাষা থেকে ধার করে নেয়া।
রিবা দ্বারা আল্লাহ আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা কোরান থেকে নির্নয় করতে কোরানের ভাষার একটি মুল নীতি অনুসরন করা যেতে পারে। আর তা হল কোরানে প্রত্যেকটি শব্দের একটি বিপরীত শব্দ কোন না কোন জায়গায় ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন:
লাইল(রাত্রী) ——– বিপরীত শব্ধ — নাহার (দিবস)
শিতাঈ (শীত) ——- বিপরীত —– সাইফ (গ্রীষ্ম)
সামাউ (আকাশ) — বিপরীত —– আরদ (জমিন)
নার (আগুন) ——– বিপরীত —— আলমা (পানি)
সদ্দকা (সত্যবলা) — বিপরীত — কজ্জাব (মিথ্যা বলা)
বিপরীত শব্দ গুলির একটির বাংলা অর্থ জানা থাকলে অন্য শব্দটির বাংলা না জানা থাকলেও সহজে নির্নয় করা যায়। তখন ভিন দেশের ভাষার উপর আর নির্ভর করতে হয় না।
সূরা বাকারার উক্ত আয়াতে হালালের বিপরীতে হারাম এবং বাঈয়ার বিপরীত শব্দ রিবা ব্যবহার করা হয়েছে। ব্যবসার বিপরীত শব্দ নিরুপন করতে পারলেই রিবার সঠিক বাংলা নিরুপন করা যাবে।
এজন্য আরেকটি আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করা যেতে পারে।
” তোমরা যখন লেন দেন কর তখন লিখিত ভাবে কর এবং সাক্ষী রাখ, আর তা এজন্য যে, একে অপরের প্রতি যেন জুলুম, নৈরাজ্য সংঘঠিত না হয়।”
এ আয়াত থেকে স্পষ্ট হয় ব্যবসার বিপরীত শব্দ জুলুম, নৈরাজ্য বা জোর জবরদস্তি। সুতরাং রিবার বা সুদের বাংলা নৈরাজ্য বা জুলুম বা জবরদস্তি হবে। ব্যবসার বিপরীত কাজ হল নৈরাজ্যতা, অনৈতিকতা অরাজগতা।
তার মানে সুদ শব্দের পরিবর্তে বিবার বাংলা নৈরাজ্যকতা বসালে উক্ত আয়াতের অনুবাদ দাড়ায় “আহাল্লাল বাঈয়া ওয়া হাররামা রিবা।”
আল্লাহ ব্যবসাকে বৈধ করেছেন এবং নৈরাজ্যকতাকে অবৈধ করেছেন।
এ নৈরাজ্যকতা ব্যক্তি পর্যায়ে হতে পারে,সমাজ পর্যায়ে হতে পারে, রাষ্ট্র পর্যায়ে হতে পারে। সেটা ব্যবসায়েও হতে পারে,কৃষিকাজেও হতে পারে,শ্রমের ক্ষেত্রেও হতে পারে।
কোন ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লক্ষ্যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোন পণ্য চড়া দামে বিক্রী করলে সে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করল। এটাই রেবা। কোন কর্মকর্তা তার দায়িত্ত পালনে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে তার কাজ কর্ম যথাযথ সম্পাদন না করে জনগনকে ভোগান্তিতে ফেললে সে কর্মে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করল। এটাই রেবা বা সুদ। রাষ্ট্র প্রধান তার অর্পিত দায়িত্ত যথাযথ পালন না করে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে নৈরাজ্যকতা সৃষ্টি করলে সেটাকেও রেবা বলা হয়। অথচ রেবার অর্থ সুদ বলে তাকে আমরা ব্যাংকের লেন-দেন, মহাজনী লেন দেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে বসে আছি। বড় জোর আসলের অতিরিক্ত কোন অর্থ গ্রহন করাকে বুঝে থাকি।
একটু চিন্তা করেও দেখতে চাই না আসলে আল্লাহ রিবা দিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন, আর আমরা কি বুঝে বসে আছি। কোরআনকে নিজের মাতৃভাষায় আয়ত্ত না করায় আজ এ দৈন্যতা। আরেকটু পিছন ফিরে যদি দেখি ——-
যখন রেবার আয়াত নাযিল হয়েছিল তখন কি ব্যাংকিং প্রথা ছিল ? অনেকে বলতে পারেন ব্যাকিং প্রথা না থাকলেও মহাজনী প্রথা ছিল। না, কোরানের আয়াত নাজিল কালে ব্যাকিং বা মহাজনী প্রথা ছিল না।
দ্বিতীয়ত প্রশ্ন আসতে পারে এ আয়াত নাযিলের পর আব্বাস রাঃ কে রিবা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন রাসুল সাঃ হাদীসে বর্নিত আছে। মেনে নিলাম হাদীস বিশুদ্ধ ও সহী। অসুবিধা কোথায়, আব্বাস রাঃ ইসলাম গ্রহন পুর্বে সামাজিক যে প্রভাব ও নৈরাজ্য চলমান ছিল, সেটাকে বন্ধ করার জন্য রাসুল সাঃ তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার মহাজনী কোন লেনদেন বন্ধ করার জন্য না। সে সময়ে আসল টাকা বিনোয়গ করে বর্তমান সময়ের মত মুনাফা অর্জনের হাদীস তো দুরের কথা ইতিহাসও পাওয়া যাবে না।
” যাহার নিকট তাহার প্রতিপালকের উপদেশ আসিয়াছে এবং সে বিরত হইয়াছে, তবে অতীতে যাহা হইয়াছে তাহা তাহারই; এবং তাহার ব্যাপার আল্লাহ্র ইখ্তিয়ারে। আর যাহারা পুনরায় আরম্ভ করিবে তাহারাই দোজখবাসী, সেখানে তাহারা স্থায়ী হইবে। (২ঃ২৭৫)
” আল্লাহ্ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ্ কোন অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।(২ঃ২৭৬)
বড় জোর তিনি মদ মজুদ রাখতেন এবং সংকটে নৈরাজ্য কতার মাধ্যমে স্বাভাবিকের অতিরিক্ত মুল্য নিতেন। এ মর্মে হাদীসে ইংগীত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
” হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সুদের বকেয়া যাহা আছে তাহা ছাড়িয়া দাও যদি তোমরা মু’মিন হও। (২ঃ২৭৮)
যদি তোমরা না ছাড় তবে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও। কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই। ইহাতে তোমরা অত্যাচার করিবে না এবং অত্যাচারিতও হইবে না। (২ঃ২৭৯)
#তার মানে ব্যক্তি,পরিবার,সমাজ বা রাষ্টৃ পর্যায়ে যে কোন প্রকার নৈরাজ্য সৃষ্টি করাই রিবা বা সুদ। আর এটাকেই আল্লাহ মানব কল্যানে নিষিদ্ধ বা হারাম করেছেন।***
তাই অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ
” হে মুমিন গন! তোমরা সুদ খাইওনা ক্রমবর্ধমান হারে এবং আল্লাহকে ভয় কর যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।”
এ আয়াতে রিবার বাংলা নৈরাজ্যতা বসিয়ে দেখেন মর্ম কি দাড়ায়। আর সুদ বসালে মর্ম কি দাড়ায়? সুদ বসালে ভাবার্থ দাড়ায় সুদ খাওয়া যাবে, তবে চক্রবৃদ্ধি হারে না। ইসলামী ব্যাংকের শরীয়া বোর্ড যাকে মুদারাফা নাম দিয়ে শুকরের পেটে খাসির কলিজা বানিয়েছে।
রিবার বাংলা নৈরাজ্য বসালে আয়াতের বঙানুবাদ হয়ঃ
” হে মুমিনগন! তোমরা নৈরাজকতা করিও না ক্রমবর্ধমান ভাবে এবং আল্লাহকে ভয় কর, যাহাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।
ব্যাংক,বীমা,মহাজনী নৈরাজ্যকতা সুদ এর বহির্ভুত এটা অস্বীকার করছি না। তবে সুদ বলতে অর্থ লগ্নী প্রথা এ ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। আল্লাহ রিবা বলতে যাকে বুঝিয়েছেন তা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে হবে।
সবশেষে এ আয়াতের প্রতি মনোনিবেশ করে দেখুন ব্যাংক, বীমা, এনজিও সমুহের প্রতি আল্লাহর কি ইংগীত:
হে মু’মিনগণ! তোমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের জন্য ঋণের কারবার কর তখন উহা লিখিয়া রাখিও; তোমাদের মধ্যে কোন লেখক যেন ন্যায্য ভাবে লিখিয়া দেয়; লেখক লিখিতে অস্বীকার করিবে না। যেমন আল্লাহ্ তাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন, সুতরাং সে যেন লিখে এবং ঋণ গ্রহীতা যেন লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয় এবং তাহার প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় করে, আর উহার কিছু যেন না কমায়; কিন্তু ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল হয় অথবা লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দিতে না পারে তবে যেন তাহার অভিভাবক ন্যায্য ভাবে লেখার বিষয়বস্তু বলিয়া দেয়। সাক্ষীদের মধ্যে যাহাদের উপর তোমরা রাযী তাহাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ সাক্ষী রাখিবে, যদি দুইজন পুরুষ না থাকে তবে একজন পুরুষ ও দুইজন স্ত্রীলোক ; স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুল করিলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করাইয়া দিবে। সাক্ষীগণকে যখন ডাকা হইবে তখন তাহারা যেন অস্বীকার না করে। ইহা ছোট হউক অথবা বড় হউক, মেয়াদসহ লিখিতে তোমরা কোনরূপ বিরক্ত হইও না। আল্লাহ্র নিকট ইহা ন্যায্যতর ও প্রমাণের জন্য দৃঢ়তর এবং তোমাদের মধ্যে সন্দেহ উদ্রেক না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু তোমরা পরস্পর যে ব্যবসায় নগদ আদান-প্রদান কর তাহা তোমরা না লিখিলে কোন দোষ নাই। তোমরা যখন পরস্পরের মধ্যে বেচাকেনা কর তখন সাক্ষী রাখিও, লেখক এবং সাক্ষী যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত কর তবে ইহা তোমাদের জন্য পাপ। তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর এবং তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেন আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে অবহিত।(২ঃ২৮২)