সালাত,সিয়াম,হজ্জ,যাকাত,ইবাদত,একিন, রুহ,রিবা,নাফস,উম্মি,লৌহেমাহফুজ,নিয়ামত, সুন্নাত,হাদীস ইত্যাদী আরবী শব্দ গুলির সঠিক বাংলা অনুবাদ না থাকায় পারস্য অনুবাদের উপর ভর করে চলতে হয়। ফলে বাংলা ভাষাভাষির মানুষ কোরানে এ শব্দগুলি সমন্বিত আয়াত গুলির সঠিক মর্ম উপলব্ধিতে ব্যার্থ হয়ে গতানুগতিক অনুবাদ পড়ে আল্লাহর নির্দেশনা সঠিক ভাবে বুঝতে সক্ষম না হয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয় এবং সঠিক উপলব্ধি থেকে দূরে সরে যায়। আমাদের আলেমগনও এ নিয়ে কোন চিন্তা গবেষনা কখনো করার প্রয়োজন বোধ করেন নাই। তারাও আরবী তেলোয়াতে নেকির হিস্যা নিয়ে আমজনতার নিকট প্রিয় ভাজন হয়ে আছেন। ধর্মকে জীবিকা হিসেব বেছে নিয়েছেন তারা। অথচ আরবী উর্দু ফারসী ইংরেজী ভাষার এমন কোন শব্দ নেই যার প্রতিস্থাপিত বাংলা শব্দ নেই।
প্রথমত,বিষেশ করে কোরানের আরবী শব্দ গুলির সঠিক বাংলা অনুবাদ করতে হলে সেই আরবী শব্দটি কোরানের কত যায়গায় আছে তা আগে সংগ্রহ করতে হয়। অতপর ঐ শব্দটির বাংলা অনুবাদ কি কি ব্যবহার করা হয়েছে তা অনুসন্ধান করতে হয়।
দ্বীতিয়ত আরবী শব্দটির বিপরীত আরবী কি কোরানের কোন কোন আয়াতে আছে তা নির্বাচন করতে হয়। সেখান থেকে একটি শব্দের সঠিক অনুবাদ ধরতে পারলে বিপরীত শব্দটির বাংলা অনুবাদ সঠিক কি হবে তা নিরুপন করা সহজ হয়। যেমন লাইল এর বিপরীত নাহার শব্দটি কোরানের ১১টি আয়াতে আছ। এখন লাইল এর অর্থ জানা থাকলে নাহার দিবস সহজে সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। এই দূইটি নচ্চ প্রয়োগ করে ফারসী অনুবাদ বাদ দিয়ে বাংলা শাব্দিক অনুবাদ সৃজন করা সম্ভব এবং তখন কোরানের সঠিক মর্ম বাংলাভাষার মানুষের উপলব্ধি করা সম্ভব।
যেমন রুহ একটি আরবী শব্দ, যার বাংলা অনুবাদ রহুই জানি, একটু বেশী হলে রুহ মানে আত্মা বা প্রাণ বুঝি। আরকটু এগিয়ে বুঝলে রুহ এর অনুবাদ ” আল্লাহর আদেশ ” ধরে থাকি। ব্যাস এর বেশী কিছু না। এর বেশী কিছু জানতে চাইলে আলেমগন একটি আয়াত তুলে ধরে খামুস হতে বলেনঃ
“তোমাকে উহারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘রূহ্ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছে সামান্যই।’ আয়াত : ৮৫
রুহুর বিপরীত কোন শব্দ কোরানে প্রয়োগ করা হয় নি। তাই দ্বীতিয় পদ্ধতিতে এর বাংলা অনুবাদ করা সম্ভব নয়। প্রথম পদ্ধতি এপ্লাই করেই রুহের বাংলা অনুবাদ বের করে আনতে হবে।
তাই প্রথমে রুহ সংক্রান্ত সকল আয়াত গুলি কালেকশন করি।কোরানে রুহ নিয়ে মোট ৯টি আয়াত আছে। যেমনঃ
১) রুহ *** ফিরিশ্তা এবং রূহ্ আল্লাহ্র দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যাহার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাযার বৎসর। সূরা নম্বর: ৭০ আয়াত নম্বর: ৪
২) রুহ *** অতঃপর উহাদের হইতে সে পর্দা করিল। অতঃপর আমি তাহার নিকট আমার রূহ্কে পাঠাইলাম, সে তাহার নিকট পূর্ণ মানবাকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করিল। (১৯:১৭)
৩) রুহ ** তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি ইচ্ছা স্বীয় রুহ ওহী সহ ফেরেস্তাহ প্রেরণ করেন এই বলিয়া যে, তোমরা সতর্ক কর, নিশ্চয়ই আমি ব্যতীত কোন ইলাহ্ নাই; সুতরাং আমাকে ভয় কর।( ১৬ : ২)
৪) রুহ ** তোমাকে উহারা রূহ্ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, ‘রূহ্ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত এবং তোমাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হইয়াছে সামান্যই।’ নম্বর: ৮৫
৫) রুহ **জিব্রাঈল ইহা লইয়া অবতরণ করিয়াছে (২৬:১৯৩)
৬) রুহ *** তিনি সমুচ্চ মর্যাদার অধিকারী, ‘আরশের অধিপতি, তিনি তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি ইচ্ছা ওহী প্রেরণ করেন স্বীয় রুহ , যাহাতে সে সতর্ক করিতে পারে কিয়ামত দিবস সম্পর্কে। (৪০:১৫)
৭);রুহ * ফিরিশ্তা এবং রূহ্ আল্লাহ্র দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যাহার পরিমাণ পার্থিব পঞ্চাশ হাযার বৎসর।( ৭০ : ৪)
৮) রুহ * সেই দিন রূহ্ ও ফিরিশ্তাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াইবে ; দয়াময় যাহাকে অনুমতি দিবেন সে ব্যতীত অন্যেরা কথা বলিবে না এবং সে যথার্থ বলিবে।( ৭৮: ৩৮)
৯) রুহ ** সেই রাত্রিতে ফিরিশতাগণ ও রূহ্ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাহাদের প্রতি পালকের অনুমতিক্রমে।(৯৭:৪)
এবার দেখুন
১) নং আয়াতে রুহুর অনুবাদ “রুহ” লিখেছে
২) নং এ “আমার রুহ ” লিখেছে অনুবাদে
৩) নং এ রুহর অনুবাদে স্বীয় রুহ লিখেছে
৪) নং এ রুহ এর অনুবাদ রুহ ই করেছে
৫) নং এ রুহ এর অনুবাদ ” জিব্রাঈল ” লিখেছে অনুবাদ
৬) নং এ রুহের অনুবাদ “স্বীয় রুহ ”
৭) নং আয়াতে রুহ এর অনুবাদ রুহ করেছে
৮) নং আয়াতে রুহ এর অনুবাদ রুহ লিখা
৯) নং আয়াতে একটু ব্তিক্রম রুহ এর অনুবাদ আল্লাহর অনুমতি ক্রমে রুহ লিখেছে
*** সব কটি আয়াত পর্যালোচনা করে রুহ এর বাংলা অনুবাদ ” আল্লাহর অস্তিত্ব “ বুঝায়।
এবার আপনি রুহ শব্দের বাংলা অনুবাদ “আল্লাহর অস্তিত্ব” বসিয়ে অনুবাদ করে দেখুন, প্রতিটি আয়াতের মর্ম আপনার নিকট কত সহজ ও বোধগম্য হয়ে হৃদয়ে উপলব্ধি আসে।
এভাবে সালাত, হজ্জ, সিয়াম, যাকাত, রিবা, ইবাদত, একিন,নিয়ামত, আয়াত,উম্মি,দ্বীন, সিজদাহ, রুকু ইত্যাদি আরবী শব্দগুলির বাংলা অনুবাদ সৃষ্টি করে বসিয়ে দেখুন আল্লাহ কড প্রান্জল ভাষায় আমাদের কি বুঝাতে চেয়েছেন আর আমরা কি বুঝে বসে আছি, শুধু সঠিক অনুবাদের অভাবে।