শয়তান কুরআনের সরল পথে বসে, মানবরূপী শয়তানদের মাধ্যমে মুমিনদের কে বিভ্রান্ত করার জন্য কুরআনের যে সকল শব্দ সমূহের বিকৃত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ‘আনুগত্য’ ( يُطِعِ )।
وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَٱلرَّسُولَ فَأُو۟لَٰٓئِكَ مَعَ ٱلَّذِينَ أَنْعَمَ ٱللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ ٱلنَّبِيِّۦنَ وَٱلصِّدِّيقِينَ وَٱلشُّهَدَآءِ وَٱلصَّٰلِحِينَۚ وَحَسُنَ أُو۟لَٰٓئِكَ رَفِيقًا
যারা আল্লাহ ও রসূলের আনুগত্য করবে তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ভাজন নবী, সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তি, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের সঙ্গী হবে। আর সঙ্গী হিসেবে তারাই উত্তম।( ৪:৬৯)
* এখানে আল্লাহর আনুগত্য বলতে কুরআন কে বুঝানো হয়েছে আর রাসূলের আনুগত্য বলতে বার্তা বাহকের বার্তার আনুগত্য কে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ উভয় ক্ষেত্রে কুরআন কে বুঝানো হয়েছে। وَ অব্যয়টি দিয়ে একই বিষয়কে দুই ভিন্ন রূপে বুঝাতে ব্যবহার হয়েছে। وَ অব্যয়টি যে একই বিষয়কে দুই ভিন্ন রূপে বুঝাতে ব্যবহার হয় তার প্রমানে নিচের আয়াত দুইটি লক্ষ্য করুন।
يَٰٓأَهْلَ ٱلْكِتَٰبِ قَدْ جَآءَكُمْ رَسُولُنَا يُبَيِّنُ لَكُمْ كَثِيرًا مِّمَّا كُنتُمْ تُخْفُونَ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَيَعْفُوا۟ عَن كَثِيرٍۚ قَدْ جَآءَكُم مِّنَ ٱللَّهِ نُورٌ وَكِتَٰبٌ مُّبِينٌ
হে কিতাবীগণ, তোমাদের নিকট আমার রাসূল এসেছে, কিতাব থেকে যা তোমরা গোপন করতে, তার অনেক কিছু তোমাদের নিকট সে প্রকাশ করছে এবং অনেক কিছু ছেড়ে দিয়েছে। অবশ্যই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে আলো ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। (৫:১৫)
يَهْدِى بِهِ ٱللَّهُ مَنِ ٱتَّبَعَ رِضْوَٰنَهُۥ سُبُلَ ٱلسَّلَٰمِ وَيُخْرِجُهُم مِّنَ ٱلظُّلُمَٰتِ إِلَى ٱلنُّورِ بِإِذْنِهِۦ وَيَهْدِيهِمْ إِلَىٰ صِرَٰطٍ مُّسْتَقِيمٍ
‘এর’ দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন।(আল-মা’য়েদা ৫:১৬)
# দেখুন (نُورٌ وَّكِتَابٌ مُبِين ৫:১৫) এই আয়াতে আল্লাহ্ ‘নূর ও কিতা-বুম মুবীন’ (জ্যোতি ও সুস্পষ্ট গ্রন্থ) একই সাথে উল্লেখ করেছেন এবং এই দুইয়েরই উদ্দেশ্য হচ্ছে কুরআন। কেননা এই দুইয়ের মধ্যে وَ সংযোজক অব্যয়টি পাশাপাশি দুই বিশেষ্যের ভিন্নতা বুঝাতে ব্যবহূত হয়নি; বরং ভিন্ন রূপে একই বিষয়কে বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এই অব্যয়টি আসলে একই বিষয়ের দুই ভিন্ন রূপের সংযোজক অব্যয়। যার স্পষ্ট প্রমাণ কুরআনের পরবর্তী (৫:১৬) আয়াত, যেখানে বলা হচ্ছে يَهدِي بِهِ الله অর্থাৎ এর দ্বারা আল্লাহ হিদায়াত করেন বা সুপথ দেখান। যদি نور ও كتاب আলাদা আলাদা জিনিস হত, তাহলে কুরআনের এই বাক্যটি এইরূপ হত, يَهدِي بِهِمَا الله অর্থাৎ, সর্বনামটি একবচন না হয়ে দ্বিবচন হত (ه) একবচন না হয়ে هما দ্বিবচন হত এবং অনুবাদ ‘এর’ দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন’ না হয়ে ‘উভয়’ দ্বারা তিনি তাদেরকে শান্তির পথে পরিচালিত করেন’ হত। কুরআনের এই বাক্য থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো যে, ‘নূর’ ও ‘কিতা-বুম মুবীন’ উভয় শব্দের উদ্দেশ্য ‘কুরআন’। وَ অব্যয়টি একই বিষয়কে বুঝানোর দুই ভিন্ন রূপের সংযোজন অব্যয় হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। আর ‘নূর’ বলতে যে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে, তার প্রমাণে সূরা তাগাবুনের ৮ নাম্বার আয়াতটি দেখুন।
فَـَٔامِنُوا۟ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَٱلنُّورِ ٱلَّذِىٓ أَنزَلْنَاۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অতএব তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এবং আমি যে নূর অবতীর্ণ করেছি তার প্রতি ঈমান আন। আর তোমরা যে আমল করছ আল্লাহ সে বিষয়ে সম্যক অবহিত।( ৬৪:৮)
# অনুরূপ ভাবে আসুন আমরা এবার গভীর ভাবে অনুধাবনের চেষ্টা করি সূরা নূরের ৫৪ নাম্বার আয়াতটি। আয়াতের শুরুতে বলা হয়েছে “আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর” আয়াতের পরের অংশে تُطِيعُو শব্দের পরে এক বচনে অব্যয় হিসাবে এসেছে هُ। এতে প্রমান হয় আল্লাহ ও রাসূল সত্তাগত ভিন্ন কিন্তু আনুগত্যের ক্ষেত্রে অভিন্ন। এই জন্যই এখানে একবচনের অব্যয় هُ ব্যবহার করা হয়েছে। আর সেই অভিন্ন বিষয়টি হচ্ছে আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাবের আনুগত্য করা। যারা এই আনুগত্যের বিষয়টির মধ্যে পার্থক্য করে তারাই কুফরীতে লিপ্ত।
قُلْ أَطِيعُوا۟ ٱللَّهَ وَأَطِيعُوا۟ ٱلرَّسُولَۖ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُم مَّا حُمِّلْتُمْۖ وَإِن تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا۟ۚ وَمَا عَلَى ٱلرَّسُولِ إِلَّا ٱلْبَلَٰغُ ٱلْمُبِينُ
বলুনঃ আল্লাহর আনুগত্য কর এবং রসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তার উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে সে দায়ী এবং তোমাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্বের জন্যে তোমরা দায়ী। তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য কর, তবে সৎ পথ পাবে। রসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে পৌছে দেয়া। (২৪:৫৪)
إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا۟ بَيْنَ ٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا۟ بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا
নিশ্চয় যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় এবং বলে, ‘আমরা কতককে বিশ্বাস করি আর কতকের সাথে কুফরী করি’ এবং তারা এর মাঝামাঝি একটি পথ গ্রহণ করতে চায়।(আন-নিসা ৪:১৫০)
সারকথাঃ আল্লাহর আনুগত্য করা এবং রাসুলের আনুগত্য করার অর্থ আল্লাহর আনুগত্য বলতে যেমন কোরানের আনুগত্য বুঝায় তেমনি বার্তাবাহকের আনুগত্য বলতে বার্তা বা কোরআনের আনুগত্য বুঝায়। এ কথাটিকে হাদীস বেত্তারা এমন ভাবে প্রচার করে যে,আল্লাহর আনুগত্য মানে কোরানের এবং রাসুলের আনুগত্য মানে নবীর হাদীসের আনুগত্য করা। এ বলে তারা কোরআন ও হাদীসকে পাশাপাশি দাড় করাতে চায়।এমন আকিদা কিতাবের সাথে শিরক করা।
আচ্ছা ভাবুন তো রাসুল ও সাহাবী তাবেয়ীদের যুগে যখন হাদীস রচিত হয় নি তখন এ আয়াত দ্বারা কি বুঝাতো ? তখন তো হাদীসের সৃষ্টিই হয় নি। হাদীস সৃষ্টি হয়েছে নবীর ওফাতের ২৫০ বছর পড়ে। তাই অনুবাদ বুঝার ভুলের জন্য আমরা শিরক মুক্ত থাকতে আল্লাহর সাহায্য কামনা করি।