আহলে কোরান – ইয়াজিদী – দ্রুজ ও হিন্দু ধর্মঃ
মানব সভ্যতার ইতিহাসে ধর্ম এমন একটা হুরুত্তপুর্ণ বিষয় যা মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জরিত।এটি হলো স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে সংযোগ সৃষ্টিকারী পথ নির্দেশনা। ধর্ম মানুষের জন্য বয়ে আনে কল্যান এবং শান্তি। এটি মানুষকে শিক্ষা দেয় তার জীবনের উদ্দেশ্য কি এবং কি তার করনীয়। এবং কিভাবে নিজের জীবনকে সৌন্দর্য মন্ডিত করা যায়। পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষই নির্দিষ্ট কোন না কোন ধর্মের উপর জন্ম গ্রহন করে থাকে। তার পিতামাতার ধর্ম অনুসারে তার ধর্ম নির্ধারিত হয়। যদি পিতামাতা মুসলিম হয় সেও মুসলিম, যদি হিন্দু হয় সেও হিন্দু আর বৌদ্ধ হলে তাকেও বৌদ্ধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়।
কিন্তু সমস্যা হয় যখন সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয় এবং বুঝতে শিখে যে সে যে ধর্ম পালন করছে তা বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলাতে সামর্থ নয়। এবং এটি তার মনমত হচ্ছে না। সে তার ধর্ম নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। সে তার দৃষ্টিকোন থেকে সেরা ধর্মটি গ্রহন করতে চায়। যে ধর্মের ধর্ম বিশ্বাস, আচার অনুষ্ঠান এবং ধর্ম গ্রহন্থ তার কাছে রিজনএবল মনে হয়।
কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্ম গ্রহনে। তার নিজ ধর্মের প্রভাব, সোস্যাল পজিশন , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধি নিষেধ ইত্যাদীর কারনে মানুষ তার নিজ ধর্ম সহজে পরিবর্তন করতে পারে না।পরিবর্তন করলেও তা প্রকাশ্যে আনলে মুখোমুখি হতে হয় সমাজের রক্তচক্ষু, বাধা সৃষ্টি করা হয় তার স্বাভাবিক জীবন যাপনে। অনেক সময় তাকে পোহাতে হয় শাররীক ও মানসিক নির্যাতন। যার ফলে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই তার নিজ ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্ম গ্রহন করে।
আহলে কোরআন একটি মুসলিম ধর্মের নতুন পরিচয়ে আত্মপ্রকাশিত শাখা। এরা কোরানকে একমাত্র জীবন বিধান মনে করে। এর পাশে অন্যকোন গ্রহন্থ মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। কোরানের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের জীবন পরিচালনা করে। আনুষ্ঠানিক কোন আচার অনুষ্ঠান যা কোরানে বর্নিত নেই তা পরিবালন করা শিরক বলে বিবেচনা করে। এরা কিছুটা শিয়া পন্থী মতবাদকে সমর্থন করে। এদের উতপত্তি ইরাক হতে বাংলাদেশ ও ভারতে বিস্তৃতি লাভ করেছে এবং ক্রম বর্ধমান চলছে। আহলে সুন্নত এদেরকে ফেরকা বলে দাবী করে থাকে।
আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই যে বিভিন্ন ধর্মালম্বিরা তাদের নিজ ধর্মের প্রতি অন্য ধর্মের মানুষদেরকে আহ্বান করে। তারা চায় যে অন্য ধর্মের মানুষেরা তাদের নিজ ধর্ম ত্যাগ করে নতুন ধর্ম গ্রহন করুক। যেমন ইসলাম ধমে কাউকে ধর্মান্তরিত করতে পারা অত্যন্ত সোয়াবের কাজ।ঠিক একি ভাবে খৃষ্টান ধর্মেও।
আবার এমন কিছু ধর্ম আছে যা চাইলেও আপনি গ্রহন করতে পারবেন না। অর্থাত আপনার একটা ধর্ম পছন্দ হলো কিন্তু আপনি সেই ধর্মকে নিজের ধর্ম বলতে পারবেন না। আপনাকে ওয়েলকাম করা হবে না সেই ধর্মে।
এমন ধর্মগুলির প্রথমে রয়েছে ইয়াজিদী ধর্ম। আপনি চাইলেও এই ধর্মে প্রবেশ করতে পারবেন না। কারন একজন ইয়াজিদী হতে হলে আপনাকে অবশ্যই একটি ইয়াজিদী পরিবারে জন্ম নিতে হবে। এই ধর্মের নিয়ম কানুন অত্যন্ত কঠিন। কোন ইয়াজিদী যদি তার ধর্মের বাহিরে বিবাহ করে সে তখন আর ইয়াজিদী থাকে না। বর্তমানে এ ধর্মের মানুষ প্রায় বার লাখ। এদের অধিকাংশ বসবাস করে ইরাকে। কিছু বাস করে জার্মান, সিরিয়া ও রাশিয়ায়।
অনুরুপ আরেকটি ধর্ম জুজ ধর্ম। জুজ ধর্মে নতুন করে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। দ্রুজ ধর্ম মুলত শিয়াদের একটি শাখা। দ্রুজগন নিজেদেরকে আহলে তাওহীদ বা এক ঈশ্বরবাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ হিসাবে পরিচয় দেয়। লেবানন, জর্দান, সিরিয়ায় এবং ইসরাঈলে এদের বসবাস। দ্রুজরা নিজেদের স্বর্গীয় ব্যক্তিত্ত বলে মনে করে থাকে। বর্তমানে এদের সংখ্যা প্রায় পনর লাখ।
অনুরুপ আরেকটি ধর্ম হিন্দু ধর্ম। এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কোন ফর্মালিটি নেই। এই ধর্ম ইসলাম বা খৃষ্টান ধর্মের মত মানুষকে ধর্মে তার ধর্মে প্রবেশের আহ্বান জানায় না। প্রাচীন এই ধর্মটিতে বর্ণ প্রথা প্রবল। এদের প্রধান বসবাস ভারত। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
ধর্ম হলো অজ্ঞদের জন্য রচিত, শান্তনার এক আশ্রয় স্থল, যা পরিচালিত হয় অন্যের বর্ণনা শুনে শুনে।
দ্বীন হলো জ্ঞানীদের জন্য রচিত, পুর্নাঙ্গ এক জীবন ব্যবস্থা,যা পরিচালিত হয় নিজে কোরান ও সুন্নাহ বুঝে বুঝে।
ধর্ম আচার-অনুষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পক্ষান্তরে —- দ্বীন নীতি-নৈতিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
ধর্মের লোক সংখ্যা বেশী। পৃথিবীতে বর্তমানে ধর্ম ৪৩০০ টি চালু আছে।দ্বীনের লোক সংখ্যা নগন্য। সমগ্র পৃথিবীতে দ্বীন মাত্র ১টি চালু আছে।
#আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণাংগ করিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করিলাম। (5:3)