কোরানে ৮২ বার সালাতে কথা বলে গুরুত্ত আরোপ করা হয়েছে।কিন্তু প্রচলিত আনুষ্ঠানিক সালাতকে নয়। বরং প্রচলিত আনুষ্ঠানিক নামাজ কোরানে বর্ণিত সালাতকে নিন্মোক্ত ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যাচাই করে একটু দেখে নেই কি সেগুলি।
১. যদি প্রচলিত হাদিস ভিত্তিক নামাজ কুরআনের সালাতের মত হতো, তবে কেন কুরআন এমন নামাজের সমালোচনা করে, যেখানে মনোযোগহীনতা, Robotic আচরণ এবং লোক দেখানোর প্রবণতা রয়েছে? কুরআন তো সালাতের সময় সজ্ঞানে থাকা এবং বাণী বুঝে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেয় (৪:৪৩, ৪:১৪২, ৫:৯১, ৮:৩৫)।
২.সালাতের উদ্দেশ্য আল্লাহর স্মরণ এবং বাস্তব জীবনে তা কার্যকর করা , তাহলে কেন প্রচলিত নামাজে কুরআনের বাইরে থাকা বিভিন্ন দোয়া ও প্রশংসা উচ্চারণ করতে হয়?
৩. জোহর, আসর, মাগরিব ইত্যাদি নামাজের নাম কুরআনে নেই কেন?
৪. বিতর নামাজকে বাধ্যতামূলক বলা হয়, অথচ কুরআনে তার কোন উল্লেখ নেই কেন?
৫. নামাযের পুর্বে প্রচলিত আযানের ধরণ কুরআনে নেই?
৬. ওজুর সময় তিনবার করে অঙ্গ ধোয়ার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
৭. নামাজের সময় পুরুষ ও নারীদের মাথা ঢাকার বাধ্যবাধকতা কুরআনে নেই?
৮. নামাজের জন্য জায়নামাজ ব্যবহারের নির্দেশনা কুরআনে নেই?
৯. কাবা ঘরের দিকে সিজদা করার কথা কুরআনে নেই?
১০. “আল্লাহু আকবার” শব্দটি, যা বারবার উচ্চারণ করা হয়, কুরআনে তা নেই? (কুরআনে আল্লাহকে বলা হয়েছে আল-কাবির, আকবার নয়)।
১১. প্রচলিত নামাজে যে সানা পড়া হয় কুরআনে তার কোন নির্দেশনা নেই?
১২. প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
১৩. সূরা ফাতিহা পড়ার পর “আমিন” বলার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
১৪. জোহর এবং আসরের নামাজ নীরবে পড়া হয়, যা ১৭:১১০ আয়াতের পরিপন্থী?
১৫.”সুবহানা রাব্বি আল-আ’লা” এবং “সুবহানা রাব্বি আল-আযিম” বলার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
১৬. “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলার নির্দেশনাও কুরআনে নেই?
১৭. রাকাত, রাকাতের সংখ্যা এবং নামাজের অবস্থানের ক্রম কুরআনে উল্লেখ নেই?
১৮. প্রচলিত নামাজের শেষে আত্তাহিয়াতু পড়ার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
১৯. তাশাহহুদ পড়ার সময় তর্জনী উঠানোর নির্দেশনা কুরআনে নেই এটি বানানো।
২০. নামাজে ইবরাহিম, মুহাম্মদ এবং তাঁদের পরিবারকে দুরুদ পাঠানোর নির্দেশনা কুরআনে নেই?
২১.প্রচলিত নামাজে যে দোয়া মাসুরা পড়া হয় কুরআনে তার কোন নির্দেশনা নেই?
২২. বিতরের নামাজে যে দোয়া কুনুত পড়া হয় কুরআনে তার কোন নির্দেশ নেই?
২৩.নামাজ শেষে ডান ও বাম দিকে সালাম দেওয়ার নির্দেশনা কুরআনে নেই?
২৪. যদি আনুষ্ঠানিক নামাজ কুরআনের সালাতের মতই হতো, তাহলে কেন কুরআন কাজা নামাজের ধারণা প্রত্যাখ্যান করে? বরং কুরআন বলে, missed সালাত শুধুমাত্র সংশোধনী মূলক কাজের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা যায়, নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নয় (১৯:৫৯-৬০)।
তবে এই আনুষ্ঠানিক সালাতের ফরমেট যেই প্রচলন করুক না কেন তা উড়িয়ে দিচ্ছি না, এভাবে সালাত আদায়ে একটি দীর্ঘদিনের এবং বাপ দাদাদের নিকট হতে দেখে আসছি বলে একটি প্রশান্তিও মিলে নিজের মধ্যে।
কিন্তু কোরানে বর্নিত রবের সন্তুষ্টির জন্য সালাত এটি নয় তা কোরান থেকে প্রমান হয়। তাই আমি নিজে প্রচলিত প্রথার সরাসরি বিরোধিতা না করে পাশাপাশি রবের বর্নিত সালাতকে নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করার আহ্বান জানাই।মুমিনের সালাত সর্বক্ষন।
যাহারা তাহাদের সালাতে সর্বক্ষণ প্রতিষ্ঠিত, (৭০ঃ২৩) الَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآٮِٕمُوْنَ
এত্র আয়াতে সলাত সর্বক্ষন হলে আপনি তাকে পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কোন সুযোগ আছে কি?
সালাত কোরান পাঠের একটি অনুষ্ঠান। তাই সে সালাতে যে বিষয় পাঠ করবে বাস্তব জীবনে সে অনুযায়ী চলতে হবে। এটিই রবের নির্দেশিত সালাত। তাই আল্লাহ বলেনঃ
হে মু’মিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা সালাতের নিকটবর্তী হইও না, যতক্ষণ না তোমরা যাহা বল তাহা বুঝিতে পার, (৪:৪৩)
এবার আল্লাহ তিরস্কার করে এমন সব সালাত আদায়কাীদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ
কাবাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর। (৭:৩৫)
এদের পর এমন নালায়েক লোকেরা এদের স্থলাভিষিক্ত হলো যারা নামায নষ্ট করলো এবং প্রবৃত্তির কামনার দাসত্ব করলো। তাই শীঘ্রই তারা গোমরাহীর পরিণামের মুখোমুখি হবে। (১৯:৫৯)
কুরআনে সালাত শব্দটির প্রয়োগ এবং আরবি ভাষারীতি অনুসারে সালাত শব্দটির যেসব অর্থ পাওয়া যায় তা হলো:
(১) নিবিড় অনুসরণ – To Follow Closely
(২) সংযোগ – Connection
(৩) যোগাযোগ –
৪) প্রার্থণা /দোয়া – Prayer