ওহী কি? এটা কি শুধু নবীর উপর আসে?
ওহী হচ্ছে মানুষের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত নির্দেশ যা লৌহমাফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাবের অংশ বিশেষ।ওহী জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনার পরিপেক্ষিতে অল্প অল্প করে নাযিল করা হয়েছে যাতে মানুষ আল্লাহর নির্দেশ ভাল ভাবে আত্মস্থ করতে পারে।
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।( ১৭:১০৬)
মানুষের সাথে আল্লাহর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের তিনটি মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে—(৪২:৫১)
১. ফিরিস্তা ছাড়া বিশেষ ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ মানুষের সাথে কথা বলেন। জন্মগতভাবে আল্লাহ্ সকল মানুষ কে এই বিশেষ অহী দিয়ে থাকেন, যার মাধ্যমে মানুষ সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। আমরা কোথায় থেকে আসলাম, কে আমাদের সৃষ্টি করলো এই সকল বিষয় নিয়ে আমরা যে মনে মনে কথা বলি তা মূলত আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেসার অন্তরালে তার সাথে কথা বলা, কারন এই গুলি আল্লাহ্ই আমাদের অন্তরে উদ্রেক করে দেন।
২. আল্লাহ্ সরাসরি আড়ালে থেকে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং নির্দেশ দিতেন। ৪২ঃ৫১ আয়াতে আল্লাহ্ মানুষের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনটি মাধ্যমের কথা বলা হয়েছে। আয়াতে মানুষের কথা বলা হয়েছে ফলে আল্লাহর এই বিধান শুধু নবী রাসূল নয় বরং সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৩. বার্তাবাহকের মাধ্যমে কিতাবের ওহী পাঠিয়ে কথা বলাঃ কিতাবের ওহী হচ্ছে লৌহ মাহফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাবের অংশ বিশেষ যা আল্লাহ্ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে এই বিধান মানুষের মাঝে পৌঁছানোর ব্যবস্হা করতেন তারা সবাই ছিল পুরুষ। আল্লাহ্ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে নবীদের নিকট এই বিধান পৌঁছানোর ব্যবস্হা করতেন। আল্লাহ্ নবী ছাড়া এই বিধান সাধারণত মানুষের নিকট পাঠাতেন না।
আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।(১৬:৪৩)
পবিত্র সত্তাগণ(ফিরিস্তা) ছাড়া আর কেউ তা(লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাব) স্পর্শ করতে পারে না।(৫৬:৭৯)
আল্লাহ্ কিতাবী ওহী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও নবীদের নিকট আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ পাঠাতেন। এমন কি প্রানীদের প্রতিও ওহী প্রেরন করেছেন।
তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে ওহীর দ্বারা নির্দেশ দিয়াছেন, ‘গৃহ নির্মাণ কর পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে গৃহ নির্মাণ করে তাহাতে; (১৬:৬৮)
তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় নির্দেশে ওহী সহ ফিরিশ্তা প্রেরণ করেন এই বলিয়া যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; সুতরাং আমাকে ভয় কর। (১৬:২)
ওহীর বহির্ভুত এই নির্দেশ গুলি আল্লাহ্ পরবর্তীতে মূল কিতাবের ওহীতে স্হান দিয়ে আমাদের কে ঈমানী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হতে প্রেরনা যোগানোর ব্যবস্হা করেছে যুগের পর যুগ। অপর দিকে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাবী ওহী ছাড়া যে সব নির্দেশ আসতো সেগুলি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখিত আয়াত গুলি নিয়ে একটু চিন্তা করলে অতি সহজেই বুঝতে পারবো।
রাসূল সাঃ এর কাছে কিতাবী ওহী ছাড়াও গোপনে আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ পাঠাতেনঃ
প্রমান ১
আর তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; অতঃপর যায়েদ যখন তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহসম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে। (আল-আহযাব ৩৩:৩৭)
প্রমান ২
আর যখন নবী তার এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সেই বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে বলল, ‘আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’ সে বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’( ৬৬:৩)
১.”আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন” এই জানানো বিষয়টি আল্লাহ্ নবীকে গোপন ওহীর মাধ্যমে যানিয়েছিলেন কিতাবী ওহীর মাধ্যমে নয়। কারন আমরা যানি কিতাবী ওহী জিব্রাইল ফিরিস্তা নিয়ে এসে রাসূল সাঃ কে তা বলতেন এবং রাসূল সাঃ সেই কথা শুনে ওহী লেখকদের কে বলতেন এবং তারা সাথে সাথে তা লিখতেন ফলে আসে পাশের সব মুসলিমরা তা যানতে পারতেন।
উপরের আয়াতটিতে জানানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে কিতাবী ওহীর মাধ্যমে হয়নি বলেই রাসূল সাঃ এর স্ত্রী প্রশ্ন করেছিল “আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’’ যদি প্রকাশ্য ওহীর মাধ্যমে যানানো হতো তবে রাসূল সাঃ এর স্ত্রী তা যানতো এবং সে এই প্রশ্ন করতো না যে “আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’
উপরের আয়াতটি প্রমান করে যে রাসূল সাঃ এর নিকট কিতাবী ওহী ছাড়াও গোপনে ওহী আসতো। যারা এটা বিশ্বাস করেনা তা মূলত কুরআন কেই অস্বীকার করে।
৩. এই গোপন ওহীর কথা কিন্তু আল্লাহ্ বলেননি যে আমি ওহীর মাধ্যম যানিয়ে দিলাম, দেখুন আল্লাহ্ কি বলেছিলেন “আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন” নবী কিন্তু বলেননি যে আল্লাহ্ ওহীর মাধ্যমে আমাকে যানিয়েছেন নবী কি বলেছিল দেখুন” সে(নবী)বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’’
এ থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে এই গোপন কথাটি আল্লাহ আড়ালে থেকে সরাসরি রাসূল সাঃ কে যানিয়েছিলেন।
প্রমান ৩
স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’?(৩ঃ১২৪)
‘স্মরন কর’ কথা বলার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্ গোপনে এই কথাটি বলেছিল আর যদি কিতাবী ওহীর মাধ্যমে বলা হতো তবে সাহাবীরা যানতে পারতেন ফলে রাসূল সাঃ কে এই কথা বলার প্রয়োজন পড়তো না যে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? আর স্মরন কর কথার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ আগে গোপন ওহীর মাধ্যমে যানিয়েছেন, পরে সেই কথা কিতাবী ওহীতে বর্ননা করছেন।
আল্লাহ্ আরেকটি মাধ্যমে নবী-রাসুলদের নির্দেশ দিতেন