কোটা আন্দোলন
এক যুগ ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার স্বৈর সরকারের হাতে দেশ -জনতা যখন মুক্তির আশায় আর্তনাত করছিল, চারিদিক থেকে সকল পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, ঠিক সে সময় মুক্তির আহ্বানে কিছু তরুন কোটা আন্দোলনের ডাক দেয়। এ আন্দোলনের প্রতি স্বৈরশাসকের দমন পিড়ন প্রয়োগে আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলে। আন্দোলন ধাপে ধাপে তার মোর পরিবর্তন করে এক দফায় রুপ নেয়। আন্দোলন শুধু সমন্বয়েকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ছাত্র জনতার আন্দোলনে আকার ধারন করে। জনতার বাধ ভাঙ্গা তোপের মুখে প্রশাসন সহ সসশ্ত্র শক্তি আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। স্বৈর সরকার প্রধান পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচারের পতন হয়। স্বমন্বয়কদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
শুরু হয় সকল স্তরে সংস্কার প্রক্রিয়া। এ সুযোগে অভুক্তের মত বিভীন্ন দাবী পুরনের আন্দোলন আসতে শুরু করে। এমনি এক পর্যায়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের জন্য দাবী আসতে লাগলো।
এবার প্রশ্ন বিদ্ধ হতে শুরু করে কোটা আন্দোন থেকে বৈষম্য আন্দোলন তা থেকে একদফা এরপর সকল প্রশাসন থেকে সর্বস্তরে রদবদল, সংস্কার। কিন্তু যখনি জাতীয় সঙ্গীতও পরিবর্তনের প্রশ্ন এলো তখন বুঝতে আর বাকি রইল না কোমল মতী ছাত্র আন্দোলনের পিছনে সুদূর প্রসারী মাস্টার মাইন্ড কোন শক্তি কাজ করে যাচ্ছে। এবার কিছু জনতা নড়েচড়ে ভাবতে শুরু করলো।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশে যতো মানুষ মারা গিয়েছে এবং যতো আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার সবকিছুর জন্য দায়ী ছয় সমন্বয়ক। তারা পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে কোটা আন্দোলনের অজুহাতে সরকার পতন করতে চেয়েছে। তাদের আন্দোলনকে উত্তপ্ত করতে এবং দেশ বিদেশের জনতাকে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাশের প্রয়োজন ছিলো। অন্যদিকে সরকারের প্রয়োজন ছিলো আন্দোলন থামিয়ে দেশ ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা। তাই সরকার প্রথমে ঢিলেমি করলেও অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলন কারীদের দাবি মেনে নেয়। সরকারকে দাবি মেনে নিতে দেখে সমন্বয়করা সন্তুষ্টি প্রকাশ না করে উল্টো আরো দাবি বাড়াতে থাকে। আন্দোলন থেকে যেনো কিছুতেই সাধারণ মানুষের সমর্থন কমে না যায় এবং তাদের হাত থেকে যেনো আন্দোলন হাতছাড়া না হয়ে যায় সেজন্য “আমার ভাই মরলো কেনো আর আমার ভাইদের জেল থেকে মুক্ত করতে হবে” বলে নতুন করে আন্দোলনের বেগ বাড়িয়ে দেয়। সমন্বয়করা জানতো পুলিশ যাদের ধরেছে সরকার তাদের এমনি এমনি ছাড়বেনা। কারণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা যারা ভেঙেছে তারা কারা এবং তারা আসলেই ছাত্র কিনা প্রসাশন অন্তত এইটুকু তো যাচাই করবেই। কিন্তু সেসব যাচাই বাছাই করতে গেলে “কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বেড়িয়ে যাওয়ার” মতো অবস্থা তৈরী হবে। তখন সমন্বয়করা সাধারণ ছাত্রদের আবেগকে পুঁজি করে “আমার ভাই মরলো কেনো জবাব চাই” বলে আওয়াজ তুললো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার অবশ্যই কঠোর হবে এটা সমন্বয়করা জানতো। তখন তারা সাধারণ ছাত্রদের পুলিশের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। কারণ যতো লাশ পড়বে সরকার ততো কোণঠাসা হবে। যার হাতে বন্দুক থাকবে সে তো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি করবেই। কিন্তু যাদের হাতে বন্দুক নেই তারা তো কৌশল অবলম্বন করবে এবং নিজেদের দাবি আদায় করতে সুযোগ খুঁজবে। কিন্তু ছাত্ররা সেটা করেনি। সরকার তাদেরকে সেই সুযোগ দিলেও তারা সেটা প্রত্যাখ্যান করে। কারণ তাদের মূল উদ্দেশ্য দাবি পূরণ বা বাকি ছাত্রদের জীবনের নিরাপত্তা নয়। তাদের আসল চাওয়া হলো ছাত্রদের লাশ এবং তার উপর ভিত্তি করে সরকার পতন।