Categories
My text

দরস -০১

আরবী গ্রামার আর কোরানিক গ্রামার এক নয়। কোরান বুঝার জন্য যে গ্রামার জানা প্রয়োজন তা খুব সহজ, আরবী গ্রামারের মত অতটা জটিল নয়।
সমগ্র কোরানে পুনারাবৃত্তি সহ মোট শব্দ সংখ্যা প্রায় ৭৮ হাজার। তন্মধ্যে মুল শব্দ মাত্র ১৮ হাজারের মত। ফলে ২০০ /২৫০ শব্দের সাথে পরিচয় হতে পারলে সমগ্র কোরান নিজ ভাষায় বুঝে পড়া সহজ।
সমগ্র কোরানের এই ৭৮ হাজার শব্দকে মাত্র তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
১) ইশিম
২) ফে’ল
৩) হরফ
ইশিম – নাম, গুন,বা সর্বনাম বাচক শব্দগুলি ইশিম।
ফে’ল – ক্রিয়াবাচক শব্দগুলো ফে’ল। এবং
হরফ – অব্যয় বাচক শব্দ গুলোকে হরফ বলে।

ধারাবাহিক ভাবে এগুলির আলোচনা করা হবে। তার আগে আরবী গ্রামারের কিছু প্রাথমিক ধারনা নেব।
আরবীতে এক বা একাধিক বর্ণ দারা যদি অর্থ প্রকাশ হয় তাকে শব্দ বা কালিমাহ বলে। এই একাধিক শব্দ নিয়ে যদি একটি পুর্ণাঙ্গ অর্থ প্রকাশ পায় তাকে বাক্য বা জুলমাহ বলে। এটাকে কালিমার বহুবচন হিসাবে কালিমাতুন ও বলে।
বাংলাতে যেমন পদ পাঁচ প্রকার, ইংরেজীতে আট প্রকার, তেমনি আরবীতে পদ মাত্র তিন প্রকার। ইশিম – ফে’ল – হরফ। অন্যদিকে বাংলায় বা ইংরেজীতে বচন দুই প্রকার হলেও আরবীতে বচন তিন প্রকার।
১) একবচন (ওয়াহেদ) যেমন হুয়া।
২) দ্বীবচন ( তাশনিয়া) – যেমন হুমা।
৩) বহুবচন। ( জামা’আ) যেমন হুমু।

বাংলা বা ইংরেজীতে কাল বা সময় তিন প্রকার হলেও আরবীতে কাল দুই প্রকার।
১) অতীত কাল
২) বর্তমান/ ভবিষ্যত কাল।

বাংলা বা ইংরেজীতে লিংঙ্গ যাহাই থাকুক আরবীতে লিঙ্গ দুই প্রকার।
১) পুংলিঙ্গ ( মুযাক্কার)
২) স্ত্রী লিঙ্গ ( মুয়ান্নাস)
ক্লিব লিঙ্গ বা উভয় লিঙ্গ বলে আরবীতে কোন লিঙ্গ নেই।

কোরানের ইশিমের অন্তরগত যত শব্দ আছে তা হয় মুযাক্কার না হয় মুয়ান্নাস। যেমন নাহরুন – নদী এটি স্ত্রী লিঙ্গ, সামস – সুর্য এটি স্ত্রী লিঙ্গ। কেন এবং কি ভাবে তা যথাসময়ে আলোচনা করা হবে।
আরবীতে পুরুষ বা সাখুত ৩ প্রকার।
১) গায়েব – নাম পুরুষ ( অনুপস্থিত ব্যক্তি)
২) হাযির – মধ্যম পুরুষ ( উপস্থিত ব্যক্তি)
৩) মুতাকাল্লিম – উত্তম পুরুষ ( সম্বোন্ধকারী ব্যক্তি)

আরবীতে কাল বা Tense কে যামানা বলে,বচন কে আদদ,লিংগ কে জিনস, বিশেয্য বিশেষনকে ইশিম,সর্বনাম কে দমীর / জমির, অব্যয় কে হরফ, কর্তাকে ফা’য়েল কর্মকে মা’ফউল বলে। প্রাথমিক এ ধারনাটুকু থাকা আবশ্যক। প্রথম ইশিম বিষয়ে জানবো,। কারন ইশিমের ভিতর বিশেষ্য, বিষেশন ও সর্বনাম রয়েছে। কোরানের বেশীর ভাগ ৬০% শব্দ ইশিমের অন্তর্গত। ২০% হরফের অন্তরগত বাকি ২০% মাত্র ফেল বা ক্রিয়াবাচক শব্দ। প্রায় ২০০ ক্রিয়াবাচক শব্দ শিখলেই কোরানে বর্নিত সব ক্রিয়াবাচক শব্দ জানা হয়ে যাবে। সুতরাং কোরানের সরল অনুবাদ নিজে বুঝে করা কঠিন কোন বিষয় না। আপনার মুফতি হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইবারত,বালাগাত, তারকীব এগুলো নিয়ে টানাটানি করার দরকার নেই তো। আল্লাহ এ জন্যই সুরা ক্বমারে একবার নয় চারবার বলেছেনঃ

وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ

শব্দার্থ: وَلَقَدْ = এবং নিশ্চয়ই , يَسَّرْنَا = আমরা সহজ করে দিয়েছি, الْقُرْآنَ = কুরআনকে, لِلذِّكْرِ = উপদেশ গ্রহণের জন্য, فَهَلْ = অতএব কি (আছে) , مِنْ = কোনো, مُدَّكِرٍ = উপদেশ গ্রহণকারী।

কুরআন আমি সহজ করিয়া দিয়াছি উপদেশ গ্রহণের জন্য; অতএব উপদেশ গ্রহণকারী কেহ আছে কি? ৫৪:১৭
উক্ত আয়াতে মানুষকে লক্ষ্য করে এমন ভাবে প্রশ্নবোধক আহ্বান ছুড়ে দিয়েছেন যেন আহব্বানটি মানুষের জন্য বিষেশ এক অফার। فَهَلْ = অতএব কি কেউ আছ???

*******************************

দরস -০২

ইশিম বা (বিশেষ্য,বিষেশন,সর্বনাম)

কোরআনের শব্দ ভান্ডারে প্রায় ৬০ ভাগ শব্দই ইশিম জাতীয় শব্দ। এই ইশিম জাতীয় শব্দ গুলোকে প্রথম দূই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১) মা’রেফাহ বা নির্দিষ্ট বাচক ইশিম।
২) নাকেরা বা অনির্দিষ্ট বাচক ইশিম।

যেমন কিতাব (বই) একটি অনির্দিষ্ট বাচক ইশিম। যখন এটিকে আল কিতাব বলা হবে তখন এটি নির্দিষ্ট ইশিম বলা হবে। কোরানের বর্নিত নির্দিষ্ট বাচক ইশিম গুলি বাদ দিলে বাকি সব ইসিম গুলিকে অনির্দিষ্ট বাচক ইশিম বা নাকেরা বলা হয়।

কোরআনে বর্নিত শব্দ গুলি হতে ইশিম চেনার উপায় বা আলামত ১৪ টি।

১) কোন ব্যক্তি, বস্তু, দেশ বা স্থানের নাম হওয়া। যেমনঃ যায়েদ,মক্কা,সূর্য।
২) শব্দের শুরুতে আলিফ লাম যুক্ত থাকলে। যেমনঃ আল কিতাব
৩) শব্দের শেষে তানভিন হওয়া, অর্থাৎ দুই পেশ, দুই যবর, দুই যের হওয়া। যেমনঃ কালামুন
৪) শব্দের শুরুতে জামির বা সর্বনাম হওয়া। যেমনঃ হুয়া, আনতা
৫) শব্দটি দ্বীবচন বা বহুবচন হওয়া। যেমনঃ রিজালুন

৬) শব্দটি স্থান বা কালবাচক হওয়া। যেমনঃ মক্কা, লাইল
৭) শব্দটি সংখ্যা বাচক হওয়া। যেমনঃ একহাজার
৮) শব্দটি বিষেশন অর্থাৎ দোষ বা গুনবাচক হওয়া। যেমনঃ নতুন বই
৯) শদটি মুসনাদে ইলাইহী হওয়া। যেমনঃ যায়েদ জ্ঞানী
১০) শব্দটি মুছাফ হওয়া। যেমনঃ যায়েদের কিতাব
১১) শব্দটি হরফে যের হওয়া। যেমনঃ ঘরের সাথে
১২) শব্দটি হরফে নেদা হওয়া। যেমনঃ হে আব্দুল্লাহ
১৩) শব্দটির শেষে গোল তা থাকা। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক হওয়া। যেমনঃ ফল
১৪) শব্দের শেষে উহ্য তা থাকা। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক হওয়া। যেমনঃ পৃথিবী
১৫) শব্দের শেষে বড় আলিফ হওয়া, অর্থাৎ স্ত্রীবাচক হওয়া। যেমনঃ হামরাউ
১৬) শব্দের শেষে ইয়া যুক্ত থাকা। অর্থাৎ স্ত্রীবাচক হওয়া।
১৭) কালের সাথে সংশ্লিষ্ট ক্রিয়া অর্থাৎ শব্দের শেষে তে, তা, তুন, ইয়ুন, ইয়ান, নুন থাকা।
১৮) ইশমে ইশারা বা সম্বন্ধ যুক্ত হওয়া। যেমনঃ যায়েদের কলম।

এবার কোরআন খুলে শুরুতে সূরা ফাতিহা বের করে মিলিয়ে দেখে নিন সাতটি আয়াতে মোট কয়টি ইশিম বাচক শব্দ আছে এবং তন্মধ্যে মারেফাহ ইশিম কয়টি এবং নাকেরা জাতীয় ইশিম কয়টি?? এর পরে হরফ ও ফে’ল শব্দগুলি খুজে বের করা শিখবো ইনশাআল্লাহ।

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Also innovator of history of Islam. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

en_USEnglish
Verified by MonsterInsights