নিজ জাতির উদ্ধত আচরণে বিরক্ত হয়ে তাদেরকে ত্যাগ করে চলে যাওয়ার কারণে হযরত ইউনুস (আ.) বিপদে পড়ে যান।
যখন পালিয়ে তিনি বোঝাই নৌকায় গিয়ে পৌঁছেছিলেন। অতঃপর লটারী করালে (তাঁর নাম) দোষী সাব্যস্ত হলেন। অতঃপর একটি মাছ তাঁকে গিলে ফেলল, তখন তিনি অপরাধী গণ্য হয়েছিলেন।[ সূরা সাফফাতঃ১৪০-১৪২]
হযরত ইউনুস (আ.) বহুদিন ধরে তাঁর জাতিকে মূর্তিপূজা, শিরক ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর আহ্বান বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যাখ্যান করে এবং হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে তাঁর নবীকে জানিয়ে দেন, তাঁর জাতির প্রতি শিগগিরই আজাব আসছে। একথা শোনার পর হযরত ইউনুস নিজের একজন মুমিন সঙ্গী নিয়ে শহর ত্যাগ করে সাগরের দিকে চলে যান। সেখানে গিয়ে তারা যাত্রী ও মালামাল বোঝাই একটি জাহাজে ওঠেন। সাগরের মাঝখানে একটি বিশাল তিমি মুখ হা করে জাহাজের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় জাহাজের লোকজন বুঝতে পারে, তিমির মুখে যেকোনো একজন যাত্রীকে দিয়ে দিলেই সে এখান থেকে চলে যাবে; তা না হলে সব যাত্রীর জীবন হুমকির মুখে পড়বে। তারা লটারির মাধ্যমে একজনকে বাছাই করার সিদ্ধান্ত নেয়। লটারিতে হযরত ইউনুসের নাম ওঠে এবং তাকে তিমির মুখে ছেড়ে দেয়া হয়।
আয়াতের মর্মার্থ থেকে অনুমেয় , ওই তিমি মাছ টিকে আল্লাহ তায়ালাই পাঠিয়েছিলেন হযরত ইউনুসকে গিলে ফেলার জন্য। এ কারণে আল্লাহর ইচ্ছায়ই লটারিতে তাঁর নাম ওঠে। কিন্তু যে আল্লাহ এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেন তিনিই মাছের পেটে নিজের নবীকে জীবিত অবস্থায় রেখে দেন। হযরত ইউনুস যখন দেখেন মাছটি তাকে অক্ষত অবস্থায় গিলে ফেলেছে এবং তাঁর শরীরের কোনো ক্ষতি হয়নি তখন তিনি নিজের দোষ উপলব্ধি করতে ও ভুল বুঝতে পারেন।
তিনি নিজ জাতিকে দাওয়াত দেয়ার দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করার কারণে আল্লাহর কাছে তওবা- করতে থাকেন এবং কায় মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। হযরত ইউনুস নিজের দোষ স্বীকার করে এভাবে কান্নকাটি করার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ক্ষমা করে দেন। তিমি মাছটি সাগর তীরে এসে মুখ খুলে হযরত ইউনুসকে নিজের পেট থেকে বের করে দেয়। আল্লাহ বলছেন, নবী ইউনুস যদি আল্লাহর তসবীহ পাঠ না করতেন তাহলে তাকে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হতো।
অতপর ১৪৩-১৪৬ আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
“তখন যদি তিনি আল্লাহর তসবীহ পাঠ না করতেন তবে তাঁকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত।অতঃপর আমি তাঁকে এক বিস্তীর্ণ- বিজন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম,তখন তিনি ছিলেন রুগ্ন। আমি তাঁর উপর এক লতা বিশিষ্ট বৃক্ষ উদগত করলাম।[সাফফাতঃ১৪৩-১৪৬]
অতপর তাঁর তাসবীহ পাঠ ও তওবা কবুল হলে,আল্লাহ ক্ষমা করেন এবং মুক্তি দেন।
আল্লাহর নির্দেশে তিমি মাছ হযরত ইউনুসকে সাগর তীরে ফেলে যাওয়ার পর আল্লাহর এ নবী দুর্বল অবস্থায় কাদার মধ্যে পড়ে থাকেন। এ সময় তার পাশে একটি লাউ গাছ জন্মায় এবং এর পাতা তাঁকে সূর্যের প্রখর আলো থেকে রক্ষা করে এবং মাছের পেটে তাঁর ঝলসে যাওয়া চামড়া আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এভাবে হযরত ইউনুসের জীবন রক্ষা পায়। তিনি সুস্থ হয়ে আবার নিজ জাতির কাছে ফিরে যান। তিনি বিস্ময়ের চোখে দেখতে পান, তার সেই মুশরিক জাতি এক আল্লাহর ইবাদত করছে এবং আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পেয়েছে। আল্লাহ শুধু আজাবই উঠিয়ে নেননি বরং সেই জাতিকে স্বাভাবিক জীবন উপভোগেরও সুযোগ দিয়েছেন। হযরত ইউনুসের জাতির মানুষের সংখ্যা এক লাখের কিছু বেশি ছিল বলে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন।
” এবং তাঁকে এক লক্ষ বা ততোধিক লোকের কাছে প্রেরণ করলাম। “তারা বিশ্বাস স্থাপন করল অতঃপর আমি তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত জীবন উপভোগ করতে দিলাম।” (সূরা সাফফাতের:১৪৮)
আমাদের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলোঃ-
* সমস্যা ও ঝামেলার মুখোমুখি হলে কর্তা ব্যক্তির দায়িত্ব থেকে পালিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান নয়। বরং যত বড় কঠিন পরিস্থিতিই আসুক দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকতে হবে।
** আল্লাহর তসবীহ পাঠ এবং কান্নাকাটি করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। হযরত ইউনুস আঃ এর এই ঘটনার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়েছেন।
*** অতীত ভুলের স্বীকারোক্তি ও তওবার মাধ্যমে ভবিষ্যতে সঠিক পথের দিশা পাওয়ার পথ খুলে যায়। হযরত ইউনুসের জাতি তওবা করার মাধ্যমে আল্লাহর হেদায়েত লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।
বর্তমান প্রেক্ষাপটঃ A leader can never leave his subordinates in danger times. X-Prime minister #Shaikh Hasina Traped Same way.