Categories
My text

জুম্মার সালাত

সালাত আরবী শব্দের অনুবাদ নামজ নয়। এটি পারস্যদের অনুবাদ। বাংলা অনুবাদ “রবের বিধি নিষেধের মনোনিবেশ “।

হে মু’মিনগণ! জুম‘আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্‌বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণে ধাবিত হও এবং ক্রয় – বিক্রয় ত্যাগ কর, ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর। (৬২:৯)
দারুল হরবের দেশে কোন জুম্মার সালাত নেই। এটি সার্বজনিন স্বীকূত। তাই দ্বীনি বিশেষজ্ঞগন একমত হয়ে আখেরি জহুর নামে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ যুক্ত করে দিয়েছন, যাতে করে জুমআ আদায় না হলেও যেন জহুরের সালাত আদায় হয়ে যায়। গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত না হয়। এটি ইস্তেহাদের মাধ্যমে সংযোজন করা হলেও সর্ব মতে গৃহীত বলে সুন্নত নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে নামাজ ফরজ ৪ রাকাত হলেও  জুম্মার দিনের দূপুরের নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ২ রাকাত ফরজ কারা হয়েছে এজন্য় যে রাষ্ট্রীয় ভাষন অর্থাৎ খুৎবা শোনার জন্য ২ রাকাতের ফরজ আদায় হয়ে থাকে।  এ জন্য খুৎবায় আরবীতে বলা হয়, ” আল সুলতানু জিল্যুলাল্লাহয় ওয়াল আরদ……”। যার অনুবাদ: বাদশাহ বা রাষ্ট্র প্রধান আল্লাহর ছায়া স্বরুপ,  সুতারং ইচ্ছা অনিচ্ছায় তাহার আদেশ মান্য কর। ”
যদিও রাসুল সাঃ বা  তাঁর পড় চার খলিফার সময় এমন খুৎবা বলা হয়নি, মোয়াবিয়ার শাশ্বন আমলে এ খুৎবার প্রচলন শুরু করেন মুয়াবিয়ার রাষ্ট্রীয় নিয়োগ প্রাপ্ত আলেম গন।  যার ধারা বাহিকতা আজো চলমান। আমরা এখনো মুয়াবিয়ার প্রতিষ্ঠিত  ইসলামিক কালচারের ছায়াতলে আছি। রাসুল সাঃ যুগে নির্দিষ্ট করে শুক্রবারে জুম্মা হত না,
যখন জরুরী প্রয়োজন দেখা দিত সেদিনই জুম্মার আহ্বান করতেন। এমন দেখা গেছে জুম্মার আহ্বান করে আবহাওয়ার বৈরিতার জন্য রাসুল সাঃ সেদিনে জুম্মা বাতিল করে দিয়েছেন পুনরায় ঘোষণা দিয়ে।

তার মানে কোন ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান বা তার নিয়োগ প্রাপ্ত নায়েব যখন রাষ্ট্রের জরুরী প্রয়োজনে বা মুমিনের কল্যানে কোন বিষেশ জরুরী আলোচনা শুনার জন্য আহ্বান করা হয় (৬২:৯) এ বর্ণিত আল্লাহর ভাষায় তাকে জুম্মার সালাত বা ইমামের আহ্বানে মুমিনের গণজামাতে আল্লাহর বিধি নিশেধের সংযোগ, অনুশীলনকেই জুম্মার সালত বলেছেন আল্লাহ উক্ত আয়াতে। ইমামের এমন আহবান পাওয়া মাত্র যে যে কাজে রত থাক তা বন্ধ করে ছুটে যাওয়া ফরজ।  আয়াতের শেষে তাই আল্লাহ আরো ব্যাখ্যা সহ সতর্ক করে বলেনঃ ” ইহাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি কর।”
এ জন্য মেয়েদের জন্য এ সালাত ফরজ নয়। কারন রাষ্ট্রীয় কল্যান, যুদ্ধ দামার আয়োজন নির্দেশনায় নারী ভুমিকা অপরিহার্য আল্লাহ করেন নাই।
বর্তমান বৃটিশ প্রচলিত রাষ্ট্রের  সাংসদীয় অধিবেশন এই আয়াতের আলোকেই রচিত। যদি এটি কোন ইসলামিক
রাষ্ট্র এবং মুমিনদের নিয়ে সাংসদ গঠিত হতো তবে ১০০% ইসলামিক রাষ্ট্রের কার্যক্রম হতো। সংসদের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র প্রধানের নিয়োগ প্রাপ্ত নায়েব বা ইমামা হয়ে সমাজে জুম্মা কায়েম করতো। বৃটিশ প্রথাটি ঠিকই কোরানের আয়াতের থিমে তৈরী করে দিয়ে গেছে কিন্ত তাদের আদর্শ ঢুকিয়ে রেখে দিয়েছে।

বর্তমান প্রচলিত জুমআ ৬২:৯ এর আলোকে আল্লাহর মনোনীত জুম্মা নয়।  এটি মোয়াবিয়ার রচিত জুম্মার সালাতের অনুষ্ঠান মাত্র।  ধর্মজীবিরা এটাকে পুঁজি করে তাদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ করে নিয়েছেন। সেজন্য তারা মোয়াবিয়ার নিকট কৃতজ্ঞ এবং তার গুনগানে পঞ্চমুখ।

আমজনতা কোরান নিজ ভাষায় পড়েও না তাই সত্যটা উপলব্ধি করতেও সক্ষম নয়। ধর্মজীবিদের চেখানো পদ্ধতিতেই আমিন আমিন করে গরীবের হজ্জ আদায় করে মহা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সুবহানাল্লা তসবিহ জপে।

তাই এসব নাদানের উদ্দেশ্যে রাসুল অভিযোগ করে বলবেন, ” হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে।’ (২৫:৩০)

আল্লাহ রাসুলকে শান্তনা দিয়ে জানানঃ  “অচিরেই উহারা এই কোরআন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে “। (৪৩:৪৪ )

সালাত-অর্থঃ”আল্লাহর নির্দেশনার অনুশীলন।” সালাত পড়ার মত বা আদায় করার মত কোন জিনিস বা কার্যক্রম নয়। সালাত নিজের মধ্যে এবং সমাজে কায়েম বা প্রতিষ্ঠত করার এক অনুশীলন যা রবের পক্ষ থেকে বালেগ সব নর নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে। ইহা সৎকাজের মধ্যে উত্তম একটি সৎকাজ বটে। জুম্মা অর্থ — “একত্রিত হওয়া”।

আল্লাহ অতীত, বর্তমান,ভবিষ্যতে মানব কি করবে বা অতীতে কি করেছ তার উপমাও কোরানে বিষদ ভাবে বলেছেন।  অতীত জাতীর মত মুয়াবিয়ার রাষ্ট্রীয় আলেমগণও যে লালসা পরবস হয়ে যে সালাতকে নষ্ট করবে এবং বর্তমান ধর্মজীবিগন ও একই পথের অনুসারী তা সূরা মারিয়মের ৫৯ নং আয়াতে আল্লাহ ব্যক্ত করেছেন।উহাদের পরে আসিল অপদার্থ পরবর্তীরা, তাহারা সালাত নষ্ট করিল ও লালসা -পরবশ হইল। সুতরাং উহারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে, (১৯:৫৯)

অন্যদিকে আল্লাহর মনোনীত জুম্মার সালাতকে নিজেদের মনগড়া ভাবে পড়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবে যে, এটাও আল্লাহ অতীত, ভবিষ্যত এবং বর্তমানের জন্য প্রকাশ করে দেন সূরা আনফালের ৩৫ নং আয়াতেঃ কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর। (৮:৩৫) প্রকৃত জুমআর সালাত কিয়ামত পর্যন্ত কেমন হবে, এ বিষয়ে ইংগীত দিয়ে সূরাতুল মুমিনুনের ১-৩ নং আয়াতে আল্লাহ জানানঃ” অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মু’মিনগণ- যারা নিজেদের সালাতে বিনয়, নম্র-যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে।” (মুমিনুন:১-৩)

বর্তমান মোয়াবিয়ার পৃষ্ঠপোষক আলেমদের দ্বারা রচিত প্রচলিত জুম্মা নামাজ আল্লাহর মনোনিত জুম্মা নয়, বরং সূরা মুমিনের ৩ নং আয়াতের বর্ণিত ” অসার ক্রিয়া কলাপ সমৃদ্ধ একটি জুম্মার সালাত।  যাতে কোন কল্যান নেই বলে আলোচিত আয়াতের দৃষ্টিতে আমি মনে করি।

সবটুকু আলোচনা কোরআন পড়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধি। তাই কাউকে মানার জন্য আহ্বান করছি না। ভাল লাগলে গ্রহন করবেন, খারাপ লাগলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন। আর যদি আলোআনার উপর কোন দ্বিমত থাকে রেফারেন্স সহ জানাবেন, আমি শুধরে নেব। পরিশেষে হাদীস নির্ভরশীলদের জন্য একটি হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে যাই। হাদীসটি হলোঃরাসুল সা. বলেছেনঃ কোনো ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা বা কাজ ত্যাগ করা। (তিরমিজি: ২৩১৮) কোরআন নিজ মাতৃভাষায় পড়ার দাওয়াত রইল।স্বয়ং রাসুলের এমন দাওয়াতের আহ্বানে মানুষ যখন মুখ ফিরিয়ে নেয় আল্লাহ তখন রাসুলের উদ্দেশ্যে বলেনঃ” তুমি কি শোনাইতে পারিবে বধিরকে অথবা যে অন্ধ ও যে ব্যক্তি স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে, তাহাকে কি পারিবে সৎপথে পরিচালিত করিতে? ( ৪৩:৪০) আমি তাই হতাশ হই না কেহ আমার লিখায় মনোনিবেশ না করলে।

By Ekramul hoq

I am A.K.M Ekramul hoq MA.LLB. Rtd Bank Manager & PO of Agrani Bank Ltd. I am interested writing and reading. Lives in Bangladesh, District Jamalpur.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

en_USEnglish
Powered by TranslatePress
Verified by MonsterInsights