ওহী হচ্ছে মানুষের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে নাজিলকৃত নির্দেশ যা লৌহমাফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাবের অংশ বিশেষ।ওহী জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে বিভিন্ন ঘটনার পরিপেক্ষিতে অল্প অল্প করে নাযিল করা হয়েছে যাতে মানুষ আল্লাহর নির্দেশ ভাল ভাবে আত্মস্থ করতে পারে।
কাফিরেরা বলেঃ সমগ্র কুরআন তার নিকট একবারেই অবতীর্ণ হলনা কেন? এভাবেই অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমার হৃদয় ওর দ্বারা মযবূত হয় এবং তা সম্পূর্ণ রুপে আস্তে আস্তে আত্মস্থ করতে পার।(২৫:৩২)
আর কুরআন আমি নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন তুমি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পার ধীরে ধীরে এবং আমি তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে।(১৭:১০৬)
আসুন প্রথমে যেনে নেই মানুষের নিকট আল্লাহর ওহী অর্থাৎ নির্দেশ পাঠানোর পদ্ধতি।
কোন মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। তিনি কথা বলেন হয় অহীর মাধ্যমে, অথবা পর্দার আড়াল থেকে, কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তাঁর হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়। তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ।( ৪২:৫১)
উপরের আয়াত থেকে আমরা যা যানতে পারছি তা হচ্ছে —
মানুষ আল্লাহ্ কে দেখবে এবং এই অবস্হায় আল্লাহ্ মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলবে এমন মর্যাদা বা যোগ্যতা মানুষের নেই। এই আয়াতে মানুষের সাথে আল্লাহর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের তিনটি মাধ্যম উল্লেখ করা হয়েছে—
১. ফিরিস্তা ছাড়া বিশেষ ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ মানুষের সাথে কথা বলেন। জন্মগতভাবে আল্লাহ্ সকল মানুষ কে এই বিশেষ অহী দিয়ে থাকেন, যার মাধ্যমে মানুষ সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। আমরা কোথায় থেকে আসলাম, কে আমাদের সৃষ্টি করলো এই সকল বিষয় নিয়ে আমরা যে মনে মনে কথা বলি তা মূলত আল্লাহর কাছে জিজ্ঞেসার অন্তরালে তার সাথে কথা বলা, কারন এই গুলি আল্লাহ্ই আমাদের অন্তরে উদ্রেক করে দেন। যেমনই ভাবে নবী ইব্রাহীম আঃ এর অন্তরে সৃষ্টি কর্তা সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক করে দেওয়া হয়েছিল যখন তিনি নবী ছিলেন না।—-
আর এভাবেই আমি ইবরাহীমকে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব দেখাই এবং যাতে সে দৃঢ় বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।অতঃপর যখন রাত তার উপর আচ্ছন্ন হল, সে তারকা দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। অতঃপর যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘যারা ডুবে যায় আমি তাদেরকে ভালবাসি না’।অতঃপর যখন সে চাঁদ উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব’। পরে যখন তা ডুবে গেল, বলল, ‘যদি আমার রব আমাকে হিদায়াত না করেন, নিশ্চয় আমি পথহারা কওমের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’।অতঃপর যখন সে সূর্য উজ্জ্বলরূপে উদীয়মান দেখল, বলল, ‘এ আমার রব, এ সবচেয়ে বড়’। পরে যখন তা ডুবে গেল, তখন সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা যা শরীক কর, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত’।‘নিশ্চয় আমি নিবিষ্ট করেছি আমার চেহারা একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’।(সূরা আল-আন‘আম ৬:৭৫-৭৯) এই বিশেষ অহী সম্পর্কে পরে আবার আলোচনা করবো
২. আল্লাহ্ সরাসরি আড়ালে থেকে মানুষের সাথে কথা বলতেন এবং নির্দেশ দিতেন।
৪২ঃ৫১ আয়াতে আল্লাহ্ মানুষের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে তিনটি মাধ্যমের কথা বলা হয়েছে। লক্ষ্য করুন আয়াতে মানুষের কথা বলা হয়েছে ফলে আল্লাহর এই বিধান শুধু নবী রাসূল নয় বরং সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। পবিত্র কুরআনে পৃথিবীতে নবীদের মধ্যে শুধু মূসা আঃ এর সাথে আল্লাহর আড়ালে থেকে কথা বলার সুস্পষ্ট বর্ননা পাওয়া যায় তার অর্থ এই নয় যে আল্লাহ্ শুধু মূসা আঃ এর সাথে আড়াল থেকে কথা বলেছেন অন্য নবী বা সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে বলেন নি। বরং কুরআনের অনেক আয়াত আছে যে গুলির বর্ননা ভঙ্গিতে বুঝা যায় আল্লাহ সরাসরি আড়ালে থেকে অনেক নবী ও সাধারন মানুষের সাথে কথা বলেছেন। ফেরাউন পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার বর্ননা কুরআনে যে ভাবে বর্নিত হয়েছে তাতে বুঝা যায় আল্লাহ ঐ সময়ে আড়ালে থেকে ফেরাউনের সাথে কথা বলেছিলেন।
এ রসূলগণ এরূপ যে, তাদের মধ্যে কাউকে অন্য কারও উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে, তাদের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং তাদের কাউকে পদমর্যাদায় উচ্চ করেছেন। ( ২:২৫৩)
লক্ষ্য করুন “তাদের সাথে” বহু বচন শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে “তাদের মধ্যে কেউ এমন আছে যে, তাদের সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন”। আল্লাহর সাথে মূসা আঃ এর কথোপকথন —
যখন মূসা তাঁর পরিবারবর্গকে বললেনঃ আমি অগ্নি দেখেছি, এখন আমি সেখান থেকে তোমাদের জন্যে কোন খবর আনতে পারব অথবা তোমাদের জন্যে জ্বলন্ত অঙ্গার নিয়ে আসতে পারব যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার।(২৭:৭)
যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।(২৮:৩০)
অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।
হে মূসা, আমি আল্লাহ, প্রবল পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
(২৭:৮-৯)
নিশ্চয় আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেল, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ’।‘আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, সুতরাং যা ওহীরূপে পাঠানো হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন’।‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’।( ২০:১২-১৪)
আর যখন আমার নির্ধারিত সময়ে মূসা এসে গেল এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রব, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনো দেখবে না। বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, অতঃপর তা যদি নিজ স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি অচিরেই আমাকে দেখবে। অতঃপর যখন তার রব পাহাড়ের উপর নূর প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ করে দিল এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন সে বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।’(৭:১৪৩)
ইব্রাহীম আঃ এর সাথে আল্লাহর কথপোকথন —
আর স্মরণ কর, যখন ইবরাহীমকে তার রব কয়েকটি বাণী দিয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর সে তা পূর্ণ করল। তিনি বললেন, ‘আমি তোমাকে মানুষের জন্য নেতা বানাব’। সে বলল, ‘আমার বংশধরদের থেকেও’? তিনি বললেন, ‘যালিমরা আমার ওয়াদাপ্রাপ্ত হয় না।(২ঃ১২৪)
নূহ আঃ এর সাথে আল্লাহর কথপোকথন —
আর নূহ তার রবকে ডাকল এবং বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার সন্তান আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার ওয়াদা নিশ্চয় সত্য। আর আপনি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক’।তিনি বললেন, ‘হে নূহ, সে নিশ্চয় তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, আমার কাছে তা চেয়ো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও’।সে বলল, ‘হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’।(১১:৪৫-৪৭)
ফেরাউনের সাথে আল্লাহর কথপোকথন —-
আর বনী-ইসরাঈলকে আমি পার করে দিয়েছি নদী। তারপর তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেছে ফেরাউন ও তার সেনাবাহিনী, দুরাচার ও বাড়াবাড়ির উদ্দেশে। এমনকি যখন তারা ডুবতে আরম্ভ করল, তখন বলল, এবার বিশ্বাস করে নিচ্ছি যে, কোন মা’বুদ নেই তাঁকে ছাড়া যাঁর উপর ঈমান এনেছে বনী-ইসরাঈলরা। বস্তুতঃ আমিও তাঁরই অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।এখন একথা বলছ! অথচ তুমি ইতিপূর্বে না-ফরমানী করছিলে। এবং পথভ্রষ্টদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলে।সুতরাং আজ আমি তোমার দেহটি রক্ষা করব, যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হয়ে থাক। আর নিশ্চয় অনেক মানুষ আমার নিদর্শনসমূহের ব্যাপারে গাফেল’।( ১০:৯০-৯২)
যেখানে আল্লাহ্ ফেরাউনের মতো একজন কাফেরের সাথে আড়ালে থেকে কথা বলেছেন, সেখানে রাসূল সাঃ এর সাথে আল্লাহ্ আড়ালে থেকে কথা বলেনি নির্দেশ দেয়নি, যারা এই সমস্ত কথা বলে ও বিস্বাস করে তারা কি গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত নয়???
৩. বার্তাবাহকের মাধ্যমে কিতাবের ওহী পাঠিয়ে কথা বলাঃ কিতাবের ওহী হচ্ছে লৌহ মাহফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাবের অংশ বিশেষ যা আল্লাহ্ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবীর মাধ্যমে এই বিধান মানুষের মাঝে পৌঁছানোর ব্যবস্হা করতেন তারা সবাই ছিল পুরুষ। আল্লাহ্ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জিব্রাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে নবীদের নিকট এই বিধান পৌঁছানোর ব্যবস্হা করতেন। আল্লাহ্ নবী ছাড়া এই বিধান সাধারণত মানুষের নিকট পাঠাতেন না।
আর তোমার পূর্বে এমন কোন রাসূল আমি পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে, ‘আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; সুতরাং তোমরা আমার ইবাদাত কর।(২১:২৫)
নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ওহী পাঠিয়েছি, যেমন ওহী পাঠিয়েছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের নিকট এবং আমি ওহী পাঠিয়েছি ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়া‘কূব, তার বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ূব, ইউনুস, হারূন ও সুলায়মানের নিকট এবং দাঊদকে প্রদান করেছি যাবূর।(৪:১৬৩)
আমি তোমার নিকট সুন্দরতম কাহিনী বর্ণনা করছি, এ কুরআন আমার ওহী হিসেবে তোমার কাছে প্রেরণ করার মাধ্যমে। যদিও তুমি এর পূর্বে অনবহিতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।(১২:৩)
আর আমি তোমার পূর্বে কেবল পুরুষদেরকেই রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছি, যাদের প্রতি আমি ওহী পাঠিয়েছি। সুতরাং জ্ঞানীদের জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জানো।(১৬:৪৩)
আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমি রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদেরকে দিয়েছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। আর কোন রাসূলের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন নিয়ে আসবে। প্রতিটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য রয়েছে লিপিবদ্ধ বিধান।
আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা করেন স্থির রাখেন, আর তাঁর কাছেই রয়েছে মূল কিতাব।(১৩:৩৮-৩৯)
আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে।(১১ঃ৬)
বরং এটা মহান কুরআন। লওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ। (৮৫:২১-২২)
নিশ্চয় আমি তো একে আরবী কুরআন বানিয়েছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার।আর নিশ্চয় তা(কুরআন) আমার কাছে উম্মুল কিতাবে(লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাবে) সুউচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, প্রজ্ঞাপূর্ণ।( ৪৩:৩-৪)
নিশ্চয় এটি মহিমান্বিত কুরআন,যা আছে সুরক্ষিত (মূল) কিতাবে।(৫৬:৭৭-৭৮)
পবিত্র সত্তাগণ(ফিরিস্তা) ছাড়া আর কেউ তা(লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত মূল কিতাব) স্পর্শ করতে পারে না।
(৫৬:৭৯)
আল্লাহ্ কিতাবী ওহী ছাড়াও সাধারণ মানুষ ও নবীদের নিকট আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ পাঠাতেন।
আসুন আমরা প্রথমে দেখি নবী ছাড়া সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ। আমি পুরুষদের কথা বল্লামনা কারন পুরুষদের কথা বল্লে হয়তো আপনারা এক লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বরের অন্তর্ভুক্ত মনে করবেন। তাই আমি নারীদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ সমূহের বর্ননা দিচ্ছি। আর এটা কুরআন থেকেই প্রমানিত যে আল্লাহ্ কোন নারী কে নবী করে পাঠাননি ফলে সব নারীরা ছিল সাধারন নারী।
আর আমি মূসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, ‘তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করব’।( ২৮:৭)
‘যখন আমি তোমার মাতাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যা জানাবার ছিল যে, তুমি তাঁকে সিন্ধুকের মধ্যে রেখে দাও। তারপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও। যেন দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেয়। ফলে তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু নিয়ে নেবে। আর আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’।(২০:৩৯)
আল্লাহ্ মূসা আঃ এর মার নিকট গোপনে নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। কারন প্রকাশ্যে যদি নির্দেশ পাঠাতেন তবে নিশ্চয়ই ফেরাউনের লোকজন তা যেনে শিশু মূসা আঃ কে হত্যা করতো। আর মূসা আঃ এর মা আল্লাহর এই গোপন নির্দেশ তার নিকট আত্মীয় স্বজনদের কে বলেছিলেন যার প্রমান নিচের আয়াত থেকে যানা যায়।
যখন তোমার বোন (সিন্দুকের সাথে সাথে) চলছিল। অতঃপর সে গিয়ে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দেব, যে এর দায়িত্বভার নিতে পারবে’? অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম; যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়। আর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে। তখন আমি তোমাকে মানোবেদনা থেকে মুক্তি দিলাম এবং তোমাকে আমি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছ। হে মূসা, তারপর নির্ধারিত সময়ে তুমি এসে উপস্থিত হলে’।(২০ঃ৪০)
এবার আসুন দেখি মারিয়াম আঃ কাছে আল্লাহ্ কি নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন।
আর স্মরণ কর এই কিতাবে মারইয়ামকে যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোন এক স্থানে চলে গেল।আর সে তাদের নিকট থেকে (নিজকে) আড়াল করল। তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল।মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও’।
সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি’।মারইয়াম বলল, ‘কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আর আমি তো ব্যভিচারিণীও নই’।সে বলল, ‘এভাবেই। তোমার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আর যেন আমি তাকে করে দেই মানুষের জন্য নিদর্শন এবং আমার পক্ষ থেকে রহমত। আর এটি একটি সিদ্ধান্তকৃত বিষয়’।(১৯:১৬-২১)
পাঠক লক্ষ করুন কিতাবের ওহীর বহির্ভুত এই নির্দেশ গুলি আল্লাহ্ পরবর্তীতে মূল কিতাবের ওহীতে স্হান দিয়ে আমাদের কে ঈমানী চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হতে প্রেরনা যোগানোর ব্যবস্হা করেছে যুগের পর যুগ। অপর দিকে আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাবী ওহী ছাড়া যে সব নির্দেশ আসতো সেগুলি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উল্লেখিত আয়াত গুলি নিয়ে একটু চিন্তা করলে অতি সহজেই বুঝতে পারবো।
রাসূল সাঃ এর কাছে কিতাবী ওহী ছাড়াও গোপনে আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশ পাঠাতেনঃ
প্রমান ১
হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সম্যক জ্ঞানী, মহাপ্রজ্ঞাময়।আর তোমার রবের কাছ থেকে তোমার প্রতি যা ওহী করা হয় তুমি তার অনুসরণ কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।আর তুমি নির্ভর কর আল্লাহর উপর, কর্ম সম্পাদনে আল্লাহই যথেষ্ট।তোমাদের পালিত পুত্রদেরকে তোমাদের পুত্র করেননি। এগুলো তোমাদের মুখের কথা মাত্র। আল্লাহ ন্যায় কথা বলেন এবং পথ প্রদর্শন করেন।তোমরা তাদেরকে তাদের পিতৃপরিচয়ে ডাক। এটাই আল্লাহর কাছে ন্যায়সঙ্গত। যদি তোমরা তাদের পিতৃ-পরিচয় না জান, তবে তারা তোমাদের ধর্মীয় ভাই ও বন্ধুরূপে গণ্য হবে। এ ব্যাপারে তোমাদের কোন বিচ্যুতি হলে তাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, তবে ইচ্ছাকৃত হলে ভিন্ন কথা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(আল-আহযাব ৩৩:১-৫)
আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।(৩৩:৭)
আর স্মরণ কর, আল্লাহ যার উপর নিআমত দিয়েছিলেন এবং তুমিও যার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলে, তুমি যখন তাকে বলেছিলে ‘তোমার স্ত্রীকে নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর’। আর তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; অতঃপর যায়েদ যখন তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহসম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে। (আল-আহযাব ৩৩:৩৭)
মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।(৩৩:৪০)
উল্লেখিত আয়াত গুলি থেকে আমাদের আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এই কথাটি “তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী (৩৩ঃ৭)” এই প্রসঙ্গে যাবার আগে আসুন উল্লেখিত আয়াত গুলি নাজিলের সার সংক্ষেপ জেনে নেই।
তৎকালীন আরবের লোকেরা পালিত পুত্রদের কে আপন পুত্রদের মতো মনে করতো এবং তাদের নামে পালিত পুত্রদের কে ডাকা হতো এমকি তারা তালাক প্রাপ্ত পালিত পুত্র বধু কে বিয়ে করতো না। আল্লাহ্ তাদের এই কুসংস্কার গুলি উল্লেখিত আয়াত গুলি নাজিলের মাধ্যমে বাতিল করে দিলেন।
এবার আসুন মূল প্রসঙ্গে যাই। যায়েদ রাঃ ছিল রাসূল সাঃ এর পালিত পুত্র। রাসূল সাঃ নিজে আগ্রহী হয়ে তাঁর আপন ফুপাত বোন জয়নব রাঃ কে জায়েদের সাথে বিয়ে দেন। কিন্তু তাদের বৈবাহিক জীবন সুখকর ছিলনা। ফলে আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত নিলেন যায়েদ রাঃ সাথে জয়নব রাঃ বিবাহ বিচ্ছেদে ঘটিয়ে জয়নব রাঃ কে রাসূল সাঃ এর সাথে বিয়ে দিয়ে আরবের কুসংস্কারটি বাতিল করা, কারন এর পর আর নবী আসবেনা তাই আল্লাহ্ নবীর মাধ্যমে এই কুসংস্কারটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। রাসূল সাঃ কে আল্লাহ্ গোপনে জয়নব রাঃ সাথে তাঁর বিয়ের কথা যানালেন। কিন্তু প্রচলিত সামাজিকতার কারনে বিষয়টি তাঁর কাছে বিব্রতকর মনে হলো। ফলে যায়েদ রাঃ যখন রাসূল সাঃ এর কাছে এসে জয়নব রাঃ কে তালাক দেওয়ার কথা যানাল তখন রাসূল সাঃ প্রচলিত সামাজিকতার বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বল্লেন “তোমার স্ত্রীকে নিজের কাছে রেখে দাও এবং আল্লাহকে ভয় কর’'(৩৩ঃ৩৭) কারন যদি যায়েদ রাঃ জয়নব কে তালাক না দেয় তবে তাকে আর জয়নব রাঃ কে বিয়ে করতে হবে না, ফলে সমাজের লোকদের কটু কথা শুনতে হবে না। কিন্তু রাসূল সাঃ এর এমন আচরনে জবাবে বল্লেন “হে নবী, আল্লাহকে ভয় কর এবং কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না(৩৩ঃ১)। আল্লাহ আরো যানিয়ে দিলেন যে সকল নবীরা তার বিধান পালনে অঙ্গীকারা বদ্ধ ফলে আল্লাহ্ রাসূল সাঃ কে সেই অঙ্গীকারা বদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন “আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম,মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম। (৩৩:৭)
আল্লাহ্ যখন দেখল রাসূল সাঃ তাঁর গোপন নির্দেশটি পাশকাটিয়ে যায়েদ রাঃ কে বুঝাচ্ছে তখন আল্লাহ্ গোপন নির্দেশটি কিতাবী ওহীর মাধ্যমে প্রকাশ করে দিলেন।—-
তুমি অন্তরে যা গোপন রাখছ আল্লাহ তা প্রকাশকারী এবং তুমি মানুষকে ভয় করছ অথচ আল্লাহই অধিকতর হকদার যে, তুমি তাকে ভয় করবে; অতঃপর যায়েদ যখন তার স্ত্রীর সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করলাম, যাতে পালক পুত্রদের স্ত্রীদের ব্যাপারে মুমিনদের কোন অসুবিধা না থাকে; যখন তারা তাদের স্ত্রীদের সাথে বিবাহসম্পর্ক ছিন্ন করে। আর আল্লাহর নির্দেশ কার্যকর হয়ে থাকে।(আহযাব ৩৩:৩৭)
প্রমান ২
আর যখন নবী তার এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সেই বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে বলল, ‘আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’ সে বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’( ৬৬:৩)
উপরের আয়াত আমরা যা যানতে পারছি তা নিম্নরূপ —
১.”আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন” এই জানানো বিষয়টি আল্লাহ্ নবীকে গোপন ওহীর মাধ্যমে যানিয়েছিলেন কিতাবী ওহীর মাধ্যমে নয়। কারন আমরা যানি কিতাবী ওহী জিব্রাইল ফিরিস্তা নিয়ে এসে রাসূল সাঃ কে তা বলতেন এবং রাসূল সাঃ সেই কথা শুনে ওহী লেখকদের কে বলতেন এবং তারা সাথে সাথে তা লিখতেন ফলে আসে পাশের সব মুসলিমরা তা যানতে পারতেন।
উপরের আয়াতটিতে জানানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে কিতাবী ওহীর মাধ্যমে হয়নি বলেই রাসূল সাঃ এর স্ত্রী প্রশ্ন করেছিল “আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’’ যদি প্রকাশ্য ওহীর মাধ্যমে যানানো হতো তবে রাসূল সাঃ এর স্ত্রী তা যানতো এবং সে এই প্রশ্ন করতো না যে “আপনাকে এ সংবাদ কে দিল?’
২. যদি বলেন যানানোর বিষয়টি কিতাবী ওহীর মাধ্যমে যানানো হয়েছে। যদি তাই হয় তবে কুরআনে সেই যানানোর বনর্নাটি নেই কেন??? “কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না” প্রশ্ন হচ্ছে ” কিছু বললেন না” এই না বলা বর্ননাটি কুরআনের কোথায় আছে???
উপরের আয়াতটি প্রমান করে যে রাসূল সাঃ এর নিকট কিতাবী ওহী ছাড়াও গোপনে ওহী আসতো। যারা এটা বিশ্বাস করেনা তা মূলত কুরআন কেই অস্বীকার করে।
৩. এই গোপন ওহীর কথা কিন্তু আল্লাহ্ বলেননি যে আমি ওহীর মাধ্যম যানিয়ে দিলাম, দেখুন আল্লাহ্ কি বলেছিলেন “আল্লাহ্ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন” নবী কিন্তু বলেননি যে আল্লাহ্ ওহীর মাধ্যমে আমাকে যানিয়েছেন নবী কি বলেছিল দেখুন ” সে(নবী)বলল, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন।’’
এ থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে এই গোপন কথাটি আল্লাহ আড়ালে থেকে সরাসরি রাসূল সাঃ কে যানিয়েছিলেন।
(৩৩ঃ৩৭ ও ৬৬ঃ৩) আয়াতের লোকে আমরা বুঝতে পারছি যে কিতাবী ওহী ছাড়াও গোপনে আল্লাহ্ সরাসরি আড়ালে থেকে নির্দেশ দিতেন অথবা তাঁর ফিরিস্তা রাসূল সাঃ এর নিকট গোপনে তাঁর নির্দেশ পৌঁছে দিতেন। তার আরেকটি প্রমান নিচে দেওয়া হলো।
প্রমান ৩
স্মরণ কর, যখন তুমি মুমিনদেরকে বলছিলে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’?(৩ঃ১২৪)
‘স্মরন কর’ কথা বলার অর্থই হচ্ছে আল্লাহ্ গোপনে এই কথাটি বলেছিল আর যদি কিতাবী ওহীর মাধ্যমে বলা হতো তবে সাহাবীরা যানতে পারতেন ফলে রাসূল সাঃ কে এই কথা বলার প্রয়োজন পড়তো না যে, ‘তোমাদের জন্য কি যথেষ্ট নয় যে, তোমাদের রব তোমাদেরকে তিন হাজার নাযিলকৃত ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করবেন’? আর স্মরন কর কথার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ্ আগে গোপন ওহীর মাধ্যমে যানিয়েছেন, পরে সেই কথা কিতাবী ওহীতে বর্ননা করছেন।
আল্লাহ্ আরেকটি মাধ্যমে নবী-রাসুলদের নির্দেশ দিতেন সেটি হচ্ছে স্বপ্নে।
অতঃপর সে যখন পিতার সাথে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইব্রাহীম তাকে বললঃ বৎস! আমি স্বপ্নে দেখিযে, তোমাকে যবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি দেখ। সে বললঃ পিতাঃ! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইব্রাহীম তাকে যবেহ করার জন্যে শায়িত করল।তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম,তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।(৩৭:১০২-১০৫)
আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তকমুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন যা তোমরা জান না। এছাড়াও তিনি দিয়েছেন তোমাদেরকে একটি আসন্ন বিজয়।
(৪৮:২৭)
হিকমা কাকে বলে?
জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ কে হিকমাত বলে। যাকে বাংলায় প্রজ্ঞা বলা হয়।
আল্লাহ্ ফিরিস্তা,জীন,মানুষ এমন কি সমস্ত প্রানীদের কে জ্ঞান/আকল/কমনসেন্স দিয়ে থাকেন। আবার আল্লাহ্ সেই জ্ঞান কে স্বাধীন ভাবে প্রয়োগ করার স্বাধীন ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন। যারা গভীর অন্তর দৃষ্টি দিয়ে এই জ্ঞান কে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে তারা সফল হয়, যারা সঠিক প্রয়োগ করতে পারেনা তারা ব্যর্থ হয়। এই জ্ঞান আল্লাহ্ কিতাব পাঠিয়ে দেন না আল্লাহ তার এক বিশেষ পদ্ধতিতে সবাইকে জন্মগত ভাবে দিয়ে থাকেন। এই জ্ঞানের কারনেই অনেক প্রানীদের আচরনে নিতী জ্ঞান লক্ষ্য করা যায়।
ফিরিস্তারা আদম সৃষ্টির বিরোধীতা করেছিল। তাদের এই বিরুধীতার জ্ঞান কিন্তু আল্লাহ্ শিখিয়ে দেননি, তারা বিরুধীতা করেছিল তাদের জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ না করতে পারার কারনে। আবার যখন বুঝতে পারলো তাদের কথা ভুল হয়েছে, তখন আবার জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ঘটিয়ে আল্লাহর জ্ঞানের প্রশংসা করেছে, যাতে হিকমাতের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি যমীনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।আর তিনি আদমকে নামসমূহ সব শিক্ষা দিলেন তারপর তা ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। সুতরাং বললেন, ‘তোমরা আমাকে এগুলোর নাম জানাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও’।তারা বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান। আপনি আমাদেরকে যা শিখিয়েছেন, তা ছাড়া আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয় আপনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’।(২:৩০-৩২)
শয়তান জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। আবার যখন আল্লাহ্ তার উপর রাগান্বিত হলো তখন সে জ্ঞানের সঠিক প্রয়োগ ঘটিয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করার পরিবর্তে কু-কর্ম চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করলো। ফলে সে অভিসপ্তের অন্তর্ভুক্ত হলো।
‘যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে যাও’।ফলে ফেরেশতাগণ সকলেই সিজদাবনত হল।ইবলীস ছাড়া, সে অহঙ্কার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ল।আল্লাহ বললেন, ‘হে ইবলীস, আমার দু’হাতে আমি যাকে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সিজদাবনত হতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি কি অহঙ্কার করলে, না তুমি অধিকতর উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’সে বলল, ‘আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি থেকে আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’তিনি বললেন, ‘তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। কেননা নিশ্চয় তুমি বিতাড়িত।আর নিশ্চয় বিচার দিবস পর্যন্ত তোমার প্রতি আমার লা‘নত বলবৎ থাকবে।সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দিন যেদিন তারা পুনরুত্থিত হবে।(৩৮:৭২-৭৯)
আল্লাহ্ হচ্ছেন মোহা জ্ঞানী ফলে তার কিতাব নিঃসন্দেহে নির্ভুল জ্ঞানের উৎস। আর এই কারনেই আল্লাহ্ তার কিতাব কে হিকমাত বলেছেন।
তোমার রাব্ব অহীর দ্বারা তোমাকে যে হিকমাত দান করেছেন এগুলি উহার (হিকমতের) অন্তর্ভুক্ত; তুমি আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ স্থির করনা, তাহলে তুমি নিন্দিত ও (আল্লাহর) অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।(সূরা বানু ইসরাঈল ১৭:৩৯)
আল্লাহ্ নবী রাসূলগন কে শুধু কিতাবের জ্ঞান দেননি সাথে দিয়েছিলেন পরোক্ষভাবে ওহীর জ্ঞান।
সুতরাং আল্লাহ মহান যিনি সত্যিকার অধিপতি; তোমার প্রতি ওহী সম্পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তুমি কুরআন পাঠে তাড়াহুড়া করো না এবং তুমি বল, ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’(২০:১১৪)
লক্ষ্য করুন ‘হে আমার রব, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন।’ এখানে কিন্তু পত্যক্ষ ভাবে অবতীর্ণ কিতাবী ওহীর জ্ঞানের কথা বলা হয়নি, বলা হয়েছে পরোক্ষভাবে ভাবে অবতীর্ণ জ্ঞানের কথা। যে জ্ঞান অবতীর্ণ হলে রাসূল সাঃ যাতে কুরআন মনে রাখতে পারে। এই চাওয়ার জ্ঞান শুধু কুরআন মনে রাখতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং সব ক্ষেত্রে আল্লাহর এই জ্ঞান দানের অন্তর্ভুক্ত।
আল্লাহ্ দাউদ আঃ ও সুলাইমান আঃ কে কিতাবী জ্ঞান ছাড়াও সাধারণ জ্ঞান দান করেছিলেন। দেখুন সেই দানকৃত জ্ঞানের আলোকে তার কি সুন্দর কথা বলেছিল।
আর অবশ্যই আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছি এবং তারা উভয়ে বলল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি তাঁর অনেক মুমিন বান্দাদের উপর আমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন’।(২৭:১৫)
নবী রাসূল ছাড়াও আল্লাহ্ সাধারন মানুষদের মধ্য থেকে তার প্রিয় মুমিন বান্দদের কে এই সাধারণ জ্ঞান দান করে থাকে।
অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে পেল, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছি এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি।(১৮:৬৫)
হিকমাত অর্থাৎ গভীর অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে সত্য উপলব্ধি ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করার জ্ঞান, আল্লাহ্ শুধু যে নবী রাসূলগন কে দিয়ে থাকেন তা নয় বরং তাঁর প্রিয় সাধারণ বান্দাদেরকেও দিয়ে থাকেন।
তিনি যাকে চান হিকমাত (প্রজ্ঞা) দান করেন। আর যাকে হিকমাত (প্রজ্ঞা) দেয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে।
(২:২৬৯)
লোকমান আঃ নবী ছিলেন না কিন্তু আল্লাহ্ তাকে হিকমাত দান করেছিলেন।
আমি অবশ্যই লুকমানকে হিকমাত (প্রজ্ঞা) দান করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সেতো তা করে নিজের জন্য এবং কেহ অকৃতজ্ঞ হলে আল্লাহতো অভাবমুক্ত, প্রশংসা।(৩১:১২)
মানুষ সত্য উপলব্ধির জ্ঞান শুধু যে আল্লাহর কিতাবের মধ্যে পেয়ে থাকেন তা নয় বরং প্রাকৃতিকগত ভাবে আল্লাহ্ প্রতিটি মানুষকে সত্য মিথ্যা প্রার্থক্য সৃষ্টি করার জ্ঞান দিয়ে থাকেন। মানুষ যদি আল্লাহর সৃষ্টির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে তবে এই সত্য উপলব্ধির জ্ঞান লাভ করতে পারবে।
তুমি কি দেখ না, আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর যমীনে তা প্রস্রবন হিসেবে প্রবাহিত করেন তারপর তা দিয়ে নানা বর্ণের ফসল উৎপন্ন করেন, তারপর তা শুকিয়ে যায়। ফলে তোমরা তা দেখতে পাও হলুদ বর্ণের তারপর তিনি তা খড়-খুটায় পরিণত করেন। এতে অবশ্যই উপদেশ রয়েছে বুদ্ধিমানদের জন্য।(৩৯:২১)
যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আসমানকে ছাদ এবং আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিয্কস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না।
(২:২২) রূহের জগতে আল্লাহ্ সমস্ত মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলেছিলেন।
যখন তোমার রাব্ব বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের বংশধরদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের রাব্ব (পালনকর্তা-বিধান দাতা) নই? তারা সমস্বরে উত্তর দিলঃ ‘হ্যাঁ! আমরা সাক্ষী থাকলাম।’ (এ অঙ্গীকার এই জন্য নেয়া হয়েছিল যে) যাতে তোমরা কিয়ামাত দিবসে বলতে না পার, ‘‘ এ বিষয়টি আমাদের যানাছিলনা”।(৭:১৭২)
পৃথিবীতে আল্লাহ সাধারণ ভাবে সব মানুষের সাথে বিশেষ অনুভূতি বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে কথা বলেন।
وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُكَلِّمَهُ اللَّهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِن وَرَآئِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُولًا فَيُوحِىَ بِإِذْنِهِۦ مَا يَشَآءُ ۚ إِنَّهُۥ عَلِىٌّ حَكِيمٌ
কোন মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন। তিনি কথা বলেন হয়
(১)অহীর মাধ্যমে, অথবা
(২) পর্দার আড়াল থেকে, কিংবা
(৩) তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তাঁর হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়। তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ।(৪২ঃ৫১)
কুরআনের এই বিস্ময়কর আয়াতটিতে আল্লাহ্ দুইবার ‘অহী’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। প্রথমে আল্লাহর সাথে মানুষের কথা বলার মাধ্য হিসাবে শুধু ওহীর কথা বলা হয়েছে, ফেরেস্তার মাধ্যমে অহী প্রেরনের কথা বলা হয়নি। কিন্তু পরে যখন অহীর কথা বলা হয়েছে তখন বলা হচ্ছে “তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তাঁর হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়।”
আল্লাহর আড়ালে থেকে কথা বলা এবং ফিরিস্তা দিয়ে অহী পাঠানোর মাধ্যমে কথা বলা সম্পর্কে পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে সেই আলোচনা করা এখানে নিস্প্রয়োজন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আল্লাহ্ ফিরিস্তা ছাড়া অহীর মাধ্যমে কি ভাবে মানুষের সাথে কথা বলেন?
এর উত্তর যানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে মোল্লা-মৌলভীদের কাছ থেকে এতকাল শুনে আশা অহী মানে শুধু মাত্র কুরআন ও হাদিসের বই এই ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারন আল্লাহ্ মৌমাছিকে নির্দেশ দেয়ার ক্ষেত্রে অহী শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
তোমার প্রতিপালক মৌমাছির প্রতি অহী করেছেন যে, পাহাড়ে, বৃক্ষে আর উঁচু চালে বাসা তৈরি কর।(১৬:৬৮)
এখানে ওহী মানে ফিরিস্তার মাধ্যমে মৌমাছি কে যানিয়ে দেয়ার অহী নয়, যদি তাই হতো তবে আল্লাহ্ ফিরিস্তার কথা উল্লেখ করতেন। এখানে অহী বলতে আল্লাহ কতৃক বিশেষ পদ্ধতি বা ইঙ্গিতের মাধ্যমে তার নির্দেশ পাঠানো কে বুঝিয়েছেন।
অাবার প্রতারনার উদ্দেশ্যে জ্বীন বা মানুষরূপী শয়তানদের চিত্তাকর্ষণ কথা কে আল্লাহ্ ওহী বলেছেন।
এভাবে আমি প্রত্যেক নাবীর জন্য মানুষ আর জ্বীন শয়তানদের মধ্য হতে শত্রু বানিয়ে দিয়েছি, প্রতারণা করার উদ্দেশে তারা একে অপরের কাছে চিত্তাকর্ষক (অহী) কথাবার্তা বলে। তোমার প্রতিপালক ইচ্ছে করলে তারা তা করত না, কাজেই তাদেরকে আর তাদের মিথ্যে চর্চাকে উপেক্ষা করে চল।(৬:১১২)
সরাসরি আল্লাহ্ কর্তৃক এই বিশেষ অহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তার নির্দেশ সাত আসমানেও প্রেরন করে থাকেন। মূলত আল্লাহর কর্তৃক এই বিশেষ ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তাঁর বিশ্বভ্রমান্ড পররিচালনার নির্দেশ প্রধান করে থাকেন।
অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে সাত আকাশে বিন্যস্ত করলেন দু’দিনে আর প্রত্যেক আকাশকে তার বিধি-ব্যবস্থা ওয়াহীর মাধ্যমে প্রদান করলেন। আমি আলোকমালার সাহায্যে দুনিয়ার আকাশের শোভাবর্ধন করলাম আর সুরক্ষার (ও ব্যবস্থা করলাম)। এ হল মহা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর সুনির্ধারিত (ব্যবস্থাপনা)।
(৪১:১২)
আল্লাহর এই বিশেষ অহী সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারনেই ৪২ঃ৫১ আয়াতে মানুষের সাথে আল্লাহর কথা বলার মাধ্যম হিসাবে সর্বপ্রথম এই অহীর কথা উল্লেখ করেছেন। এই অহীর কারনেই মানুষের মন অবচেতন ভাবে ধারনা করতে পারে কোনটি ইসলাম অনুযায়ী সঠিক আর কোনটি ভুল। মানুষ যখন কোন মানুষকে অন্যায় ভাবে খুন করে, তখন সে যদি রাতের অন্ধকারে নিজেকে প্রশ্ন করে তার এই কাজটি কি সঠিক হয়েছে? তখন তার বিবেক প্রচন্ড ভাবে তাকে ধিক্কার দিবে এই জঘন্য কাজের জন্য। তার এই অনুভূতি পরোক্ষভাবে আল্লাহর সাথে কথোপকথন ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লাহ্ জন্মগত ভাবে ইলহামের মাধ্যমে মুমিন কাফের সবাই কে সাধারণত জ্ঞান দিয়ে থাকে। এই সাধারণত জ্ঞান ব্যবহার করে মানুষ স্রষ্টা, সত্য মিথ্যা, সঠিক পথ, ভুল পথ সম্পর্কে যানতে পারে।
মানুষের নফসের ও সেই সত্তার কসম যিনি তাকে ঠিকভাবে গঠন করেছেন।তারপর তার পাপ ও তার তাকওয়া তার প্রতি ইলহাম করেছেন।নিঃসন্দেহে সফল হয়ে গেছে সেই ব্যক্তি যে নফসকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং যে তাকে অনবদমিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।( ৯১ঃ৭-১০)আমি তাকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছি। এরপর হয় সে শোকরগোজার হবে নয়তো হবে কুফরের পথ অনুসরণকারী।(৭৬ঃ৩)
মানুষের অন্তর সিদ্ধান্ত নেয় সে কি করবে।
যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। কেননা, আমি বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি।
আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অতঃপর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি।
অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃহত্যায় উদুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।(৫:২৮-৩০)
মানুষ কে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় খারাপ কাজ করার জন্য।
(আমি আশ্রয় চাচ্ছি) আত্মগোপনকারী কু-মন্ত্রণাদাতার অনিষ্টতা হতে।যে কু-মন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে, জিনের মধ্য হতে অথবা মানুষের মধ্য হতে।(১১৪:৬)
অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পরের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্য শাইতান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিল, সে বললঃ তোমাদের রাব্ব এই বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন, এর কারণ এ ছাড়া কিছুই নয় যে, তোমরা যেন মালাইকা/ফেরেশতা হয়ে না যাও, অথবা এখানে (এই জান্নাতে) চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পার।( ৭:২০)
অতঃপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিল, বলল, ‘হে আদম, আমি কি তোমাকে বলে দিব অনন্ত জীবনপ্রদ গাছ এবং অক্ষয় রাজত্ব সম্পর্কে? (২০:১২০)
ইলম /জ্ঞান গ্রহন করে আকল/ বিবেক/Common sense এই কারনেই আল্লাহ্ বার বার বিবেকের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন।
নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তোমাদের জন্য উপদেশ রয়েছে, তবুও কি তোমরা (বিবেক দিয়ে) বুঝবে না? (২১:১০)
আর তারা বলবে, ‘যদি আমরা শুনতাম অথবা (বিবেক দিয়ে) বুঝতাম, তাহলে আমরা জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।( ৬৭:১০)
তোমরা কি মানুষকে ভাল কাজের আদেশ দিচ্ছ আর নিজদেরকে ভুলে যাচ্ছ? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত কর। তোমরা কি (বিবক দিয়ে তা) বুঝ না?(২:৪৪)
নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে, রাত ও দিনের বিবর্তনে, সে নৌকায় যা সমুদ্রে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্ত্ত নিয়ে চলে এবং আসমান থেকে আল্লাহ যে বৃষ্টি বর্ষণ করেছেন অতঃপর তার মাধ্যমে মরে যাওয়ার পর যমীনকে জীবিত করেছেন এবং তাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী ও বাতাসের পরিবর্তনে এবং আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে নিয়োজিত মেঘমালায় রয়েছে নিদর্শনসমূহ এমন কওমের জন্য, যারা বিবেকবান।
(২:১৬৪)
আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছু না। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখিরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি (বিবেক দিয়ে তা) বুঝবে না?(৬:৩২)
তিনিই তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তারপর শুক্রবিন্দু থেকে, তারপর ‘আলাকা’ থেকে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করে আনেন। তারপর যেন তোমরা তোমাদের যৌবনে পদার্পণ কর, অতঃপর যেন তোমরা বৃদ্ধ হয়ে যাও। আর তোমাদের কেউ কেউ এর পূর্বেই মারা যায়। আর যাতে তোমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে যাও। আর যাতে তোমরা (বিবেক দিয়ে) অনুধাবন কর।(গাফির ৪০:৬৭)
মানুষ যখন বিবেককে সঠিক পথে পরিচালিত না করতে পারার কারনে কোন ভুল কাজ করে তখন তার নফসকে ভৎসনাকারী বিবেক “আল-লাওয়ামা” নফসকে তিরস্কার করে। এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি যে বিবেকের রায় সব সময় সঠিক হয়না। যার প্রমান রাসূল সাঃ কে আল্লাহ্ ছয়টি বিষয়ে সংশোধন করেছিলেন। এই ছয়টি বিষয়ে রাসূল সাঃ বিবেক দিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। নবী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিবেকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রার্থক্য হচ্ছে আমরা বিবেক দিয়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আল্লাহ্ সেই ভুল সংশোধনের জন্য ওহী পাঠান না, কিন্তু নবীদের বেলায় পাঠাতেন। ফলে নবীদের বিবেকের সিদ্ধান্ত সব সঠিক।
আমি আরো কসম করছি নফ্সকে-ভৎর্সনাকারী আল-লাওয়ামার (বিবেকের)!(সূরা কিয়ামাহ ৭৫:২)
লোকমান আঃ নবী ছিলেননা কিন্তু আল্লাহ্ তাকে হিকমাত দান করেছিল(৩১ঃ১২)। আল্লাহর দানকৃত সেই হিমাতের আলোকে তিনি তাঁর পুত্রদের কে উপদেশ দিয়েছিল। এই উপদেশ আল্লাহর কাছে এতটাই পছন্দ হয়েছে যে আল্লাহ্ তাঁর নামে একটি আলাদা সূরা নাজিল করে সেখানে তার উপদেশ গুলি আমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসাবে উপস্থাপন করছেন।
ভাবনার বিষয় হচ্ছে লোকমান আঃ এর এই উপদেশ বানী গুলি কিন্তু আল্লাহ্ জিবরাইল ফিরিস্তার মাধ্যমে অহি করে পাঠাননি। ওনি আল্লাহর দানকৃত হিকমাতের আলোকে এই উপদেশ গুলি দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হচ্ছে লোকমান আঃ এর উপদেশ যদি আল্লাহর নিকট এতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয় তবে তাঁর সর্বশেষ রাসূল হিকামাতের আলোকে আমাদের জন্য যে উপদেশ রেখে গেছেন সেটা কি লোকমান আঃ এর উপদেশের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ? মোটেই তা নয় কারন আল্লাহ্ তার রাসূল কে হিকমাতের আলোকে দাওয়াত দিতে বলেছেন। ফলে হিকমাতের আলোকে আল্লাহর বিধান বুঝার জন্য রাসূল সাঃ আমাদেরকে যে সমস্ত উপদেশ, উপমা, উদাহরণ দিতেন তা আমাদের জন্য লোকমান আঃ এর উপদেশের মতই গুরুত্বপূর্ণ বরং তাঁর চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ কারন কারন লোকমান আঃ কে নবী করে পাঠানো হয়নি অপর দিকে রাসূল সাঃ কে নবী করে পাঠানো হয়েছে।
তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন (১৬:১২৫)
আল্লাহ্ কুরআনে তাঁর বিধান বুঝাতে সুন্দর সুন্দর উপমা-উদাহরণ পেশ করেছেন।
তুমি কি দেখ না, আল্লাহ কীভাবে উপমা পেশ করেছেন? কালিমা তাইয়েবা, যা একটি ভাল বৃক্ষের ন্যায়, যার শিকড় মজবুত আর শাখা-প্রশাখা আকাশে।
(১৪:২৪)
হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকা বাতিল করো না। সে ব্যক্তির মত, যে তার সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি। অতএব তার উপমা এমন একটি মসৃণ পাথর, যার উপর রয়েছে মাটি। অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ল, ফলে তাকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলল। তারা যা অর্জন করেছে তার মাধ্যমে তারা কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির জাতিকে হিদায়াত দেন না।আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নিজদেরকে সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা উঁচু ভূমিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে পড়েছে প্রবল বৃষ্টি। ফলে তা দ্বিগুণ ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেছে। আর যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টি (যথেষ্ট)। আর আল্লাহ তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা।(২ঃ২৬৪-২৬৫)
যারা তাদের রবের সাথে কুফরী করে তাদের আমলসমূহের দৃষ্টান্ত হল এমন ছাইয়ের মত, প্রবল ঘুর্ণিঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে যা বহন করে নিয়ে যায়। তারা যা অর্জন করেছে, তার মাধ্যমে কিছুই করতে পারে না। এ তো ঘোরতর বিভ্রান্তি।(১৪:১৮)
রাসূল সাঃ কে আল্লাহ্ তাঁর বিধান স্পষ্ট করে মানুষকে বুঝাতে বলেছেন অর্থাৎ হিকমাতের আলোকে বিভিন্ন উপমা,উদাহরণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান মানুষকে বুঝাতে বলেছেন।
(অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা নাহ্ল ১৬:৪৪)
আমি তোমার প্রতি কিতাব এজন্য নাযিল করেছি যাতে তুমি সে সকল বিষয় স্পষ্ট করে দিতে পার যে বিষয়ে তারা মতভেদ করেছিল, আর (এ কিতাব) বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথপ্রদর্শক ও রহমাত স্বরূপ।
(১৬:৬৪)
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত নবীদের কে অহী ছাড়াও হিকমাত দান করেছিলেন। এর আলোকে তারা বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলতেন। এই কথা গুলি বলার জন্য আল্লাহ্ জিব্রাইল ফিরিস্তা পাঠাননি। আল্লাহ্ তাদের এই হিকমাতের আলোকে ঈমানদীপ্ত কথা গুলি কুরআনে স্হান দিয়ে আমাদের কে সেই চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হতে উৎসাহ যুগিয়েছেন।
আর স্মরণ কর, যখন ইব্রাহীম বলল, হে আমার পালনকর্তা আমাকে দেখাও, কেমন করে তুমি মৃতকে জীবিত করবে। বললেন; তুমি কি বিশ্বাস কর না? বলল, অবশ্যই বিশ্বাস করি, কিন্তু দেখতে এজন্যে চাইছি যাতে অন্তরে প্রশান্তি লাভ করতে পারি। বললেন, তাহলে চারটি পাখী ধরে নাও। পরে সেগুলোকে নিজের পোষ মানিয়ে নাও, অতঃপর সেগুলোর দেহের একেকটি অংশ বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রেখে দাও। তারপর সেগুলোকে ডাক; তোমার নিকট দৌড়ে চলে আসবে। আর জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, অতি জ্ঞান সম্পন্ন।(২ঃ২৬০)
তুমি কি সে লোককে দেখনি, যে পালনকর্তার ব্যাপারে বাদানুবাদ করেছিল ইব্রাহীমের সাথে এ কারণে যে, আল্লাহ সে ব্যাক্তিকে রাজ্য দান করেছিলেন? ইব্রাহীম যখন বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর। তখন সে কাফের হতভম্ব হয়ে গেল। আর আল্লাহ সীমালংঘণকারী সম্প্রদায়কে সরল পথ প্রদর্শন করেন না।(২ঃ২৫৮)
যখন উভয় দল পরস্পরকে দেখল, তখন মূসার সঙ্গীরা বলল, আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম।মূসা বলল, কখনই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। তিনি আমাকে পথ বলে দেবেন।অতঃপর আমি মূসাকে আদেশ করলাম, তোমার লাঠি দ্বারা সমূদ্রকে আঘাত কর। ফলে, তা বিদীর্ণ হয়ে গেল এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেল।(২৬ঃ৬১-৬৩)
মদিনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় গুহায় অবস্থান কালে শত্রুরা যখন একেবারে নিকটে চলে আসে তখন আল্লাহর রাসূল সাঃ কি বলেছেন দেখুন।
এই কথা বলার জন্য আল্লাহ্ কিন্তু রাসূল সাঃ এর নিকট ফিরিস্তার মাধ্যমে অহী পাঠাননি।
যদি তোমরা তাকে (রসূলকে) সাহায্য না কর, তবে মনে রেখো, আল্লাহ তার সাহায্য করেছিলেন, যখন তাকে কাফেররা বহিষ্কার করেছিল, তিনি ছিলেন দু’জনের একজন, যখন তারা গুহার মধ্যে ছিলেন। তখন তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন। অতঃপর আল্লাহ তার প্রতি স্বীয় সান্তনা নাযিল করলেন এবং তাঁর সাহায্যে এমন বাহিনী পাঠালেন, যা তোমরা দেখনি। বস্তুতঃ আল্লাহ কাফেরদের মাথা নীচু করে দিলেন আর আল্লাহর কথাই সদা সমুন্নত এবং আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।(৯ঃ৪০)
এরপরও কি বলবেন রাসূল সাঃ ওহী ছাড়া আল্লাহর দানকৃত হিকমাতের আলোকে যে সমস্ত আদেশ ও উপদেশ মুলক কথা বলতেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়?
নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত নবী-রাসুলগনকে অহী ছাড়াও হিকমা দান করেছিলেন ফলে রাসূলগনের আনুগত্য বলতে শুধু কিতাব নয় বরং আল্লাহর দানকৃত হিকমার আলোকে তাঁরা যে সকল উপদেশ, আদেশ-নিষেধ করতেন এবং মৌন সম্মতি যানাতেন তা সবই রাসূলগনের আনুগত্যের শর্তে অন্তর্ভুক্ত।
সে(নূহ্) বলল, ‘হে আমার কওম! নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী যে, তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, তাঁকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’।(৭১:২-৩)
(লুত বল্লো)‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য এক বিশ্বস্ত রাসূল’। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর।(২৬:১৬৩)
তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হতে পার।(২৪ঃ৫৬)
আমি(মুহাম্মদ) তোমাদের নিকট এসেছি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে। অতএব, আল্লাহ্ কে ভয় কর এবং আমার আনুগত্য কর’।(৩ঃ৫০)
আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।(৪ঃ১১৩)
আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি তোমাদের মধ্য থেকে, যে তোমাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। আর তোমাদেরকে শিক্ষা দেয় এমন কিছু যা তোমরা জানতে না।(২:১৫১)
ُরাসূল তোমাদের যা দেয় তা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও এবং আল্লাহকেই ভয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে কঠোর।(৫৯ঃ৭)
হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।(৪ঃ৫৯)
বল (মুহাম্মদ), ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।(৩:৩১)
যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি।(৪:৮০)
যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা।(৪:১৩)
বল, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না। (৩ঃ৩২)
আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব।(৪:১৪)
রাসূল সাঃ অহী ছাড়া হিকমার আলোকে অসংখ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তার মধ্যে মাত্র ছয়টি বিষয়ে আল্লাহ্ কর্তৃক সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। ফলে বাকী বিষয় গুলি যে নির্ভুল এবং আল্লাহ্ কর্তৃক পরোক্ষভাবে অনুমদিত এবং আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। সংশোধিত এই রাসূলের চারিত্রিক সনদ স্বয়ং আল্লাহ্ দিয়েছেন —
আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত। (৬৮:৪)
অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। (৩৩:২১)
রাসূল সাঃ এর জীবন আদর্শ হচ্ছে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য রহমত। সেই সাথে তিনি ছিলেন মানব জাতীর সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী।
আর আমি তো তোমাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবেই প্রেরণ করেছি।(২১:১০৭)
আর আমি তো কেবল তোমাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।