ইতিহাসে জানা যায়, ইয়াকুবের বারো পুত্রের নামে বনী-ইস্রায়েলের বারোটি গোষ্ঠীর জন্ম হয়। যার মধ্যে ইয়াহুদা’র নাম থেকে ইহুদি শব্দটি এসেছে। ইহুদিদের কথা পবিত্র কোরআনের বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
ইহুদীদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- হে বনী-ইসরাঈলগণ তোমরা স্মরণ কর আমার অনুগ্রহের কথা, যা আমি তোমাদের উপর করেছি এবং (স্মরণ কর) সে বিষয়টি যে, আমি তোমাদেরকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি সমগ্র বিশ্বের উপর।
ইহুদিদের ধর্ম ভাবনাএবং মিশর গমন বর্তমান ইহুদিদের একাংশ পরকালে বিশ্বাস করেলেও আদিতে ইহুদিদের কোনো পরকাল ছিলো না।
নিজেদের জাতিগত উদ্ভবের ৫০০ বছরের মাথায় ইহুদিরা মিশরে আসে। ফেরাউনদের দেশ মিশরে। তখন ইহুদি ধর্মে পরকালে বিশ্বাস বা আখিরাতে বিশ্বাস বলে কিছু না থাকলেও মিশরের ধর্মে কিন্তু পরকালই ছিলো গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, ইহুদিরা তাদের পাপ-পূণ্যের ফল দুনিয়াতে পাবে এটা ছিলো তাদের বিশ্বাস। অন্যদিকে মিশরীদের বিশ্বাসে ছিলো মানুষ মারা যাওয়ার পর তার সকল হিসাব নিকাশ চুকানো হবে। শাস্তির ব্যবস্থাও থাকবে পরকালে।
মিশরে আসার পর ইহুদিদেরও অনেকটা সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। তাদের নিজেদের ধর্মে পরকাল না থাকলেও ফেরাউনদের দেশে থাকতে থাকতে পরকালের ধারণাটা প্রবেশ করে ইহুদিদের সংস্কৃতিতে। ধীরে ধীরে এ ধারণাটা তাদের মধ্যে শিকড় গাড়তে থাকে।
ইজরাইলের রাজার মেয়ের জামাই হলেন দাউদ (আ.)
ইহুদিদের প্রথম রাজার নাম সউল আর তার রাজ্যের নাম ইজরাইল। ইজরাইল মানে আজকে আমরা একটি দেশ জানলেও ইজরাইল শব্দের মানে হচ্ছে, যে ঈশ্বরের জন্য যুদ্ধ করে। সউলের সেনাপতি ও মেয়ে-জামাই ছিলেন ডেভিড বা দাউদ। পবিত্র কোরআনে যাকে দাউদ (আ.) নামে আমরা জানি। দাউদ নিজগুণে একসময় রাজা সউলের থেকেও বেশি ক্ষমতাবান হয়ে যান। এতে রাজা সউলের রাগ বাড়ে দাউদের উপর। তিনি আর আপন মেয়ে জামাই দাউদকে খুন করার পরিকল্পনা করে।
এদিকে আক্রমণের খবর দাউদ (আ.) কানে পৌঁছালে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গাজায় ফিলিস্তিনিদের কাছে আশ্রয় নেন। ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় দাউদ সিনাই মরুভূমি এলাকায় একটি রাজ্য স্থাপন করেন। নাম দিলেন জুদা রাজ্য। রাজধানী বানালেন হেবরন।
ফিলিস্তিন-ইজরাইল যুদ্ধের শুরু
এদিকে বৃদ্ধ রাজা সউল মারা গেলে তার ছেলে ইসাবেল ইজরাইল রাজ্যের রাজা হন। অন্যদিকে দাউদের লক্ষ্য ছিলো এই ইজরাইল রাজ্য দখল করে ফিলিস্তিনের সঙ্গে যুক্ত করে দুই রাজ্য এক করা। ইজরাইল ও জুদা রাজ্যের মাঝখানে একটি স্বাধীন নগর রাষ্ট্র ছিলো, নাম জেরুজালেম। এ নগরের বাসিন্দাদের বলা হতো জেবুসাইট।
দাউদ জেরুজালেম দখল করে তার রাজধানী হেবরন থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে আনেন। কারণ, এ নগরটি দুই রাজ্যের মাঝে। এখান থেকে দুই রাজ্য শাসন করা সুবিধা হবে। দাউদের চক্রান্তে ইজরায়েলের দুর্বল রাজা ইসাবলকে তার সেনাপতিরা হত্যা করে এবং দাউদের কাছে আশ্রয় নেয়। দাউদ সহজেই ইজরায়েল রাজ্য দখল করে নেন।
আমাদের ভুল ধারনা ইয়াহুদীরা সব জাহান্নামী। অথচ আল্লাহ বলেনঃ
নিশ্চয়ই যাহারা ঈমান আনিয়াছে, যাহারা ইয়াহূদী হইয়াছে এবং খ্রিস্টান ও সাবিঈন-যাহারাই আল্লাহ্ ও আখিরাতে ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, তাহাদের জন্য পুরস্কার আছে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট। তাহাদের কোন ভয় নাই এবং তাহারা দুঃখিতও হইবে না। (সূরা ২ঃ ৬২)
ইয়াহুদীর দালাল বলে গালি দেয় যারা, তারা নিজেরাও কিন্তু জানেনা ইয়াহুদী কাকে বলে। জেনে নেইঃ–
মুসলমান VS ইয়াহুদী মিল ও গরমিল কতটা?
১) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তায় এক এবং তাদের কোন শরীক নেই।
২) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে আদী পিতা ইব্রাহীম আঃ
৩) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে আদী মানব আদম আঃ
৪) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে বিয়ে বহির্ভুত শাররীক সম্পর্ক গুরুতর অপরাধ।
৫) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে সুদ নিষিদ্ধ এবং জঘন্য পাপ।
৬) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে পশুর রক্ত ও শুকরের মাংস নিষিদ্ধ।
৭) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করতে হবে।
৮) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে জেরুজালেম একটি পবিত্র নগরী।
৯) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে চাঁদ দেখে ধর্মীয় উৎসব পালন।
১০) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে মাথায় টুপি পড়া সুন্নত এবং পড়ে।
১১) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে দাড়ি রাখতে হবে, দাড়ি কাটা পাপ।
১২) দুই ধর্মেই পুরুষদের খতনা করাকে সুন্নত মানে।
১৩) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে মেয়েদের মাথায় কাপড় দিয়ে পর্দা করতে হবে।
১৪) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে পশু যবাইয়ের পুর্বে স্রষ্টার নাম নেয়া।
১৫) দুই ধর্মেই কঠোর ধর্মীয় আইন আছে। মুসলমানদের শরীয়া আইন, ইয়াহুদীদের খালাকা আইন।
১৬) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে কিতাব অনুযায়ী খাদ্য
গ্রহন করা। মুসলমান যাকে হালাল বলে ইয়াহুদীরা বলে কুশার।
১৭) দুই ধর্মেই পরস্পরের সালাম প্রথা রয়েছে।
১৮) দুই ধর্মেই সপ্তাহে এবাদতের বিষেশ দিন আছে। মুসলমানের জুম্মা আর ইয়াহুদীদের আইয়ামে সাবেত।
১৯) দুই ধর্মেই এবাদতের জন্য একটি করে দিক নির্বাচন করে। মুসলমান ক্বাবাকে আর ইয়াহুদী বাইতুল মোকাদ্দেস
২০) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে সিয়াম পালন ফরজ। মুসলমান বছরে রমজান মাস ইয়াহুদীরা বছরে বিশেষ পাঁচ দিন।
২১) মুসলমান প্রতিদিন ৫ বার সালাত আদায় করে, ইয়াহুদীরা প্রতিদিন ৩ বার সালাত আদায় করে।
২২) মুসলমানদের হজ্জ হয় বছরে একবার ক্বাবায়। আর ইয়াহুদীদের হজ্জ হয় বছরে তিন বার জেরুজালেমে।
২৩) মুসলিমদের পবিত্র নগরী ক্রমনুসার মক্কা,মদীন, পরে জেরুজালেম। ইয়াদীদের ক্রমনুসারে জেরুজালেম,মক্কা পরে মদীনা।
২৪) দুই ধর্মেই বিশ্বাস করে উভয় ধর্মের মধ্যে পরস্পর বিয়ে করায় কোন নিষেধ নাই।
কেউ ইয়াহুদী বলে গালি দিলে আপনি রেগে যান, মনে প্রচন্ড অপমান বোধ করেন। প্রকৃত কি তাই? ইয়াহুদীর দালাল বলে যে গালি দেয় সে নিজেও কিন্তু জানে না ইয়াহুদী কাকে বলে, কি তাদের ধর্মীয় বৈশিষ্ঠ? আল্লাহর নিকট কতটা তাদের মর্যদা? কি তাদের কিতাব? আল্লাহ ইয়াহুদীদের জ্ঞান বিজ্ঞানে প্রাধন্য দিয়েছেন মর্মে ঘোষানাও রয়েছে কোরানে।