প্রশ্ন- ১) কিয়ামত পর্যন্ত আর নবী প্রেরণ করবেন না কেন?
প্রশ্ন- ২) ঈসা নবীকে প্রেরণের পুর্বে নবী প্রেরণে এত দীর্ঘ বিরতি কেন?
আল্লাহর এ কৌশলের পেছনে কারন কি? কোরান থেকে জানুনঃ —–
২) উত্তরঃ বনী ঈসরাইলের জন্য ঘন ঘন নবী প্রেরন করার পরও যখন এ অবাধ্য কওম নবীদের অনুসরন করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো উপরুন্ত নবীদের হত্যা করা সহ বিভিন্ন অনাচারে লিপ্ত হল তখন আল্লাহ অভিশপ্ত জাতিকে নিজেরা নিজেদের মধ্যে অনাচার সৃষ্টির মাধ্যমে ধংসের অতল গহব্বরে পতিত করে শাস্তি দিতে শুরু করলেন। ঈসা নবীর তিরোধানের পর এভাবে প্রায় ৬৫০ বছর অভিবাহীত হওয়ার পর মানব সভ্যতা যখন জাহেলিয়াতের চরম অন্ধকারে পতিত হয়ে মানব জাতি ধংসের মুখোমুখি তখন দীর্ঘ বিরতির পর নবী মুহাম্মদকে কোন নির্দিষ্ট কওম নয় সমগ্র মানব জাতীর জন্য প্রেরণ করলেন বিষেষ নেয়ামত আল কোরআন সহ। আল্লাহ তাই বলেনঃ
রাসূল প্রেরণে বিরতির পর আমার রাসূল তোমাদের নিকট আসিয়াছে। সে তোমাদের নিকট স্পষ্ট ব্যাখ্যা করিতেছে যাহাতে তোমরা বলিতে না পার, ‘কোন সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী আমাদের নিকট আসে নাই।’ (৫:১৯)
অন্যত্র আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ্ বলেন, এইভাবেই প্রত্যেক নবীর শত্রু করিয়াছিলাম আমি অপরাধীদেরকে। তোমার জন্য তোমার প্রতিপালকই পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারীরূপে যথেষ্ট।( ২৫ঃ ৩১)
ঈশা নবীর পিতা ছিল না। কুমারী মরিয়মের গর্ভে জন্ম। এজন্য খৃষ্টানরা দাবী করে ঈশা মাসীহ আল্লাহর পুত্র। কিন্ত সুরা ইখলাসে আল্লাহ জানিয়ে দেন তিনি কোন সন্তান জন্ম দেননি এবং তিনি কারো সন্তানও নন। এখন প্রশ্ন আসে কোন পুরুষ ছাড়া তো মাতৃগর্ভে সন্তান আসতে পারে না। আল্লাহ সে প্রসঙ্গে উত্তর দেনঃ
আল্লাহ্র নিকট নিশ্চয়ই ‘ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তসদৃশ। তিনি তাহাকে মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন;অতঃপর তাতে রুহ ফুকিয়ে দেন। (৩:৫৯)
অতঃপর দোলনায় থাকা অবস্থায় তিনি তাঁকে কথা বলতে শিখান এবং নবী হিসাবে ঘোষনা দিতে আদেশ করেন।
সে বলিল, ‘আমি তো আল্লাহ্র বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়াছেন, আমাকে নবী করিয়াছেন,(১৯:৩০)
প্রশ্ন আসে কি কিতাব দিয়েছিলেন? সেটা কি বর্তমান কোরানেরই অংশ বিশেষ? না কি ভিন্ন বৈপরিত কোন কিতাব। সেই সাথে তাঁকে আল্লাহ আরো আদেশ করেছিলেন যাহা তা আবার হুবুহু কোরানে বর্ণিত:
‘যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করিয়াছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়াছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও যাকাত আদায় করিতে -(১৯:৩১)
এখন প্রশ্ন আসে ঈশা আঃ কি ভাবে সালাত আদায় করতেন? আমাদের মত রুকু সিজদা বুকে হাত বাধা পদ্ধতিতে? দিন পাঁচ ওয়াক্ত পড়তেন? না কি তখন সালাত কায়েম বলতে অন্য কোন পদ্ধতি কায়েম ছিল? যা রহিত হয়ে এই প্রচলিত সালাত মেরাজ মোতাবেক হয়েছে?
আশ্চর্যের বিষয় এ ব্যাপারে কোন আয়াত কোরানে দেখা যায় না। আর যাকাত তিনি নির্জন পাহারে কি ভাবে কার উপর আদায় করতেন? এখন যে যাকাত দেখি তা কিভাবে এলো? আল্লাহ বলেন: এর আগে তাদের সালাত ছিল, “কা‘বাগৃহের নিকট শুধু শিস ও করতালি দেওয়াই তাহাদের সালাত, সুতরাং কুফরীর জন্য তোমরা শাস্তি ভোগ কর।(৮:৩৫)
ঈশা নবী এসে আল্লাহর মনোনীত পদ্ধতিতে সালাত কায়েম করলেন এবং যাকাত আদায় শিক্ষা দিলেন।এই নবীর পড়ে আবার দীর্ঘ সময় নবী না আসায় সালাত কে নষ্ট করে ফেললো। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন:
“উহাদের পরে আসিল অপদার্থ পরবর্তীরা, তাহারা সালাত নষ্ট করিল ও লালসা – পরবশ হইল। সুতরাং উহারা অচিরেই কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করিবে,(১৯:৫৯)
ঈশা নবীর ৬৫০ বছর পর পুনরায় দীর্ঘ বিরতীর পর নবী মুহম্মদ কে অন্ধকার হতে আলোতে পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্য প্রেরন করলেন। তিনি শরীয়তের পুর্ন জ্ঞান ও দ্বীন নিয়ে এলেন। শিক্ষা দিলেন এবং লিখিত আকারে তা রেখে গেলেন বিশ্ব মানব জাতীর জন্য। আর তা সংরক্ষনের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহন করলেন। কারন এর পর আর কোন নবী আসবেন না কিয়ামত অব্দি। তার এই কিতাবের বর্ননা অনুযায়ী আবার নষ্ট করা সালাত ফিরে পেলাম।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে সূরা মরিয়াম এর ১৯:৩১ নং আয়াতে সালাত কায়েম করতে বলেছেন জন্ম হইতে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সার্বক্ষনিক, নিরর্বিছিন্ন, বিরতিহীন ভাবে।
যাহারা তাহাদের সালাতে সদা প্রতিষ্ঠিত,
الَّذِيْنَ هُمْ عَلٰى صَلَاتِهِمْ دَآٮِٕمُوْنَۙ
সূরা নম্বরঃ মাআরিজ ৭০,আয়াত ২৩
অত:পর যার এ বিষয়ে দ্বীমত পোষন করে,তাদের জন্য কোরান ব্যক্ত করে,
তুমি কি দেখিয়াছ তাহাকে, যে দীনকে অস্বীকার করে ?
اَرَءَيْتَ الَّذِىْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِؕ
সূরা নম্বরঃ ১০৭, আয়াত নম্বরঃ ১
সুতরাং দুর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদের,
فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَۙ
সূরা নম্বরঃ ১০৭, আয়াত নম্বরঃ ৪
যাহারা তাহাদের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন,
الَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَۙ
সূরা নম্বরঃ ১০৭, আয়াত নম্বরঃ ৫
ফয়সালা দিবসে যখন জিজ্ঞাসিত হবে,
উহারা বলিবে, ‘আমরা মুসল্লিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না,
قَالُوْا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَۙ
সূরা নম্বরঃ ৭৪, আয়াত নম্বরঃ ৪৩
ইহাই আল্লাহ্র বিধান – প্রাচীন কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে, তুমি আল্লাহ্র বিধানে কোন পরিবর্তন পাইবে না। সূরা নম্বর: ৪৮ আয়াত নম্বর: ২৩
১ নং প্রশ্নের ঊত্তরঃ কোন নবীর উপর নাযিলকৃত কিতাব আল্লাহ সংরক্ষনের দায়িত্ত নেন নাই, তার কারন ছিল সেগুলি অপুর্নাঙ্গ কোরানেরই অংশ বিশেষ। নবী মুহাম্মদের উপর যখন পুর্নাঙ্গ কিতাব নাযিল করা হল এবং তাহা কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষনের দায়িত্ত নিলেন তখন আর নবী প্রেরণের প্রয়োজন নেই। কোরানই সব যুগের জন্য নবীর ভমিকা পালন করবে বিধায় কিয়ামতের পুর্ব পর্যন্ত আর কোন নবী প্রেরণ করবেন না বা প্রেরণের কোন প্রয়োজন নেই। সর্ব যুগে সর্ব ঘরে ঘরে নবী কোরানের মাধ্যমে বিরাজমান থাকবে এবং আছে। এজন্য কোরানের গুরুত্ত নবীর মত। যে কোন সমস্যায় নবীকে জিজ্ঞেস কর, অর্থাৎ কোরানের সাহায্য নাও। তবেই তুমি নবীর অনুসারী হয়ে জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হয়ে সফল৷ কামদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
তাই কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী প্রেরণ করবেন না।
কুরআন তো তোমার ও তোমার সম্প্রদায়ের জন্যে সম্মানের বস্তু ; তোমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে। 43:44
সেদিন রাসূল অভিযোগ এনে বলবেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় তো এই কুরআনকে পরিত্যাজ্য মনে করে।’ 25:30