কখনও কখনও মানুষ সত্য শুনতে চায় না কারণ তারা তাদের বিভ্রান্তিগুলি ধ্বংস করতে চায় না।”
ধর্মীয় বিষয়ে মানুষ জন্মগত ভাবে যে বিষয়টি সত্য জেনে আসছে তা অন্য কেউ মিথ্যা বললে সহজে মেনে নিতে পারে না।
মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে তার জানা গুলো ডাহা মিথ্যা হলেও তার জানা গুলোকেই একমাত্র সত্য মনে করে এবং বাকি সব মিথ্যা মনে করে।
একজন ব্যক্তি যখন হঠাৎ জানতে পারে তার ধর্মীয় বিষয়ে জানা গুলো অনেক কিছুই মিথ্যা তখন সে উত্তেজিত হয়। সে মেনে নিতে পারে না। যুগে যুগে এ সংঘর্ষ সকল নবী রাসুলদের সাথেও হয়ে আসছে।
যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা তোমরা অনুসরণ কর’, তাহারা বলে, ‘না, বরং আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহার অনুসরণ করিব।’ এমন কি, তাহাদের পিতৃ পুরুষগণ যদিও কিছুই বুঝিত না এবং তাহারা সৎপথেও পরিচালিত ছিল না-তৎসত্ত্বেও। (২ঃ১৭০)
দীর্ঘ দিনের পালিত অভ্যাস, বাপদাদার যে ভাবে এবাদত করতে দেখে আসতেছে, অধিকাংশ লোকেকে যে ভাবে ধর্ম কার্যাদি সম্পাদন করতে দেখে আসতেছে তা থেকে সড়ে এসে যত সত্য কথায় উপস্থাপন করা হোক না কেন, মানুষ তা গ্রহন করতে রাজি না, যদিও কোরান থেকে দৃষ্টান্ত দেয়া হয়। আর এমন হবে তা আল্লাহ জানেন বলেই নবী ও তার পরবর্তি অনুসারীদের লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেনঃ
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।(৬ঃ১১৬)
মানুষের মধ্যে কেহ কেহ আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; তাহাদের না আছে জ্ঞান, না আছে পথ নির্দেশ, না আছে কোন দীপ্তিমান কিতাব।(২২ঃ৮)
সে বিতণ্ডা করে ঘাড় বাঁকাইয়া লোকদেরকে আল্লাহ্র পথ হইতে ভ্রষ্ট করিবার জন্য। তাহার জন্য লাঞ্ছনা আছে ইহলোকে এবং কিয়ামত দিবসে আমি তাহাকে আস্বাদ করাইব দহন-যন্ত্রণা। (মুমিনুন ২৩,আয়াত ৯)
তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা তাহাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসিবার পর বিচ্ছিন্ন হইয়াছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করিয়াছে। তাহাদের জন্য মহাশাস্তি রহিয়াছে।(ইমরান ৩,আয়াত ১০৫)
তারপর লোকেরা তাদের মাঝে তাদের দীনকে বহুভাগে বিভক্ত করেবে। প্রত্যেক দলই তাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে উৎফুল্ল থাকবে । (মুমিনিন ২৩,আয়াত ৫৩)
বরং মানুষের মধ্যে কতক অজ্ঞানতা বশত আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে এবং অনুসরণ করে প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তানের(২২ঃ৩)
আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন তোমাদের নিকট বিশদ ভাবে বিবৃত করিতে, তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি তোমাদেরকে অবহিত করিতে এবং তোমাদের ক্ষমা করিতে। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। – (সূরা নম্বরঃ ৪, আয়াত নম্বরঃ ২৬)
তাদের মধ্যে এমন আহম্মক লোক আছে যাদের মিথ্যা আশা ব্যতীত কেতাব সম্বন্ধে কোনোই জ্ঞান নেই, তারা শুধু অবাস্তব ধারণায় বিশ্বাসী। – [২: বাকারা-৭৮]
অধিকাংশ ঈমান এনে এবাদত করছে ঠিকই কিন্তু উল্টো পথে এবং তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ভাবছে আমরা অনেক ভাল আমল করছি। প্রকৃত সব পন্ডুসার।
দীর্ঘদিন যদি কোন মিথ্যে শুনতে শুনতে অভ্যস্থ হয়ে যায় এবং তার বিপরীত কোন সত্য হাজির না হয়, তবে সে মিথ্যেটাও একদিন সত্যে পরিনত হয় এবং তা মানব হৃদয়ে মজবুদ এক ভিত গেড়ে বসে। সে তখন সে ভিত থেকে আর সড়ে আসতে পারে না, যত সত্যই তার কাছে উপস্থাপন করা হোক না কেন। এবং এই বিশ্বাসের ঘরে কেউ আঘাত করলে তা মেনে নিতে পারে না। এমনকি নিজ সন্তানকেও সে ত্যাগ করতে প্রস্তুত। বন্ধু-বান্ধব, পাড়া পড়শি, আত্মীয়- স্বজন তো দুরে থাক। তার মনে দীর্ঘ দিনের লালিত সে বিশ্বাসের বিপরীতে কোন সত্যকেও উপস্থাপন করা হলে সে আৎকে উঠে। প্রতিহত করতে চায়,বিরোধিতায় লিপ্ত হয় এমন কি জীবন দিতেও প্রস্তুত হয়ে যায়। আর সে বিশ্বাস যদি হয় ধর্মীয় – তবে তো আর কথাই নেই। ফলে অনেককে উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পরও দেখা যায় সে তার গোড়ামীর প্রাচীর ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে না। তার মুল কারন সত্যটা তার সামনে শুরুতে কোন দিন উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে পৃথিবী নামক গ্রহের বুকে জাতী একটি হলেও ধর্ম চার হাজার অধিক। কেউ কাউকে তার ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত থেকে এক বিন্দু টলাতে সক্ষম নয়। কারন জন্মগত ভাবে সে এ অনুভুতি গুলো দেখে আসতেছে। বহু পুর্ব হতে বাপ-দাদাদেরকেও এরুপই করতে দেখে এসেছে। সে যাকে,যাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করে যাকে ইত্তেবা করে তার মুখেও এমনি শুনে এসেছে। তাই তার অন্য কোন কথা, মতামত কানে পৌছা মাত্র গা জ্বলে উঠে। শোনা বা তা একটু রিভিউ করে দেখা তো দূরে থাক। এমন মানুষদের নিয়ে আল্লাহ ঘোষনা দেনঃ
মানুষ নিজেই নিজের স্বর্গ বা নরকের সৃষ্টিকর্তা, আর তার নিজের ভুল ছাড়া অন্য কোন শয়তান নেই”।