_________ মোল্লার ফতুয়ায় কোরবানীঃ
হজ্জের অনুষ্ঠান ছাড়া পশু কোরবানী প্রথা ধর্মব্যবসায়ীদের সৃষ্টি একটি প্রথা মাত্র, আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়।
গরুটির বয়স ২ বছর প্লাস। দাত পড়েনি বলে মোল্লার ফতোয়া কোরবানী চলবে না। ৯১ হাজারে বিক্রী করে দিল। হাট হতে ৯৩ হাজারে দুই দাত পড়েছে এমন একটি গরু কিনে আনা হল। মোল্লা বলেছেন কান কাটা বা লেজ কাটা এমন খোদ থাকলে কোরবানী হবে না। তাই খুব ভাল করে যাচাই বাছাই করে একটি নিখুত গরু কিনা হলো।
গরুটি খাসি করা বলে খুব দ্রুত বেরে উঠেছে এবং সুঠামো দেহে গড়ে উঠেছে। আমি বললাম অঙ্গ কর্তন করা আল্লাহর বিধানে নেই।
তাই খাসি করা গরুটি কোরবানীর জন্য ত্রুটি যুক্ত রয়ে গেল। “তাহারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করিবেই, এবং তাহাদেরকে নিশ্চয়ই নির্দেশ দিব আর তাহারা আল্লাহ্র সৃষ্টি বিকৃত করিবেই।(৪:১১৯)
মোল্লা নির্ভর কোরবানী দাতা এবার বিপাকে।
মোল্লা বলিল ফতুয়ায়ে শামিলের রেফারেন্সে পশুদের খাসি করা জায়েজ। আমি রেফারেন্স দিয়েছিলাম কোরান থেকে পশুর অঙ্গ হানি নিষিদ্ধ। হেরে গেল কোরান মোল্লার ফতুয়ায়ে শামিলের নিকট।
উপস্থিত সবাই সমস্বরে বলে উঠলো হুজুর যা বলেছে তাহাই সঠিক। আপনি মাদ্রাসায় পড়েছেন কি? কয়টি হাদীস আরবীতে পড়তে পারবেন? আমরা বাপ দাদা পুর্ব পুরুষদের নিকট এভাবেই এ নিয়মেই কোরবানী করতে দেখে এসেছি।
আমি কোরানের এ আয়াত তুলে ধরলাম এ প্রেক্ষিতে।
” যখন তাহাদেরকে বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহার দিকে ও রাসূলের দিকে আস’, তাহারা বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহাই আমাদের জন্য যথেষ্ট।’ যদিও তাহাদের পূর্ব পুরুষগণ কিছুই জানিত না এবং সৎপথ প্রাপ্তও ছিল না, তবুও কি ? (৫ঃ১০৪)
প্রতি উত্তর এলো এ আয়াত তখনকার সময়ের কাফেরদের জন্য নাযিল। আমরা কি কাফের? মোল্লা মুচকী হাসি দিয়ে জনতার পক্ষে সমর্থন জানালো।
এবার আমি আরেকটি আয়াত তুলে ধরলাম।
উহাদেরকে যখন বলা হয়, ‘আল্লাহ্ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তাহা অনুসরণ কর।’ উহারা বলে, ‘বরং আমরা আমাদের পিতৃ পুরুষদেরকে যাহাতে পাইয়াছি তাহারই অনুসরণ করিব।’ শয়তান যদি উহাদেরকে জ্বলন্ত অগ্নির শাস্তির দিকে আহবান করে, তবুও কি? (৩১ঃ২১)
প্রতি উত্তর এল সারা দুনিয়ার মানুষ যেভাবে কোরবানী দিয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে আপনি একা তার বিপক্ষে আপনার নতুন মত পেশ করছেন কেন? আমি এবারও আরেকটি আয়াত পেশ করলাম এ বিষয়ে।
যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।” (৬ঃ১১৬)
এবার যুক্তি তুলে ধরলো সব আলেম গন কি তা হলে ভুলের মধ্যে আছে আপনি মনে করেন, আর আপনি একা সঠিক বুঝতেছেন? সবার মতামতকে আপনি প্রাধান্যই দিচ্ছেন না। যদি ভুলও হয় কোন সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম সমাজ যদি তা সঠিক মনে করে আল্লাহও তা কবুল করেন। মোল্লা এবার দাড়িতে পাচ আঙ্গুল প্রবেস করিয়ে চিরুনী আচড়া করতে করতে হেসে বললেন মাশআল্লাহ!! আমি এর উত্তরে কোরানের এ আয়াতগুলি পেশ করলাম।
তোমার প্রতিপালক হইতে তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ হইয়াছে তাহা যে ব্যক্তি সত্য বলিয়া জানে আর যে অন্ধ তাহারা কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেক শক্তি সম্পন্নগণই,(১৩ঃ১৯)
উহাদের অধিকাংশ অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোন কাজে আসে না উহারা যাহা করে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।(১০ঃ৩৬)
মানুষের মধ্যে কেহ কেহ অজ্ঞতা বশতঃ আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবার জন্য অসার হাদীস গ্রহন করিয়া নেয় এবং আল্লাহ্-প্রদর্শিত পথ লইয়া ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। উহাদেরই জন্য রহিয়াছে অবমাননাকর শাস্তি।( 31:6)
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করিও না এবং জানিয়া-শুনিয়া সত্য গোপন করিও না।(২ঃ৪২)
মোল্লাজী এবার নিজেই মুখ খুলে বলে উঠলেন, এ আয়াত জাহেলী যুগের জনতার উদ্দেশ্য নাযিল। আপনি আয়াত নাযিলের শানেনুযুল জানেন। আমাকে কুপোকাত করার জন্য। আমি সহজে ক্ষান্ত হবার নই। এবার পেশ করলামঃ
অনুসরণ কর তাদের বিনিময় কামনা করে না সুরা ইয়াছিন আয়াত নং –২১। পেশাদার ইমাম আগুনখোর অপবিত্র জাহান্নামি ২ঃ১৭৪।
এবার মোল্লাজী তার শেষ হাতিয়ার হাদীসের কারামতি পেশ করে বললেন: কোরান আপনি সরাসরি নবীকে ছাড়া কি বুঝবেন? নবী কোরানের সব মর্ম বুঝিয়ে গেছেন তার হাদীসের মাধ্যমে। আপনি কয়টি হাদীস পড়েছেন?
আমি একটি মাত্র হাদীস ভালভাবে পড়েছি। তা হলোঃ
জাবির বিন আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাঁর ডান দিকে দু’টি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দু’টি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলওয়াত করেন (অনুবাদ) : ‘’এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (৬:১৫৪) তিরমিজি হাদীস নং ১১
মোল্লা এবার ক্ষেপে বললেন জনতাকে লক্ষ্য করে নতুন ফেতনা সৃষ্টি হবে এটাও হাদীসে আছে। আপনি সেই ফেতনা আমি আশংকা করছি। উপস্থিত সব মোল্লারকে সমর্থন জানালো। আমার বুঝতে আর বাকি রইল না। এখানে আর অবস্থান করলে তায়েফের মাটি হয়ে যাবে।
আলোচনার সারমর্ম উপলব্ধি করতে আমার বাকি রইল না আর। হাদীসের একটি সুবিধা অনুকুলে হলে মেনে নেয়া, আর অনুকুলে না হলে অস্বীকার করলেও কাফের হয় না। কিন্তু কোরানের একটি আয়াত অস্বীকার করলে সরাসরি কাফের কোন সন্দেহ নাই।
দীর্ঘ দিনের পালিত অভ্যাস, বাপদাদার যে ভাবে এবাদত করতে দেখে আসতেছে, অধিকাংশ লোকে যে ভাবে ধর্ম কার্যাদি সম্পাদন করতে দেখে আসতেছে তা থেকে সড়ে এসে যত সত্য কথাই উপস্থাপন করা হোক না কেন, মানুষ তা গ্রহন করতে রাজি না, যদিও কোরআন থেকে সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত দেয়া হয়।
আর এমন হবে তা আল্লাহ জানেন বলেই আল্লাহ বলেনঃ ” যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তাহারা তোমাকে আল্লাহ্র পথ হইতে বিচ্যুত করিবে। তাহারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে ; আর তাহারা শুধু অনুমান ভিত্তিক কথা বলে।” (৬ঃ১১৬)
সুস্পষ্ট প্রমাণিক ঐশী কিতাব থাকার পরেও যারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, তারাই আহলে কিতাবদের মধ্যে কাফির।