আল্লাহ যাকাত কি বুঝিয়েছেন, আর আমরা কি বুঝি?
কোরানে যেখানেই সালাতের কথা বলা হয়েছে তার সাথেই যাকাত শব্দটি এসেছে। তার মানে সালাত যেমন সবার জন্য ফরজ যাকাতও তেমন সবার জন্য ফরজ।
কিন্তু প্রচলিত ধারনা ধনী ব্যক্তি যাকাত দিবে এবং সমাজের গরীব ব্যক্তি যাকাত গ্রহন করবে। এভাবে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যাকাতের প্রবর্তন। কিন্তু কোরান কি বলে?
‘যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও যাকাত আদায় করিতে (১৯:৩১)।
এই শিশু ঈসা কি ভাবে সালাত আদায় করেছেন এব্ং নির্জন এলাকায় কি ভাবে যাকাত আদায় করেছেন?
তিনি কি প্রচলিত পদ্ধতিতে আজান দিয়ে মসজিদে জামাতের সাথে সালাত আদায় করেছেন? না, তা করেন নাই, কারন তখন সালাত নিয়ে ধর্ম পেশার প্রথা চালু হয় নি। এ পদ্ধতির সূচনা মোয়াবিয়ার শাসন আমলে।
যাকাত বলতে আমরা সাধারনত বুঝে থাকি এক অর্থনৈতিক বৈষম্যপুর্ন সমাজের ভারসাম্য রক্ষা করা। অর্থাৎ ধনী ব্যক্তি তার ধনের একটি অংশ গরীবকে প্রদান করবে। কিন্তু শিশু ঈসার সেই সমাজে তো কোন বৈষমপুর্ন বসতি ছিল না, তবে তিনি কাকে যাকাত দিতেন? কি ভাবে যাকাত আদায় করতেন?
সে না হয় বাদ দিলাম তিনি বড় হয়ে সমাজে ফিরে আসার পর সমাজ ব্যবস্থার উপর তা হয়তো কায়েম করেছেন।
এবার আসা যাক ইসমাইল আঃ এর কথা। বিবি হাজেরা সহ নির্বাসত হলেন এক মরুদ্বীপে। যেখানে কোন লোক বসতি ছিল না। তাঁর পিতা ইব্রাহীম আঃ দীর্ঘ দিন পর তাকে সেই দুর্গম এলাকায় খোঁজ নিতে যান। এমন এক নির্জন মরু অঞ্চলে তাঁকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেখানেও নবী ইসমাইল আঃ যে নির্দেশ মেনে চলতেন আল্লাহ সুরা মরিয়মের ৫৫ নং আয়াতে তার বর্ননা করলেনঃ
“সে তাহার পরিজনবর্গকে সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তাহার প্রতিপালকের সন্তোষ ভাজন।(১৯ঃ৫৫)
এবার প্রশ্ন আসে ইসমাইল আঃ কি ভাবে যাকাত আদায় করতেন সেথায়। আমাদের প্রচলিত যাকাতের ধারনা মোতাবেক তো মিলে না। তিনি তো অতি দারিদ্রতার মধ্য দিয়ে কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবন জীবিকা যাপন করতেন।
তার তো ধনী হওয়ার কোন সুযোগই নাই। তিনি কোন সম্পদের উপর যাকাত দিয়েছিলেন? তাছাড়া যাকাত গ্রহন করার মত কোন মানুষও তাঁর সে সমাজে ছিল না।
তবে তিনি সালাতের পাশাপাশি যাকাত কি ভাবে আদায় করতেন। আমাদের প্রচলিত যাকাতের ধারনা মোতাবেক কি?
আসল কথা, যাকাত বিষয়ে যে ধারনা বা থিম আমাদের মগজে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে তা আল্লাহর বর্নিত যাকাতের সাথে কোন মিল নেই। আরবী শব্দ যাকাতের বাংলা ভাষার সঠিক অনুবাদ নিরুপন না করা পর্যন্ত আল্লাহর কাংখিত যাকাত আর আমাদের মোল্লাদের বানানো ২.৫% যাকাতের পার্থক্য অনুধাবন করা অসম্ভব।
যাকাত এর বাংলা পরিশুদ্ধ। এই পরিশুদ্ধ শুধু মালের নয়। বিচার বুদ্ধি ধন মাল জ্ঞান জান সকল কিছুতেই পরিশুদ্ধ ও বন্টন কে বুঝায়। যা নিজের মধ্যে ও সমাজের সর্বত্র কায়েম বা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
যেমন: রিবা,সালাত,সিয়াম আল্লাহর দেয়া গুরুত্ত পুর্ন এ নির্দেশনা গুলিও একই ভাবে বিকৃত উপলব্ধি মগজে হেপনোটাইট করে রেখেছে কোন অজ্ঞাত অশুভ শক্তি।
সনাতন ধর্মের সেই অশুভ শক্তি অসুর কে বধ করে ধরাকে শান্তিময় করতে প্রতি বছর মা দুর্গার আবির্ভাব হলেও ইসলামে সে সুযোগটুকুও নেই।
বরং যে ব্যক্তি এই কুসংস্কার দুর করার চেষ্টা করবে সব অশুর মিলে তাকে বধ করা যায়েজ মনে করবে।
রাসুল সা: এর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম আলী রাঃ এর শাহাদত এর পর আমীর মোয়াবিয়া রাঃ এর হাতে বন্দী হয়ে এজিদের নিকট আহত হয়। অতপর ইরান,ইরাক,পারস্য পার হয়ে একটু একটু করে বিকৃত হয়ে এশিয়ায় তথা ভারত উপমহাদেশে এসে পৌছায়। এ উপ-মহাদেশের খৃষ্টান মিশনারীদের দ্বারা পরিচালিত মাদ্রাসা গুলিতে হাদীসের সিলিবাসে সীমাবদ্ধ রেখে আলেম নামক ইসলামী স্কলারগন তৈরী হতে থাকে। কোরানের উপর গবেষনা বিমুখ এই আলেমগন নিজেদের প্রজ্ঞা বিবেক প্রয়োগ না করে সত্য মিথ্যে যাচাই এর কোন গবেষনা না করে দরসে হাদীসের অর্জিত জ্ঞানকে তৃপ্তির সাথে সোয়াব ও জান্নাত প্রাপ্তীর আমলে সীমাবদ্ধ করে আম-জনতার মগজে ঢুকিয়ে দিতে থাকে যুগের পর যুগ । যা পালন করে সবাই তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে আলেমদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে,লক্ষ্য একটাই পরকালের নাজাতের বিষয়ে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয় আলেমগন ধর্মকে জীবন জীবিকার পথ হিসেবে বেছে নেয়।
শুরু হয় মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ মাদ্রাসার গড়ার প্রতিযোগিতা। কর্মস্থলের সুযোগ বৃদ্ধি ও পরিধি প্রসারের মহা উৎসবে তারা ব্যস্ত হয়ে ইসলামকে পাচটি মৌলিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ রেখে জনতাকে কোরান বিমুখ করে তুলে। এতেকরে মানুষ মুল ইসলাম থেকে ছিটকে পরে হুজুর ভিত্তিক দ্বীন ও ধর্ম পালনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে।
ফলে অবস্থা এমন একটি পর্যায়ে দাড়িয় যে সত্যটা কেউ তুলে ধরলে এই আলেম সমাজই আম জনতাকে হায়েনার মত লেলিয়ে দিয়ে ইহুদী-খৃষ্টানের দালাল,কাদেয়ানী, কাফের ইত্যাদি ইত্যাদি ফতুয়া দিয়ে ফাঁসির দাবীতে মিছিল করে। সত্য পরাভুত হয়ে নীরব অশ্রু ঝড়ায়ে নিগৃহীত।
কোফায় ইসলাম যে ভাবে নিহত হয়েছে তা আদৌ কোন দিন কোন কালে জীবিত হবে কি না সন্দেহ। তবে নতুন প্রজন্মদের ইসলাম নিয়ে গবেষনা কিছুটা আলো স্বপ্ন দেখায়।শুধু যাকাত নয়, রিবা, সালাত, সিয়াম, কোরবানী, এমন কি কালিমাতেও একই অবস্থা।