মানুষকে বুঝানোর জন্যে আল কোর’আনে অনেক গুলো শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনঃ
বাশার [الْبَشَر ]
নাস [النَّاس ], এবং
ইনসান [ الْإِنْسَان ]
খলিফা –[-خَليفَةً]
উপরের এ চারটি শব্দের অর্থই মানুষ। কিন্তু তিনটি শব্দ দ্বারা একই চরিত্রের মনুষকে বোঝানো হয় না। অর্থৎ, প্রত্যেকটি শব্দ-ই আলাদা আলাদা চরিত্রের মানুষকে নির্দেশ করে। আল কোর’আনের মুজেযা এটাই।
বাশার, নাস এবং ইনসান – এ তিনটি শব্দ মানুষের তিনটি স্তর বিন্যাসকে নির্দেশ করে। মানুষের এই তিনটি স্তর বিন্যাস তাদের ধর্মের কারণে হয়নি। বরং মানুষের স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এই তিনটি স্তর বিন্যাস করা হয়েছে।
ইনসান শব্দটি আরবি ‘নাসিয়ূন‘ উৎস-মূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। যার অর্থ ভুলে যাওয়া বা ভুল হওয়া। সে হিসেবে তার সাদামাটা অর্থ হল, ইনসান এমন সৃষ্টির নাম যে, বারে বারে তার অতীত ভুলে যায়, তার ওয়াদার কথা ভুলে যায়, স্বীয় প্রভুর কথা ভুলে যায়। আরেক ভাবে যার অর্থ সে বারে বারে ভুল করে।
কোর’আনে যত যায়গায় ‘ইনসান’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, তত যায়গায় মানুষের নেতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কথা বর্ণনা করা হয়েছ। কোর’আন থেকে এবার কয়েকটি উদাহরণ দেখুন।
قُتِلَ الۡاِنۡسَانُ مَاۤ اَکۡفَرَہٗ ﴿ؕ۱۷﴾ -আবাসা-১
অর্থঃ মানুষ ধ্বংস হোক! সে কত অকৃতজ্ঞ।
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لِرَبِّہٖ لَکَنُوۡدٌ ۚ﴿۶﴾ সূরা আদিয়াত-৬
অর্থঃ নিশ্চয় মানুষ তার রবের প্রতি বড়ই অকৃতজ্ঞ।
اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَفِیۡ خُسۡرٍ ۙ﴿۲﴾ সূরা আসর-২
অর্থঃ নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মাঝে নিপতিত।
এছাড়াও সূরা ইউনূসের-১২, হুদ-০৯,ইব্রাহিম -৩৪, বণী ইসরাইল-৬৭, ১০০, ঝুমার-০৮ ও ৪৯, যুখরফ-১৫, সূরা কেয়ামাহ-৩৬ নং আয়াতের মাঝে এরকম কিছু নেতিবাচক চারিত্রিক বিশিষ্টয়ের কথাই উল্লেখ আছে। কিন্তু ‘ইনসান’ স্তরের উপরেও মানুষের অনেক স্তর আছে। এখন চলুন, সেগুলো দেখে নেয়া যাক।
মর্যাদাগত ভাবে ‘ইনসানের’ উপরের স্তরে যেই মানুষেরা আছে, তাদেরকে কোর’আনে বলা হয়েছে ‘নাস’ [النَّاس ]। নাস শব্দের অর্থও মানুষ। কিন্তু ‘নাস’ স্তরের মানুষের মাঝে ভালো মানুষও আছে, আবার খারাপ মানুষও আছে।
‘নাস’ নামক ভালো মানুষের উদাহরণ।
১ – মানুষের মধ্য থেকেই আল্লাহ রাসূল মনোনীত করেন।
اللَّهُ يَصْطَفِي مِنَ الْمَلَائِكَةِ رُسُلًا وَمِنَ النَّاسِ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ ﴿الحج: ٧٥﴾
“আল্লাহ ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল মনোনীত করেন। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্ব দ্রষ্টা।” [সূরা ২২/হাজ্জ – ৭৫]
২ – ইসলামের বিজয় দেখলে যারা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করবে, তারা ‘নাস’ স্তরের মানুষ।
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا ﴿النصر: ٢﴾
“এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।” [সূরা ১১০/নাসর – ২]
৩ – আল্লাহর জন্যে নিজের প্রাণ উৎসর্গকারী মানুষেরাও ‘নাস’ স্তরের মানুষ।
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ ﴿البقرة: ٢٠٧﴾
“আর মানুষের মাঝে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভার্থে আত্ম-বিক্রয় করে থাকে। আল্লাহ হলেন তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।” [ সূরা ২/বাকারা – ২০৭]
এখন দেখুন, ‘নাস’ নামক খারাপ মানুষদের উদাহরণ।
১ – ‘নাস’ স্তরের মানুষেরা হবে জাহান্নামের জ্বালানি।
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ ﴿البقرة: ٢٤﴾
“আর যদি তোমরা (কোর’আনের অনুরূপ) কিছু না আনতে পার, অবশ্য তা তোমরা কখনও তা আনতে পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।” [সূরা ২/বাকারা – ২৪]
২ – ‘নাস’ স্তরের মানুষদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।
وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ ﴿النمل: ٧٣﴾
“নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা মানুষের প্রতি অনুগ্রহশীল, কিন্তু তাদের অধিকাংশই অকৃতজ্ঞ।” [সূরা ২৭/নামল – ৭৩]
৩ – ‘নাস’ স্তরের মানুষদের কেউ কেউ খুবই ঝড়গাটে ও তর্কপ্রিয়।
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ ﴿البقرة: ٢٠٤﴾
“মানুষদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে, পৃথিবীর জীবন সম্পর্কে যার কথাবার্তা তোমাকে চমৎকৃত করবে। সে তার অন্তরের বিষয়ে আল্লাহকে সাক্ষী রাখে। প্রকৃতপক্ষে সে কলহপ্রিয়।” [সূরা ২/বাকারা – ২০৪]
৪ – ‘নাস’ স্তরের অধিকাংশ মানুষ-ই অজ্ঞ।
قُلِ اللَّهُ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ ﴿الجاثية: ٢٦﴾
“আপনি বলুন, আল্লাহই তোমাদেরকে জীবন দান করেন, অতঃপর তিনি মৃত্যু দেন, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ বোঝে না। [সূরা ৪৫/জাছিয়া – ২৬]
লক্ষ্য করুন।
কোর’আনে ‘ইনসান’ শব্দটি যতবার ব্যবহার করা হয়েছে, ততবার-ই সকল মানুষকে একসাথে বুঝানো হয়েছে, এবং সেখানে মানুষের ভালো কোনো চারিত্রিক গুনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। বলা হয়েছে – মানুষেরা অকৃতজ্ঞ, মানুষেরা অজ্ঞ, মানুষেরা তর্ক প্রিয়, ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু কোর’আনে যখন ‘নাস’ শব্দ দিয়ে মানুষকে বুঝানো হয়েছে, তখন কিছু কিছু মানুষকে ভালো বলা হয়েছে, এবং অধিকাংশ মানুষকে-ই খারাপ বলা হয়েছে। যেমন, উপরের আয়াতগুলোতে বলা হচ্ছে – অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞ, অধিকাংশ মানুষ অজ্ঞ, অধিকাংশ মানুষ তর্কপ্রিয়।
সুতরাং, এ থেকে বোঝা যায় যে, মানুষের স্তর বিন্যাসে ইনসানের উপরের স্তরে রয়েছে ‘নাস’ নামক স্তর।
তারপর আসুন, ‘নাস’-এর উপরের স্তরে যেসব মানুষদের রাখা হয়েছে, কোর’আনে তাদেরকে বলা হয়েছে ‘বাশার’। ‘বাশার’ শব্দের অর্থও মানুষ। কিন্তু এরা ‘নাস’ স্তরের মানুষদের মত না। কোর’আনে ‘বাশার’ শব্দটি সাধারণত উন্নত চরিত্রের মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।
‘নাস’ স্তরের অধিকাংশ মানুষ-ই খারাপ, কিন্তু ‘বাশার’ স্তরের অধিকাংশ মানুষ-ই ভালো। ‘বাশার’ স্তরের মানুষেরা হোক মুসলিম বা অমুসলিম, তাদের চরিত্র সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক উন্নত হয়ে থাকে।
কোর’আন থেকে এবার কয়েকটি উদাহরণ দেখুন।
১ – যে মানুষকে সেজদা করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা ইবলিসকে আদেশ দিয়েছেন, সে ছিল ‘বাশার’ স্তরের মানুষ।
قَالَ لَمْ أَكُن لِّأَسْجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقْتَهُ مِن صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ ﴿الحجر: ٣٣﴾
“(ইবলিস) বলল: আমি এমন নই যে, একজন মানুষকে সেজদা করব, যাকে আপনি পচা কর্দম থেকে তৈরি ঠনঠনে বিশুষ্ক মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। [সূরা ১৫/হিজর – ৩৩]
২ – নবী ও রাসূলগণ ছিলেন ‘বাশার’ স্তরের মানুষ।
قَالَتْ لَهُمْ رُسُلُهُمْ إِن نَّحْنُ إِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَمُنُّ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَمَا كَانَ لَنَا أَن نَّأْتِيَكُم بِسُلْطَانٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ ﴿ابراهيم: ١١﴾
“তাদের রাসূলগণ তাদেরকে বললেন: আমারাও তোমাদের মত মানুষ, কিন্তু আল্লাহ বান্দাদের মধ্য থেকে যার উপরে ইচ্ছা অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর নির্দেশ ব্যতীত তোমাদের কাছে প্রমাণ নিয়ে আসা আমাদের কাজ নয়; আল্লাহর উপর ইমানদারদের ভরসা করা উচিত।” [সূরা ১৪/ইব্রাহিম – ১১]
৩ – ঈসা (আ)-এর জন্মের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে রুহ এসে ‘বাশার’ বা মানব আকৃতি ধারণ করে।
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا ﴿مريم: ١٧﴾
“অতঃপর (লোকজন) থেকে নিজেকে আড়াল করার জন্যে (মারিয়াম) পর্দা করলো। অতঃপর আমি তার কাছে আমার রূহ প্রেরণ করলাম, সে তার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করল।” [সূরা ১৯/মারিয়াম – ১৭]
৪ – আল্লাহ তায়ালা ‘বাশার’ স্তরের মানুষের কাছে তাঁর বার্তা পাঠান।
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَاءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِيَ بِإِذْنِهِ مَا يَشَاءُ إِنَّهُ عَلِيٌّ حَكِيمٌ ﴿الشورى: ٥١﴾
“মানুষের এমন মর্যাদা নাই যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। কিন্তু ওহীর মাধ্যমে, অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে, অথবা তিনি কোন দূত প্রেরণ করবেন, অতঃপর আল্লাহ যা চান, সে তা তাঁর অনুমতিক্রমে পৌঁছে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বোচ্চ প্রজ্ঞাময়।” [সূরা ৪২/শূরা – ৫১]
দেখুন, ‘বাশার’ স্তরের মানুষেরা ‘নাস’ ও ‘ইনসান’ স্তরের মানুষ থেকে অনেক উন্নত। সকল নবী ও রাসূল ছিলেন ‘বাশার’। ‘বাশার’ স্তরের মানুষের নিকট আল্লাহ ওহী পাঠান। কোর’আনে ‘বাশার’ শব্দটি ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে।
‘বাশার’ শব্দমূল থেকে আসা আরেকটি শব্দ কোর’আনে প্রচুর ব্যবহার করা হয়েছে। তা হলো ‘বুশরা’। এর অর্থ সুসংবাদ।
এখানে একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন –
কেউ ‘বাশার’ হয়ে গেলেই তিনি পূর্ণ সফল হয়ে যান না। তাকে মুমিন হতে হয়, মুসলিম হতে হয়, এবং তারও উপরে আরো অনেকগুলো উন্নত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এ জন্যে কোর’আনে ‘বাশার’ স্তরের মানুষদের বলা হচ্ছে –
نَذِيرًا لِّلْبَشَرِ ﴿٣٦﴾ لِمَن شَاءَ مِنكُمْ أَن يَتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ ﴿المدثر: ٣٧﴾
“মানুষের জন্যে সতর্ককারী। তোমাদের মধ্যে যে সামনে অগ্রসর হতে চায়, এবং যে পিছিয়ে পড়তে চায়, তার জন্যে (সতর্ক)।” [সূরা ৭৪/মুদ্দাছছির – ৩৬, ৩৭]
দেখুন,
‘বাশার’ শব্দ দিয়ে কোর’আনে নিউট্রাল মানুষদের বোঝানো হয়। অর্থাৎ, যারা ভালো ও মন্দের ঠিক মাঝামাঝিতে অবস্থান করে। ‘বাশার’ স্তরের মানুষেরা ‘ইনসান’ ও ‘নাস’ স্তরের মানুষের মত খারাপ না, আবার তারা পূর্ণ সফলও না। তারা ইচ্ছা করলে ইনসানের স্তরে নেমে যেতে পারে, আবার তারা ইচ্ছা করলে অনেক উন্নত স্তরে পৌঁছে যেতে পারে।
এখনে একটি প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যখন সৃষ্টি করেছিলেন, তখন আমরা কোন স্তরের মানুষ ছিলাম? বাশার, নাস, নাকি ইনসান?
উত্তরটা কোর’আনে আছে। আল্লাহ বলছেন –
إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِّن طِينٍ ﴿ص: ٧١﴾
“স্মরণ করুন, যখন আপনার প্রতিপালক ফেরেশতাগণকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব।” [সূরা ৩৮/সাদ – ৭১]
এখানে যে ধরণের মানুষের সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে, তারা ছিলেন ‘বাশার’ স্তরের মানুষ। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ‘ইনসান’ বা ‘নাস’ বানিয়ে সৃষ্টি করেননি। বরং তাকে ‘বাশার’ স্তরের ভালো মানুষ হিসাবে-ই সৃষ্ট করেছেন। কিন্তু মানুষ তার চারিত্রিক কারণে-ই নাস এবং ইনসান হয়ে যায়।
এরপর আসুন,
ইনসান, নাস ও বাশার – এ তিনটি স্তরের পাশাপাশি মানুষের আরেকটি স্তর আছে, যার নাম খালিফা। পৃথিবীর অন্য সকল প্রাণী ও বস্তু থেকে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে অধিক সম্মানিত করেছেন। কিন্তু শর্ত হলো, মানুষকে চরিত্রগতভাবে সুন্দর হতে হবে।
ইন্নি জায়েলুন খালিফাতে ফিল আরদ।
وَإِذ قالَ رَبُّكَ لِلمَلٰئِكَةِ إِنّى جاعِلٌ فِى الأَرضِ خَليفَةً ۖ
আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতা দিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি।(২ঃ৩০)
ফিরেস্তাগন অবাক হয়ে গেলেন, কারন তারা খলিফার মর্যদা জানতেন। যে মুল মালিকের পুর্ন ক্ষমতা প্রাপ্ত। যার ভাল মন্দ করার, শাসন বিচার,কর্তৃত্ব করার এখতিয়ার থাকবে।
এর পর আল্লাহ বলেন মানুষের ভিতর হতে ছেকে তোমাদেরকে নির্বাচন করেছি তোমরা যেন আমার আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত রাখ জমিনে।
كُنتُم خَيرَ أُمَّةٍ أُخرِجَت لِلنّاسِ تَأمُرونَ بِالمَعروفِ وَتَنهَونَ عَنِ المُنكَرِ وَتُؤمِنونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَو ءامَنَ أَهلُ الكِتٰبِ لَكانَ خَيرًا لَهُم ۚ مِنهُمُ المُؤمِنونَ وَأَكثَرُهُمُ الفٰسِقونَ
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ( ইমরানঃ১১০)
তোমাদের মানুষের মধ্য হতে উত্তম হিসেবে নির্বাচিত করেছি এ জন্য যে, তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজের নিষেধ করবে।
এখানে ভাল কাজে উপদেশ করা কথা বলেন নাই বা মন্দ কাজে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করতে বলেন নাই।
আদেশ এবং নিষেধ এমন শব্দ যা না মানলে শাস্তুির ব্যবস্থা থাকবে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে এ শাস্তি প্রদানের অনুমোদন খলিফাকে, উখরিজাতিননাসকে দেয়া হলো।
সুতরাং,
ইনসান, নাস, বাশার ও খলিফা – আমরা যেখানেই বা যে স্তরেই থাকি না কেন, আমাদেরকে আরো উপরের স্তরে যেতে হবে। এক-এক করে, মুমিন, মুসলিম এবং তারও উপরের স্তরগুলোতে পৌঁছাতে হবে।
আমরা ইচ্ছা করলে ইনসান, এবং অধিকাংশ ‘নাস’-এর মত নিম্নস্তরে চলে যেতে পারি, আবার ইচ্ছা করলেই আমাদের ‘বাশার’ স্তর থেকে অনেক উপরের স্তরে চলে যেতে পারি। কারন আমাদের খলিফা আখ্যায়িত করে সে ক্ষমতা আমাদের নিকট ন্যাস্ত করেছেন। প্রয়োজন – আমাদের ইচ্ছার।
এ বিষয় গুলি না বুঝার জন্য তকদীর নিয়ে অনেক বিভ্রাটে পড়তে হয়।