ইসলামে রাজনীতির দর্শন হুকমত
এজিদ ও হোসেনের রাজনৈতিক দর্শন আব্দুল হামীদ ভাসানী যথাযথ অনুধাবন করেছিলেন। তাই ৬০ এর দশকে ভাসানী তদানীন্তন মুসলীম লীগ হতে সড়ে এসে পুর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। আর তদানীন্তন এই মুসলীম লীগ আজ বাংলাদেশ জামায়েতী ইসলাম নামে প্রতিষ্ঠিত।
#জামায়াতে ইসলামীদের ইসলামের নামে সাম্রাজ্যবাদের সেবা করার রাজনীতির মূলে প্রথম আঘাত করেছিলেন প্রথম মাওলানা ভাসানী। এটা অনস্বীকার্য অন্য সেকুলার দল গুলি হতে জামায়েতের দলের আদর্শ উত্তম। কিন্ত যখন ইসলামিক দল বলে দাবী করে তখনই প্রশ্ন আসে।
ভাসানীর রাজনৈতিক দর্শন ছিল : সকল সমস্যার সমাধান হইবে মানবজাতি যদি রবুবিয়তে অর্থাৎ স্রষ্টার পালনবাদের আদর্শে হুকমত কায়েম করতে হবে।
রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থাকে হুকমত বলে তার দর্শন বুঝাতো।
যেখানে শিক্ষা-দীক্ষা, খাওয়া-পরা ইত্যাদির প্রশ্নে স্রষ্টার নিকট যেমন হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ইত্যাদি পরিচয়ের কোনো বালাই নাই, মানুষের দৈহিক ও আত্মিক চাহিদার ক্ষেত্রে যেমন ভেদাভেদ নাই, ঠিক তেমনি হুকমতে রাব্বানিয়ায় সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে সকল নাগরিককে সমান সুযোগ ও অধিকার দেওয়া হইবে।
কেউ কেউ প্রশ্ন করিতে পারেন হুকমতে রাব্বানিয়া কিভাবে অমুসলমানদের আপন করিয়া লইবে? যাঁহারা রবুবিয়তের মর্ম বোঝেন না তাঁদের এই প্রশ্ন করা খুবই স্বাভাবিক। রবুবিয়ত কোনো ধর্মের কথা নহে। উহা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি স্বতঃসিদ্ধ বিধান। তাই হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকল মানুষের জন্য হুকমতে রাব্বানিয়া অর্থাৎ যে দেশে রবুবিয়তের আদর্শ রাষ্ট্রীয় ভিত্তিতে কায়েম হইয়াছে, কল্যাণকর বৈ কিছু নয়। মুসলমানের জন্য যিনি রব বা পালনকর্তা, বিবর্তনকারী প্রভু, হিন্দুদের জন্য তিনি একই বিধানে আলো, হাওয়া, ফল, পানি, বস্ত্র, খাদ্য সবই জোগাইতেছেন, একমাত্র রবুবিয়তের আদর্শই মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিতে পারে।’
উপমহাদেশের প্রতিটি প্রগতিশীল জাতীয়তা বাদী আন্দোলনে মওলানা ভাসানী একজন প্রধান নেতার ভূমিকা পালন করেছেন।
আসাম প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানি স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রেখেছেন উল্লেখ যোগ্য অবদান। প্রতিষ্ঠা করেন পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’।
যে দুটি দলের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা, সেই আওয়ামী লীগ বা ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সম্পূর্ণ আধুনিক ও সেক্যুলার সংগঠন ছিল। পরবর্তিতে শেখ মুজিবর ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে রুপ দেয়।
বাংলাদেশের বাম রাজনীতির তিনি ছিলেন একজন অভিভাবক। কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের তিনি ছিলেন পুরোধা। তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারা আজও জাতিকে পথ দেখাতে পারে।