Categories
My text

ওয়াক্তিয়া সালাতঃ

ওয়াক্তিয়া সালাত বনাম কোরানের সালাতঃ

সুরা মরিয়ম, আয়াত ৫৯ এ আল্লাহ বলেন ” অতঃপর তাদের পরে প্রতিনিধি আসলো তারা সালাত বরবাদ করলো এবং লোভলালোসার অনুসরণ করলো, ফলে সত্তর গোমরাহিতে নিক্ষিপ্ত হলো”

এখানে বলা হচ্ছে তাদের পরে প্রতিনিধি আসলো, প্রশ্ন হচ্ছে কাদের পরে প্রতিনিধি আসলো?  ৫৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন ” এরা হচ্ছে তাঁরা যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন নবীদের মাঝে যারা আদমের বংশধর, নুহুর সাথে যাদের নৌকায় আরোহন করা হয়েছিল, ইব্রাহিম এবং ইসমাইলের বংশধর এবং যাদের হেদায়েত করেছি এবং মনোনীত করেছি,”

তাঁরা কি করতো ঐ একই আয়াতে শেষাংশে বলা হচ্ছে ” যখন তাঁদের  কাছে দয়াময়ের আয়াত পাঠ করা হয় তখন তাঁরা ক্রন্দনরত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে”।

৬০ নং আয়াতে বলা হচ্ছে ” তারা ব্যতিত এবং যারা ফিরে এসেছে এবং  ইমান এনেছেন এবং ভালো কাজ করেছে অতঃপর তাদের আমি জান্নাতে দাখিল করবো বিন্দু মাত্র জুলম করা হবে না”।এ আয়াতে বুঝা যায় যারা ফিরে আসবে।  কোথায় ফিরে আসবে – যখন আয়াত পাঠ শুনবে তখন ক্রন্দনরত অবস্থায় সেজদায় লুটিয়ে পড়ায়।

এখানে লক্ষ্যনীয়, আয়াত পাঠ শ্রবণ করা/ পাঠ করা  এবং সেজদায় লুটিয়ে পড়া- এদূটি আনুষ্ঠানিকতা প্রচলিত সালাতে বিদ্যমান। কিন্তু কোন সালাতিকে ক্রন্দন রত দেখা যায় না। ক্রন্দনরত বা উল্লসিত  মানুষ তখনই হয় যখন বিষয়টি বুঝতে পারে এবং অনুধাবন করতে পারে । তাহলে বুঝা যাচ্ছে শ্রুত/ পঠিত আয়াতের অর্থ বুঝা এবং অনুধাবন করা জরুরী। তবে কি এজন্যই বলা হয়েছে ” তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হবে না, যতক্ষণ না যা বলছ তা বুঝতে পারো। এখান থেক একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে আমরা যে প্রচলিত নামাজ পড়ি তা আমরা বুঝি না, অন্যদিকে আল্লাহ যে সালাতের কথা বলছেন তাতে পঠিতব্য বিষয় বুঝতে পারা জরুরী।তাই তো সুরা নেসার ৪৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হইও না, যতক্ষণ না তোমরা যাহা বল তাহা বুঝিতে পার,(৪:৪৩)

আবার ২৯ঃ৪৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন ” তোমার প্রতি যে গ্রন্থ অহী করা হয়েছে তা পাঠ কর এবং সালাত কায়েম করো। নিশ্চয় সালাত  অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।’এই আয়াত যখন পড়ি তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আল্লাহ কি আমাদের এই নামাজ পড়তে বলেছেন? এই প্রচলিত  নামাজ আজীবন পড়লেও এই আয়াতের সত্যতা প্রমাণিত হবে না। তাহলে এই নামাজ কি সালাত?

অন্যদিকে কোরআন আত্মস্থ করা মানুষ জানবে আল্লাহ কি করতে বলেছেন এবং কি কারতে নিষেধ করছেন। সে অনুযায়ী কর্ম করলে খারাপ এবং অশ্লীল কাজ সংঘটিত হবে না। তাহলে কি কোরআন জানা এবং পরিপালন করাই কি সালাত? আবার যখন অন্য  আয়াতে বলে ” সালাত কায়েম করো দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম প্রহরে” তাহলে এই দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম প্রহরে যে সালাত কয়েম করতে বলছে সেটা কি সালাত?  তবে কি দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম প্রহরে কোরআনের বিধি বিধান নিয়ে আলোচনা করা এবং সেগুলি পরিপালন করার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ করাই কি সালাত?

অপর আয়াত ৭০ নং সুরা মাআরিজ ২২, ২৩ বলা হচ্ছে ২২ ” ইল্লাল মুসাল্লিম” অর্থ – সালাতিরা ব্যাতিত। কোন সে সালাতি?” আল্লাজিনা হুম আলা সলাতিহিম দায়েমুন” অর্থ – এবং যারা তাদের সালাতে সর্বক্ষন নিয়োজিত থাকে। কিন্তু সর্বক্ষন তো কোরআন পড়ায় নিয়োজিত থাকা সম্ভব নয়? কিন্তু সকল কর্মে আল্লাহর বিধি বিধান মেনে চলা সম্ভব। আর সেসব বিধি বিধান মেনে চল্লে খারাপ এবং অশ্লীল কাজ থেকে সয়ংক্রিয় ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাহলে কি আল্লাহর দেয়া বিধি বিধান মেনে চলাই সালাত কায়েম করা?

আবার এই আয়াতে বলছে সর্বক্ষণ সালাতে নিয়জিত থাকতে কিন্তু উপরের আয়াতে বলা হচ্ছে – সালাত কায়েম করো দিনের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম প্রহরে। তাহলে কি এই দূই সালাত দুরকম? অথবা সালাত কায়েম করা এবং সালাতে নিয়জিত থাকা ভিন্ন জিনিস?

সুরা ময়েদা (৫/৬) বলা হচ্ছে “হে মুমিনগন যখন তোমরা সালাতে দাড়াবে তখন তোমাদের মুখ, হাত…ধৌত করবে”।এই আয়াতে বলা হচ্ছে ‘যখন’ অর্থাৎ যেক্ষনে বা যে মুহূর্তে বা যে সময় সালাতে দাড়বে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে সার্বক্ষণিক সালাতের বাহিরে ক্ষনে ক্ষনে সালাত  আছে। কখন সেই ক্ষন? উত্তর বলা হয়েছে ১৭/৭৮ আয়াতে, ২৪/৫৮, ৩০/১৭,১৮, ২/২৩৮। এছাড়াও ৪/১০৩ আয়াতে বলা হয়েছে ” নিশ্চয় সালাত মুমিনদের জন্য ওয়াক্তের সাথে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। কোরআনের এসব বর্ণনা থেকে প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, সার্বক্ষণিক সালাত বা দায়েমী সালাতের সাথে ওক্তিয় সালাতও আছে এবং সে সালাতও করা  বধ্যতা মূলক।

২২ নং সুরা হাজ্জ ৭৭ আয়াত ” হে ইমানদারগন রুকু করো, সেজদা করো এবং তোমাদের রবের দাসত্ব করো এবং ভালো কাজ করো হয়তো তোমারা সফলকাম হবে”।

এই আয়াত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় – ইমানদারদের সম্মোধন করা হয়েছে। ইমানদার কারা যারা কোরআন সহ অন্যন্য নির্দেশিত বিষয়ে ইমান এনেছেন। কোরআনে ইমান আনার অর্থ কোরআনে নির্দেশিত বিষয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে মেনে নয়া। আয়াতের শেষ অংশে বলছে ভালো কাজ করো। তো ইমান আনলে এবং ভালো কাজ করলে তারা জান্নাত পাবে এ কথা বহু আয়াতে উল্লেখ আছে। তাহলে এই আয়াতের মাঝখানে রুকু করো, সেজদা করো কেন বলা হয়েছে? তাহলে কি এই আয়াত থেকে এমন সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ভালো কাজের সাথে রুকু সেজদা করার নির্দেশ রয়েছ ইমানদারের উপর।

অনেকে বলেন রুকু সেজদা কেমনে করবেন তা তো কোরআনে নাই, তার মানে এই রুকু সেজদা দিয়ে আমরা যে ওক্তিয় সালাতে রুকু সেজদা করি সেটা বুঝানো হয়েছে কি? উত্তর পাওয়া যায় সুরা হজ্জের ২৬ আয়াতে ” যখন আমি নির্ধারণ করে দিলাম ইব্রাহিমের জন্য ঘরের অবস্থান, যেন আমার সাথে কোন কিছুর শরীক করো না এবং আমার ঘর পবিত্র রাখ পরিভ্রমণ কারীদের জন্য, দাড়ানোদের জন্য এবং রুকু সেজদা করিদের জন্য”। এ আয়াতে দেখা যায় রুকু সেজদা করার নির্দেশ আছে,  এবং তা ইব্রাহিম আঃ এর সময় এবং তার আগে পরের নবীদের থেকে ধারা বাহিক ভাবে চলে আসছে। সেই ভাবে তখন থেকে আজ পর্যন্ত সব ইমানদারের জানা আছে রুকু সেজদা কি বা কেমন। এই জন্য আবার নতুন করে কোরআনে বিশদ প্রদর্শনীর প্রয়োজন পড়ে না। বিশ্বাস করতে হবে কোরআন পূর্বের আসমানী কিতাবের ধারা বাহিকতায় সর্বশেষ নাজিল কৃত আসমানী কিতাব। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, যেমন আমরা ক্লাস ফাইভে যা অধ্যায়ন করি ক্লাস সিক্সে তা হুবহু পড়ি না, তবে ক্লাস ফাইভে এর জ্ঞান নিয়ে ক্লাস সিক্সে উচ্চতর জ্ঞানের বই পড়ি। আসমানী কিতাবের ক্ষেত্রে বিষয়টি তেমনই। কোরআন স্টেজে এসে আমাদের যতটুকু জানানো প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই নাজিল করা হয়েছ।

৩০ সুরা রোম আয়াত ১৭,১৮,- আল্লাহ বলেন ” তোমরা আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও প্রভাতে –

“আসমান ও জমিনের সকল প্রসংশা তার জন্য এবং যখন তোমরা এশা এবং জোহর করো”।

এদুটো আয়াত থেকে সুস্পষ্ট যে দায়েমী সালাতে সর্বক্ষণ আল্লাহর বিধি বিধান মেনে চলার পাশাপাশি সকাল, সন্ধ্যা, জোহর এবং রাত্রে বিশেষ ভাবে আল্লাহর  পবিত্রতা এবং প্রসংশা করার নির্দেশ রয়েছ। এই পবিত্রতা এবং প্রসংশা করার সশরীরে প্রদর্শন হচ্ছে ওক্তিয় সালাত।

২ সুরা বাকারার ১৪৩ এবং ১৪৪ এ কিবলার কথা উল্লেখ আছে। ৪৪ আয়াত আল্লাহ বলেন ” আকাশের দিকে তোমার মুখতোলা আমি দেখেছি, অতঃপর তোমাকে এমন এক কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে যা তুমি সন্তুষ্ট হও, অতএব তুমি সম্মানিত মসজিদের দিকে মুখ ফিরাবে, এবং যেখানেই থাকো সেটির দিকে মুখ ফিরাবে….. “

এ আয়াতে দেখা যায় শুধু মাত্র ওক্তিয় সালাতের সময় মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফেরায়, কিন্তু দায়েমী সালাতে সব সময় মসজিদুল হারামের দিকে মুখ ফিরায়ে থাকা অসম্ভব, আবার কোরআন তেলায়তে তা করা হয় না, তাহলে দায়েমী সালাত এবং কোরআন তেলওয়াতের বাহিরে একটি কার্যক্রম আছে যখন মসজিদুল হারামে দিকে মুখ ফিরানো বাধ্যতা মূলক। তাহলে সে কার্যক্রমই কি ওক্তিয় সালাত?</p>

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

en_USEnglish
Powered by TranslatePress