নবীকে আল্লাহ বললেনঃ ‘তুমি অন্তরে যা গোপন করছিলে আল্লাহ তা প্রকাশ করে দিলেন (৩৩ঃ৩৭)” নবী কি এমন মনে মনে গোপন করছিলেন যা আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন ?
তৎকালীন আরবের লোকেরা পালিত পুত্রদের কে আপন পুত্রদের মতো মনে করতো এবং তাদের নামে পালিত পুত্রদের কে ডাকা হতো এমকি তারা তালাক প্রাপ্ত পালিত পুত্র বধু কে বিয়ে করতো না। আল্লাহ্ তাদের এই কুসংস্কার গুলি উল্লেখিত আয়াত গুলি নাজিলের মাধ্যমে বাতিল করে দিলেন।
এবার আসুন মূল প্রসঙ্গে যাই। যায়েদ রাঃ ছিল রাসূল সাঃ এর পালিত পুত্র। রাসূল সাঃ নিজে আগ্রহী হয়ে তাঁর আপন ফুপাত বোন জয়নব রাঃ কে জায়েদের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু তাদের বৈবাহিক জীবন সুখকর ছিলনা। ফলে আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত নিলেন যায়েদ রাঃ সাথে জয়নব রাঃ বিবাহ বিচ্ছেদে ঘটিয়ে জয়নব রাঃ কে রাসূল সাঃ এর সাথে বিয়ে দিয়ে আরবের কুসংস্কারটি বাতিল করা, কারন এর পর আর নবী আসবেনা তাই আল্লাহ্ নবীর মাধ্যমে এই কুসংস্কারটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাসূল সাঃ কে আল্লাহ্ গোপনে জয়নব রাঃ সাথে তাঁর বিয়ের কথা যানালেন। কিন্তু প্রচলিত সামাজিকতার কারনে বিষয়টি তাঁর কাছে বিব্রতকর মনে হলো। ফলে যায়েদ রাঃ যখন রাসূল সাঃ এর কাছে এসে জয়নব রাঃ কে তালাক দেওয়ার কথা যানাল তখন রাসূল সাঃ প্রচলিত সামাজিকতার বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বল্লেন “তোমার স্ত্রীকে নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর’'(৩৩ঃ৩৭) কারন যদি যায়েদ রাঃ জয়নব কে তালাক না দেয় তবে তাকে আর জয়নব রাঃ কে বিয়ে করতে হবে না, ফলে সমাজের লোকদের কটু কথা শুনতে হবে না। কিন্তু রাসূল সাঃ এর এমন আচরনে জবাবে বল্লেন “হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না(৩৩ঃ১)। আল্লাহ আরো যানিয়ে দিলেন যে সকল নবীরা তার বিধান পালনে অঙ্গীকারা বদ্ধ ফলে আল্লাহ্ রাসূল সাঃ কে সেই অঙ্গীকারা বদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন “আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম,মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। (৩৩:৭)
আল্লাহ্ যখন দেখল রাসূল সাঃ তাঁর গোপন নির্দেশটি পাশকাটিয়ে যায়েদ রাঃ কে বুঝাচ্ছে তখন আল্লাহ্ গোপন নির্দেশটি কিতাবী ওহীর মাধ্যমে প্রকাশ করে দিলেন।—-
তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; অতঃপর যায়েদ যখন তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহসম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে।(আহযাব ৩৩:৩৭)
ফুফাতো বোন জয়নবের প্রতি আসক্তি ছিল কি নবীর? না কি পুত্র বধুর রুপে প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিল? হাদীস বেত্তারা এমনি বুঝাতে চেয়েছে অন্তরে গোপন রাখার বিষয়কে। এতে করে অনুমানের ভিত্তিতে রাসুলের চরিত্রে তারা কালিমা লেপন করেছে বরং।
প্রকৃত ঘটনা রাসুল তাঁর সুন্দরী ফুফাত বোন কে পালিত পুত্রের সাথে নিজে বিয়ে দেন। এই বিয়ে যখন কোন ক্রমেই টিকতেছিল না তখন রাসুল হতবিহ্বল হয়ে পড়লেন এ ভেবে যে লোকে কি বলবে? আমি রাসুল হয়ে যে বিয়ের প্রস্তাব কারী সে বিয়ে যদি ভেঙে যায় আমি কি জবাব দিব সমাজের কাছে? সমাজের লোকেরাই বা কি মনে করবে তবে কি আমি আল্লাহর সত্য নবী নই? এমন প্রশ্ন গুলোই তিনি অন্তরে গোপন করতেছিলেন।